গত এক দশকে প্রথমবার কোনো ট্রেন কোরিয়ার এক সীমানা অতিক্রম করে আরেক সীমানায় গেল৷ শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রকৌশলীদের নিয়ে একটি ট্রেন উত্তর কোরিয়ায় পাড়ি দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এই প্রকৌশলীরা দুই কোরিয়ার মধ্যে রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন৷ আগের রেল লাইনগুলো আধুনিক করা হবে৷
দুই কোরিয়ার মধ্যে সম্প্রতি হওয়া সমঝোতার ওপর ভিত্তি করে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত করতে চায়৷ তাই যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ এবং বাণিজ্যের সুযোগ তৈরির জন্য এই যোগাযোগ জরুরি৷
স্থানীয় টেলিভিশনগুলোর ফুটেজে দেখা গেছে, একটি লাল-সাদা-নীল ট্রেন দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী ডোরাসান স্টেশন থেকে উত্তরের দিকে রওনা হয়েছে৷ ট্রেনটিতে যে ব্যানার ঝুলছিল, তাতে লেখা ছিল, ‘আয়রন হর্স এখন শান্তি ও উন্নয়নের পথে ছুটছে৷’
গত সেপ্টেম্বরে কিম জং-উন ও মুন জায়-ইনের শীর্ষ বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পুনরায় চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়৷
‘‘এই রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে দুই কোরিয়া আবার এক হবে৷ দুই কোরিয়া একসঙ্গে উন্নয়নের পথে হাঁটবে৷ কোরীয় উপত্যকায় শান্তি জোরদার হবে,’’ এ উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে বলেন দক্ষিণ কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণ মন্ত্রী চো মিয়োং-গিয়ন৷
তবে শঙ্কা কাটতে এখনো অনেক দূর যেতে হবে৷ উত্তর কোরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে এই সহযোগিতা বেশি দূর এগোবে না৷
ওয়াশিংটন আগেই বলে দিয়েছে যে, তারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে, কিন্তু সেজন্য উত্তর কোরিয়াকে প্রমাণ দিতে হবে যে, তারা পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প থেকে সরে এসেছে৷
এদিকে, শুধু রেল নয়, সামরিক ক্ষেত্রেও সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে দুই কোরিয়া৷ তারা সীমান্তবর্তী কমপক্ষে ২০টি গার্ডপোস্ট সরিয়ে নিয়েছে৷ সীমান্তে পুঁতে রাখা অনেক বোমাও সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ এখন সেখানে যৌথভাবে কোরীয় যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের অবশেষ খোঁজা হবে৷
জেডএ/এসিবি (এপি, এএফপি)
কোরীয় সীমান্তে গার্ড পোস্ট ধ্বংস
অসামরিকীকৃত সীমান্ত অঞ্চলে ১০টি গার্ড পোস্ট উড়িয়ে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে এ বছরের শুরুতে করা এক চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নিলো দেশটি৷
ছবি: Reuters/Yonhap/The Defense Ministry
চার মিনিটের যজ্ঞ
দক্ষিণকে আগেই এই ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করেছে উত্তর৷ চার মিনিটের মধ্যে একে একে গার্ড পোস্টগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়৷ গত দুই সপ্তাহ জুড়ে ইটের তৈরি বেশকিছু গার্ড পোস্ট একে একে ধ্বংস করেছিল উত্তরের সেনারা৷ কিন্তু এবারই প্রথম একসাথে একাধিক পোস্ট ধ্বংসের উদ্যোগ নিলো দেশটি৷
ছবি: Reuters/Yonhap/The Defense Ministry
ডেডলাইন নভেম্বর
৩০ নভেম্বরের আগেই সীমানা জুড়ে সব পোস্ট ভেঙে ফেলতে রাজী হয়েছিল দুই পক্ষ৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এই তারিখকে সামনে রেখে অচিরেই এমন আরো কিছু উদ্যোগ নিতে পারে দেশটি৷
ছবি: Reuters/Yonhap/The Defense Ministry
এগিয়ে এসেছে দক্ষিণও
দক্ষিণ কোরিয়াও কংক্রিটের তৈরি ১০টি গার্ড পোস্ট ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে৷ তবে উত্তরের মতো বিস্ফোরক ব্যবহার না করে তাঁরা ব্যবহার করছে বুলডোজার এবং এক্সকাভেটর৷
ছবি: Reuters/J. Yeon-je
ফিরছে শান্তি
গার্ড পোস্ট ভাঙার পাশাপাশি দুই কোরিয়া এরই মধ্যে আরো বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে৷ পানমুনজম এলাকায় যৌথ নিরাপত্তা এলাকায় সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সেনা উপস্থিতি কমিয়ে আনা হয়েছে ৩৫ জনে৷ তবে এই ৩৫ সেনাও কোনো অস্ত্র বহন করতে পারবেন না৷
ছবি: Reuters/J. Yeon-je
খুলছে পর্যটনের দুয়ার
এতদিন সীমান্ত এলাকা বহিরাগতদের জন্য ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷ তবে সামনের মাস থেকে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে পানমুনজম৷ গাইড সাথে নিয়ে যে কেউই চাইলে ঘুরে আসতে পারবেন দুই কোরিয়ার সীমানায় অবস্থিত ঐতিহাসিক এই এলাকা৷
ছবি: Reuters/J. Yeon-je
কমছে না সন্দেহ
উত্তর কোরিয়া অন্য যে-কোনো সময়ের চেয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনেক এগিয়ে এলেও সিউলের সন্দেহ কমছে না৷ পরমাণু অস্ত্র নিষ্ক্রিয়করণে কার্যকর ভূমিকা না রাখলে অন্য উদ্যোগগুলোও লোকদেখানোই হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের দ্বিতীয় দফার বৈঠকের সাফল্যের ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছুই৷