1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উত্তরপ্রদেশে বিজেপির মুখে তালেবান

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
৩০ আগস্ট ২০২১

উত্তরপ্রদেশে শুরু হয়ে গেল বিজেপি-র প্রচার। তালেবানকে সামনে রেখে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

তালেবান নিয়ে উত্তর প্রদেশে প্রথম মুখ খোলেন যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: Altaf Qadri/AP Photo/picture alliance

শুরু করেছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। দিন বারো আগে, যখন তিনি তালেবানদের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, এক শ্রেণির মানুষ তাদের সমর্থন করছেন। দিন দুয়েক আগে উত্তরপ্রদেশ বিজেপি একটি টুইট করেছে। সেখানে একটি ভিডিও আপলোড করা হযেছে। সেখানে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবকে উদ্দেশ্য করে একটা প্রশ্ন রয়েছে, ''অখিলেশজি, জনতা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। তালেবান চিন্তাধারায় চলা সমাজবাদী পার্টির নির্লজ্জ নেতাদের কি আপনি সমর্থন করেন?''

এই টুইটের সঙ্গে একটি ভিডিও দেয়া হয়েছে। যে ভিডিও শুরু হয়েছে, তালেবান কাবুল দখল করার পর সেখানকার বিমানবন্দরের ছবি দিয়ে। তার সঙ্গে ভাষ্য, তালেবান আফগানিস্তানের সর্বনাশ করছে। সঙ্গে লাগাতার গুলির শব্দ। বলা হয়ছে, তালেবানের চিন্তাধারার সঙ্গে একমত সমাজবাদী পার্টির সাংসদ। এরপর সপা সাংসদ শফিকুর রহমান বর্কের বক্তব্য। যেখানে তিনি তালেবানের সমর্থনে কথা বলছেন। দাবি করা হয়েছে, তার ছেলেও তালেবানকে সমর্থন করেছে। বলা হয়েছে, পুলিশ এর জন্য মামলা করেছে। কিন্তু অখিলেশ আজ পর্যন্ত একটা কথাও বলেননি। তার মানে কি, অখিলেশ এই তালিবানি চিন্তাভাবনাকে সমর্থন করছেন?  

সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, শফিকুর গত ১৮ অগাস্ট সম্ভলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ''তালেবান নিজের দেশকে স্বাধীন করতে চেয়েছে এবং নিজেরা দেশ চালাতে চেয়েছে। এটা ওদের ঘরোয়া বিষয়। আমরা কী করে তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারি?'' শফিকুর আরো বলেছেন, ''একসময় সারা ভারত যেমন ইংরেজদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল, এটাও তেমনই হয়েছে।'' পরে তিনি জানিয়েছেন, তার বিবৃতির ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। তবে শুধু তিনিই নন, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সৈয়দ নোমানিও তালেবানকে সমর্থন করেছেন। 

উত্তর প্রদেশ নির্বাচনে বিজেপি-র বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্ষমতা ধরে রাখা। করোনাকালে যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে মানুষের প্রচুর ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল, সেসব সামনেও আসছিল। আদিত্যনাথকে দিল্লিতে ডেকে কথা বলছিলেন মোদী-শাহ। তারপর রাজ্য জুড়ে ভোটের দিকে তাকিয়ে যাত্রা বের করেছে বিজেপি। শুরু হয়েছে প্রচার। এমন সময় তালেবান আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখল করেছে। এরপরই দেখা যাচ্ছে, বিজেপি উত্তর প্রদেশের প্রচার পরিকল্পনায় বদল এনেছে। সেখানে ঢুকে গেছে তালেবান প্রসঙ্গ।

এই ক্ষেত্রে অবশ্য বিজেপি-র হাতে বিষয়টি তুলে দিয়েছেন সপা সাংসদ শফিকুর। তারা সেটাকে কাজে লাগাতে চেয়েছে। বিপাকে পড়েছেন অখিলেশ। তিনি এই ভিডিও নিয়ে কোনো কথা বলেননি। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে তিনি বলেছেন, আফগানিস্তানে মানুষ শান্তিতে থাকুন। ভালো থাকুন। সেটাই বড় কথা।

প্রশ্ন হলো, সপা সাংসদ তালেবান নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন বলেই কি বিজেপি বিষয়টি সামনে এনেছে, না কি উত্তরপ্রদেশের ভোটের প্রচারে তালেবান বড় করে থাকবে? বিজেপি-র কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সদস্য সুদেশ বর্মা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে মোদীজির নেতৃত্বাধীন বিজেপি-কে চাই, এ কথা নতুন করে বলে দেয়ার কোনো দরকার নেই।'' তার দাবি, ''আমর এত মানুষকে উদ্ধার করছি, তার একটা ইতিবাচক প্রভাব তো পড়বেই। আর, এটাও জানা কথা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে, মোদীই তা পারবেন।''

অমর উজালা পত্রিকার প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা উত্তরপ্রদেশ বিশেষজ্ঞ। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন,  ''যে কোনো বিষয়, যা রাজনৈতিক বিভাজন ঘটাতে সক্ষম, তাকে গুরুত্ব দেবে বিজেপি। আর তালেবান এমন একটা বিষয় যা এই বিভাজন ঘটাতে সক্ষম। তাই বিজেপি এই বিষয়টি ভোটের আগে হাতে তুলে নিয়েছে।'

শরদের মতে, ''বিজেপি-র কাছে উন্নয়ন বা যোগী কী করছেন, সেটা নিয়ে ভোটে নামা সম্ভব নয়। তারা ভোটে যাবে অযোধ্যায় রামমন্দির, তালেবান, সন্ত্রাসবাদ কেবল মোদীই সামলাতে পারেন, এ সব বিষয় নিয়ে।'' তিনি জানিয়েছেন, অখিলেশ যাদব সমানে যোগীর পাঁচ বছরের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তার জবাবে বিজেপি আবেগের বিষয় তুলছে। বিভাজনের বিষয় তুলছে। তাই উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র প্রচারে তালেবান মানে সন্ত্রাসবাদ। আর সেটা ঠেকাতে হলে বিজেপি-কে চাই, এটাই হলো অঙ্ক।

কিন্তু এই অঙ্কে কি বিজেপি উত্তরপ্রদেশে জিততে পারবে? প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল চাওকের মতে, ''বিষয়টি অত সহজ নয়। আমাদের মাথায় রাখতে হবে,  করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে চলেছে, দেশের অর্থনীতির হাল খুবই খারাপ, উত্তর প্রদেশে বিক্ষুব্ধ কৃষক নেতারা বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রচার করবেন এবং জাতিগত সমীকরণ উত্তরপ্রদেশে বড় ভূমিকা পালন করে।'' করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে উত্তর প্রদেশের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তৃতীয় ঢেউ আসলে যোগী সামলাতে পারবেন কি? সুনীলের মতে, ''কৃষক বিক্ষোভ, বেহাল অর্থনীতি, চাকরি হারানো মানুষজনের ক্ষোভ অনেক হিসাব বদলে দিতে পারে।  আর এটা ভুললে চলবে না যে, ভারতের সভাপতিত্বেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ তালেবানকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের পরিচয় থেকে বের করে দিয়েছে।''   

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপি বিভাজনের চেষ্টা করবে, সেই অঙ্ক কষে ভোটে জেতার চেষ্টা করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু পরিবেশ ও পরিস্থিতি তাদের অঙ্ক গুলিয়ে দিতে পারে, এমন সম্ভাবনাও থাকছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