শিল্প-কারখানায় রোবটের ব্যবহার আগেই শুরু হয়েছে৷ মানুষের জন্য বিপজ্জনক অনেক কাজ এখন রোবট করছে৷ এ সব কাজের জন্য রোবটকে আরও উন্নত করতে সারা বিশ্বেই গবেষণা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পে নিয়োজিত একদল গবেষক রোবট ওড়ানো নিয়ে কাজ করছেন৷ একটি রোবট দেখিয়ে গবেষক কস্টাস আলেক্সিস জানালেন, ‘‘এখানে আছে ‘ব্রেন’৷ আর এখানে সেন্সর আর প্রপেলার৷ প্রপেলার থেকে তথ্য ব্রেন-এ যায়, যা ন্যাভিগেশন সংক্রান্ত ভুলগুলো রিয়েল টাইমে পরিমাপ করে এবং প্রপেলারকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলো ঠিক করে৷’’
কয়েকটি ক্যামেরা থাকার কারণে মডেলটি সবকিছু ভালভাবে দেখতে পারে এবং সেভাবে সে তার পথ খুঁজে নেয়৷ এটি সামনের বাধা এড়াতে সক্ষম, এবং একে ধাক্কা দিলে সে আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসে৷
আরেক গবেষক ইয়ানশ নিকোলিচ জানালেন, ‘‘মডেলটির নিজেকেই জানতে হবে যে, সে কোথায় আছে, কত দ্রুত এগোচ্ছে, আর তার চারপাশটাই বা দেখতে কেমন৷ সে কারণে মডেলে কয়েকটি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে৷ এছাড়া আছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এলইডি লাইট৷ আরও আছে পরিমাপ যন্ত্র, যা থেকে আমরা ‘অ্যাঙ্গুলার ভেলোসিটি ও অ্যাক্সিলারেশন’ জানতে পারি৷ ফলে যন্ত্রটি জানে, সে ঠিক কোথায় আছে৷ আর একে ধাক্কা দিলে সে আবার ফিরে আসে৷’’
আধুনিক ইলেকট্রনিক পণ্যের অনন্য এক প্রদর্শনী
অ্যামেরিকার বাৎসরিক ইলেকট্রনিক ভোগ্যপণ্যের প্রদর্শনী নিজেকে ‘নবধারার বিশ্বায়িত মঞ্চ’ বলে জাহির করে থাকে৷ ৯ই জানুয়ারি থেকে চলছে আধুনিকতম টেক পণ্যের এই প্রদর্শনী৷
অ্যামেরিকার বাৎসরিক ‘কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শো’ (সিইএস) প্রথম চালু হয় ১৯৬৭ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে৷ কিন্তু গত ২০ বছর ধরে তা লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শনের আদর্শ স্থান এই সিইএস, এবছর যেমন আভাটারমাইন্ডস কোম্পানির আইপ্যাল স্মার্ট এআই রোবটগুলি নজর কাড়ছে৷ ছবিতে তাদের ক্যালিস্থেনিক্স করতে দেখা যাচ্ছে৷ এই রোবটগুলি শিশু ও প্রবীণদের সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/S. Marcus
এটুকু বুঝলে না, ওয়াটসন?
২০১২ সালে মাইক্রোসফ্ট ঘোষণা করে যে, তারা আর সিইএস-এ তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে না৷ কিন্তু আইবিএম-এর মতো অন্যান্য কম্পিউটার কোম্পানি পূর্বাপর পুরোমাত্রায় উপস্থিত৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দর্শকরা কিভাবে ‘আইবিএম ওয়াটসন’ সিস্টেমটি পরখ করে দেখছেন: কম্পিউটার প্রণালীটি সাধারণ ভাষায় জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নের জবাব দিতে সক্ষম৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. McNew
কী আরামের, না?
