‘‘আজ একটু প্রেসার বেড়েছে৷’’ প্রেসার বলতে বোঝায় ব্লাড প্রেসার কিংবা রক্তচাপ৷ জার্মানিতে হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন, এমন মানুষের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি৷ অথচ তাঁদের অর্ধেকই সে কথা জানেন না৷
বিজ্ঞাপন
প্রত্যেক হৃৎস্পন্দনের সঙ্গে মাপা হয় সিস্টোলিক অর্থাৎ সর্বোচ্চ, এবং ডায়াস্টোলিক অর্থাৎ সর্বনিম্ন রক্তচাপ: এই ধরুন ১২০/৮০, যা কিনা আদর্শ৷ জার্মানিতে আজকাল যে রোগ নিয়েই ডাক্তারের কাছে যান না কেন, রক্তচাপটা একবার মেপে দেখা হয়, রোগীর অজান্তেই তাঁর হাইপারটেনশন থাকার সম্ভাবনাটা এতই বেশি৷
উচ্চ রক্তচাপের কারণ ও প্রতিকার
উচ্চ রক্তচাপ নানা অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়৷ উচ্চ রক্তচাপ যদি কারো বেশিদিন থাকে, তাহলে তাঁর হৃদরোগ এবং ধমনির ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ সমস্যা দেখা দেয় মস্তিস্ক, কিডনি এবং চোখেও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উচ্চ রক্তচাপ বিপজ্জনক
‘উচ্চ রক্তচাপ খুবই বিপজ্জনক’ – বিশেষ করে যেহেতু মানুষ তা টের পায়না, বলেন জার্মানির স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানী বারমার-এর প্রধান ড.উরসুলা মার্শাল৷ অনেকে জানেই না যে তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে৷ একমাত্র ৩৫ বছরের বেশি বয়সিদের সাধারণত স্বাস্থ্য চেকআপের সময়ই তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধরা পড়ে৷
ছবি: picture alliance / dpa
উচ্চ রক্তচাপ নানা অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়
উচ্চ রক্তচাপ যদি কারো বেশিদিন থাকে, তাহলে তাঁর হৃদরোগ এবং ধমনির ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ সমস্যা দেখা দেয় মস্তিস্ক, কিডনি এবং চোখেও৷ উচ্চ রক্তচাপের সাধারণত বয়স বাড়া এবং মানুষের শরীরের ওজন বাড়ার সাথেও রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক৷ ২০১০ সালে সারা বিশ্বে নয় মিলিয়নেরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা গেছে৷
উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার কারণ অনেক
উচ্চ রক্তচাপের ঠিক আসল কারণ কী – তা সেভাবে প্রমাণ হয়নি৷ তবে অতিরিক্ত ওজন, স্ট্রেস, বেশি মাত্রায় মদ্য পান, ধূমপান, ডায়েবেটিস-২ যাঁদের রয়েছে এবং বয়স – এসবই এর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে৷ তাছাড়া জেনেটিক কারণও রয়েছে৷ অর্থাৎ মা-বাবার ‘হাই প্রেশার’ থাকলে সন্তানদেরও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
ছবি: PeJo - Fotolia.com
নিয়মিত চেকআপ
বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে পারেন না যে তাঁদের কখন উচ্চ রক্তচাপ হয়৷ কারণ রক্তচাপ বেড়ে গেলে শরীরের তেমন কোনো সমস্যা বোধ হয় না৷ আর সে কারণেই তা সহজে বোঝা যায়না৷ ড.মার্শালের পরামর্শ, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করার মাধ্যমেই শুধুমাত্র তা বোঝা বা জানা সম্ভব৷ তাই নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত৷ প্রয়োজনে ঘরে বসে নিজেও প্রেশার মাপা যেতে পারে, তবে ভালোভাবে মাপার যন্ত্রের ব্যবহার শিখে নিয়ে৷
ছবি: Fotolia/Jürgen Fälchle
মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া
উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা যেহেতু বুঝতে পারেন না কখন রক্তের চাপ বাড়ে বা কমে, তাই তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাতেই অভ্যস্ত৷ এর কারণে অনেক অঘটনও ঘটে থাকে৷ হঠাৎ করে রক্তের চাপ বেশি বা কম হওয়ায় হয়ত রাস্তায় মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন কেউ কেউ৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
