1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব কি আর বাংলাদেশে হবে না?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ অক্টোবর ২০১৭

বাংলাদেশে ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব’ আগামী বছর আর হবে কিনা নিশ্চিত নয়৷ সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক সহযোগিতা না পাওয়া গেলে এই উৎসব করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন আয়োজকরা৷ তবে সরকার আয়োজন করতে চাইলে বেঙ্গলের আপত্তি নেই৷

ছবি: Kuldeep Kumar

এই উৎসবের নিয়মিত ভেন্যু আর্মি স্টেডিয়াম এবার বরাদ্দ না পাওয়ায় ষষ্ঠ আসর বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়৷ আগামী ২৩ নভেম্বর থেকে পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের ষষ্ঠ অধিবেশন আয়োজন চুড়ান্ত হওয়ার পরও পোপের ঢাকা সফরের কারণে আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ না দেয়ায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে এবারের উৎসব বাতিলের ঘোষণা দেয়৷

আয়োজকরা জানান, নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণ দেখিয়ে এবার তাদের উৎসবের নিয়মিত স্থান আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ দেওয়া হয়নি৷ তাই এবার সেটি আয়োজন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না৷

সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, ‘‘যে কারণেই হোক এবার সরকার আমাদের মাঠ বরাদ্দ দেয়নি৷ তাই আমাদের অনুষ্ঠান বাতিল করতে হচ্ছে৷ তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ এরকম অনুষ্ঠান যেন আয়োজন করা হয়৷ সেজন্য যতটুকু সাহায্য দরকার, আমরা করবো৷''

এদিকে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘আগস্ট মাসের মধ্যে ভারতের প্রথম সারির উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী, বাংলাদেশের নবীন ও প্রবীণ শিল্পী এবং অন্যান্য অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও যাত্রার তারিখ নির্ধারণসহ সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়৷ সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাঁদের ৩১ আগস্ট তারিখের চিঠিতে পোপের সফর উপলক্ষে ওই সময়ে (২০ থেকে ২৮ নভেম্বর) আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ সম্ভব নয় বলে জানায়৷

পোপের আগমনের তারিখ ৩০ নভেম্বর অর্থাৎ উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব শেষ হবার দু'দিন পর এবং তাঁর প্রধান অনুষ্ঠানটি আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না৷ তখন ৯ সেপ্টেম্বর তারিখে বরাদ্দের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছে আবেদন করা হয়৷ কিন্তু এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি৷''

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘বিগত পাঁচ বছর একই নিয়মে নির্ধারিত ভাড়া জমা দিয়ে আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ পাওয়া সম্ভব হয়েছে৷ এ বছর জায়গার বিষয়টি সময়মতো মীমাংসা না হওয়ায়, কাজ এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে ইতোমধ্যে বিকল্প স্থান চিহ্নিত করে এর ভিত্তিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে বিদেশি শিল্পীদের অংশ গ্রহণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়৷ এই সুবাদে জাতীয় রাজস্ব বিভাগে নির্ধারিত কর জমা দেওয়া হয়৷ তবে বিকল্প স্থানটিতেও সারারাত অনুষ্ঠান পরিচালনার অনুমতি পাওয়া যায়নি৷''

তাই বড় পরিসরের এই উৎসব আয়োজনের জন্য নিরাপত্তা, যাতায়াত সুবিধা এবং মানুষ জমায়েতের জন্য উপযুক্ত জায়গার বিষয়টি সময়মতো মীমাংসা না হওয়ায়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০১৭ সালের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে৷ এরই মধ্যে দু' শতাধিক দেশি-বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলীকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে৷ চূড়ান্ত পর্যায়ে এমন খবর পেয়ে বহু শিল্পী আশাহত হয়েছেন৷ বিদেশি শিল্পীরা বাংলাদেশের শ্রোতা-দর্শকের সামনে উপস্থিত হতে না পারায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লূভা নাহিদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এতদিন সরকারের সহযোগিতা নিয়েই এই আসরের আয়োজন করে আসছিলাম৷ এবং সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই আয়োজন সম্ভব নয়৷ এ বছরের আয়োজনে আমরা নানা জটিলাতার মুখে পড়ে আয়োজন বাতিলে বাধ্য হয়েছি৷''

‘নানা জটিলাতার মুখে পড়ে আয়োজন বাতিলে বাধ্য হয়েছি’

This browser does not support the audio element.

