কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আর বিধানসভা ভোটে বিজেপির সাফল্যে ভর করে হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবারের লক্ষ্য এবার ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন৷ ধর্মীয় মেরুকরণ ও সর্বগ্রাসী অসহিষ্ণুতা তারই প্রতিফলন, যার শিকার খ্রিষ্টান ও আফ্রিকানরাও৷
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী মোদী যতই উন্নয়নের কথা বলুন না কেন, আসল লক্ষ্য তাঁর ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন৷ তাই তলে তলে সমানে চলেছে ধর্মীয় মেরুকরণের কাজ৷ উত্তর প্রদেশ বিধানসভার হালের নির্বাচনে বিজেপির বিপুল সাফল্যের পর যোগী আদিত্য নাথকে যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করা হলো, তখনই তা স্পষ্ট বোঝা গেছে যে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবে৷ হচ্ছেও তাই৷ অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটছে নানাভাবে৷ কেন্দ্রে মোদী আর উত্তর প্রদেশে যোগী – এই দুইয়ের মেলবন্ধনে হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়েছে গোটা দেশে৷
গো-রক্ষার নামে কট্টর মনোভাব, গরু পরিবহণকারীদের গণপিটুনি৷ তাতে মারাও গেছে জনা দুই৷ তাঁদের অপরাধ, তাঁরা গরু বিক্রির জন্য লরিতে গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন৷ রাস্তা ঘাটে নজর রাখছে ‘অ্যন্টি-রোমিও স্কোয়াড'৷
‘অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড’ নিয়ে বিতর্ক, উষ্মা
উত্তর প্রদেশে ক্ষমতার শীর্ষে এখন বিজেপি সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ৷ নারী সুরক্ষার লক্ষ্যে তিনি গঠন করেছেন অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড৷ পার্ক, স্কুল-কলেজের গেট, রাস্তা-ঘাটে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে দেখলেই চলছে জিজ্ঞাসাবাদ৷
ছবি: Reuters/P. Kumar
আবদুল মান্নান, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা
এ তো হওয়ারই ছিল৷ গোটা দেশটাকে যাঁরা হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়, তাঁরা ক্ষমতার সিংহাসনে বসলে এইভাবেই তো সরকারি ক্ষেত্রে, সমাজে, প্রতিনিয়ত নিজেদের নীতি ও আদর্শকে জোর করে চাপিয়ে দেবে৷ নারী সুরক্ষার নামে উত্তর প্রদেশে যা শুরু হয়েছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই৷
ছবি: DW/R.Chaktaborty
ডা. সৃজনী সিনহা, দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
ভারতে মেয়েদের সুরক্ষার বিষয়টি জরুরি হলেও, ছেলেদের অকারণ হেনস্থাও সমর্থনযোগ্য নয়৷ প্রেমিক-প্রেমিকা, ভাই-বোন – এঁরা রাস্তায় বের হবেন কীভাবে? বরং ‘মরাল পুলিসিং’ না করে মা-বোনেদের সুরক্ষার দিকে একটু নজর দিন মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ৷
ছবি: DW/R. Chaktaborty
কিশোর চৌহান, মিস্টার ইন্ডিয়া, বডি বিল্ডার
বলা হচ্ছে, নির্দোষ ছেলে-মেয়েদের হেনস্থা করা হচ্ছে৷ তাই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করে পুলিশকে তাদের কাজ করতে দিলে অসুবিধা কোথায়? আমি তো বলবো, মা-বোনেদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতের সব রাজ্যে এই স্কোয়াড গড়ে তোলা উচিত৷ যোগী আদিত্যনাথ পথ দেখিয়েছেন৷
ছবি: DW/R. Chaktaborty
রুমা ব্যানার্জি, স্কুল শিক্ষিকা
কে কার সঙ্গে বসে গল্প করবে, কে কার হাত ধরে হাঁটবে – এবার থেকে কি তা-ও ঠিক করে দেবে পুলিশ? মনে হচ্ছে, নতুন সরকার এসে ভারতের সমাজ ব্যবস্থাকে দ্রুত অতীতের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে৷ আমাদের রাজনীতিকদের মনে রাখতে হবে, ছেলে-মেয়ের মেলামেশা আর নারী নির্যাতন এক জিনিস নয়৷
ছবি: DW/R. Chaktaborty
শুভাশিস ভৌমিক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
পার্কে বসে একটি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে গল্প করছিল৷ আচমকা পুলিশের লাঠি পড়ল এক ছাত্রের পিঠে৷ – এ কেমন ঘটনা? সরকার বা পুলিশকে এই অধিকার কে দিয়েছে?
