উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: ঘটনাক্রম
২১ জুলাই ২০২৫
নিহত ১৯, আহত অন্তত ১৬৪ ও রাষ্ট্রীয় শোক দিবস
আইএসপিআর আজ বিকেল ৫টায় জানায়, নিহত হয়েছেন ১৮ জন। আহত ১৬৪ জন। তবে এর আগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল জানিয়েছেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছে৷ বিকেল পৌনে ৫টার দিকে দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সরকার আগামীকাল (মঙ্গলবার) এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
পাইলট নিহত
বিধ্বস্ত বিমানের পাইলট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম মারা গেছেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ সায়েদুর রহমান জানিয়েছিলেন যে, তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার শোক বার্তা ও সরকারি ব্যবস্থা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ দুর্ঘটনায় "গভীর শোক ও দুঃখ" প্রকাশ করে বলেছেন, "এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ।" তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সকল কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছে।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে জরুরি হটলাইন চালু করা হয়েছে (০১৯৪৯-০৪৩৬৯৭)। আহতদের পরিবহনের জন্য উত্তরা থেকে ছাড়া মেট্রো রেলের একটি কোচ সংরক্ষণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ও উদ্ধার অভিযানে সহায়তার জন্য বিজিবির তিনটি প্লাটুন উত্তরায় মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
মাইলস্টোন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন জানান, মাত্র ১০ ফুট দূর থেকে তিনি বিমানটি কলেজের দোতলা ভবনের নিচতলায় আঘাত হানতে দেখেছেন। ওই সময় স্কুল শাখার ক্লাস চলছিল। এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, সপ্তম তলা থেকে তিনি বিকট শব্দের পর পুরো এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখেছেন। ভবন থেকে শিক্ষার্থীদের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল।
আগুন থেকে বেঁচে ফেরা এক শিক্ষক জানান, ঘটনাটি এতটাই আকস্মিক ছিল যে কারোরই প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ ছিল না। স্কুল ছুটির ঘণ্টার পর শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়েছিল। হাত পুড়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি ভেজা কাপড় দিয়ে শিক্ষার্থীদের নাক ঢাকতে সাহায্য করেন। তিনজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন।
অগ্নিদগ্ধদের দফায় দফায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়। আইএসপিআর বলছে, সেখানে ৭০ জনকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, দগ্ধদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার পরপরই কলেজ ক্যাম্পাসে ভিড় করেছেন শিক্ষার্থীদের মা, বাবা ও স্বজনেরা। তারা তাদের সন্তানদের খুঁজছেন। কেউ কেউ সন্তানের খোঁজ পাননি।
বিমান বিধ্বস্ত: প্রাথমিক তথ্য
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানটি সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে এবং ১টা ৩০ মিনিটে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যানটিনের ছাদে বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত হয়েছে।
হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে নিখোঁজ স্কুল শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জরুরি যোগাযোগের জন্য কয়েকটি মুঠোফোন নম্বর দিয়েছে। সেগুলো হলো—মিলিটারি রেস্কিউ ব্রিগেড–০১৭৬৯০২৪২০২, সিএমএইচ বার্ন ইউনিট–০১৭৬৯০১৬০১৯, সিএমএইচ ইমার্জেন্সি ০১৭৬৯০১৩৩১১, মাইলস্টোন স্কুল অ্যাডমিন অফিসার–০১৮১৪৭৭৪১৩২, ভাইস প্রিন্সিপাল– ০১৭৭১১১১৭৬৬ এবং জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ (পুলিশের ইমার্জেন্সি সেল থেকে বার্ন ইউনিটগুলোর সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দেবে)।
এসএসজি/এপিবি (এপি, প্রথম আলো)