শুক্রবার দুই দেশের শীর্ষ নেতার মধ্যে বৈঠকের পর দক্ষিণ কোরিয়া উত্তরের দিকে তাক করে রাখা লাউডস্পিকার সরিয়ে ফেলার ঘোষণা দিয়েছে৷ উত্তরের পক্ষ থেকেও এসেছে শান্তির বার্তা৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মিল রাখতে ঘড়ির কাঁটা আধ ঘণ্টা এগিয়ে আনবে৷ ২০১৫ সালে জাপানি ঔপনিবেশিক শাসনের অংশ হওয়ার অভিযোগ তুলে ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দিয়েছিল উত্তর কোরিয়া৷
শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন-জে ইনের মধ্যে বৈঠক শুরুর আগেই দক্ষিণ কোরিয়া লাউডস্পিকার বন্ধ করে দিয়েছিল৷ এসব লাউডস্পিকার দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসানো হয়েছিল৷ উত্তর কোরিয়ার নাগরিকসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেশটির প্রকৃত পরিস্থিতি জানাতে এসব লাউডস্পিকার ব্যবহার করা হতো৷ উত্তর কোরিয়াতেও এমন লাউডস্পিকার বসানো ছিল৷ দক্ষিণ কোরিয়ার সিদ্ধান্তের পর উত্তর কোরিয়াও তাদের লাউডস্পিকার সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
বিশ্বকাঁপানো করমর্দন
কয়েকযুগ ধরে চলছে দুই কোরিয়ার বিরোধ৷ ২৭ এপ্রিল সীমান্তে দাঁড়িয়ে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট করমর্দন করলেন৷ তৈরি হলো ইতিহাস৷ এরকম করমদর্দনের বেশকিছু নজির রয়েছে অতীতে৷ দেখে আসা যাক ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তগুলো...
ছবি: Reuters
ফিলিস্তিনের শান্তি
নরওয়ের অসলোতে কয়েকমাস গোপন আলোচনার পর ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গ্যানাইজেশন (পিএলও)-র প্রধান ইয়াসির আরাফাত নিজেদের মধ্যে শান্তি স্থাপনে একমত হন৷ ছবিটি ১৯৯৩ সালে সেপ্টেম্বরের ১৩ দারিখে তোলা৷ হোয়াইট হাউজের দক্ষিণ লনে দুই নেতা দাঁড়িয়ে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media
কিউবা-অ্যামেরিকার করমর্দন
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন দেশ কিউবা আর অ্যামেরিকা৷ ২০১৩ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার স্মরণ অনুষ্ঠানে অ্যামেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো হাত মেলান৷ পরে ২০১৬ সালে ওবামা ৮৮ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিউবা সফর করেন৷
ছবি: Getty Images
আয়ারল্যান্ডে রক্তক্ষয়ের অবসান
ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের সাথে আয়ারল্যান্ডের সাবেক সশস্ত্র বিদ্রোহী দল আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির প্রধান কমান্ডার ম্যাকগিনিসের করমর্দনও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা৷ ২০১২ সালে রানি যখন উত্তর আয়ারল্যান্ড সফরে যান, তখন ম্যাকগিনিস তাঁর সাথে করমর্দন করেন৷
ছবি: dapd
চীন-তাইওয়ান মিলন!
১৯৪৯ সালে গৃহযুদ্ধের পর দীর্ঘদিন চীন ও তাইওয়ানের সম্পর্ক দা-কুমড়া ছিল৷ ২০১৫ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও তাইওয়ানের মা ইং জেও সিঙ্গারের এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন৷ সেখানে তাঁরা কয়েক মিনিট ধরে কথা বলেন এবং করমর্দন করেন৷
ছবি: Reuters/E. Su
দুই কোরিয়ার মিলন
দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাৎ অতি সাধারণ ঘটনা৷ কিন্তু শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন যখন সীমান্তে মিলিত হয়ে সহাস্যে করমর্দন করলেন, তা অবশ্যই এক ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ কারণ, প্রায় ৬৫ বছর আগে কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ শেষ হবার পর থেকে উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতা দক্ষিণ কোরিয়ায় পা রাখেননি৷
ছবি: Reuters/Korea Summit Press Pool
5 ছবি1 | 5
দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে আসা এই দুটি ঘোষণাকে দুই নেতার বৈঠকের পর শুরু হতে যাওয়া সম্ভাব্য সুসম্পর্কের অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
শুক্রবার দুই নেতার বৈঠকে পরমাণুমক্ত কোরীয় উপত্যকা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়৷ এছাড়া সেদিন দুই নেতার মধ্যকার ব্যক্তিগত আবেগ-উষ্ণতা ইতিবাচক এক আবহ সৃষ্টি করেছিল৷
ডয়চে ভেলের এশিয়া বিভাগের প্রধান আলেক্সান্ডার ফ্রয়েন্ড মনে করছেন, আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত শুক্রবারের বৈঠকের মাধ্যমে কিম জং উন ও মুন জে-ইন সফলতার মানদণ্ডে তাঁদের উত্তরসূরিদের চেয়ে এগিয়ে গেছেন৷ প্রেসিডেন্ট হওয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যে মুন জে-ইন উত্তর কোরিয়া নিয়ে তাঁর নীতির মাধ্যমে আগের দুই প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি সফলতা দেখিয়েছেন৷ আর কিম জং উন তাঁর বাবা ও দাদার চেয়ে উত্তর কোরিয়াকে প্রকৃত হুমকি হিসেবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন৷
