যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন, তাঁর দেশ পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন উপায় খুঁজছে৷ অন্যদিকে নিকি হেলি জানিয়েছেন, পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়াতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হেলি এ মুহূর্তে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রধানের গুরুদায়িত্বও পালন করছেন৷কোরীয় উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর ঘোষণার পর থেকে যখন উত্তেজনার পারদ চড়ছে, তাঁর কণ্ঠে তখনই যেন একটু নরম সুর৷ উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, ‘‘আমরা যুদ্ধ বাঁধাতে চাই না, সুতরাং আমাদের ঘাড়ে যুদ্ধ চাপিয়ে দেবেন না৷ বল এখন তাদের কোর্টে৷ তাদের এটা নিয়ে তাদের খেলা করা উচিত নয়৷''
হেলি জানান, উত্তর কোরিয়া যে সম্প্রতি একটি ব্যর্থ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে, তার নিন্দা জানাতে একটি খসড়া প্রস্তাব প্রণয়ন করছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ৷ কূটনীতিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, খসড়াটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগেই প্রণয়ন করা হচ্ছে, তাই সেখানে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কোরীয় উপদ্বীপকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ থাকবে৷ এছাড়া উত্তর কোরিয়া যদি পারমাণবিক কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে দেশটির ওপর আরো কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের হুমকির উল্লেখও থাকবে৷ জানা গেছে, চীন ইতিমধ্যে প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছে৷ তবে রাশিয়া জানিয়েছে, তারা স্বাক্ষর করবে না৷
এদিকে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন জানিয়েছেন, তাঁর দেশ পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার ওপর আরো চাপ বাড়ানোর উপায় খুঁজছে৷ তিনি জানান, সন্ত্রাসবাদে মদত দেয় এমন রাষ্ট্রগুলোর তালিকায় উত্তর কোরিয়ার নাম আবার ফিরিয়ে আনার কথাও ভাবা হচ্ছে৷ ২০০৮ সালে এ তালিকা থেকে উত্তর কোরিয়ার নাম বাদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র৷ তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ আশা করেছিলেন, এর ফলে পিয়ংইয়ংকে পারমাণবিক কর্মসূচি প্রত্যাহারের আলোচনায় আরো উদ্যোগী করা যাবে৷ কিন্তু কর্যত তা হয়নি৷
এ মুহূর্তে তিনটি দেশকে সন্ত্রাসে মদতদাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ সেই তালিকায় আছে ইরান, সিরিয়া এবং সুদান৷
এসিবি/ডিজি (এপি, রয়টার্স)
উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি কতটা?
উত্তর কোরিয়া যে কোনো ধরনের সামরিক প্ররোচনার আঁচ পেলেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছে৷ ওদিকে একটি মার্কিন নৌ-বহর কোরীয় উপদ্বীপের কাছে৷ কিন্তু কী ধরনের আঘাত হানতে পারে উত্তর কোরিয়া?
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি
সাত লাখ সক্রিয় সেনা ও আরো ৪৫ লাখ রিজার্ভ সৈন্য থাকার অর্থ, উত্তর কোরিয়া যে কোনো সময়ে তার মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশকে সামরিক সেবার ডাক দিতে পারে৷ দেশের প্রত্যেকটি পুরুষকে কোনো না কোনো ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং তাদের যে কোনো সময় সামরিক সেবায় নিযুক্ত করা চলে৷ সৈন্যসংখ্যায় উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিগুণ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
বিপুল অস্ত্রসম্ভার
২০১৬ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইন্ডেক্স অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার সমরসজ্জা চমকে দেওয়ার মতো: ৭০টি ডুবোজাহাজ, ৪,২০০ ট্যাংক, ৪৫৮টি জঙ্গিজেট, ৫৭২টি ফিক্স্ড উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফ্ট ও আরো অনেক কিছু৷ ২০১৩ সালের ছবিটিতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কিভাবে রণকৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে বিভিন্ন মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় লক্ষ্যের উপর আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামরিক কুচকাওয়াজ
প্রতিবছর হাজার হাজার সৈন্য ও সাধারণ নাগরিকদের রাজধানী পিয়ংইয়াং-এর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে অংশ নিতে দেখা যায়৷ এ ধরনের কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি চলে বেশ কয়েক মাস ধরে এবং সাধারণত তার উপলক্ষ্য হয় কমিউনিস্ট পার্টি অথবা কিম পরিবারের কোনো সদস্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ
আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও পিয়ংইয়াং তার আণবিক বোমা ও রকেট তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ রকেট পরীক্ষা তো নিয়মিত ব্যাপার, এছাড়া পাঁচবার পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে উত্তর কোরিয়া, তার মধ্যে এক ২০১৬ সালেই দু’বার৷ দৃশ্যত শেষবারের বিস্ফোরণে যে বোমাটি ব্যবহার করা হয়, তা একটি রকেটে লাগানোর উপযোগী – অন্তত পিয়ংইয়াং-এর তাই দাবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
শত্রু চতুর্দিকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও, পিয়ংইয়াং প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে তার মুখ্য বৈরি বলে মনে করে৷ এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক মহড়াকে উত্তর কোরিয়ার উপর অভিযান চালানোর প্রস্তুতি বলে গণ্য করে পিয়ংইয়াং৷
ছবি: Reuters/K. Hong-Ji
মার্কিন ‘রণকৌশলগত ধৈর্য্যের’ অন্ত?
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে ‘কার্ল ভিনসন’ বিমানবাহী পোতটিকে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে পাঠায় ওয়াশিংটন৷ সঙ্গে সঙ্গে পিংয়ংইয়াং ‘যে কোনো ধরনের যুদ্ধের জন্য’ প্রস্তুতি ঘোষণা করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবধি পৌঁছাতে সক্ষম, এমন রকেট বানানোর জন্য উত্তর কোরিয়ার আরো বছর দু’য়েক সময় লাগবে, বলে গুপ্তচরবিভাগগুলির ধারণা৷ তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ততদিন অপেক্ষা করবেন কিনা, সেটা আরেক প্রশ্ন৷