উচ্চ রক্তচাপ ও চিকিৎসা
এর জন্য ওষুধ তো রয়েছেই, তবে ডাক্তাররা প্রথমেই বলে থাকেন ওজন কামানোর কথা৷ স্ট্রেস এড়িয়ে চলা এবং নিয়মিত হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করার কথা৷
ছবি: Fotolia/Markus W. Lambrecht
উচ্চ রক্তচাপ ও নারী
যাঁদের ওজন বেশি ছিল এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে ওষুধ খেতেন, তাঁদের অনেকের ওজন কমানোর পরে স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ রক্তচাপও কমে গেছে – এমন প্রমাণ প্রায়ই পাওয়া যায়৷ জার্মানিতে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন ৩৫ মিলিয়ন মানুষ৷ তবে রোগীর সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের কিছুটা কম৷
ছবি: WHO/C. Black
উচ্চ রক্তচাপ ও খাওয়া দাওয়া
অনেক সময় দেখা যায় খাওয়া দাওয়ার খানিকটা পরবর্তন করলেই উচ্চ রক্তচাপ কমতে শুরু করে৷ একটা কথা মনে হয় আজ আর কারো অজানা নয় যে, প্রায় সব অসুখের মূলেই রয়েছে অতিরিক্ত ওজন৷ শরীরের জন্য যা প্রয়োজন সেসব খাবার বুঝে শুনে খেলেই ওজন কামানো সম্ভব৷
ছবি: Fotolia
কম লবণের ব্যবহার
খাবারে লবণের পরিমাণও কমানো উচিত, কারণ অতিরিক্ত লবণ হাই প্রেশারের জন্য ক্ষতিকর৷ আর উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের জন্য বড় ঝুঁকি৷
ছবি: Christian Thiele
উত্তেজনা এড়িয়ে চলা
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের যে কোনো ধরণের উত্তেজনা এড়িয়ে খুশি থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
গ্রেড ওয়ান হাইপারটেনশন বলতে ধরা হয়: যদি সিস্টোলিক ১৪০ থেকে ১৫৯, এবং ডায়াস্টোলিক ৯০ থেকে ৯৯-এর মধ্যে পড়ে৷ ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে যাঁরা, তাঁদের হাইপারটেনশন থাকার সম্ভাবনা দুই-এর মধ্যে এক৷ মুশকিল হয়, যদি বছর ত্রিশেকের কারোর – তাঁর নিজের অজান্তেই – ধরা যাক ১৬০/৯০ প্রেসার থাকে৷ ঐ বয়সের মানুষদের হাই ব্লাড প্রেসার থাকলেও তাঁরা সুস্থই বোধ করেন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠনের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী হাই ব্লাড প্রেসার শুরু হয় ১৪০/৯০ থেকে৷
সিস্টোলিককে যদি ধমনিতে রক্তচাপের সাধারণ পর্যায় বলে ধরে নেওয়া যায়, তাহলে মনে রাখতে হবে, ধমনিগুলো নমনীয় বলেই সেগুলো রক্তের চাপ বাড়া অথবা কমার সঙ্গে সঙ্গে তারা নিজেরাও প্রসারিত কিংবা সংকুচিত হতে পারে৷ কিন্তু রক্তচাপ একটানা উচ্চ থাকলে ধমনিগুলো ঠিক এই বৈশিষ্ট্যই হারিয়ে ফেলে৷ সেই সঙ্গে থাকে ধমনির ভিতরে এক ধরনের মোমের মতো পদার্থ জমা হওয়া, যাকে বলে ‘প্লাক'৷ এ সব কারণে ধমনি থেকে হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটতে পারে৷
হাই ব্লাড প্রেসার জেনেটিক, অর্থাৎ বংশগত কারণে হতে পারে৷ সঙ্গে থাকে ‘স্ট্রেস' বা শারীরিক কিংবা মানসিক চাপ, তা সে কর্মক্ষেত্রেই হোক আর পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত জীবনেই হোক৷ ব্যায়াম-হাঁটা-চলাফেরা না করে আয়াসী জীবন, নিয়মিত মদ্যপান, খাওয়ার পাতে বড় বেশি নুন খাওয়া – এ সবই উচ্চ রক্তচাপ ঘটাতে পারে৷
হাই ব্লাড প্রেসার আজ বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলি ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে, উপসাগরীয় দেশগুলিতে, চীন বা ভারতে আরো বেশি করে দেখা দিচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসারের রোগী – এবং বাকিরা, যাঁদের রোগী হতে বাকি আছে – তাঁরা কি করতে পারেন? নুন খাওয়া কমান! হাঁটাহাঁটি, চলাফেরা করুন! ওজন কমান!
আসল কথা বোধহয় এই: সুস্থভাবে বাঁচলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে না কেন?