অবশ্য দীর্ঘমেয়াদে দুই নেতার বৈঠকের সাফল্য কতখানি অটুট থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আলেক্সান্ডার ফ্রয়েন্ড৷ কারণ হিসেবে তিনি ২০০০ ও ২০০৭ সালের শীর্ষ সম্মেলন এবং তার পরবর্তী অবস্থা উল্লেখ করেন৷ ঐ দুই বৈঠকের পর তৈরি হওয়া আনন্দদায়ক পরিস্থিতি দ্রুতই মিলিয়ে গিয়েছিল বলেও জানান তিনি৷ এরপর উত্তর কোরিয়া আবার তাদের পরমাণু কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছিল৷ ফলে আলোচনা ভেঙে গিয়েছিল৷
এদিকে, চীন জানিয়েছে, আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করবেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই৷
জেডএইচ/এসিবি (এপি, রয়টার্স, এএফপি)
গতবছরের সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
উত্তর কোরিয়া ও কিম জং উনের বিশেষ কিছু জিনিস
উত্তর কোরিয়ায় যেখানে সাধারণ মানুষ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত বলে অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নেতা কিম জং উনের আরাম-আয়েশ-বিলাসিতার কোনো কমতি নেই৷ দেখে নিন তার কিছু নমুনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
অপূর্ব প্রাসাদ
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এ এই বিশাল প্রাসাদ রয়েছে৷ কুমসুসান প্রাসাদটি কিম ইল সুং এর সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে৷ বিশ্বে আর কোন কমিউনিস্ট নেতার এমন বিশাল প্রাসাদ নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
হোটেল
রিউগইয়ং বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেলগুলোর একটি৷ পিরামিড আকারের ১০৫ তলা এ হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে৷ সেই সময় দেশে কিম ইল সুং এর শাসন ছিল৷ কিম ইল সুং ছিলেন কিম জং উনের দাদা৷ এখনও হোটেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
আকাশে শাসন
উত্তর কোরিয়ার কাছে বিভিন্ন ধরণের এক হাজারটি বিমান আছে, যেগুলোর বেশিরভাগ সোভিয়েত ইউনিয়ন অথবা চীনে তৈরি৷ এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধে ব্যবহার করা যায় এমন হেলিকপ্টার, যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান এবং ড্রোন৷ কিম জং উনের কাছে এএএম এবং ট্রিপল এ সিস্টেমের মতো কিছু বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আছে৷
ছবি: Reuters/Kcna
স্কি রিসোর্ট
কিম জং উনের নির্দেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৬০ মিটার উঁচুতে মাসিকরিয়ং নামে এক জায়গায় একই নামে একটি স্কি রিসোর্ট বানানো হয়েছে৷ এই স্থানটি উত্তর কোরিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার৷ পর্যটকদের জন্য এখানে ১২০ কক্ষ বিশিষ্ট হোটেল রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
জং উনের মোবাইল নেটওয়ার্ক
শোনা যায়, উত্তর কোরিয়ায় কেবল কিম জং উন এবং তাঁর কাছের মানুষদের ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষ মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ কোরীয় লিংক নেটওয়ার্কের প্রযুক্তি পরিচালক আহমাদ আল নোয়ামিনি জানিয়েছে, সাধারণ মানুষ এই মোবাইল পরিষেবার সুবিধা ভোগ করতে পারে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/KCNA via KNS
ব্যক্তিগত দ্বীপ
দেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি গোপন দ্বীপ রয়েছে৷ কিম জং উনের অতিথি হয়ে উত্তর কোরিয়া গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক তারকা৷ এই দ্বীপে রাখা হয়েছিল তাঁকে৷ শোনা যায়, এখানে আনন্দ বিনোদনের সবধরনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিম জং উনের ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার অবতরণের জায়গাও রয়েছে সেখানে৷
ছবি: Tourism DPRK
গল্ফ কোর্স
কিম জং উনের উত্তর কোরিয়ায় অসাধারণ কিছু গল্ফ ক্লাব রয়েছে৷ সরকারি কর্মচারীরা গল্ফ ক্লাবগুলোকে সবসময় ঝকঝকে করে রাখে৷ গল্ফ ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় ফুটবল, বাস্কেটবল, আইস হকি আর কুস্তি জনপ্রিয় খেলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
সেনা ঘাঁটি
উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীতে অনেক যুদ্ধ জাহাজ, টহল নৌকা এবং বড় বড় সামরিক জাহাজ রয়েছে৷ নিজেদের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করা উত্তর কোরিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য৷ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি৷
ছবি: REUTERS/KCNA
বিলাসবহুল গাড়ি
শোনা যায়, ২০১৪ সালে কিম জং উন ১ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে গাড়ি কিনেছিলেন৷ এর মধ্যে মার্সিডিজ বেনৎস, লিমোজিন আর আছে লাক্সারি স্পোর্টস কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
পিয়ানো ভীষণ পছন্দ
শোনা যায়, কিম জং উনের কাছে ২০টিরও বেশি পিয়ানো আছে৷ এমন গুজবও রয়েছে যে, তিনি প্রতিদিনই পিয়ানো বাজান, আর যদি সুরের কোনো গণ্ডগোল হয়, সেটাকে তিনি পিয়ানোর দোষ হিসেবে মনে করেন, নিজের নয়৷
ছবি: Reuters/KCNA
সাবমেরিন
কিম জং উনের কাছে সোভিয়েত আমলের কিছু পুরানো সাবমেরিন রয়েছে৷ এছাড়া দেশটির কাছে আরো বেশ কয়েকটি চীনের সাবমেরিন রয়েছে৷ আর কিছু সাবমেরিন উত্তর কোরিয়ার সেনারা নিজেরাই তৈরি করেছে৷