1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উত্তরবঙ্গে তুঙ্গে বিপর্যয়-রাজনীতি

পায়েল সামন্ত পশ্চিমবঙ্গ
৭ অক্টোবর ২০২৫

উত্তরবঙ্গে বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের উপরে হামলার ঘটনায় এখনো অধরা দুষ্কৃতীরা। আজকের মধ্যে গ্রেপ্তার না হলে মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ
ঘটনার সময় এলাকায় পুলিশ দেখা যায়নিছবি: Subrata Goswami/DW

প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর টুইট যুদ্ধে থেমে নেই উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়-রাজনীতি। জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন মালদা উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু ও শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। এ নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক সংঘাত। 

অধরা দুষ্কৃতীরা 

সোমবার দুপুরে নাগরাকাটায় আক্রান্ত হয়েছিলেন দুই বিজেপি নেতা। নাগরাকাটা থানায় আট জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। তারপরে ২৪ ঘন্টা কেটে গেলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

বিজেপির পক্ষ থেকে দায়ের করা এফআইআরে নাম রয়েছে মাসুম আখতার, মহাম্মদ মিলন, পিঙ্কি বেগম, সাইবুল হক-সহ আটজনের। এরা সকলে ওই এলাকার বাসিন্দা বলে দাবি করেছে বিজেপি। 

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কার্যত রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে গ্রেপ্তারির সময়সীমা বেধে দিয়েছেন।

হাসপাতালে খগেন ও শঙ্করকে দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, "জনপ্রতিনিধিদের উপরে হামলা মেনে নেয়া যায় না। পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুষ্কৃতীদের ধরতে হবে। নইলে পরিণাম ভালো হবে না। গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। ডেমোক্রেসি পরিণত হচ্ছে মবোক্রেসিতে। পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি এগিয়ে থাকা রাজ্যে এটা কাম্য নয়।"

মঙ্গলবার সকালে বাগডোগরা রওনা হওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে শুভেন্দু বলেন, "ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, কারা জনপ্রতিনিধিদের উপরে হামলা করেছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। দুষ্কৃতীদের পুলিশ না ধরলে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে মামলা করা হতে পারে।"

তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, "পুলিশ এখন ত্রাণের ব্যবস্থা করবে, নাকি অভিযুক্তদের খুঁজে বেড়াবে! অগ্রাধিকার কোনটায় থাকা উচিত? আর পুলিশকে না জানিয়ে ওরা গেলেন কেন ওই এলাকায়।"

স্পিকারের রিপোর্ট তলব

উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার সকালে সেখানে পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনা সম্পর্কে সংসদের অধ্যক্ষ রিপোর্ট চেয়েছেন রাজ্যের কাছে। 

সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী রিজিজু বলেন, "সাংসদের উপরে হামলা নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। রাজ্য রিপোর্ট না দিলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রিভিলেজ মোশন আনা হতে পারে।"

মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে তিনি উত্তরবঙ্গে এসেছেন। এখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তাকে রিপোর্ট দেবেন। 

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, "স্পিকার রিপোর্ট চেয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা নিশ্চয়ই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু বিজেপি-ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে রাজনীতি করছে। বিজেপির নেতারা নাগরাকাটায় কেন গিয়েছিলেন, ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলেন কি? বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগে দেখুন। তার বদলে বাংলা নিয়ে কুৎসা করছেন।"

মিরিকে মমতা ও শুভেন্দু 

মঙ্গলবার একই দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিরোধী দলনেতার মিরিক সফর। তীব্র জলস্রোত ও ধসে বিপর্যস্ত হয়েছে এখানকার একের পর এক গ্রাম।

মুখ্যমন্ত্রী সোমবার পৌঁছে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গে। এদিন তিনি মিরিকের দুধিয়া সেতু পরিদর্শনে যান। জলের ধাক্কায় এই সেতুর একটি স্তম্ভ বসে যায়। এর ফলে ভেঙে পড়ে সেতুটি। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। 

