1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্য

বাংলাদেশের দামি পোশাকের বাজার

ফয়সাল শোভন
২৯ মার্চ ২০১৯

প্রচলিত পোশাকের চেয়ে দাম কয়েকগুণ বেশি৷ বাজারও বাড়ছে দ্রুত৷ তাই সম্ভাবনাও অনেক৷ পোশাকে বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলেও দামি ফ্যাশন পণ্যের এই বাজারে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে৷

Spanien Flamenco Fashion Show SIMOF in Seville
ছবি: Reuters/M. Del Pozo

একটি সাধারণ পোলো র্শাট রপ্তানি করলে ৩ ডলার দাম পাওয়া যায়৷ সেখানে সুতা, কাপড়ের মান ভিন্ন হলে কিংবা বাড়তি এমব্রোয়ডারি, প্রিন্টিং, ওয়াশ যুক্ত হলে দাম পাওয়া যায় কমপক্ষে আট ডলার, বলছিলেন বাংলাদেশের জায়ান্ট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান৷ গত কয়েক বছর ধরে তিনি প্রচলিত পোশাকের বাইরে এমন দামি আর ফ্যাশনেবল পণ্য তৈরি ও রপ্তানির চেষ্টা করছেন৷

ফারুক হাসানের মতে, বাংলাদেশের অনেক তৈরি পোশাক কারখানার উদ্যোক্তাই এখন ফ্যাশনেবল ও দামি পোশাকের এই বাজার ধরার চেষ্টা করছেন৷ আবার নতুন অনেক কারখানাই গড়ে উঠছে শুধু এ ধরণের পোশাক তৈরির জন্যে৷ কিন্তু বাজারটি ধরতে কিছুটা বেগও পেতে হচ্ছে৷

তৈরি পোশাকের দামি পণ্যের বাজারটাই এমন৷ কম দাম দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণ করা যাবে এমন নয়৷ আবার ভালো পণ্য তৈরির সক্ষমতা থাকলেই হবে না, অন্য অনেক কিছুই এর সাথে নির্ভর করে, বলেন এই খাতের গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম৷

কোন পোশাকের দাম বেশি

পোশাকের দাম কেমন হবে তা নির্ভর করে কাপড়ের ধরন আর ডিজাইনের উপর৷ তুলা ছাড়াও বিভিন্ন উদ্ভিদের পাতা, মাশরুমসহ নানা জৈব উপাদান থেকেও এখন সুতা তৈরি হয়৷ সেগুলো দিয়ে তৈরি কাপড়ের পোশাকের দাম হয় বেশি৷ আবার সাধারণ শার্ট, প্যান্ট, টি শার্টের তুলনায় বিশেষায়িত বাহিনীগুলোর ইউনিফর্মধর্মী পোশাকও বেশি দাম দিয়ে কেনেন ক্রেতারা৷ এর বাইরে আছে স্পোর্টস আর অ্যাথলেটিক আইটেমও৷ স্যুট-ব্লেজারধর্মী পোশাকেও কয়েকগুণ বেশি দাম পাওয়া যায় বলে জানান ফারুক হাসান৷

‘গত দশ বছরে দক্ষতা অর্জন করেছি’: রিয়াজ

This browser does not support the audio element.

বিশ্বে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে পোশাকেও তার ছোঁয়া লাগছে৷ যুক্ত হচ্ছে সেন্সর, ডিভাইস বহন করা যায় এমন সুবিধা৷ থ্রিডি প্রিন্টারসহ আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যেও এখন পোশাক তৈরি হয়৷ এমন ‘স্মার্ট পোশাকের' বাজারও দিন দিন বাড়ছে৷ গত বছর ঢাকায় আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ফ্যাশনোলজি সামিট'এ যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফ্যাশন প্রযুক্তি ম্যাগাজিনের সম্পাদক মুচানেতা কাপফুন্দে এই বাজারের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন৷ তাঁর হিসাবে ২০২০ সালের মধ্যে স্মার্ট ফেব্রিক্স দিয়ে তৈরি ফ্যাশনের বাজারের আকার দাঁড়াবে ১৩ হাজার কোটি ডলার৷ এই ধরণের পোশাকের বড় আকারের উৎপাদন এখনও সেভাবে শুরু হয়নি৷ যারা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিবে তারাই এই বাজারে এগিয়ে যাবে বলে জানান তিনি৷ 

