উত্তরপ্রদেশে গরুর জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালু হচ্ছে। গরুর শরীর খারাপ হলে কল দিলেই পশু-চিকিৎসক সহ অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যাবে।
বিজ্ঞাপন
যোগী আদিত্যনাথ সরকারের নতুন উদ্যোগ। গরুর জন্য অ্যাম্বুলেন্স। রাজ্যের ডেয়ারি, পশুপালন ও মৎসমন্ত্রী লক্ষ্মীনরায়ণ চৌধুরী জানিয়েছেন, ''কল দিলেই ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স যাতে পৌঁছে যায় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আপাতত ৫১৫টি অ্যাম্বুলেন্স, চালু করা হবে। পরে আরো অ্যাম্বুলেন্স চালু হবে। সম্ভবত ভারতে এই প্রথম গরুদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হচ্ছে।''
মন্ত্রী জানিয়েছেন, ''এর ফলে গুরুতর অসুস্থ গরুদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। সেজন্যই অ্যাম্বুলেন্সে একজন পশুচিকিৎসক ও তার দুই সহযোগী থাকবেন। আগামী ডিসেম্বর থেকে অ্যাম্বুলেন্স চালু হবে। তার জন্য লখনউতে কল সেন্টারও তৈরি করা হচ্ছে।''
ভারতে যত ‘গরু-বাণী’
গত কয়েক বছরে ভারতে গরু নিয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উক্তি, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: AP
অক্সিজেন শুধু গরুর
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত জুলাই মাসের একটি জনসভায় গরু নিয়ে করেন বিস্ফোরক মন্তব্য৷ তিনি বলেন, ‘‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে গরুই একমাত্র প্রাণী যে একাধারে অক্সিজেন নিশ্বাসের সাথে বাতাস থেকে গ্রহণ করে ও শ্বাস ছাড়ার সাথে তা পরিত্যাগও করে৷ এই কারণেই গরুকে আমরা মায়ের সম্মান দিই৷’’ একই সভায় তিনি বলেন যে ভারতের গির অঞ্চলের গরুর দুধে নাকি রয়েছে সোনা!
ছবি: AP
ক্যান্সাররোধে গরু
ভোপাল কেন্দ্র থেকে লোকসভায় গেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা৷ নির্বাচনের আগে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে গোমূত্র পান করে নাকি ক্যান্সারমুক্ত হয়েছেন তিনি৷ পরে যদিও ড. এস এস রাজপুত, যিনি প্রজ্ঞার একটি অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন, জানান যে প্রজ্ঞার ক্যান্সার রয়েছে এমন কোনো তথ্যউপাত্ত তাঁর মেডিকাল রিপোর্টে পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Imago Imaged/Hindustan Times
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও গরু
একই সাক্ষাৎকারে প্রজ্ঞা গরু নিয়ে একটি মন্তব্যেই থামেননি৷ গরুর গায়ের চামড়ায় হাত বোলালে নিয়ন্ত্রণ করা যায় রক্তচাপ, বলে তাঁর বিশ্বাস৷ তিনি বলেন, ‘‘গরুর পিঠ থেকে ঘাড়ের দিকে হাত বোলালে যিনি হাত বোলাচ্ছেন, তার রক্তচাপ কমে আসবে৷ এই চিকিৎসা অমৃতের সমান৷’’
ছবি: IANS
শ্রীকৃষ্ণ ও গরুর দুধ
সম্প্রতি আসামের শিলচরের বিধায়ক ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতিক দিলীপ পাল বলেন, ‘‘ঠিক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ঢঙে একটি গরুর সামনে বাঁশি বাজালে গরুর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা উন্নত হয়৷’’
ছবি: DW/S.Mishra
গোমূত্রের যত সুফল
ভারতে বর্তমান রাজনীতি ও অর্থনীতিতে গোমূত্রের বিশাল গুরুত্ব৷ বাবা রামদেবের ‘পতঞ্জলি’ সংস্থা গত কয়েক বছরে গোমূত্র ও গোমূত্রজনিত নানা পণ্য থেকে বিরাট ব্যবসা করেছে৷ রাজীব দিক্ষিত নামে এক ইউটিউব ব্যক্তিত্ব রামদেবের গোমূত্রপণ্যের ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি রাখতে গিয়ে বলেন যে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, আলসার, দৃষ্টিহীনতা, অতিরিক্ত মেদ, গ্লুকোমাসহ একাধিক শারীরিক অসুবিধার সমাধান নিয়মিত গোমূত্র পান৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
গরুর জন্য মন্ত্রণালয়
ভারতই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে রয়েছে গরুর পৃথক মন্ত্রণালয়৷ ২০১৪ সালে সরকার গঠন করে ভারতীয় জনতা পার্টি৷ ভারতের বৃহত্তম রাজ্য রাজস্থানেও ক্ষমতায় তারাই৷ সেই রাজ্যেই গঠিত হয় প্রথম ‘গরু সংরক্ষণ মন্ত্রণালয়’৷ পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয় ‘আয়ুষ’ (আয়ুর্বেদ, যোগ, ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, হোমিওপ্যাথি ও সিদ্ধ চিকিৎসা গবেষণার মন্ত্রণালয়) সম্প্রতি ৫৮০ কোটি রুপি ব্যয় করেছে গোশালা নির্মাণখাতে৷
ছবি: DW/S.Mishra
6 ছবি1 | 6
সেই সঙ্গে ভ্রুণ ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে যে গরু দুধ দেয় না, সেগুলি দুধ দেবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। এর ফলে ছাড়া গরুর সমস্যা দূর হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। কারণ, দুধ দেয়া বন্ধ করলে কৃষকরা সেই গরুগুলিকে ছেড়ে দেয়। ফলে দলে দলে ক্ষুধার্ত গরু পরে কৃষকদের খেতে হামলা করে। তাই উত্তর ভারত-জুড়ে কৃষকরা রাতে ফসল পাহাড়া দেন। অনেকে খেতের চারপাশে বেড়াও দিয়েছেন।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, এখন মথুরা সহ আটটি জেলায় এই স্কিম চালু করা হবে। মন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম যোগী আদিত্যনাথ সরকার গোশালা বানাবার জন্য অর্থ সাহায্য করেছে। সেখানে বেওয়ারিশ গরু রাখা হয়। কোনো সাবেক সরকার এই পদক্ষেপ নেয়নি বলে তার দাবি।
আসাম-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু চুরির কাহিনি
15:03
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''ভোট আসছে। তাই এই ধরনের আরো অনেক পদক্ষেপই নিতে থাকবে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। উত্তরপ্রদেশে বেওয়ারিশ গরুর সমস্যা প্রবল। কৃষকরা ক্ষুব্ধ। গরু দুধ দেয়া বন্ধ করলে কৃষকদের পক্ষে তাদের আর খাওয়ানো সম্ভব হয় না। তাই তারা গরু ছেড়েদেন। সেসব গরু পরে খেতে গিয়ে তাণ্ডব চালায়।'' তার মতে, ''গরুর জন্য অ্যাম্বুলেন্স হয়েছে, ভ্রুণ প্রযুক্তি চালু হচ্ছে, এটা অবশ্যই ভালো কথা। কিন্তু সেই সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি ঘটানো উচিত। মানুষও যাতে দরকার হলেই ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স পান, সেই ব্যবস্থা করা উচিত।''