ছবি: DW/R. Chaktaborty
পূর্ণেন্দু রায়, সমাজকর্মী
শুধু ‘অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড’ কেন? এমন কোনো স্কোয়াডেরই সাধারণ মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অধিকার নেই৷ তবে হ্যাঁ, আইন হয়েচে৷ তাই প্রথমদিকে পুলিশি হেনস্থার বহু অভিযোগ উঠলেও দেখতে হবে, সরকার এই ধরনের অভিযোগের সংখ্যা কমিয়ে এনে সত্যিই রাজ্যে নারী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয় কিনা৷
ছবি: DW/R. Chaktaborty
হেমন্ত শর্মা, মডেল
রোমিও, জুলিয়েট অথবা মজনু – এ সব নাম দিয়ে ইতিহাসের পাত্রদের অপমান করার কোনো মানে হয় না৷ উদ্দেশ্য যদি নারী সুরক্ষা হয়ে থাকে তবে, অপরাধীদের ধরা উচিত৷ কেউ বাইক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মানেই সে অপরাধী – সরকার এবং পুলিশের এই ধারণা পরিবর্তন জরুরি৷
ছবি: DW/R. Chaktaborty
জালাল উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টে কেরানি
আমি আদিত্যনাথ সরকারের এই পদক্ষেপকে পূর্ণ সমর্থন করি৷ গোটা দেশে যেভাবে মহিলাদের প্রতি অন্যায় হচ্ছে, তাতে কোথা থেকে তো শুরুটা করতেই হবে৷ নোট বাতিলের মতোই ‘বখাটে’ ছেলেদের শায়েস্তা করতে গিয়ে হয়ত দু-একজন নিরপরাধের প্রতি অন্যায় করা হবে৷ কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে সেটা মেনে নেওয়াই ভালো৷
ছবি: DW/R. Chaktaborty
শুভজিৎ চৌধুরি, জনৈক সাংসদের ব্যক্তিগত সচিব
সবে দেশের চারটে রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি, এরপর যদি আরও চারটে রাজ্য তাদের দখলে চলে আসে তাহলে দেখবেন, শুধুমাত্র মেয়েদের দিকে তাকানোর অপরাধে রোজ শ’য়ে শ’য়ে ছেলেকে জেলে ঢোকানো হচ্ছে৷
ছবি: DW/R. Chaktaborty
9 ছবি1 | 9
তরুণ-তরুণীদের একসঙ্গে বসে গল্প করতে দেখলেই ধরপাকড় করা হয়৷ সব ধর্মের লোকদেরই ‘বন্দে মাতরম' গাইবার জন্য চাপ দেওয়া হয়৷ এমনকি সূর্য নমস্কারের ভঙ্গির সঙ্গে নামাজের মিল খুঁজে অযথা বিতর্ক তোলা হয়৷ উত্তর প্রদেশে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করতে রাজ্যে ‘হিন্দু যুব বাহিনী' নামে একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে৷ এদের সীমা শালীনতার গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে৷ কয়েকদিন আগে উত্তর প্রদেশের মিরাট শহরে এক মুসলিম বাড়িতে জোর করে ঢুকে এক দম্পতিকে হেনস্থা করা হয়৷ যুব বাহিনীর মতে, তাঁরা নাকি দম্পতি নয়. ছেলে বন্ধু-মেয়ে বন্ধু৷ এই ধরনের আরেকটি ঘটনায় যুব বাহিনী একটি ছেলের মাথা মুডিয়ে দেয়৷ তাঁর অপরাধ, তিনি তাঁর বান্ধবিকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন৷
বিজেপিশাসিত গুজরাটে ভোট এ বছরের শেষ নাগাদ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গো-হত্যার শাস্তি বাড়িয়ে যাবজ্জীবন করতে চাইছেন৷ বিজেপিশাসিত অপর রাজ্য ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী গো-হত্যার অপরাধে ফাঁসিতে ঝোলাবার দাবি জানিয়েছেন৷
উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের হাত থেকে খ্রিষ্টান পাদ্রি এবং চার্চগুলিও৷ কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, ছত্তিশগড় রাজ্যের চার্চগুলিতে ভাঙচুর চালানো হয়, আগুণ লাগায় সংঘ পরিবারের সদস্যরা৷ মারধর করে চার্চের পাদ্রী এবং মহিলা নানদের৷ অভিযোগ, খ্রিষ্টানরা জোর করে বা লোভ দেখিয়ে নাকি হিন্দুদের বিশেষ করে উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকদের খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছিল৷ তাই দেশে মুসলিমদের মতো খ্রিষ্টান জনসংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে৷ ‘ঘর ওয়াপসি'-র নামে আবার হিন্দু ধর্মে তাঁদের ফিরিয়ে আনা হবে৷ একটি চার্চে গৈরিক পতাকা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে গির্জার পুরুষ ও মহিলা সদস্যদের দৈহিক হেনস্থা করা হয়৷ যদিও চার্চ কর্তৃপক্ষ জানায়, গৈরিক পতাকা কেউ ছিঁড়ে ফেলেনি, বাতাসে ছিঁড়ে গেছে৷
অনেক হিন্দুও গরু বা মহিষের মাংস খান
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে থাকলেও ভারতে গরু বা মহিষের মাংস অনেকেই খেয়ে থাকেন৷ সে দেশে যত মানুষ গরু বা মহিষের মাংস খান তাদের মধ্যে সোয়া কোটিই হিন্দু৷
ছবি: AP
গরু কম, মহিষ বেশি
হিন্দু প্রধান দেশ ভারতে ধর্মীয় কারণেই গরুর মাংস কম খাওয়া হয়৷ তবে মহিষের মাংস খান অনেকেই৷ গরু এবং মহিষের মোট ভোক্তা প্রায় ৮ কোটি৷ ২০১১-১২-তে একটি জরিপ চালিয়েছিল ভারতের ‘দ্য ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস’ (এনএসএসও)৷ সেই জরিপ থেকে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
সাধারণ মানুষের মাঝে মাংস নিয়ে বিরোধ কোথায়?
জরিপ থেকে আরো জানা গেছে, যাঁরা গরু বা মহিষের মাংস খান তাঁদের বেশিরভাগই মুসলমান হলেও সেখানে সোয়া এক কোটি হিন্দুও এসব মাংস খান৷
ছবি: Getty Images/P. Guelland
সংখ্যাটা বাড়ছে
জরিপ থেকে আরো জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে গরু বা মহিষের মাংস খাওয়া বাড়ছে৷ এক কোটি মানুষের মধ্যে জরিপটি চালিয়েছিল এনএসএসও৷
ছবি: DW/S.Waheed
মাংস খাওয়ায় ভারত সবার পেছনে
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) ১৭৭টি দেশে সব ধরণের মাংস খাওয়ার হার সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ তালিকায় সবার নীচে রয়েছে ভারত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
রপ্তানিতে সবার আগে
এফএও-র তথ্য অনুযায়ী, গবাদি পশুর, বিশেষ করে গরু এবং মহিষের মাংসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ভারত৷ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং নগরায়ণের কারণে মানুষের মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ তারপরও অবশ্য অন্য সব দেশের তুলনায় ভারতের মানুষ এখনো অনেক কম মাংস খায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
হিন্দুরা দ্বিতীয়
ভারতের মোট মুসলমানের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি মুসলমান গরু বা মহিষের মাংস খান৷ সংখ্যার দিক থেকে তারপরেই রয়েছে হিন্দুরা৷ নিজেদের মোট সংখ্যার শতকরা হারের বিচারে মুসলমানদের পরেই রয়েছেন খ্রিষ্টানরা৷
ছবি: DW/S.Waheed
যাঁরা বেশি খান
মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি নিম্ন বর্ণের হিন্দু বা উপজাতিরাও যথেষ্ট গরু বা মহিষের মাংস খান৷ উচ্চ বর্ণের অনেক হিন্দুও গরু বা মহিষের মাংস পছন্দ করেন৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
7 ছবি1 | 7
