গোটা বিশ্বের সম্মিলিত চাপের পরোয়া না করে উত্তর কোরিয়া একের পর এক অস্ত্র পরীক্ষা করে চলেছে৷ এমনকি মার্কিন প্রশাসনের হুমকি বা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানও তাদের আচরণে পরিবর্তন আনছে না৷
বিজ্ঞাপন
জাপানের উপর দিয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উড়িয়ে প্ররোচনার পর নিরাপত্তা পরিষদ আবার উত্তর কোরিয়ার প্রবল সমালোচনা করেছে এবং অবিলম্বে অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ ও উত্তেজনা কমাতে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেবার ডাক দিয়েছে৷ তবে একঘরে হয়ে পড়া উত্তর কোরিয়া সরকারের উপর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়নি৷ বর্তমানে যে সব নিষেধাজ্ঞা চালু রয়েছে, জাতিসংঘের প্রস্তাবে সেগুলি কার্যকর করার ডাক দেওয়া হয়েছে৷ চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আরও একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেন৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েনের কাজ অবিলম্বে বন্ধ করার ডাক দেন তাঁরা৷
দক্ষিণ কোরিয়া ও অ্যামেরিকার যৌথ সামরিক মহড়ার জবাব হিসেবে জাপানের উপর দিয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ তাছাড়া এই পরীক্ষা প্রশান্ত মহাসাগরে গুয়াম দ্বীপে মার্কিন ঘাঁটির উপর সামরিক হামলার পথে প্রথম পদক্ষেপ৷ উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ সে দেশের নেতা কিম জং উনকে উদ্ধৃত করে আরও জানিয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরে আরও সামরিক মহড়ার পরিকল্পনা রয়েছে৷
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে হাত গুটিয়ে বসে থাকা কঠিন হবে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন৷ অ্যামেরিকা উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি অকেজো করে দিতে একতরফা সামরিক হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কা আর উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ অথবা উত্তর কোরিয়া আবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালালে মাঝ আকাশে সেই ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার চেষ্টাও চালাতে পারে ওয়াশিংটন৷ তবে এমন পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে৷ উত্তর কোরিয়া এমন পদক্ষেপকে যুদ্ধ হিসেবে গণ্য করতে পারে৷
চীন সব পক্ষের উদ্দেশ্যে সংযমের ডাক দিয়ে শুধুমাত্র নিরাপত্তা পরিষদের কাঠামোর মধ্যে যাবতীয় পদক্ষেপ নেবার উপর জোর দিচ্ছে৷ এদিকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী উত্তর কোরিয়ার উপর আরও চাপ সৃষ্টি করার ডাক দিয়েছেন, যাতে সে দেশ সংলাপের পথে আসতে বাধ্য হয়৷
উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে নিস্তার নেই
উত্তর কোরিয়াকে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার৷ সবশেষ খবর বলছে, দেশটির প্রশাসন তাদের জনগণকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের কাছ থেকে সবথেকে বেশি আলাদা করে রাখতে চাচ্ছে, পাশাপাশি এই সত্যটিকেও৷
কোন বন্ধু নেই
যদিও চীন ও উত্তর কোরিয়ার মাঝে বরাবরই খুব ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, সম্প্রতি এই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে৷ এর প্রমাণ হয়, জিলিন প্রদেশের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তর কোরিয়ানদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন৷ শুধু পাসপোর্টই নয়, পর্যটকদের সব ডিভাইস ও লাগেজ জমা রাখতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে৷
ছবি: Daily NK
বিতর্কিত জলাধারে সেতু
এত কড়াকড়ির পরও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়ার জন্য খুব দরকার৷ পরিত্যক্ত সিনো-কোরিয়ান ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের বদলে দুই দেশকে আলাদা করা ইয়ালু নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মিত হচ্ছে৷ উত্তর কোরিয়া অংশে নির্মিতব্য সেতুর কাজ থেমে গেছে অর্থায়নের অভাবে৷
ছবি: Daily NK
সীমানায় বসে
গেল বছর উত্তর হ্যামগিয়ং প্রদেশের সীমান্তের কাটাতারের বেড়া, যেটি উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া ও চীন থেকে আলাদা করত, তা বন্যায় ভেসে গেছে৷ এই বেড়া দেশটিতে চোরাচালান ও দেশত্যাগীদের নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে৷ অবশ্য প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে বেড়া তৈরি করে এবং পাহারা মোতায়েন করে৷
ছবি: Daily NK
হোম, সুইট হোম
তবে দিন দিন উত্তর কোরিয়ার দেশত্যাগীদের সংখ্যা কমছে, যদিও এটি শাসকগোষ্ঠীর কাছে এখনো একটি সংবেদনশীল বিষয়৷ উপরের ছবিতে একজন দক্ষিণ কোরীয় টেলিভিশন সেলিব্রেটিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি উত্তর কোরিয়ায় ফিরে এসেছেন এবং স্থানীয় প্রপাগান্ডা টিভি চ্যানেলে ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘‘উত্তর কোরিয়ার নিকুচি করি৷’’
ছবি: Uriminzokkiri TV
পারলে কর পাকড়াও
পালিয়ে যাওয়া অনেক উত্তর কোরিয়ান ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ কারণ তাদের পরিবারকে জিম্মি করা হয়েছিল৷ এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে, শাসকগোষ্ঠী চীন সীমান্তে এজেন্টদের মোতায়েন করে রেখেছে, যেন কেউ পালিয়ে যেতে নিলে তাকে ধরে আনা যায়৷ পাকড়াওকারীরা কাছাকাছি একটি হোটেলেই থাকেন সবসময়৷
ছবি: Wikipedia Commons
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
যদিও উত্তর কোরীয়দের জন্য বিষয়টি ভাবাই যায় না, তারপরও বিদেশিদের পর্যটকদের জন্য কিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এমনকি সরকারি পর্যটন ট্রাভেল এজেন্সি গেল আগস্টে তাদের আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট খুলেছে এবং আকর্ষণীয় সব ভ্রমণ প্যাকেজ ছেড়েছে৷