২০১৭ সালের সিইএস প্রদর্শনীতে ১,৮৪,০০০ দর্শক এসেছিলেন প্রায় ৪,০০০ কোম্পানির পেশ করা ইলেকট্রনিক ভোগ্যপণ্য দেখতে৷ যে কোনো পণ্য নিজে পরীক্ষা করেও দেখা যায়৷ ছবিতে যেমন দর্শকরা প্যানাসোনিকের নতুন এমএজে৭ ম্যাসেজ চেয়ারে শুয়ে দেখছেন, বৈদ্যুতিন মালিশ ঠিক কতটা আরামের...৷
ছবি: Reuters/S. Marcus
হালের উড়ন্ত চাকির নাম ড্রোন
সিইএস-এর উদ্যোক্তা কম্পিউটার টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশন বলছে যে, এ বছরের প্রদর্শনীতে বিশ হাজার নতুন পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে৷ এইসব নতুন পণ্যের মধ্যে একাধিক নতুন ড্রোন প্রযুক্তি রয়েছে, যেমন চীনের সুয়েফেং চেন-এর প্রদর্শিত কুড্রোন ড্রোন, চেন যা তাঁর আইফোনের মাধ্যমে পরিচালনা করছেন (ছবি)৷ এ ধরনের সংযোগকে আজকাল ‘ইন্টারনেট অফ থিংস’ বলা হয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/S. Marcus
রোবট রাইডার
রোবটিক্স সিইএস-এ ক্রমেই আরো বেশি প্রতিপত্তি অর্জন করছে, বিশেষ করে যখন সিইএস-এর ঘোষিত লক্ষ্য হলো, ‘বুদ্ধিযুক্ত, স্বয়ংচালিত সব যন্ত্র, যা আমাদের জীবনধারা পাল্টে দিচ্ছে৷’ এবছরের প্রদর্শনীতে ‘মোটোবট’ নামের এক যান্ত্রিক মোটর সাইকেল চালককে দেখানো হয়েছে (ছবি)৷ কিন্তু এ ধরনের রোবোটিক্সের কোনো বাস্তব, ব্যবহারিক উপযোগিতা আছে কিনা, সে বিষয়ে সমালোচকরা নিশ্চিত নন৷
ছবি: Reuters/S. Marcus
মার্সিডিজ টু-সিটার
২০১৮ সালের সিইএস-এ মোটর গাড়ি প্রযুক্তি বিশেষভাবে বর্তমান৷ তার কারণ, ‘কনসেপ্ট কার’ মানেই আজকাল ‘ইলেকট্রোমোবিলিটি’ ও ‘সেল্ফড্রাইভিং’ বা স্বয়ংচালিত গাড়ি৷ এবারের প্রদর্শনীতে নজর কেড়েছে মার্সিডিজ-এএমজি প্রোজেক্ট ওয়ান গাড়ি – একটি প্লাগ-ইন হাইব্রিড সুপারকার যাতে ফর্মুলা ওয়ান রেসিংয়ের টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/S. Marcus
চমকের পর চমক
সিইএস-এর প্রচার অভিযানে আগে থেকেই ঘোষণা করা হয়েছিল যে, এ বছরের প্রদর্শনীতে আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি চমক থাকবে৷ কিন্তু অধিকাংশ বড় টেকনোলজি কোম্পানি আজকাল তাদের পণ্য পেশ করার জন্য আলাদা ‘ইভেন্ট’-এর ব্যবস্থা করে থাকে, যার ফলে সিইএস-এর চমক কিছুটা কমেছে বৈকি৷
নিকোলিচ বলেন, ‘‘এখন যেটা করা হয় তা হচ্ছে, পুরো প্ল্যান্ট বন্ধ করে মানুষ পাঠিয়ে হাতেকলমে পরীক্ষা করা, যা সময়সাপেক্ষ ও খুবই বিপজ্জনক একটি কাজ৷ এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে মানুষ মারাও যায়৷ তাই আমরা এক বা একাধিক হেলিকপ্টার পাঠানোর পরিকল্পনা করছি, যা থেকে পুরো বয়লারের ত্রিমাত্রিক ছবি পাওয়া যাবে৷ পরে সেই ছবি দেখে শুধু নির্দিষ্ট এলাকা হাতেকলমে পরীক্ষা করা যেতে পারে৷’’
