রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন মঙ্গলবার বলেছেন যে, পিয়ংইয়ংকে সংযত করার জন্য কূটনীতি ছাড়া অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করলে ‘বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়' ঘটবে৷
বিজ্ঞাপন
‘রাশিয়া টুডে'-র বিবরণ অনুযায়ী, পুটিন একটি সংবাদ সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক রকেট পরীক্ষাকে ‘প্ররোচনামূলক' বলে নিন্দা জানালেও সঙ্গে এ কথাও বলেছেন যে, কূটনীতি ছাড়া অপর কোনো পন্থা অবলম্বন করলে তিনি একটি ‘বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়'-এর আশঙ্কা দেখেন৷
‘‘এই পরিস্থিতিতে সামরিক উত্তেজনা বাড়িয়ে চলা অর্থহীন; ওটা একটা কানাগলি'', বলে পুটিন মন্তব্য করেন৷ ‘‘ও থেকে বিশ্ব ও পৃথিবীব্যাপী বিপর্যয় ও বিপুল প্রাণহানির অবতারণা ঘটতে পারে'', পুটিন বলেন৷ তাঁর মতে, শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনা ছাড়া উত্তর কোরিয়ার পরমাণু প্রসঙ্গটির সমাধান করার আর কোনো উপায় নেই৷
পুটিন সাবধান করে দেন যে,উত্তর কোরিয়ায় যদি ‘‘ওরা নিরাপদ না বোধ করে'', তাহলে তারা তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি সীমিত করবে না৷ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সাহায্য করতে পারে, কিন্তু ‘‘যে কোনো ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা'' বলবৎ করাটা ‘‘অর্থহীন''৷
‘যুদ্ধের জন্য আকুল'
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি সোমবার বলেন যে, উত্তর কোরিয়ার নেতাকিম জং-উন দৃশ্যত ‘যুদ্ধের জন্য আকুল'৷ হ্যালি বলেন যে, ওয়াশিংটন অপরাপর দেশের উপর উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বন্ধ করার জন্য চাপ দেবে৷ তিনি নিরাপত্তা পরিষদের জন্য একটি নতুন প্রস্তাব এ সপ্তাহে পেশ করবেন বলেও জানিয়েছেন৷ এই প্রস্তাবে উল্লিখিত নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আগামী ১১ই সেপ্টেম্বর তারিখে গৃহীত হবে বলে তিনি আশা করছেন৷
রাজনীতিতে বন্ধুত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত
বেস্ট ফ্রেন্ড ফরএভার: চিরকালের সেরা বন্ধু-স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের বন্ধুত্ব দেখা যায়৷ কিন্তু বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে বন্ধুত্বের এমন দৃষ্টান্ত কমই আছে৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভ্লাদিমির পুটিন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে রুশ প্রেসিডেন্ট এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বন্ধুত্বপূর্ণ হ্যান্ডশেক করছেন৷ হামবুর্গে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে এটাই ছিল তাঁদের প্রথম বৈঠক৷ কিন্তু এই দুই বন্ধুর মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছে না৷ সকলের ধারণা ছিল তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব অত্যন্ত গাঢ়৷ (কারো কারো মতে একটু বেশিই)৷ কিন্তু সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
বারাক ওবামা এবং আঙ্গেলা ম্যার্কেল
বন্ধুত্বের জয় হোক! সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল একসাথে হেসেখেলে তাদের রাজনৈতিক সংকট সমাধান করেছেন৷ কেবল একটা ব্যাপার ছাড়া৷ যেসময় ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালীন ম্যার্কেল এবং তার সরকারের উপর নজরদারি করেছিল তাঁর প্রশাসন৷ বন্ধুত্বে এ সব ঠিক নয়, তাই না? কিন্তু ম্যার্কেল বন্ধুর এ অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং ওবামার দায়িত্বকাল শেষ হওয়ার সময় ব্যথিত ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/M. Sohn
জর্জ ডাব্লিউ বুশ এবং টোনি ব্লেয়ার
নাইন ইলেভেনের ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ যখন চরম সংকটের মধ্যে ছিলেন, তখনও তাঁর পাশে ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ার৷ এমনকি ঐ ঘটনার পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন ও সহায়তা পেয়েছিলেন বুশ৷ নিজের দেশে চরম বিক্ষোভ সত্ত্বেও বুশের উপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নেননি ব্লেয়ার৷ একেই বলে বন্ধুত্ব!
