পরপর তিনদিন ধরে প্রবল বৃষ্টি, বন্যা, ধসে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড। মৃত অন্তত ৩৪। ১০ জন বাঙালি পর্যটক উদ্ধার।
বিজ্ঞাপন
শীতের আগে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এখন প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। কেরালা আগেই ভেসেছে। এবার ভাসল উত্তরাখণ্ড। নৈনিতাল, আলমোড়া, রানিখেতের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। নৈনিতাল জেলার রামগড়ের একটি গ্রাম ধসের ফলে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানেই সব চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন। বহু মানুষ এখনো বিভিন্ন জায়গায় ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে আছেন বলে প্রশাসন মনে করছে। তাই মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
মুক্তেশ্বর ও নৈনিতালের আরো একটি জায়গায় ধসের ফলে দুই জন মারা গেছেন। উধম সিং নগরে একজন ভেসে গেছেন। ধসের ফলে নৈনিতাল পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার দিকে একটি রাস্তা খোলা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখনো বাকি রাস্তা খোলা যায়নি। কাজ চলছে।
ল্যান্সডাউনে বোল্ডার চাপা পড়ে পাঁচজন নেপালি শ্রমিক মারা গেছেন। চম্পাবটে বাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে কয়েক জনের। নৈনিতাল সহ যে জায়গাগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সবই পর্যটনের জন্য বিখ্যাত। এই সময় প্রচুর মানুষ সেখানে যান।
বাঙালি পর্যটক উদ্ধার
১০জন বাঙালি পর্যটকের একটি দল কালচানাথে আটকে পড়েছিলেন। তাদের উদ্ধার করেছে প্রশাসন।
নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ভাসল কেরালা, মৃত বহু
আরব সাগরে তৈরি হয়েছিল নিম্নচাপ। তারই জেরে প্রবল বৃষ্টি। কেরালা আবার ভাসল। ধস ও বন্যায় বহু মানুষের মৃত্যু।
ছবি: Indian Navy/AP/picture alliance
পূর্বাভাস মেলেনি
আরব সাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জন্য কেরালা জুড়েই প্রবল বৃষ্টি হলো। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস ছিল, ৭ থেকে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হবে। পূর্বাভাস মেলেনি। বৃষ্টি হয়েছে ১৯৪ মিলিমিটার। পূর্বাভাসের তুলনায় ১৬৬ শতাংশ বেশি। রাজ্যের ১৪ জেলার মধ্যে ১৩ জেলাতেই প্রবল বৃষ্টি হয়েছে।
ছবি: APPU S. NARAYANAN/AFP//Getty Images
কোট্টায়াম, ইদুক্কির অবস্থা খারাপ
দুই জেলা কোট্টায়াম ও ইদুক্কির অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। এখানে ধস নেমেছে। বন্যা হয়েছে। কাদা-স্রোত ঢুকে পড়েছে বাড়ির ভিতরে। কোট্টায়ামে ১৩ জন মারা গেছেন। ইদুক্কিতে প্রচুর বাড়়ি ভেঙেছে। ভেসে গেছে রাস্তা।
ছবি: REUTERS
সেনা নেমেছে
উদ্ধার ও ত্রাণের জন্য সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর জওয়ানরা মূলত খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন দুর্গত এলাকায়। উপরের ছবিতে দুর্গত এলাকায় নৌবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার সেই কাজ করছে।
ছবি: Indian Navy/AP/picture alliance
তাণ্ডবের ছবি
কেরালা জুড়েই দেখা গিয়েছে এরকম তাণ্ডবের ছবি। রাস্তায় জল। গাছ ভেঙে পড়েছে। গাড়ি যাওয়ার পথ ভেসে গেছে। জলাধারগুলি থেকে জল ছাড়তে হয়েছে। তার ফলে প্রচুর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
ছবি: APPU S. NARAYANAN/AFP//Getty Images
বারবার বন্যা কেরালায়
কেরালা বারবার ভাসছে। ২০১৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় চারশ জনের মৃত্যু হয়েছে। দশ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল নিরাপদ জায়গায়। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের কিছুদিন পরে কেরালায় ভয়ংকর বৃষ্টির ফলে বন্যা হয়। রাহুল গান্ধীর কেন্দ্র ওয়ানাড় ভেসে গেছিল। কিছুদিন আগেও বৃষ্টি ও ধসে বেহাল হয়েছিল কেরালা। এখন আবার হলো।
ছবি: P Arthasarkar/Xinhua News Agency/picture alliance
আবার বিপর্যয় হতে পারে
অতীতে এই ধরনের ভয়ংকর বৃষ্টি, বন্যা, ধস এত ঘনঘন হতো না। কিন্তু পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এরকম হচ্ছে। কেরালাকে অদূর ভবিষ্যতে আবার এই ধরনের বৃষ্টি, ধস, বন্যার মুখে পড়তে হতে পারে বলে তারা সাবধান করে দিয়েছেন।
ছবি: picture alliance/Xinhua News Agency
আরো বৃষ্টির সম্ভাবনা
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রবল বৃষ্টি হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, কেরালার মানুষ যেন খুবই সতর্ক থাকেন।
কেদারনাথের ডিএফও অমিত কানোয়ার বলেছেন, ‘‘বাঙলি পর্যটকরা রুদ্রনাথ থেকে ফিরছিলেন। প্রবল বৃষ্টির ফলে তারা কালচানাথে আটকে পড়েন। তারা সাহায্য চেয়ে ফোন করেছিলেন। তারপর তাদের উদ্ধার করা হয়।'' আনন্দবাজার জানাচ্ছে, চুঁচুড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায়, তার স্ত্রী, মেয়ে ও দুই প্রতিবেশী কেদারনাথে আটকে রয়েছেন। যোশীমঠে আটকে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ নিগমের কর্মী কিশোর মিত্রের পুত্র, পুত্রবধূ ও তাদের দুই সন্তান।
নৈনিতাল সহ বিভিন্ন জায়গায় আরো বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন। হলদোয়ানি থেকে দিল্লি আসার রেলপথের একটা অংশে রেললাইনের তলার মাটি নদীর জলে ধুয়ে গেছে। তাই রেল চলাচল বন্ধ।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা
মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি বলেছেন, মৃতদের পরিবারকে চার লাখ টাকা দেয়া হবে। যাদের বাড়ি ভেঙেছে, তারা পাবেন এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। তিনি হেলিকপ্টার করে দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ফসলের খুবই ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গা জলের তলায় চলে গেছে।