প্রয়োজন হলে উড়ন্ত রোবটের নকশায় পরিবর্তন এনে সেটি দিয়ে ছোট কোনো বস্তু তুলে আনা কিংবা আল্ট্রাসনিক সেন্সর ব্যবহার করে দেয়ালের ভেতরের ছবি দেখা যেতে পারে৷ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার কারণে এটি পরিচালনা করা বেশ সহজ৷ এর জন্য বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন নেই৷
বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রবার্তো নালদি বলেন, এই রোবট ব্যবহার করা সহজ৷ ‘‘ব্যবহার করা খুবই সহজ৷ এটি কীভাবে চালাতে হয়, তাও জানার প্রয়োজন নেই৷ শুধু বোতাম চেপে ডান-বাম, উপর-নীচ করা যায়৷ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার কারণে অনভিজ্ঞরাও এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷ অনেকটা ভিডিও গেমের মতো,’’ বলেন তিনি৷
তবে এ ধরণের যন্ত্রের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে বলে জানান বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরেন্সো মার্কোনি৷ ‘‘এ ধরনের যন্ত্রের ক্ষেত্রে দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ আছে৷ প্রথমত, অপরিচিত পরিবেশে নিজের মতো চলতে পারবে এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য সেন্সর দিয়ে রিয়েল টাইমে সে ধরনের পরিবেশ গড়ে তোলা৷ আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলার পাশাপাশি যন্ত্রকে আশেপাশের পরিবেশ অনুযায়ী নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে,’’ বলেন তিনি৷
গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে উড়ন্ত রোবট মানুষের অনেক কাজ সহজ ও নিরাপদ করে শিল্পখাত অটোমেশনের একটি নতুন যুগের সূচনা করবে৷
গত অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
১৪ লাখ মানুষের দেশে স্টার্ট-আপদের রমরমা
হয়তো তার ক্ষুদ্র জনসংখ্যাই ভবিষ্যৎমুখী স্টার্ট-আপের ক্ষেত্রে এস্টোনিয়াকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্থান করে দিয়েছে৷ ডেলিভারি রোবট থেকে শুরু করে এআই-চালিত ভাষা অ্যাপ, সব কিছুই আছে এস্টোনিয়ার স্টার্ট-আপ রেঞ্জে৷
ছবি: Starship Technologies
স্টারশিপের কাজ হবে...
...চিঠিপত্র বিলি করা! ভ্যানে করে এসে পিৎসা দিয়ে যাওয়া, কিংবা পার্সেল ডেলিভারি করা, কিংবা পিয়ন এসে চিঠি দিয়ে যাওয়ার আর প্রয়োজন পড়বে না৷ স্টারশিপ টেকনোলজিস কোম্পানিটির স্রষ্টা হলেন স্কাইপের দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা৷ কেম্পানির ট্যালিন, লন্ডন, ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া ও হামবুর্গে অফিস আছে৷ সেখানে ডমিনো’স পিৎসা কোম্পানি আর হার্মেস লজিস্টিক কোম্পানি স্টারশিপ টেকনোলজিস-এর ডেলিভারি রোবটটি পরীক্ষা করে দেখছে৷
ছবি: Starship Technologies
এ ধরণের স্টার্ট-আপে যারা বিনিয়োগ করে থাকে