ছবি: picture-alliance/Photoshot
হেলমুট কোল এবং জর্জ বুশ
জর্জ বুশ সিনিয়র তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের মধ্যে নিজের প্রিয় বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছিলেন৷ জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের স্থপতি বলা হয় কোলকে৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না৷ ২০১৭ সালের জুনে যখন কোল মারা যান, সিনিয়র বুশ বলেছিলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবে জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ এবং শীতল যুদ্ধ বন্ধে কোলের মত বন্ধুর সঙ্গে কাজ করতে পারাটা আমার জীবনের একটা বড় অর্জন ও সুখের মুহূর্ত৷’’
ছবি: AFP/Getty Images
জ্যাকি কেনেডি এবং হিলারি ক্লিনটন
১৯৯৩ সালে হিলারির স্বামী বিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তারা যখন হোয়াইট হাউজে ওঠেন, সেই সময়টা হিলারির জন্য বেশ কঠিন ছিল৷ ফার্স্ট লেডি হওয়ার ছ’দিন পর তাই পরামর্শের জন্য সাবেক ফার্স্ট লেডি জ্যাকির শরণাপন্ন হন তিনি৷ সন্তানদের মানুষ করা, কাপড়, ফ্যাশান – এ সব নিয়ে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা ধরে কথা বলেন তাঁরা৷ হিলারি এখনো জ্যাকির একটা পরামর্শ মেনে চলেন৷ তাহল, ‘‘নিজের সত্ত্বাকে ঠিক রাখতে হবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
5 ছবি1 | 5
ইতিপূর্বে সোমবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন-এর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং উভয়ে একমত হন যে, পিয়ংইয়াং-এর সর্বাধুনিক ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বিস্ফোরণ একটি অভূতপূর্ব প্ররোচনা৷ এছাড়া দুই নেতা দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পে-লোড বা বোমার ওজন বাড়ানো সম্পর্কে একমত হন৷ ২০০১ সালের একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী এই পে-লোড ৫০০ কিলোগ্রামে সীমিত করা হয়েছিল৷
হোয়াইট হাউসের একটি বিবৃতি অনুযায়ী ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘বহু শত কোটি ডলার' মূল্যের সমরাস্ত্র ও সামরিক সাজসরঞ্জাম বিক্রির অনুমতি দিতে প্রস্তুত৷
দক্ষিণ কোরিয়ার মহড়া
পিয়ংইয়াং-এর স্বঘোষিত হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণের দু'দিন পরে দক্ষিণ কোরিয়া তাজা গোলাবারুদ নিয়ে পূর্ব সাগরে একটি ‘ব্যাপক' মহড়া চালিয়েছে৷
গাইডেড মিসাইল নিক্ষেপে সক্ষম একটি ৪০০ টন ওজনের জাহাজসহ একাধিক জঙ্গিজাহাজ কোরিয়া উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে সংঘটিত মহড়াটিতে অংশগ্রহণ করে৷
মহড়ায় একটি রণতরী, একটি টহলদারি জাহাজ ও বিভিন্ন উচ্চগতির বোট ব্যবহার করা হয় বলে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷
দক্ষিণ কোরিয়ার ইওনহাপ সংবাদ সংস্থা মহড়াটিকে ‘ব্যাপক' বলে বর্ণনা করে এবং যোগ করে যে, এই মহড়া ‘উত্তর কোরিয়ার প্ররোচনার বিরুদ্ধে (দক্ষিণ কোরিয়ার) প্রত্যুত্তর দেবার সংকল্পের' পরিচায়ক,বলে দক্ষিণ কোরীয় নৌবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে৷
মহড়ার আগের দিন দক্ষিণ কোরীয় সেনা ও বিমানবাহিনীর একটি যৌথ মহড়ায় এক পর্যায় এফ-১৫ জঙ্গিজেট ও ভূপৃষ্ঠে স্থাপিত ক্ষেপণাস্ত্রসহ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষা ভূমির উপর আক্রমণের মহড়া নেওয়া হয়৷ আগামী বুধবার থেকে শনিবার অবধি দেশের দক্ষিণ উপকূলে উত্তরোত্তর নৌ মহড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, বলে সৌল জানিয়েছে৷
উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে নিস্তার নেই