রপ্তানির ৯০ ভাগই কম দামি

২০১৭-১৮ অর্থবছরে তৈরি পোশাক থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৩,০৬১ কোটি ডলার৷ এর মধ্যে শার্ট, ট্রাউজার, জ্যাকেট, টি-র্শাট, সোয়েটার এই ৫টি পণ্য থেকেই এসেছে ২,২৪০ কোটি ডলার৷ বাংলাদেশে পোশাক রপ্তানির ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বরাবর এই পণ্যগুলোরই দখলে থাকে, বিশ্ববাজারে যার দাম তুলনামূলক কম৷ এই বাজারে পোশাক সরবরাহকারীদের প্রতিযোগিতাও বেশি৷ বিজিএমইএ-র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান মনে করেন বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৯০ ভাগই এখন এমন পণ্যের দখলে৷ বাকি ১০ ভাগ ফ্যাশনেবল বা দামি পণ্য, যার আকার দাঁড়াচ্ছে ৩০০ কোটি ডলারের মতো৷ অথচ এই পণ্যের বিশ্ববাজার ১৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি বলে জানান তিনি৷

দামি বা সৌখিন পোশাকের এই বাজার প্রতি বছরই বাড়ছে৷ বিশ্বের ফ্যাশন শিল্পের ট্রেন্ডস নিয়ে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘ম্যাককেনসি অ্যান্ড কোম্পানি'৷ তাদের ‘দ্যা স্টেইট অব ফ্যাশন ২০১৯' অনুযায়ী, চলতি বছর পোশাকের বাজার ৪ থেকে ৫ ভাগ বাড়বে৷ আর লাক্সারি বা বিলাসবহুল পণ্যের বাজার বাড়বে ৪.৫ থেকে ৫.৫ শতাংশ৷

‘কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং জরুরি’: ফারুক

This browser does not support the audio element.

তবে বিলাসবহুল পণ্য ব্যবহারকারীর ৭০ শতাংশ বলছেন, তাঁরা টেকসইভাবে উৎপাদিত পোশাকের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বেশি দাম দিতেও রাজি আছেন৷

২১ ভাগ কারখানার সক্ষমতা আছে

ক্রেতারা ছবি আর একটি নমুনা পাঠান৷ সেই আদলে পোশাক তৈরি করা হয় কারখানাগুলোতে৷ এজন্য নির্দিষ্ট কাপড় কেটে, সেগুলোকে নমুনামত সেলাই করে জোড়া লাগালেই হয়৷ বাংলাদেশে সিংহভাগ শ্রমিক শেষ স্তরের কাটা এবং সেলাইয়ের এমন কাজেই জড়িত৷ দামি পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে এর বাইরে আরো কিছু বাড়তি মূল্য সংযোজনের প্রয়োজন হয়৷ এজন্য টেকনোলজিক্যাল আপগ্রেডেশন জরুরি বলে জানান বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. মোয়াজ্জেম৷ তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে ২১ ভাগ মাত্র এই প্রযুক্তিগত ‘আপগ্রেডেশন' করেছে৷ ‘‘এখন সব কারখানাতেই সাধারণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়৷ কিন্তু যেগুলো দিয়ে কারখানার কমপ্লায়েন্স বোঝায় কিংবা সক্ষমতা বোঝায় সেগুলো মাত্র ৫ ভাগের এক ভাগ কারখানা ব্যবহার করছে৷'' তাঁর মতে, এই ২১ ভাগ কারখানা যে-কোনো ক্রেতার চাহিদা মেটাতে বা উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরিতে সক্ষম৷ তবে শুধু উচ্চ মূল্যের পোশাকের বাজার ধরতেই নতুন করে বিশেষায়িত অনেক কারখানা গড়ে উঠছে বলেও জানান তিনি৷