‘ফান্ডারবিম’ কোম্পানিটির বয়স চার বছরও নয়৷ ইতিমধ্যেই সে ইউরোপের সেরা ‘ফিনটেক’ কোম্পানি – অর্থাৎ টেকনোলজি কোম্পানির অর্থ লগ্নিকারী সংস্থা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে৷ ‘ফান্ডারবিম’ স্টার্ট-আপের মুখ্য কার্যালয় হলো ট্যালিনের টেলিস্কিভি ক্রিয়েটিভ সিটিতে, যেখানে ‘লিংভিস্ট’ ভাষা অ্যাপ বা লিফ্ট৯৯-এর মতো স্টার্ট-আপের অফিস৷
ছবি: Julia Köppe
বিজ্ঞানী থেকে ভাষাতত্ত্ববিদ
মাইট ম্যুন্টেল উদ্যোগী পুরুষ৷ এস্টোনিয়ার মানুষ; সুইজারল্যান্ডের ‘সার্ন’-এ পার্টিকল ফিজিসিস্ট হিসেবে কাজ করার সময়েই তাঁর মাথায় আসে যে, হিগস-বোসন কণিকা আবিষ্কার করার জন্য তিনি যে লগারিদমগুলি ব্যবহার করেছেন, সেগুলি দিয়ে ফরাসি ভাষাও শেখা যেতে পারে৷ আজ তিনি ভাষাশিক্ষার অ্যাপ লিংভিস্টের বিকাশে যে ৪০ জন বিজ্ঞানী সংশ্লিষ্ট, তাদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন৷
ছবি: Lingvist
স্টার্টআপ ওয়াল অফ ফেম
মানে ‘ওয়াক অফ ফেম’ আর ‘হল অফ ফেম’-এর মাঝামাঝি কিছু একটা! স্টার্টআপ সেক্টরে এস্টোনিয়ার উত্থানের শুরু স্কাইপ দিয়ে, মাইক্রোসফ্ট যা ২০১১ সালে ৮৫০ কোটি ডলার দিয়ে কেনে৷ স্কাইপের প্রতিষ্ঠাতারা তারপর ট্রান্সফারওয়াইজ, স্টারশিপ টেকনোলজিস ও অন্যান্য স্টার্টআপ শুরু করেছেন৷ সাধে কি আর তাদের ‘এস্টোনিয়ান মাফিয়া’ বলা হয়ে থাকে! এস্টোনিয়ায় প্রতি এক লাখ বাসিন্দা পিছু স্টার্টআপের সংখ্যা হলো ৩১, যা ইউরোপে তৃতীয়৷
ছবি: DW/B. Bathke
হালফ্যাশনের প্রযুক্তি, কিন্তু চেহারাটা সে আমলের
‘ই-ড্রাইভ রেট্রো’ খনিজ তেলে চলা পুরনো আমলের ভিন্টেজ গাড়িগুলিকে পুরোপুরি ব্যাটারি-চালিত গাড়িতে পরিণত করার ক্ষমতা রাখে৷ এ ধরনের গাড়ি এখন বিশ্বব্যাপী লাক্সারি কার মার্কেটের একটা বড় অংশ দখল করতে চলেছে৷
ছবি: DWE/B. Bathke
ফ্ল্যাটের সবজি!
মহাকাশযানের সবজিও বলা যেতে পারে, কেননা, এস্টোনীয় বংশোদ্ভূত মাটিয়াস লেপ নভোচররা তাদের মহাকাশযানে যেভাবে টবে সবজির চাষ করেন, তা দেখে পৃথিবীর ইট-কাঠ-পাথরের শহরগুলোর বাসিন্দাদের জন্য একই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করার প্রেরণা পান৷ ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ‘ক্লিক অ্যান্ড গ্রো’ কোম্পানি সাড়ে তিন লাখের বেশি টবের বাগান ও খামার বিক্রি করেছে৷
ছবি: Click & Grow
আশ্চর্য ব্যাটারি?
স্কেলিটন টেকনোলজিস বলে থাকে, তারা নাকি ‘এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম ও গ্র্যাফিন-ভিত্তিক সুপারক্যাপাসিটেটর’-এর ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃস্থানীয়৷ এ ধরনের ব্যাটারি অনেক বেশি শক্তি দেয়, রিচার্জ করতে খুব কম সময় লাগে ও বহুদিন ধরে কাজ করে৷ স্কেলিটন টেকনোলজিস কেম্পানি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসা-কে ব্যাটারি সরবরাহ করে থাকে; তাদের গবেষণা চলে ট্যালিনে, ব্যাটারি উৎপাদনের কাজ হয় জার্মানিতে৷