বাদ যায়নি বিদেশিরাও৷ আফ্রিকানদের ওপর হামলার ঘটনা জাতিবিদ্বেষের নগ্ন নজির৷ সম্প্রতি দিল্লির উপকণ্ঠে নয়ডায় নাইজেরীয় এক পড়ুয়াকে এবং কেনিয়ার একজন তরুণীকে নিগ্রহের ঘটনায় নতুন দিল্লির আফ্রিকান দেশগুলির রাষ্ট্রদূতরা উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার এবং কেন্দ্রের মোদী সরকারকে মূলত দায়ী করেছেন৷ এই প্রসঙ্গে উঠে আসছে, গত দু'বছরে রুয়ান্ডা, উগান্ডা ও কংগোসহ অনেক আফ্রিকান দেশের নাগরিকদের উপর হিংসাত্মক ঘটনার প্রসঙ্গ৷ এমন ঘটনা দিল্লি ও বেঙ্গালুরুর মতো শহরেও ঘটেছে৷ বছর খানেক আগে দক্ষিণ দিল্লিতে কংগোর মাসুন্ডা অলিভারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়৷ স্বাভাবিকভাবেই তুলনা চলে আসে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বা অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয়দের খুনের ঘটনায় জাতিবিদ্বেষ বা বর্ণবিদ্বেষের জিগির তুলে দিল্লি যদি সোচ্চার হতে পারে, তাহলে ভারতে এমন ঘটনা কেন ঘটছে, তার সদুত্তর কি মোদী সরকার দিতে পারবে?
মোদী প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ, আফ্রিকানদের মধ্যে কিছু মানুষ আছেন যাঁরা মাদক পাচার এবং অন্যান্য অসামাজিক কাজে লিপ্ত৷ বৃহত্তর সুশীল সমাজ অবশ্য মনে করেন, এ সবই হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতিরই ফল৷ আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে নরমাংস খাওয়ার মতো অভিযোগ তোলা অসহিষ্ণু হিন্দুত্বাবাদী রাজনীতির আগ্রাসন ছাড়া আর কী?
অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি এবং সংঘ পরিবার তাদের সংগঠনগুলিকে আরও শক্তিশালি করতে ময়দানে নেমেছে৷ রাম নবমীর দিনটিকে সামনে রেখে রাজ্যের বিজেপি কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েছে৷ হাতে রাম দা নিয়ে মিছিলও করছে৷ নিষেধাজ্ঞাতে কাজ না হওয়ায় পাল্টা রণকৌশলে তৃণমূল কংগ্রেসও পালন করছে হনুমান পুজো৷ সব মিলিয়ে বাড়ছে রামের রাজ্যপাট৷ এতে অনেকেই সাম্প্রদায়িক গণ্ডগোলের সিঁদুরে মেঘ দেখছেন৷
ভারতে সাংস্কৃতিক অসহিষ্ণুতা বাড়ছে
বহু জাতি-ধর্ম-বর্ণের দেশ ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্র৷ কিন্তু মত প্রকাশের অধিকারের প্রশ্নে ইদানীং অসহিষ্ণুতার নানা দৃষ্টান্ত উঠে আসছে৷ সেই সঙ্গে অবশ্য সহিষ্ণুতার সীমা নিয়েও চলছে ব্যাপক বিতর্ক৷
ছবি: AP
আশিষ নন্দী ও অনগ্রসর শ্রেণি
সম্প্রতি জয়পুর সাহিত্য উৎসবের মঞ্চে প্রখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ আশিষ নন্দীর এক মন্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে চরম বিতর্ক৷ ভারতের অনগ্রসর শ্রেণির মানুষেরাই মূলত দুর্নীতির সঙ্গে বেশি যুক্ত, তিনি নাকি এমন কথা বলেছিলেন৷ বহুজন সমাজ পার্টি সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আশিষ নন্দীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়৷ তিনি অবশ্য এর প্রেক্ষাপট খোলসা করে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
কমল হাসান ও তাঁর ‘বিশ্বরূপম’
দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাডুর বিখ্যাত অভিনেতা ও বহুমুখী প্রতিভা কমল হাসান দেশে-বিদেশে পরিচিত৷ আফগানিস্তানের পটভূমিকায় তৈরি তাঁর সাম্প্রতিকতম ছবি ‘বিশ্বরূপম’ চরম বিরোধিতার মুখে পড়েছিল৷ তামিলনাডুর কিছু মুসলিম সংগঠনের আপত্তিতে ছবিটির মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে৷ নিজের গাড়ি-বাড়ি বন্ধক রেখে ছবিটি তৈরি করেছেন কমল হাসান৷ অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে রফা হয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কলকাতায় ‘অনভিপ্রেত’ সলমান রুশদি
ভারতের ‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’ বলে পরিচিত শহর কলকাতায় আমন্ত্রণ সত্ত্বেও পা রাখতে পারলেন না ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সলমান রুশদি৷ তাঁর উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি চলচ্চিত্র সম্প্রতি ভারতে মুক্তি পেয়েছে৷ পরিচালক দীপা মেহতার সঙ্গে দেশের অন্যান্য শহরে যেতে পারলেও তিনি কলকাতায় ‘অনভিপ্রেত’ রয়ে গেলেন৷ বিষয়টি নিয়ে এখনো চলছে বিতর্ক৷
ছবি: DW/H. Kiesel
তোপের মুখে পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংস্কৃতিপ্রেমি হিসেবে পরিচিত৷ অথচ তাঁর শাসনকালেই সলমান রুশদির মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক কলকাতায় পা রাখতে না পারায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ পূর্বসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময় বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকেও কলকাতা ছাড়তে হয়েছিল৷
ছবি: Prabhakar Mani Tewari
তসলিমা নাসরিনকে ফিরিয়ে দিয়েছে কলকাতা
বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন ভারতে আশ্রয় নিয়ে কলকাতায় থাকতে চেয়েছিলেন৷ তসলিমাকে ঘিরে লাগাতার বিতর্কের জের ধরে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থি সরকার তাঁকে কলকাতায় থাকতে দেয় নি৷ তাঁর নিরাপত্তা ও জনজীবনে অশান্তির আশঙ্কা প্রকাশ করেই এমনটা করা হয়েছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
শশী থারুরের সতর্কতাবাণী
প্রাক্তন কূটনীতিক, লেখক, চিন্তাবিদ, রাজনীতিক, মন্ত্রী শশী থারুর ভারতের সমাজে বেড়ে চলা অসহিষ্ণুতা সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন৷ আশিষ নন্দীর মন্তব্য বা ‘বিশ্বরূপম’ ছবি নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, মত প্রকাশের অধিকার ও অন্যদের আবেগে আঘাত করার অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে৷ তাঁর মতে, ভারত এখনো ‘আঘাত করার অধিকার’ মেনে নেওয়ার অবস্থায় পৌঁছে নি৷
ছবি: AP
6 ছবি1 | 6
গত বুধবার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির এক প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন৷ তাঁরা তাঁকে জানিয়েছেন, উগ্র হিন্দু্বাদীদের দৌরাত্মে গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং আইনের শাসন বিপন্ন৷ ছড়ানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িক হিংসা৷ তৈরি হয়েছে সাধারণ নাগরিদের নিরাপত্তাহীনতার আবহ৷ সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি মনে করেন, সংঘ পরিবারের অঙ্গ হিসেবে বিজেপি সংবিধান সংশোধন করে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে চাইছে৷
বন্ধু, ভারত কি সত্যিই একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে? জানান আপনার মতামত, লিখুন নীচের ঘরে৷