পাঁচদিনে সাতজন সাধারণ মানুষের হত্যার পর জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে তল্লাশি অভিযানে নেমেছে পুলিশ। দুইদিনে গ্রেপ্তার ৭০০ জন।
বিজ্ঞাপন
জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গত দুইদিনে ৭০০জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত-ই-ইসলামির সমর্থক বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তিরা জামাতের সিমপেথাইজার। ওভারগ্রাউন্ড কর্মী হিসেবে তাদের অনেকে কাজও করতো। গোয়েন্দারা জানিয়েছে, আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরো হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে কাশ্মীরে। সে কথা মাথায় রেখেই ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
কাশ্মীরের পরিস্থিতি
গত একমাস ধরে কাশ্মীর উত্তপ্ত হয়ে আছে। তবে গত সপ্তাহে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। একের পর এক সাধারণ মানুষকে খুন করতে শুরু করে সন্ত্রাসীরা। অভিযোগ, বেছে বেছে হিন্দু পণ্ডিত এবং শিখদের খুন করা হচ্ছে। যদিও যে সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে মুসলিমও আছে। নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে খুন করে তারা কাশ্মীরে উত্তেজনা জারি রাখতে চাইছে বলে অভিযোগ।
আবার রাজ্য হবে কাশ্মীর, প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী মোদীর
জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে আবার রাজ্য করা হবে বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে।
ছবি: Indian Prime Ministry/AA/picture alliance
দীর্ঘদিন পরে বৈঠক
দীর্ঘদিন পর কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী। ৩৭০ ধারা বিলোপের পর, জম্মু ও কাশ্মীরকে একটি রাজ্য থেকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পর এই প্রথম বৈঠক। তাতে যোগ দেন আটটি দলের ১৪ জন নেতা। ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং লেফটন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহাও।
ছবি: Indian Prime Ministry/AA/picture alliance
আবার রাজ্য হবে
সেই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে আবার রাজ্য করা হবে। তবে সেটা করা হবে উপযুক্ত সময়ে। সেই উপযুক্ত সময়ের কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি।
ছবি: Indian Prime Ministry/AA/picture alliance
দিল ও দিল্লির দূরত্ব
প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, কাশ্মীরের সঙ্গে দিল বা মনের দূরত্ব এবং দিল্লির দূরত্ব ঘোচাতে হবে। তিনি কাশ্মীরে নির্বাচনের কথা বলেন। তার জন্য ডিলিমিটেশন বা নির্বাচনকেন্দ্রের সীমানার পুনর্বিন্যাসের কথাও বলেন। তার পরেই নির্বাচিত সরকার হবে।
ছবি: Indian Prime Ministry/AA/picture alliance
অমিত শাহের বক্তব্য
অমিত শাহ বলেছেন, তিনি সংসদেই জানিয়েছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা দেয়া হবে। তার জন্য ডিলিমিটেশন দরকার, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়া দরকার।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh
কী বলছেন ওমর আবদুল্লা
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা বলেছেন, ডিলিমিটেশন কেন শুধু কাশ্মীরেই হবে? তিনি জানিয়েছেন, অনেক নেতাই বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে। দিল্লির মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে রেখে বিধানসভা নির্বাচন করালে হবে না। আর প্রশাসনে কাশ্মীর ক্যাডার আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
ডিলিমিটেশন নিয়ে অখুশি
ওমর আবদুল্লা জানিয়েছেন, কোনো দলই কাশ্মীরে ডিলিমিটেশন নিয়ে খুশি নয়। অন্য রাজ্যে ডিলিমিটেশন হবে ২০২৬ সালে। কাশ্মীরে এখনই করার কথা বলা হচ্ছে। প্রায় সব রাজনৈতিক দলই জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীরে এখন ডিলিমিটেশন দরকার নেই। আগে কেন্দ্রীয় সরকার ও কাশ্মীরের মধ্যে আস্থা ফেরানো দরকার।
ছবি: Tauseef Mustafa/AFP
মেহবুবা মুফতির বক্তব্য
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির বক্তব্য, তারা ৩৭০ ধারা চান এবং তার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে লড়াই করবেন। তাতে কয়েক মাস লাগতে পারে, কয়েক বছরও লাগতে পারে। কিন্তু তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।
ছবি: Getty Images/S. Hussain
কমিটি হবে
কাশ্মীরের নেতাদের দাবি মেনে বৈঠকে ঠিক হয়েছে, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেয়ার দাবি খতিয়ে দেখতে একটা কমিটি করবেন লেফটন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা। কমিটি বন্দিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
ছবি: Danish Ismail/Reuters
8 ছবি1 | 8
পাঁচদিনে সাতজন খুন হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জরুরি বৈঠক ডাকেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের এনএসএ অজিত ডোভাল। এরপরেই কাশ্মীরে একটি বিশেষ দল পাঠায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কাশ্মীর পুলিশের সঙ্গে সেই দল তল্লাশি অভিযান শুরু করে। এরপরেই গত দুইদিনে ৭০০জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কাশ্মীর পুলিশের এক উচ্চপদস্থ অফিসার ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পরে কাশ্মীরে উত্তেজনা বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু মানুষ তালেবানকে সমর্থন জানিয়ে পোস্ট করেছে। কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনও নতুন করে অ্যাক্টিভ হয়েছে। তারই জেরে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষকে টার্গেট করা হচ্ছে। গত এক বছরে ২৮টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে সাতটি ঘটেছে গত সপ্তাহে।
রাজনৈতিক বিতর্ক
কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতি। দুইজনেই এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের জবাব চেয়েছেন। ফারুক আবদুল্লাহের দাবি, নরেন্দ্র মোদীর এই পরিস্থিতিতে কাশ্মীরে আসা উচিত।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নব্বই দশকের পর কাশ্মীর এতটা উত্তপ্ত হয়নি। নব্বইয়ের দশকে হত্যা, লড়াইয়ের ঘটনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ফের তেমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। দ্রুত স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে এর সমাধানসূত্র খোঁজা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।