বিজিএমইএ-র ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার হাজার কারখানা রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত৷ তাদের মধ্যে প্রায় আড়াইশটি এখন উচ্চ মূল্যের পোশাক রপ্তানি করছে বলে জানান সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান৷ তিনি বলেন, ‘‘স্যুট, ব্লেজার এই ধরনের ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্টের দিকে আমরা যাচ্ছি৷ আগে শুধু নরম্যাল ওয়াশের ডেনিম করতাম, এখন ইলাস্ট্রেন্ট ডেনিম, লাইক্রা ডেনিম, নিট ডেনিম করছি৷ বিভিন্ন ধরণের ওয়াশ হচ্ছে৷ গার্মেন্টেও ভিন্নতা আসছে৷'' সবার সহযোগিতা পেলে সামনে আরো এগিয়ে যাওয়ার সম্ভব বলে মনে করেন তিনি৷

গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি করলেও এই বাজারে প্রবেশ করেছে এক দশকেরও কম সময়ে৷ তখন যারা প্রথম এই উদ্যোগ নেয় তাদের মধ্যে একটি ইপিলিয়ন গ্রুপ৷ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন আল-মামুন ডয়চে ভেলেকে জানান বিলাসি পোশাকের ব্র্যান্ডগুলো এখন ধীরে ধীরে বাংলাদেশে আসছে এবং তাদেরকে তারা সন্তুষ্টও করতে পারছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আগে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এ ধরনের কাজ করতে পারতাম না৷ কিন্তু গত দশ বছরে আমরা এই দক্ষতাটা অর্জন করেছি৷'' একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেকে যেখানে ৫ ডলারের হুডি রপ্তানি করছে সেখানে তারা ২০ ডলার মূল্যের হুডিও ব্র্যান্ডগুলোর কাছে বিক্রি করেছেন৷

‘জাতীয় পর্যায়ে চেষ্টা করতে হবে’: মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

বছরে ইপিলিয়ন ২৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে৷ যার অর্ধেকই এখন আসছে এই ধরনের পণ্য থেকে৷ রিয়াজ আল মামুন বলেন, মূলত গত তিন বছর ধরে তারা বাজারটি ভালোভাবে ধরতে পেরেছেন৷ এক্ষেত্রে তুরস্কের সাথে তাদের প্রতিযোগিতা হচ্ছে৷ ‘‘ওদের ওখানে আগে যেসব কাজ যেত তার কিছু এখন আমরা পাচ্ছি,'' বলে জানান তিনি৷

দামি পোশাকের সবচেয়ে বড় প্রস্তুতকারক চীন৷ তাদের রপ্তানি আদেশের কিছুটাও বাংলাদেশ ধরতে পারছে বলে জানান রিয়াজ আল মামুন৷

সমস্যা ভাবমূর্তি

রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানায় ব্যাপক সংস্কার উদ্যোগ নেয়া হয়৷ এর ফলে কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা যে মানে বেড়েছে তা পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে নেই বলে দাবি করেন রিয়াজ৷ তাঁর কারখানাটিও সর্বোচ্চ মানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘লিড গোল্ড' সনদ অর্জন করেছে৷

বাংলাদেশে যত সবুজ কারখানা আছে, তা আর কোনো দেশে নেই বলে দাবি করেছেন ফারুক হাসানও৷ কিন্তু তারপরও দামি পোশাক বাজার ধরার ক্ষেত্রে ইমেজ সংকট একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানান তাঁরা৷ ‘‘ভালো পণ্য তৈরি করলেই বিক্রি হবে না৷ কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংটাও এক্ষেত্রে জরুরি,'' বলেন ফারুক হাসান৷ বিষয়টির সাথে একমত প্রকাশ করে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, ওভারঅল আমরা ইমেজ সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছি৷ কিন্তু হাই ভ্যালু প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে সময়মতো পণ্য পৌঁছানো জরুরি৷ সেটার জন্য বন্দরের প্রয়োজনীয় সুবিধা থাকা জরুরি৷'' তাঁর মতে, কারখানার বাইরের যে ব্যবসার পরিবেশের ইস্যু আছে সেখানটাতে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে৷ এজন্য উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷ ‘‘এই এফোর্ট শুধু সাপ্লায়ার পর্যায়ে দিলে হবে না এজন্য জাতীয় পর্যায়ে চেষ্টা করতে হবে,'' বলেন তিনি৷ তাঁর মতে শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে সামনের দিনে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে উচ্চ মূল্যের পোশাকের বাজার ধরার কোনো বিকল্প নেই৷

ফয়সাল শোভন ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক৷@FaisalShovon14
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