উত্তরাখণ্ডে এখনো দুইশর বেশি মানুষ নিখোঁজ। তাঁদের খোঁজে দিনভর তল্লাশি চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দল।
বিজ্ঞাপন
হিমবাহ ফাটার পর ৬০ ঘণ্টা কেটে গেছে। উত্তরাখণ্ডের টানেলের ভিতর আটকে আছেন জনা ৩৫ মানুষ। তাঁদের উদ্ধার করার জন্য এখন আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন ইন্দো টিবেটান বর্ডার ফোর্স(আইটিবিপি), জাতীয় ও রাজ্যস্তরের বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মীরা।
এতটা সময় কেটে যাওয়ার পরেও তাঁরা যে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে পারেননি, তার কারণ, সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢোকা যাচ্ছে না। সুড়ঙ্গের কিছুটা ভেঙে পড়েছে। তার উপর ছিল কাদা। একবার পরিষ্কার করার পর আবার নতুন করে কাদা এসে যাচ্ছে। অবশেষে যন্ত্র দিয়ে সে সব সরিয়ে সুড়ঙ্গে ঢুকতে পেরেছেন উদ্ধারকারীরা।
যাঁরা আটকে আছেন তাঁরা কী অবস্থায় আছেন, তা জানা যায়নি। উদ্ধারকারীরা তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারলে সেটা বোঝা যাবে। উদ্ধারকারীরা হাই ভিসিবিলিটি জ্যাকেট, হলুদ রঙের হেলমেট পরে আলো নিয়ে ভিতরে ঢুকেছেন।
উত্তরাখণ্ডে কেমন করে উদ্ধারকাজ চলছে
নন্দাদেবী হিমবাহ ফেটে আবার বিপর্যয়ের মুখে উত্তরাখণ্ড। এখনো নিখোঁজ দুইশ জন। দিনরাত উদ্ধারের কাজ চলছে।
ছবি: REUTERS
হঠাৎ বন্যা
হিমবাহ ফেটে নদীতে এরকম বিপুল জলরাশি আসে। আটকে পড়েন, ভেসে যান বহু মানুষ।
ছবি: REUTERS
উদ্ধারে সেনা এবং অন্যরা
চামোলি, জোশীমঠে উদ্ধারের কাজে নেমে পড়েছেন সেনা, ইন্দো-টিবেটান বর্ডার ফোর্স(আইটিবিপি), বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পুলিশ ও অন্যরা। ভেসে যাওয়া এলাকা থেকে উদ্ধার করছেন মানুষকে। পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার। খোঁজ করছেন নিখোঁজদের।
ছবি: REUTERS
টানেলের ভিতর
ওই এলাকায় একাধিক সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ চলছিল। হঠাৎ বন্যায় সুড়ঙ্গের মধ্যে জল ঢুকে যায়। অনেকে আটকে পড়েন। টানেলের ভিতর ধসে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকছে।
ছবি: REUTERS
আটক ৩৮ জন
এই সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছেন ৩৮ জন। তাঁরা কেমন আছেন, জানা নেই। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। সারা রাত ধরে অনুসন্ধান চলেছে টানেলের ভিতর।
ছবি: REUTERS
ঢুকছে যন্ত্র
প্রথমে মাটি কাটার এই যন্ত্র ঢুকছে। পথ তৈরি করছে। তারপর তা বেরিয়ে আসছে।
ছবি: REUTERS
ঢুকছেন উদ্ধারকারীরা
এরপর ঢুকছেন সেনা ও আইটিবিপি জওয়ানরা। সার দিয়ে তাঁরা ঢুকছেন বিপদসঙ্কুল সুড়ঙ্গে।
ছবি: National Disaster Reponse Force/AP/picture alliance
উদ্ধারের পর
টানেলের ভিতর থেকে এই কর্মীকে উদ্ধার করেছে আইটিবিপি। তারপর তাঁর উল্লাস। তিনি জানিয়েছেন, হঠাৎ, সুড়ঙ্গে জল ঢুকে যায়। তাঁরা আটকে পড়েন। বেরনোর রাস্তা ছিল না। তাঁরা একটি উঁচু জায়গায় গিয়ে দাঁড়ান। জল কমে। তারপর আইটিবিপি-র জওয়ানরা তাঁদের উদ্ধার করেছেন।
একটি গ্রামে যাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। ছোট রাস্তা বানানো হয়েছে। নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা নদী।
ছবি: REUTERS
গ্রাম থেকে উদ্ধার
গ্রাম থেকে মানুষকে উদ্ধার করছেন উদ্ধারকারীরা। পৌঁছে দিচ্ছেন সাহায্য।
ছবি: ITBP/REUTERS
9 ছবি1 | 9
ইউ আকৃতির টানেলের ভিতরে পুরো অন্ধকার। এখনো বোল্ডার ও কাদা পড়ে আছে। তার মধ্যে খুব সাবধানে এগোতে হচ্ছে তাঁদের। আইটিবিপি-র মুখপাত্র বিবেক কুমার পাণ্ডে বলেছেন, সারা রাত ধরে কাজ করে টানেলের ভিতরে ১২০ মিটার এলাকা থেকে ধ্বসস্তূপ সরানো সম্ভব হয়েছে। তার ফলে বোল্ডার, কাদার উচ্চতা কিছুটা কমেছে।
