চোরাচালানের অভিযোগে উত্তর কোরিয়ার এক কূটনীতিককে দেশ থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ৷ শিপিং কন্টেইনারে করে এক মিলিয়ন সিগারেট এবং ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী শুল্ক না দিয়ে বাংলাদেশে এনেছিলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ঢাকায় উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি হান সন ইককে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ যথাযথ প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে প্রায় লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য বাংলাদেশে আনার অভিযোগ ওঠার পর এই সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার৷ ঢাকার জনপ্রিয় পত্রিকা প্রথম আলো লিখেছে, ‘‘গত মাসে শুল্ক কর্মকর্তারা কমলাপুরের অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোতে (আইসিডি) তল্লাশি চালিয়ে উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের ওই প্রথম সচিবের নামে আনা সাড়ে তিন কোটি টাকা মূল্যের সিগারেট ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আটক করেন৷''
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক কূটনীতিককে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, উত্তর কোরীয়দের এটা জানানো হয়েছে৷ তবে ঠিক কবের মধ্যে কূটনীতিকের দেশত্যাগ করতে হতে তা জানাননি তিনি৷ স্থানীয় গণমাধ্যম অবশ্য জানিয়েছে, সোমবারের মধ্যেই ঢাকা ত্যাগ করতে বলা হয়েছে ইককে৷
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে শহিদুল হক বলেন, ‘‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে ফিরিয়ে নিতে আমরা উত্তর কোরিয়াকে জানিয়েছি৷''
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মূলকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর
বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দরের অবস্থান চট্টগ্রামে৷ সে কারণে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরটিকে বলা হয় বন্দর নগরী৷ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ঘিরে চোরাচালানি, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কাজ এগিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: cpa.gov.bd
প্রধান সমুদ্র বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর৷ প্রতিবছর কয়েক লাখ কন্টেইনার এই বন্দর থেকে পরিবহন হয়৷ বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহনের পরিমাণ ছিল ৫,৫৬,৭৮১ টি৷
ছবি: gemeinfrei
বহু পুরনো বন্দর
কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এই বন্দর চালু হয়েছিল উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামলের শুরুর দিকে৷ উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলি নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন, পরে ১৮৬০ খৃষ্টাব্দে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়৷’’
ছবি: Getty Images
পৃথিবীর নব্বইতম ব্যস্ত বন্দর
সমুদ্র সংক্রান্ত পত্রিকা লয়েড-এর প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হচ্ছে পৃথিবীর ৯০তম ব্যস্ত সমুদ্র বন্দর৷ প্রতিনিয়ত এই বন্দরের চাহিদা বাড়ছে৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য পোশাক খাত অনেকটা এই বন্দরের উপরই নির্ভরশীল৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: imago
রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি
রাজনৈতিক অস্থিরতায় মাঝেমাঝেই ক্ষতির শিকার হয় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর৷ কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, কনটেইনার পরিবহনের প্রায় ৯৫ শতাংশ সড়কপথ এবং ৫ শতাংশ রেলপথে হয়ে থাকে৷ হরতাল, অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পণ্য পরিবহনে বিঘ্ন ঘটে৷ এতে করে আমদানি পণ্য যেমন বন্দরে আটকে যায়, তেমনি রপ্তানির জন্য পণ্য জাহাজে তোলা যায় না৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
চোরাচালান, দুর্নীতি
চোরাচালানের জন্য মাঝেমাঝেই চট্টগ্রাম বন্দর পত্রিকার পাতায় স্থান করে নেয়৷ এছাড়া চুরি, ডাকাতির ঘটনাও ঘটে৷ বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সতর্ক নিরাপত্তা বাহিনী
চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছে কোস্টগার্ড৷ গত বছর এক সংবাদ সম্মেলনে কোস্টগার্ড দাবি করে, আগের বছরের তুলনায় ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে নৌ-দস্যুতা ৫০ ভাগ কমেছে৷ ২০১২ সালে ৫৮৬ কোটি, ২০১১ সালে ৩০২ কেটি টাকার চোরাচালানি পণ্য আটক করা হয়েছে বলেও ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: REUTERS
ভারত, ভুটানের আগ্রহ
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং ভুটানের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে৷ এই আগ্রহের বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বাংলাদেশের বাড়তি অর্থ আয়ের একটি উপায় তৈরি হবে৷ তবে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
প্রয়োজন আরো নৌবন্দর
চট্টগ্রাম এবং মংলায় সমুদ্রবন্দর চালু থাকলেও আরো একটি সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বাংলাদেশে৷ এই চাহিদার কথা বিবেচনা করে নভেম্বরে বাংলাদেশের পটুয়াখালিতে পায়রা সমুদ্র বন্দর স্থাপনের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: dapd
গতি মন্থর
তবে পায়রা সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হলেও কাজ আগাচ্ছে খুব ধীর গতিতে৷ বিশেষ করে বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় জমিই এখনো পুরোপুরি অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি৷ আর বন্দরের সংযোগ সড়কও তৈরি হয়নি৷ ফলে কবে নাগাদ তৃতীয় সমুদ্র বন্দর চালু হবে, তা এখনো জানা যাচ্ছে না৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Getty Images
তথ্যের ঘাটতি
উল্লেখ, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে (http://cpa.gov.bd/portal/) তথ্যের বেশ ঘাটতি রয়েছে৷ বন্দরে পণ্য পরিবহন সংক্রান্ত হালনাগাদ কোনো তথ্য সাইটটিতে নেই৷ সর্বশেষ ২০১১ সালের বিভিন্ন পরিসংখ্যান রয়েছে সাইটটিতে৷
ছবি: cpa.gov.bd
10 ছবি1 | 10
শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মইনুল খান জানিয়েছেন, উত্তর কোরীয় জানিয়েছিলেন যে, কন্টেইনারে খাবার এবং সফট ড্রিংকস আনা হচ্ছে৷ কিন্তু আমরা তল্লাশি দামি সিগারেট এবং ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী পেয়েছি৷ এসব সামগ্রী কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা হচ্ছিল বলেও দাবি করেন এক শুল্ক কর্মকর্তা৷
এই বিষয়ে এএফপির তরফ থেকে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে মন্তব্যের জন্য দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হয়নি৷
উল্লেখ্য, এর আগে গতবছরের মার্চে ঢাকা বিমানবন্দরে ২৭ কেজি স্বর্ণসহ ধরা পড়েন আরেক উত্তর কোরীয় কূটনীতিক৷ পরে তাঁকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়৷ এছাড়া গতবছর ঢাকায় একটি উত্তর কোরীয় রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়া হয়৷ কেননা তারা অনুমতি ছাড়াই ওয়াইন এবং ভায়াগ্রার মতো ড্রাগ বিক্রি করছিল৷