1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উত্তর কলকাতায় ভোটযুদ্ধ : জিতবে তৃণমূল, নাকি ‘সাবেক তৃণমূল'?

৩০ মে ২০২৪

লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম পর্বে উত্তর কলকাতায় উত্তেজনার পারদও সপ্তমে৷ সেখানে বিজেপির প্রার্থী সদ্য তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া প্রবীণ রাজনীতিবিদ তাপস রায়৷

কলকাতার রাস্তায় মমতার নির্বাচনী প্রচারের বিলবোর্ড
বিভেদ ভুলে উত্তর কলকাতার আসন জিততে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন মমতাছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW

লড়াইটা কঠিন জেনেই দলের সব নেতাকে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু তাতে কি তৃণমূলের অন্দরের দ্বন্দ্ব মিটে যাবে? কেন্দ্রটি নিজেদের দখলে রাখতে পারবে শাসক দল?

আগামী শনিবার কলকাতাসহ তিন জেলার নটি কেন্দ্রে নির্বাচন৷ কলকাতার দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে সেদিন৷ তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের নির্বাচন এবার জমজমাট৷

মমতার বার্তা

উত্তর কলকাতা আসনে এবার মুখোমুখি জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক তিন সতীর্থ৷ দীর্ঘদিনের সাংসদ তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবারও দলের টিকিট পেয়েছেন৷ তার বিরুদ্ধে লড়ছেন তৃণমূল থেকে সদ্য বিজেপিতে যাওয়া তাপস রায়৷ তৃতীয় পক্ষ হিসেবে রয়েছেন বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য৷

উত্তর কলকাতার প্রার্থীর নাম ঘোষণার আগে তৃণমূলের ভিতর ও বাইরে এ নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়৷ উত্তরের তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বিস্ফোরক অভিযোগ করেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে৷ 

গত মার্চের গোড়ায় সুদীপকে প্রার্থী করার বিরুদ্ধে কুণাল সওয়াল করলেও এই প্রবীণ নেতাকেই টিকিট দিয়েছেন দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

একের পর এক ঘটনার পর কুণালের 'বিদ্রোহী' স্বর এখন কিছুটা থিতু হয়েছে, সেই সময় স্বয়ং মমতা প্রকাশ্যে সুদীপ ও কুণালকে বার্তা দিয়েছেন বুধবার৷

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তর কলকাতায় রোড শো করেন তাপস রায়ের সমর্থনে৷ সেই একই পথে বুধবার পদযাত্রা করেন মমতা৷ শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় থেকে তৃণমূলের পদযাত্রা শেষ হয় সিমলা স্ট্রিটে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িতে৷

বিবেকানন্দের মূর্তিতে মালা দিয়ে কর্মসূচি শেষে নিজের গাড়িতে ওঠেন তৃণমূল নেত্রী৷ গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন প্রার্থী সুদীপ৷ সেই সময় হঠাৎ কুণাল ঘোষকে তলব করেন মমতা৷ সুদীপ ও কুণালকে পাশাপাশি রেখে তাদের কিছু নির্দেশ দেন তৃণমূল নেত্রী৷ সূত্রের খবর, বিভেদ ভুলে উত্তর কলকাতার আসন জিততে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন মমতা৷

এই আলাপচারিতার পর সুদীপ বলেন, "নেত্রী আমাকে বলেছেন যত সম্ভব বেশি ভোটে এই আসন থেকে জিততে হবে৷" কুনালের মন্তব্য, "নেত্রী আমাকে ডেকেছিলেন৷ আমাকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন৷ আমিও কিছু কথা বলেছি৷ আমি দলের সৈনিক৷ নেত্রীর নির্দেশে কাজ করব৷"

ভোটের মুখে দ্বন্দ্ব

প্রার্থী ঘোষণার কিছু দিন আগে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের দীর্ঘদিনের সাংসদ সুদীপের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন৷ 

মার্চের গোড়ায় টিভি চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন কুণাল৷ বলেন, "সব কেন্দ্রে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছেন তৃণমূল প্রার্থীরা৷ কিন্তু এই একটা কেন্দ্রে বিজেপির দুজন প্রার্থী৷ একজন পদ্মফুল প্রতীকে লড়বেন, অন্যজন ঘাসফুল প্রতীকে৷ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিরই লোক৷"

এর পরপরই প্রার্থী বদলের দাবি তোলেন কুণাল৷ বলেন, "দক্ষিণ কলকাতা মহিলা সাংসদ পেয়েছে৷ মমতাদি রেকর্ড ভোটে জিতেছেন৷ উত্তর কলকাতায় একবার মহিলা প্রার্থী দেয়া হোক৷ সেখানে শশী পাঁজার মতে নেতা আছেন৷"

