হামবুর্গে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে যা বলেছিলেন, দেশে ফিরেও সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়-ইন৷ জানালেন, তাঁর দেশ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত৷
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ দিনের বৈরি সম্পর্কে বিরল যে সুবাতাস, হঠাৎ তা-ই যেন বইয়ে দিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়-ইন৷ প্রতিবেশী দেশ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ আবারও উঠে এলো তাঁর মুখে৷ দু'দেশের সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ যখন ঊর্ধগামী, তখন সম্পর্কোন্নয়নের আগ্রহ অন্য মহল থেকেও প্রকাশিত৷ দক্ষিণ কোরিয়ার রেডক্রস বলেছে, দুই দেশের মধ্যে পারিবারিক পুনর্মিলনীকে সম্ভব করার জন্য তারাও আলোচনায় আগ্রহী৷ দক্ষিণ কোরিয়ার রেডক্রস সবুজ সংকেত পেলে উত্তর কোরিয়ার রেড ক্রস কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রস্তাবিত এ আলোচনা হতে পারে আগামী ২১ জুলাই৷ আলোচনার স্থানও নির্ধারিত৷ দু'দেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম পানমুনজমে হতে পারে এই আলোচনা৷ ২০১৫ সালে সিউল ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে সর্বশেষ সরকারি পর্যায়ের আলোচনাটিও হয়েছিল সেখানে৷
তাই প্রেসিডেন্ট মুন জায়-ইনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে উত্তর কোরিয়াও যদি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনায় রাজি হয়, তাহলে সেই আলোচনার সূচনাও পানজুনজমেই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সোমবার সেরকমই জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘দু'দেশের ভূ সীমান্তে যে সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করছে, তা লাঘব করার জন্য আমরা আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছি৷'' তবে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য আলোচনার টেবিলে দক্ষিণ কোরিয়া কী কী বিষয় রাখবে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি৷
উত্তর কোরিয়াকে ‘শায়েস্তায়’ নিয়োজিত যে রণতরি
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তপ্ত সম্পর্কে যে আরো উত্তপ্ত হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ ফলে ইউএসএস কার্ল ভিনসনকে অবস্থান নিচ্ছে উত্তর কোরিয়ার কাছাকাছি সমুদ্র অঞ্চলে৷ চলুন জেনে নিই এই বিমানবাহী রণতরিটি সম্পর্কে৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy/M. Castellano
সেই ১৯৮৩ সালে সমুদ্রযাত্রা
মার্কিন বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস কার্ল ভিনসন সেই ১৯৮৩ সালে সমুদ্রযাত্রা শুরু করে৷ পরবর্তীতে একাধিকবার এটির সংস্কার করা হয়৷ জর্জিয়ার কংগ্রেসম্যান কার্ল ভিনসনের নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে৷ বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার কাছাকাছি অবস্থান করছে বিমানবাহী রণতরিটি৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy/Z.A. Landers
অন্যতম বড় বিমানবাহী রণতরি
৯৭,০০০ টন ওজনের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজটিতে রয়েছে টমহক মিসাইল, কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান এবং অন্তত পাঁচ হাজার যুদ্ধ জাহাজ৷ এটি মার্কিন নৌ বাহিনীর কাছ থেকে নিমিৎস সিরিজের দশটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের তৃতীয়টি৷ নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড হওয়ায় এটি বিশ বছর পর্যন্ত কোনো রকম জ্বালানি ছাড়াই চলতে পারে৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy photo(C. Brown
ঘন্টায় ৩৫ মাইল
ভিনসনে চারটি প্রপেলার রয়েছে, যা দিয়ে এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫ মাইল বেড়ে চলতে পারে৷ এটি ১০৯২ ফিট লম্বা এবং ২৫২ ফিট চওড়া৷ ছবিতে রণতরিটির পাশে একটি হেলিকপ্টারকে সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy/M. Castellano
‘গোল্ড ইগল’
দক্ষিণ চীন সাগরে মোতায়েন ভিনসনের ডাকনাম হচ্ছে ‘গোল্ড ইগল৷’ ২০০১ সালে একটি ছবির শুটিং করা হয়েছে যুদ্ধজাহাজটিতে৷
ছবি: Reuters/Erik De Castro
ওসামা বিন লাদেনের মরদেহ
আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানে মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর তার মরদেহ কার্ল ভিনসনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়৷ এই জাহাজ থেকে মরদেহটি সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল বলেও গুজব রয়েছে৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy/Z.A. Landers
ইরাক যুদ্ধে ভিনসন
১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে পারস্য উপসাগরে মোতায়েন ছিল ভিনসন৷ সেখান থেকেই ইরাকে মার্কিন হামলায় ভূমিকা রাখে রণতরিটি৷ সেই সময় ১১টি যুদ্ধবিমান এই রণতরি থেকে উড়ে গিয়ে ইরাকের পঞ্চাশটি স্থানে হামলা চালিয়েছিল৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy photo/M. Castellano
উত্তর কোরিয়ার হামলা প্রতিরোধে কি সক্ষম?
বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার চোখ রাঙানির জবাব দিতে ইউএসএস কার্ল ভিনসনকে সামনে ঠেলে দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ কিন্তু নিউজ উইকের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া ব্যালেস্টিক মিশাইল ছুড়লে তা ধ্বংসের ক্ষমতা রণতরিটির নেই৷ মার্কিন নেভি অবশ্য জানিয়েছে, ভিনসন উত্তর কোরিয়ার যে কোনো হামলাই প্রতিরোধে সক্ষম৷
ছবি: Reuters/U.S. Navy/M. Castellano
7 ছবি1 | 7
সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়া কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করায় অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া ও তার মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র৷ উত্তর ও দক্ষিণের কোনো আলোচনায় এ বিষয়টি উঠে না এলে আলোচনার কার্যকারীতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হবে৷ অন্যদিকে উত্তর কোরিয়াও দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়ার বিষয়ে কড়া আপত্তি জানিয়ে আসছে৷ এ আপত্তিকে অগ্রাহ্য করলেও আলোচনায় পিয়ংইয়ংয়ের তরফ থেকে আন্তরিক অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করা বাস্তবানুগ হবে না৷ দক্ষিণ কোরিয়া যৌথ সামরিক মহড়ার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান বদলাতে পারে কিনা – এই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণ মন্ত্রী চো-মিউংগিয়নের কাছে৷ প্রশ্নটি কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি৷
দক্ষিণ কোরিয়া সরকার এবং রেড ক্রসের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব রাখা হলেও এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়া এখনো কোনো মন্তব্য করেনি৷
যে দেশে জিন্স ‘হারাম’, গাঁজা ‘হালাল’
দেশটি এতটাই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী যে সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবেই ‘জিন্স’-এর পোশাক পরা নিষিদ্ধ৷ অথচ অন্যদিকে যে যত খুশি ‘গাঁজা’ সেবন করতে পারবেন! এমন দেশ উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে জানুন মজার কিছু তথ্য৷
ছবি: Getty Images/C. Chu
ইচ্ছে মতো চুল কাটা মানা
হ্যাঁ, উত্তর কোরিয়ায় যার যেমন খুশি চুল কাটবেন সে উপায় নেই৷ স্বৈরশাসক কিম জং উন ক্ষমতায় আসার পর পরই ঠিক করে দিয়েছেন, দেশের সব পুরুষকে বিশেষ ১০টি আর মেয়েদের ১৮টি হেয়ার স্টাইলের মধ্যেই যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে৷ আর কিম জং উন যেভাবে চুল কাটান সেভাবে দেশের আর কেউ কাটাতে পারবেন না৷
ছবি: picture alliance/AP Images
যে দেশে ‘স্বর্গ’ আছে...
উত্তর কোরিয়ার সব মানুষ মন থেকে নিজের দেশকে ‘স্বর্গ’ না বললেও, যাঁরা গাঁজা সেবন করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বলেন৷ এ দেশে যে যত খুশি গাঁজা খেতে পারেন৷ গাঁজা সেখানে কোনো নিষিদ্ধ মাদক নয়৷ সুতরাং যে যত খুশি গাঁজা খেলে কোনো সমস্যাই নেই৷
ছবি: picture alliance/Photopqr/l'Alsace
সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম
বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামটি কিন্তু উত্তর কোরিয়ায়৷ নাম রুনগ্রাদো মে ডে স্টেডিয়াম৷ ১৯৮৯ সালের পহেলা মে স্টেডিয়ামটির কাজ শেষ হয়েছিল বলে নামের সঙ্গেও জুড়ে দেয়া হয়েছে ‘মে দিবস’৷ ১ লক্ষ ৫০ হাজার দর্শকের আসন আছে স্টেডিয়ামটিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জন্মদিনেও বাধা...
উত্তর কোরিয়ায় বছরের বিশেষ দু’টি দিনে কেউ জন্ম নিলে সেই দিনে জন্মদিন উদযাপন করা যাবে না৷ উত্তর কোরিয়া সাবেক দুই শাসক কিম ই সুং এবং কিম জং ইল মৃত্যুবরণ করেছিলেন বলে সেই দিনগুলোতে দেশের কোনো সাধারণ মানুষের জন্মদিন উদযাপন রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ৷ এ নিয়ম মানতে গিয়ে প্রায় ১ লাখ মানুষকে ৮ জুলাই বা ১৭ ডিসেম্বরের জন্মদিন উদযাপন করতে হয় একদিন পর, অর্থাৎ ৯ জুলাই এবং ১৮ ডিসেম্বরে৷
ছবি: Fotolia/Jenny Sturm
যুক্তরাষ্ট্র ‘শত্রু’, তাই...
এক সময় উত্তর কোরিয়ায় সমাজতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা ছিল, কিন্তু এখন যে ধরনের শাসন চলছে তাকে সমাজতান্ত্রিক বলার উপায় নেই৷ দেশের নাম ‘ডেমোক্র্যাটিক পিপল’স রিপাবলিক অফ কোরিয়া’, অথচ ঘোষিতভাবেই চলছে একদলীয় শাসন৷ তবে সমাজতন্ত্র না থাকলেও উত্তর কোরিয়ার সেই ‘শীতল যুদ্ধের’ সময়কার যুক্তরাষ্ট্রবিরোধিতা ঠিকই আছে৷ যুক্তরাষ্টের মানুষ বেশি জিন্স পরে বলে এ দেশে জিন্স পরা নিষিদ্ধ৷