উত্তর কোরিয়াকে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার৷ সবশেষ খবর বলছে, দেশটির প্রশাসন তাদের জনগণকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের কাছ থেকে সবথেকে বেশি আলাদা করে রাখতে চাচ্ছে, পাশাপাশি এই সত্যটিকেও৷
কোন বন্ধু নেই
যদিও চীন ও উত্তর কোরিয়ার মাঝে বরাবরই খুব ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, সম্প্রতি এই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে৷ এর প্রমাণ হয়, জিলিন প্রদেশের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তর কোরিয়ানদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন৷ শুধু পাসপোর্টই নয়, পর্যটকদের সব ডিভাইস ও লাগেজ জমা রাখতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে৷
ছবি: Daily NK
বিতর্কিত জলাধারে সেতু
এত কড়াকড়ির পরও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়ার জন্য খুব দরকার৷ পরিত্যক্ত সিনো-কোরিয়ান ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের বদলে দুই দেশকে আলাদা করা ইয়ালু নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মিত হচ্ছে৷ উত্তর কোরিয়া অংশে নির্মিতব্য সেতুর কাজ থেমে গেছে অর্থায়নের অভাবে৷
ছবি: Daily NK
সীমানায় বসে
গেল বছর উত্তর হ্যামগিয়ং প্রদেশের সীমান্তের কাটাতারের বেড়া, যেটি উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া ও চীন থেকে আলাদা করত, তা বন্যায় ভেসে গেছে৷ এই বেড়া দেশটিতে চোরাচালান ও দেশত্যাগীদের নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে৷ অবশ্য প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে বেড়া তৈরি করে এবং পাহারা মোতায়েন করে৷
ছবি: Daily NK
হোম, সুইট হোম
তবে দিন দিন উত্তর কোরিয়ার দেশত্যাগীদের সংখ্যা কমছে, যদিও এটি শাসকগোষ্ঠীর কাছে এখনো একটি সংবেদনশীল বিষয়৷ উপরের ছবিতে একজন দক্ষিণ কোরীয় টেলিভিশন সেলিব্রেটিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি উত্তর কোরিয়ায় ফিরে এসেছেন এবং স্থানীয় প্রপাগান্ডা টিভি চ্যানেলে ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘‘উত্তর কোরিয়ার নিকুচি করি৷’’
ছবি: Uriminzokkiri TV
পারলে কর পাকড়াও
পালিয়ে যাওয়া অনেক উত্তর কোরিয়ান ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ কারণ তাদের পরিবারকে জিম্মি করা হয়েছিল৷ এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে, শাসকগোষ্ঠী চীন সীমান্তে এজেন্টদের মোতায়েন করে রেখেছে, যেন কেউ পালিয়ে যেতে নিলে তাকে ধরে আনা যায়৷ পাকড়াওকারীরা কাছাকাছি একটি হোটেলেই থাকেন সবসময়৷
ছবি: Wikipedia Commons
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
যদিও উত্তর কোরীয়দের জন্য বিষয়টি ভাবাই যায় না, তারপরও বিদেশিদের পর্যটকদের জন্য কিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এমনকি সরকারি পর্যটন ট্রাভেল এজেন্সি গেল আগস্টে তাদের আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট খুলেছে এবং আকর্ষণীয় সব ভ্রমণ প্যাকেজ ছেড়েছে৷
ছবি: Tourism DPRK
6 ছবি1 | 6
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদপত্র মঙ্গলবার জানায় যে, পিয়ংইয়ং দৃশ্যত একটি আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্রকে তার পশ্চিম উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ রকেটটি স্থানান্তরের কাজ সোমবার শুরু হয় এবং নজর এড়ানোর জন্য এই কাজ শুধু রাত্রে করা হচ্ছে বলে এশিয়া বিজনেস ডেইলি এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে৷ সৌলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে তারা এই খবরের যথার্থতা নিশ্চিত করতে অক্ষম৷