মুখ্যমন্ত্রী জানান, অস্থায়ীভাবে সেতু মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। পাইপ দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে এই মেরামতির কাজ শেষ করা হবে, যাতে হালকা যানবাহন যাতায়াত করতে পারে। অন্যান্য জায়গাতেও ভেঙে পড়া সেতু মেরামত করছেন ইঞ্জিনিয়াররা। যাদের ঘর হারিয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কমিউনিটি কিচেনের মাধ্যমে আগামী একমাস তারা খাবার পাবেন।

এদিন ১৬টি দুর্গত পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। তাদের হাতে ক্ষতিপূরণের পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। প্রত্যেক পরিবারের একজনকে ১৫ দিনের মধ্যে হোম গার্ডের চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। জলের স্রোতে ভেসে যাওয়া প্রয়োজনীয় নথিপত্র বা শিক্ষা সংক্রান্ত শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার সহযোগিতা করবে

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "যাদের ঘরবাড়ি চলে গিয়েছে, সেটার ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব। কিন্তু যারা এই দুর্যোগে চলে গেলেন, তাদের ফেরাতে পারব না। পরে আমি আবার আসব, নিয়মিত নজরদারি চলবে।"

মিরিকের দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখেন বিরোধী দলনেতা। তার সঙ্গে ছিলেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ত। শুভেন্দু বলেন, "প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের আড়াই লক্ষ টাকা করে দেয়া হবে। এর পাশাপাশি আমরা বিধায়ক সাংসদরা মিলে দু'লক্ষ টাকা করে দেব।"

চিকিৎসাধীন খগেন 

একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে রয়েছেন খগেন মুর্মু। তার নাকের হাড় ভেঙে গিয়েছে। অস্ত্রোপচার করা হতে পারে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। প্রয়োজনে তাকে দিল্লি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে উন্নত চিকিৎসার জন্য। পরিবারের ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজধানীর এইমসে তার চিকিৎসার পরিকল্পনা রয়েছে। এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষও। এ দিন তার এমআরআই হওয়ার কথা।

হটস্পট উত্তরবঙ্গ 

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন আগামী বছরে। একসময় বিজেপির শক্ত ঘাঁটি উত্তরবঙ্গে কিছুটা জমি ফিরে পেয়েছে তৃণমূল। নিজেদের ঘাঁটি আগলানোর জন্য এবারে বিজেপির কঠিন লড়াই। উত্তরবঙ্গের চলতি পরিস্থিতিতে এই লড়াই নতুন মাত্রা পেয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে।

সিনিয়র সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেন, "একজন সাংসদ কেন নিরাপদে একটা জায়গায় যেতে পারবেন না? যদি তিনি আক্রান্ত হন, যেহেতু তিনি রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে একমত নন, তাহলে কি বিরোধী মতের সাধারণ মানুষ নিরাপদ? এটা শুধু সাংসদ বা বিধায়ক আক্রান্ত বললে ভুল হবে। এটা বিরোধী মত আক্রান্ত, এভাবে দেখতে হবে।"

সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "খগেন মুর্মু বিরোধী বলে মার খাননি। নাগরাকাটায় বিজেপি প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ২০১৬ সাল থেকে সেখানে বিজেপির দাপট। সমস্যা হচ্ছে, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, তাতে জনতার যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, গোটা উপমহাদেশে তার চরিত্রটা এক। নেপাল, লাদাখ, বাংলাদেশ সর্বত্রই একই চরিত্র। সাধারণ মানুষ যদি মনে করেন, জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাজ করছেন না, তখন সাধারণ মানুষ আর ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জায়গায় থাকেন না। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের ক্ষোভটা এখনো চিনতে পারছি না।"

শুভাশিসের বক্তব্য, "এটা পুলিশের ব্যর্থতা বলে মনে করি। পুলিশকে শো-কজ করা উচিত। সেই ব্যাপারে উদ্যোগ তো দেখছি না। পুলিশের সমালোচনা হচ্ছে না, এটা খারাপ লক্ষণ। এটা অনেক বেশি ইঙ্গিতবহ, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তা বোঝার জন্য।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