উদ্ধারকারীরা ঢোকার পর দেখেন টানেলের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে, সেখান দিয়ে জল পড়ছে। একজন চিৎকার করে বলেন, ''কেউ আর ভিতরে ঢুকবেন না।'' অন্যজন বলেন, ''দেওয়ালের দিকে আলো ফেলো।'' ভিতরে সারাক্ষণ পাথর পড়ছে। সঙ্গে জল। মেঝে জায়গায় জায়গায় বসে গেছে।
এখনো নিখোঁজ ২০৬
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এখনো ২০৬ জন নিখোঁজ। তার মধ্যে জনা ৩৫ জন তপোবন সুড়ঙ্গের ভিতর আছেন। মারা গিয়েছেন মোট ৩২ জন। এছাড়া এনটিপিসি-র নির্মীয়মান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৩৯ জন কর্মী আছেন। আছেন ঋশিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ৩৯ জন কর্মী। বাকিরা গ্রামবাসী।
হিমবাহে ধস কী ভাবে নামে
ভারতের উত্তরাখণ্ডে হিমবাহ ভেঙে পড়েছে। বহু মানুষ মৃত। নিখোঁজ অনেকে। কেন হয় গ্লেসিয়ার ব্লাস্ট?
ছবি: REUTERS
উত্তরাখণ্ডে হিমবাহে ব্লাস্ট
রোববার দুপুরে উত্তরাখণ্ডের নন্দাবেদী হিমবাহ বিপুল গর্জনে ভেঙে পড়ে। একেই বলা হয় গ্লেসিয়ার ব্লাস্ট। মুহূর্তের মধ্যে ওই গ্লেসিয়ার থেকে তৈরি দুইটি নদীতে জল বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ভেসে যায় আশপাশের সমস্ত অঞ্চল। বহু মানুষ জলে ভেসে যান। আটকে পড়েন অনেকে। শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ।
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণেই এ ভাবে গ্লেসিয়ার ব্লাস্ট হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, হিমালয়ে তাপমাত্রা আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্লেসিয়ার গলার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। তারই জেরে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে হিমবাহের। ফাটলও ধরেছে সে কারণেই।
ছবি: KK Productions/AP/picture alliance
২০১৩ সালের ফ্লাশ ফ্লাড
২০১৩ সালে ফ্লাশ ফ্লাড বা আচমকা বন্যার ঘটনা ঘটেছিল উত্তরাখণ্ডে। সে বছর প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সে বছরও আচমকা উত্তরাখণ্ডের নদীতে জল বেড়ে গিয়েছিল। যার জেরে বন্যায় ভেসে গিয়েছিল বিস্তীর্ণ এলাকা।
ছবি: REUTERS
লাদাখের মেঘফাটা বৃষ্টি
২০১০ সালে লাদাখে হয়েছিল মেঘফাটা বৃষ্টি বা ক্লাউড বার্স্ট। সে বছরও পরিবেশবিদরা বলেছিলেন, উষ্ণায়নের কারণেই লাদাখে ক্লাউড বার্স্ট হয়েছিল। লাদাখে আচমকা সেই বৃষ্টি এবং বন্যায় মৃত্যু হয়েছিল বহু মানুষের।
ছবি: Deepak Malik/NurPhoto/picture alliance
উত্তরাখণ্ডের ঘটনা
বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, উন্নয়নের নামে যে ভাবে হিমালয়ের নদীগুলিতে বাঁধ তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব পড়ছে হিমবাহগুলির উপর। নদীর ধারে প্লাবনভূমি থাকে। উন্নয়নের নামে সে সমস্ত এলাকাও মানুষ দখল করে নিয়েছে। রোববারের ঘটনায় সেই প্লাবনভূমিই ভেসে গিয়েছে।
ছবি: ITBP/REUTERS
6 ছবি1 | 6
হিমবাহের প্রান্তে ধস
মঙ্গলবার সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, নন্দাদেবী হিমবাহের পাঁচ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় ধস নামার ফলেই উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয় হয়েছে। উপগ্রহ থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, হিমবাহের একেবারে শেষ অংশে ধস নেমেছিল। সেটাই ঋষিগঙ্গা নদীতে এসে পড়ে। এনটিপিসি ও ঋষিগঙ্গা প্রকল্পের থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।