আগামী বছর (২০১৮) বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব' অনুষ্ঠিত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সেটা আর নিশ্চিত করে বলা যায় না৷ এটা শুধু আমাদের চাওয়ার ওপর নির্ভর করে না৷ এ ধরনের একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে কমপক্ষে আট মাসের প্রস্তুতি লাগে৷ তাই শুরু থেকেই যদি সব দিক থেকে নিশ্চিত না হওয়া যায়, তাহলে অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া যায় না৷ আবার আমরা আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান শিল্পীদের  কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি৷ আবারো একইভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে চাই না৷ তবে সরকার চাইলে এই আয়োজন নিজেরাই করতে পারে৷ আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করবো৷ তারপরও চাই এ রকম একটি আয়োজন যাতে বন্ধ হয়ে না যায়৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দেশের বাইরে এ ধরনের আয়োজন করা যায়৷ কিন্তু তাতে আমাদের লাভ কী? আমরা চাই আমাদের দেশের মানুষ, তরুনরা আমাদের ঐতিহ্য উচ্চাঙ্গসংগীত সম্পর্কে জানুন, এর রস আস্বাদন করুন৷''

শাস্ত্রীয় সংগীতকে সাধারণ মানুষ ও তরুণদের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে যাত্রা করে বেঙ্গল ক্লাসিক্যাল মিউজিক ফেস্টিভ্যালবা ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব'৷ উপমহাদেশীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের রথী-মহারথীরা নিয়মিতই এতে অংশ নিয়েছেন৷ বাংলাদেশ ছাড়াও বিদেশের দর্শকের কাছে আয়োজনটি সমাদৃত হয়৷

আয়োজনের ব্যাপ্তি, বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রথম সারির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিল্পীর অংশগ্রহণ এবং দর্শকসংখ্যা বিচারে এই উৎসব পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উচ্চাঙ্গসংগীত আয়োজন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে৷ প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ দর্শক শ্রোতা এই আয়োজনে অংশ নেন৷

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতবর্ষে উচ্চাঙ্গসংগীতের ভিত প্রতিষ্ঠায় যাঁদের অন্যতম অবদান রয়েছে এবং পঞ্চাশ-ষাটের দশকে ও পরবর্তীকালে শাস্ত্রীয় সংগীতের বার্তা যাঁরা সারা বিশ্বে পৌঁছে দিয়েছিলেন আলাউদ্দিন খাঁ, আলী আকবর খাঁ, উদয়শঙ্কর, রবিশঙ্কর, আয়েত আলী খাঁ, বিলায়েৎ খাঁ, পারিবারিক সূত্রে তাঁদের সকলেই এদেশের সঙ্গে যুক্ত৷ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন স্বপ্ন দেখেছিল  বড় পরিসরের অনুষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে শাস্ত্রীয় সংগীত উপস্থাপন করলে সাধারণ দর্শকের মাঝে তা সাড়া জাগাবে৷ নিয়মিতভাবে উৎসব আয়োজন করলে তা জনরুচিকে প্রভাবিত করবে এবং উচ্চাঙ্গসংগীতের যে গৌরবময় উত্তরাধিকার আমাদের রয়েছে, তা পুনরুজ্জীবিত হবে৷

উচ্চাঙ্গসংগীতের সুবিশাল বিস্তৃতি ও তীক্ষ বোধ আমাদের মধ্যে জাগিয়ে তোলে মানবিক চেতনা ও গভীর মর্মবোধ৷ মানবিক হওয়ার এই প্রয়াসকে সামনে রেখেই এ বছর ষষ্ঠবারের মতো উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব আয়োজনে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ব্রতী হয়েছিল৷

উৎসবের মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে দর্শকের সুযোগ হয়েছে সংগীতের শিরোমণি গিরিজা দেবী, আমজাদ আলী খান, বিরজু মহারাজ, বালমুরালী কৃষ্ণ, কিশোরী আমনকার, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, শিবকুমার শর্মা, আলী আহমেদ হোসেন, পারভিন সুলতানা, আশিষ খাঁ, অনিন্দ্য চ্যাটার্জি, স্বপন চৌধুরী, রাধা ও রাজা রেড্ডি, শাহিদ পারভেজ খান, উল্লাস কশলকার, রাইস খান, অজয় চক্রবর্তী, এন রাজম, রাশিদ খান, জাকির হোসেন, কুমার বোস, রাজন ও সাজন মিশ্র, মাধবী মুডগাল, প্রভা আত্রে, আলারমেল ভাল্লি, মালবিকা সারুক্কাই, বম্বে জয়শ্রী, এল সুব্রহ্মণ্যন, কড়াইকুডি মানি, শোভা মুডগাল, রনু মজুমদার, সুজাত খান প্রমুখের পরিবেশনা কাছ থেকে দেখা ও শোনার৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