এই বিতর্কে কখনো মুখ খোলেননি সুদীপ৷ তৃণমূল নেত্রীও কিছু বলেননি৷ ডামাডোলের মধ্যে হঠাৎই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার স্ত্রী, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাদের বাড়িতে চায়ের টেবিলে একসঙ্গে দেখা যায় কুণালকে৷ এরপর কুণাল সুর বদল করলেও পরে আবার অন্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে৷

এ মাসের গোড়ায় বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের সঙ্গে একমঞ্চে দেখা যায় কুণালকে, রক্তদান শিবিরের অনুষ্ঠানে৷ সেখানে তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, "প্রার্থী বা জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাপসদাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে এক ইঞ্চিও পিছনে রাখতে পারব না৷ তাপসদা মানুষ হিসেবে, সংগঠক হিসেবে সকলের সঙ্গে মিলে কাজ করেন৷"

এরপরই রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ হারান কুণাল৷ তাকে তারকা প্রচারকের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়৷ দলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েনের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন কুণাল৷ পরের দিনই ডেরেকের বাড়িতে কুণাল ও ব্রাত্য বসু বৈঠক করেন৷ এরপর কুণাল আর দলের নেতাদের বিরুদ্ধে  প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাননি৷ কিন্তু তাতে কি সমস্যা মিটেছে?

এই প্রেক্ষাপটে বুধবার উত্তর কলকাতায় পদযাত্রা শেষে সুদীপ ও কুণালকে ডেকে মমতা নির্দেশ দেন৷ তৃণমূল নেত্রীর প্রকাশ্যে এমন আলাপচারিতা গুরুত্ব পাচ্ছে৷

তাপস রায়: মমতার তৃণমূল ছেড়ে আসা বিজেপি প্রার্থী

13:19

This browser does not support the video element.

ভোটের পাটিগণিত

দক্ষিণবঙ্গের যে নটি আসনে শনিবার ভোটগ্রহণ, তার সবকটি ছিল তৃণমূলের দখলে৷ এখানে থাবা বসাতে মরিয়া বিজেপি৷ উত্তর কলকাতাকে পাখির চোখ করেছে তারা৷ তাপস রায় দলে যোগ দেয়ায় সম্ভাবনাও বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের৷

কিন্তু এখানে তৃণমূলের সংগঠন খুবই শক্তিশালী৷ এর সঙ্গে শাসক শিবিরের পক্ষে রয়েছে গত নির্বাচনের পরিসংখ্যান৷ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপির রাহুল সিনহা পেয়েছিলেন ৩৭ শতাংশ ভোট৷ সুতরাং তৃণমূলের ভোট নিজেদের দিকে টানতে না পারলে এই কেন্দ্রে জেতা কঠিন বিজেপির৷

সংখ্যালঘু ভোটের অনেকটাই তৃণমূল হারাবে: বিমলশঙ্কর নন্দ

This browser does not support the audio element.

বিজেপি নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দের দাবি, "উত্তর কলকাতায় তাপস রায়ের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি৷ তিনি তৃণমূল থেকে এলেও দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা৷ এই কেন্দ্রের প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের অনেকটাই তৃণমূল হারাবে৷ তারা বুঝে গিয়েছে, ভোটব্যাংকের স্বার্থে শাসক দল তাদের ব্যবহার করছে৷"

গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম ও কংগ্রেস আলাদা লড়ে মোট ১০ শতাংশের মতো ভোট পেয়েছিল৷ তাদের জোট প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসালে চিন্তা বাড়বে সুদীপের৷ কিন্তু তিনি জোটের পকেট ভোট ধরে রাখতে পারবেন কি?

এই কেন্দ্রের এসইউসিআই প্রার্থী ডা. বিপ্লব চন্দ্র বলেন, "আমিই এখানে একমাত্র বাম প্রার্থী৷ বামপন্থার আদর্শে বিশ্বাসী যারা, তারা কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না৷ উত্তর কলকাতা জুড়ে কংগ্রেসের হাতে নিহত বাম নেতা, কর্মীদের শহিদ বেদি রয়েছে৷" সিপিএমকে নিশানা করে তার মন্তব্য, "আমরা বামপন্থীদের জোট চেয়েছিলাম৷ কিন্তু সিপিএম জোট করল কংগ্রেসের সঙ্গে৷ এতেই বোঝা যায়, ওরা বামপন্থা থেকে দূরে সরে গিয়েছে৷"

সবমিলিয়ে তৃণমূলের অন্দরে চোরাস্রোত এবার তাদের তথাকথিত নিশ্চিত আসনে লড়াই জমিয়ে দিয়েছে৷

‘প্রার্থীর চেয়েও বড় বিষয় প্রতীক’

07:36

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