উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে জার্মানি৷ বার্লিনে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিকে জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর ডেকে পাঠায়৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, জার্মানি এবং ফ্রান্স কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার বার্লিনে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয়৷ পরে এক বিবৃতিতে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র স্টেফেন সাইবার্ট জানান, জার্মানির চ্যান্সেলর ম্যার্কেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট্ মাক্রোঁ ইইউ-এর প্রতি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন৷
উত্তর কোরিয়া এবার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালাতে পারে বলে মনে করছে দক্ষিণ কোরিয়া৷ পিয়ংইয়ং হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করায় ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ অনেক দেশ ক্ষুব্ধ৷ চলছে নিন্দাও৷
রবিবার উত্তর কোরিয়া দাবি করে যে তারা এমন পারমাণবিক অস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে, যা দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে নিক্ষেপ করা যায়৷
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দেশটি গত কয়েক বছর ধরেই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে আসছে৷
রবিবারের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার পরই যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস ম্যাটিস জানান, পিয়ংইয়ংয়ের উপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিজেকে রক্ষা করার সক্ষমতা আছে৷ ম্যাটিস আরো বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ অন্যান্য মিত্র দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ সরাসরি সামরিক অভিযানের কথা তিনি বলেননি৷ তাঁর আশা, এর আগেই উত্তর কোরিয়া নিজের অবস্থান বদলাবে৷ এমনটি আশা করার কারণ জানাতে গিয়ে ম্যাটিস বলেন, ‘‘আমরা চাই না উত্তর কোরিয়া নামের কোনো দেশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক৷''
এদিকে উত্তর কোরিয়ার রবিবারের পারমাণবিক পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠক ডেকেছে৷
জাপান চায়, সেই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার ওপর আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক৷ জাপানের রাষ্ট্রদূত কোরো বেশো বলেছেন, ‘‘আর সময় নষ্ট করা যাবে না৷ এমন কিছু করা দরকার, যাতে উত্তর কোরিয়া চাপটা অনুভব করে৷ ওরা এভাবে এগোতে থাকলে বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে৷''
উত্তর কোরিয়াকে ‘শায়েস্তায়’ নিয়োজিত যে রণতরি
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তপ্ত সম্পর্কে যে আরো উত্তপ্ত হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ ফলে ইউএসএস কার্ল ভিনসনকে অবস্থান নিচ্ছে উত্তর কোরিয়ার কাছাকাছি সমুদ্র অঞ্চলে৷ চলুন জেনে নিই এই বিমানবাহী রণতরিটি সম্পর্কে৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy/M. Castellano
সেই ১৯৮৩ সালে সমুদ্রযাত্রা
মার্কিন বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস কার্ল ভিনসন সেই ১৯৮৩ সালে সমুদ্রযাত্রা শুরু করে৷ পরবর্তীতে একাধিকবার এটির সংস্কার করা হয়৷ জর্জিয়ার কংগ্রেসম্যান কার্ল ভিনসনের নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে৷ বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার কাছাকাছি অবস্থান করছে বিমানবাহী রণতরিটি৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy/Z.A. Landers
অন্যতম বড় বিমানবাহী রণতরি
৯৭,০০০ টন ওজনের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজটিতে রয়েছে টমহক মিসাইল, কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান এবং অন্তত পাঁচ হাজার যুদ্ধ জাহাজ৷ এটি মার্কিন নৌ বাহিনীর কাছ থেকে নিমিৎস সিরিজের দশটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের তৃতীয়টি৷ নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড হওয়ায় এটি বিশ বছর পর্যন্ত কোনো রকম জ্বালানি ছাড়াই চলতে পারে৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy photo(C. Brown
ঘন্টায় ৩৫ মাইল
ভিনসনে চারটি প্রপেলার রয়েছে, যা দিয়ে এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫ মাইল বেড়ে চলতে পারে৷ এটি ১০৯২ ফিট লম্বা এবং ২৫২ ফিট চওড়া৷ ছবিতে রণতরিটির পাশে একটি হেলিকপ্টারকে সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy/M. Castellano
‘গোল্ড ইগল’
দক্ষিণ চীন সাগরে মোতায়েন ভিনসনের ডাকনাম হচ্ছে ‘গোল্ড ইগল৷’ ২০০১ সালে একটি ছবির শুটিং করা হয়েছে যুদ্ধজাহাজটিতে৷
ছবি: Reuters/Erik De Castro
ওসামা বিন লাদেনের মরদেহ
আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানে মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর তার মরদেহ কার্ল ভিনসনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়৷ এই জাহাজ থেকে মরদেহটি সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল বলেও গুজব রয়েছে৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy/Z.A. Landers
ইরাক যুদ্ধে ভিনসন
১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে পারস্য উপসাগরে মোতায়েন ছিল ভিনসন৷ সেখান থেকেই ইরাকে মার্কিন হামলায় ভূমিকা রাখে রণতরিটি৷ সেই সময় ১১টি যুদ্ধবিমান এই রণতরি থেকে উড়ে গিয়ে ইরাকের পঞ্চাশটি স্থানে হামলা চালিয়েছিল৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy photo/M. Castellano
উত্তর কোরিয়ার হামলা প্রতিরোধে কি সক্ষম?
বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার চোখ রাঙানির জবাব দিতে ইউএসএস কার্ল ভিনসনকে সামনে ঠেলে দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ কিন্তু নিউজ উইকের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া ব্যালেস্টিক মিশাইল ছুড়লে তা ধ্বংসের ক্ষমতা রণতরিটির নেই৷ মার্কিন নেভি অবশ্য জানিয়েছে, ভিনসন উত্তর কোরিয়ার যে কোনো হামলাই প্রতিরোধে সক্ষম৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy/M. Castellano
7 ছবি1 | 7
দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং রাশিয়া রবিবারই উত্তর কোরিয়ার ষষ্ঠ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার তীব্র নিন্দা জানায়৷ দক্ষিণ কোরিয়া বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে জানায়, উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষায় আরো বড় হুমকির ইঙ্গিত রয়েছে৷ দক্ষিণ কোরিয়া মনে করছে, দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে নিক্ষেপ করা যায় এমন হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষার ঘোষণা দিয়ে উত্তর কোরিয়া আসলে জানিয়ে দিলে যে, অচিরেই তারা দূর পাল্লার, অর্থাৎ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালাতে পারে৷ অবশ্য এ বিষয়ে এখনো উত্তর কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি৷
সোমবার থেকে চীনের জিয়ামেন শহরে শুরু হয়েছে ব্রিকস সম্মেলন৷ পাঁচ জাতির এ সম্মেলনে বরাবরের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীন৷ তিন দিনের সম্মেলনের প্রথম দিনে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষার তীব্র নিন্দা জানানো হয়৷ এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক ইস্যুতে চলমান উত্তেজনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি৷ আমরা মনে করি, বিবদমান সব পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এর শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়া উচিত৷’’
যে দেশে জিন্স ‘হারাম’, গাঁজা ‘হালাল’
দেশটি এতটাই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী যে সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবেই ‘জিন্স’-এর পোশাক পরা নিষিদ্ধ৷ অথচ অন্যদিকে যে যত খুশি ‘গাঁজা’ সেবন করতে পারবেন! এমন দেশ উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে জানুন মজার কিছু তথ্য৷
ছবি: Getty Images/C. Chu
ইচ্ছে মতো চুল কাটা মানা
হ্যাঁ, উত্তর কোরিয়ায় যার যেমন খুশি চুল কাটবেন সে উপায় নেই৷ স্বৈরশাসক কিম জং উন ক্ষমতায় আসার পর পরই ঠিক করে দিয়েছেন, দেশের সব পুরুষকে বিশেষ ১০টি আর মেয়েদের ১৮টি হেয়ার স্টাইলের মধ্যেই যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে৷ আর কিম জং উন যেভাবে চুল কাটান সেভাবে দেশের আর কেউ কাটাতে পারবেন না৷
ছবি: picture alliance/AP Images
যে দেশে ‘স্বর্গ’ আছে...
উত্তর কোরিয়ার সব মানুষ মন থেকে নিজের দেশকে ‘স্বর্গ’ না বললেও, যাঁরা গাঁজা সেবন করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বলেন৷ এ দেশে যে যত খুশি গাঁজা খেতে পারেন৷ গাঁজা সেখানে কোনো নিষিদ্ধ মাদক নয়৷ সুতরাং যে যত খুশি গাঁজা খেলে কোনো সমস্যাই নেই৷
ছবি: picture alliance/Photopqr/l'Alsace
সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম
বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামটি কিন্তু উত্তর কোরিয়ায়৷ নাম রুনগ্রাদো মে ডে স্টেডিয়াম৷ ১৯৮৯ সালের পহেলা মে স্টেডিয়ামটির কাজ শেষ হয়েছিল বলে নামের সঙ্গেও জুড়ে দেয়া হয়েছে ‘মে দিবস’৷ ১ লক্ষ ৫০ হাজার দর্শকের আসন আছে স্টেডিয়ামটিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জন্মদিনেও বাধা...
উত্তর কোরিয়ায় বছরের বিশেষ দু’টি দিনে কেউ জন্ম নিলে সেই দিনে জন্মদিন উদযাপন করা যাবে না৷ উত্তর কোরিয়া সাবেক দুই শাসক কিম ই সুং এবং কিম জং ইল মৃত্যুবরণ করেছিলেন বলে সেই দিনগুলোতে দেশের কোনো সাধারণ মানুষের জন্মদিন উদযাপন রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ৷ এ নিয়ম মানতে গিয়ে প্রায় ১ লাখ মানুষকে ৮ জুলাই বা ১৭ ডিসেম্বরের জন্মদিন উদযাপন করতে হয় একদিন পর, অর্থাৎ ৯ জুলাই এবং ১৮ ডিসেম্বরে৷
ছবি: Fotolia/Jenny Sturm
যুক্তরাষ্ট্র ‘শত্রু’, তাই...
এক সময় উত্তর কোরিয়ায় সমাজতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা ছিল, কিন্তু এখন যে ধরনের শাসন চলছে তাকে সমাজতান্ত্রিক বলার উপায় নেই৷ দেশের নাম ‘ডেমোক্র্যাটিক পিপল’স রিপাবলিক অফ কোরিয়া’, অথচ ঘোষিতভাবেই চলছে একদলীয় শাসন৷ তবে সমাজতন্ত্র না থাকলেও উত্তর কোরিয়ার সেই ‘শীতল যুদ্ধের’ সময়কার যুক্তরাষ্ট্রবিরোধিতা ঠিকই আছে৷ যুক্তরাষ্টের মানুষ বেশি জিন্স পরে বলে এ দেশে জিন্স পরা নিষিদ্ধ৷