উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা এটাই প্রমাণ করে আন্তঃমহাদেশে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে তারা অনেকটাই এগিয়েছে-এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
কোরীয় উপত্যকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি একটি অশনীসংকেত বলে জানিয়েছেন তারা৷
‘বড় ধরনের ভারী পারমাণবিক ওয়ারহেড’ বহনের সক্ষমতা যাচাই করতে নতুনভাবে তৈরি একটি মধ্য থেকে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া৷ উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষার পর তাদের নেতা কিম জং উন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তাদের ক্ষমতাকে যেনো ছোট করে না দেখা হয়৷
রবিবার নেতা কিম জং উনের তত্ত্বাবধানে ক্ষেপণাস্ত্রটির সফল উৎক্ষেপণ করা হয় বলে জানিয়েছে কেসিএনএ৷ যেসব দেশের ‘পারমাণবিক অস্ত্র নেই’ তাদের ভীতি প্রদর্শনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছেন কিম৷ যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড উত্তর কোরিয়ার ‘হামলার আওতায়’ আছে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি৷
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি রাশিয়ার পূর্ব সীমান্তের কাছে সাগরে গিয়ে পড়ে৷ কেসিএনএ জানিয়েছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর নিরাপত্তায় যেন বিঘ্ন না ঘটে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের সময় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছিল৷
দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন বুধবার দায়িত্ব গ্রহণের পর উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করার প্রতিশ্রুতি দেন৷ তার কয়েকদিনের মধ্যেই উত্তর কোরিয়া নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করল৷
পিয়ংইয়ংয়ের বাস স্টপগুলো দেখার মতো
উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের বাস স্টপগুলো দেখতে কেমন? জানতে চোখ রাখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
নিয়ম মেনে ছবি তোলা
উত্তর কোরিয়ায় কর্মরত বিদেশি সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীদের বিশেষ নিয়ম মেনে চলতে হয়৷ তাঁরা কাদের ও কিসের ছবি তুলতে পারবেন, কার সঙ্গে কী বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারবেন, সেই নিয়ম ঠিক করে দেয়া আছে৷ সেই নিয়ম মেনেই এএফপির এক আলোকচিত্রী পিয়ংইয়ংয়ের বাস স্টপগুলোর ছবি তুলেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
বিজ্ঞাপন নেই
বাস স্টপ মানেই বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি৷ এই পণ্য, সেই পণ্য কিনতে মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা৷ কিন্তু পিয়ংইয়ংয়ের স্টপগুলোতে বিজ্ঞাপন নেই৷ তার পরিবর্তে আছে মানুষের মনকে ভালো করে দেয়ার মতো ছবি৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর...
এই স্টপে দেখতে পাচ্ছেন সূর্য ডোবার আগ মুহূর্তের ছবি৷ সঙ্গে আছে পাথরের সঙ্গে পানির ধাক্কা খেয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার মনোরম দৃশ্যও৷ এছাড়া পাহাড়-পর্বত, বাঁধ, সিটি সেন্টার, উপকূল ও কৃষিজমির ল্যান্ডস্কেপ - এসবের ছবিও অপেক্ষারত যাত্রীদের মন ভরিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
নেই প্রোপাগান্ডা বার্তা
উত্তর কোরিয়া মানেই সরকারি প্রোপাগান্ডার ছড়াছড়ি৷ শহরের বিভিন্ন জায়গায় তার অস্তিত্ব দেখা গেলেও বাস স্টপগুলো তা থেকে মুক্ত৷
পিয়ংইয়ংয়ে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষের বাস৷ সেখানে মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি থাকার ঘটনা বিরল৷ ট্যাক্সির সংখ্যাও বেশ নগণ্য৷ ফলে শহরের বেশিরভাগ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম ভরসা বাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
অল্প খরচ
শহরের বাস নেটওয়ার্ক বেশ বড়৷ আর ভাড়াও বেশ কম৷ পাঁচ ওন৷ অর্থাৎ ৪৫ বাংলাদেশি পয়সা৷ বলা যায়, প্রায় বিনামূল্যেই বাসে চড়া যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
বাসেই দিনের পরিকল্পনা
একজন যাত্রী জানান, তিনি বাসে বসে সারা দিনের পরিকল্পনা করেন৷ এমন পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তিনি দেশটির প্রতিষ্ঠাতা জনক কিম ইল-সুং ও তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের নেতাদের প্রশংসা করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
মহান নেতার প্রশংসা
সিন হায়-ইয়ং নামের ঐ যাত্রী বলেন, ‘‘আপনি যখন কাজে যাওয়া-আসার সময় বাস ব্যবহার করেন, তখন আপনি আমাদের মহান নেতাদের উষ্ণ ভালবাসা অনুভব করবেন৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
9 ছবি1 | 9
তবে নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের উত্তর কোরিয়ার দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রে প্রযুক্তিগত কোনো উন্নতি নেই৷ দক্ষিণ কোরিয়ার এক সেনা মুখপাত্র জানান, এর সম্ভাবনা খুবই কম বলে তাদের বিশ্বাস৷ তবে ক্ষেপণাস্ত্রের এই উৎক্ষেপণকে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য একটি সংকেত বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
উত্তর কোরিয়া একটি নতুন ধরনের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে কাজ করছে যেটি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে সক্ষম, এটি আট হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া যে ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে তাতে তারা কয়েক বছরের মধ্যেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে৷
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রবিবার পরীক্ষা করা নতুন ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম হোয়াসং-১২, উপরের দিকে দুই হাজার ১১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে ৭৮৭ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়েছে এটি৷ প্রচলিত গমনপথ অনুসরণ করে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হলে এটি অন্তত ৪,০০০ কিলোমিটার (২,৫০০ মাইল) পথ অতিক্রম করতো বলে তাঁদের ধারণা৷
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ
গত বছর পারমাণবিক অস্ত্র নিমার্ণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে , এই অভিযোগে দেশটির বিরুদ্ধে সম্প্রতি আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের অনুরোধের ভিত্তিতে নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার বৈঠকে বসবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি কতটা?
উত্তর কোরিয়া যে কোনো ধরনের সামরিক প্ররোচনার আঁচ পেলেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছে৷ ওদিকে একটি মার্কিন নৌ-বহর কোরীয় উপদ্বীপের কাছে৷ কিন্তু কী ধরনের আঘাত হানতে পারে উত্তর কোরিয়া?
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি
সাত লাখ সক্রিয় সেনা ও আরো ৪৫ লাখ রিজার্ভ সৈন্য থাকার অর্থ, উত্তর কোরিয়া যে কোনো সময়ে তার মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশকে সামরিক সেবার ডাক দিতে পারে৷ দেশের প্রত্যেকটি পুরুষকে কোনো না কোনো ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং তাদের যে কোনো সময় সামরিক সেবায় নিযুক্ত করা চলে৷ সৈন্যসংখ্যায় উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিগুণ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
বিপুল অস্ত্রসম্ভার
২০১৬ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইন্ডেক্স অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার সমরসজ্জা চমকে দেওয়ার মতো: ৭০টি ডুবোজাহাজ, ৪,২০০ ট্যাংক, ৪৫৮টি জঙ্গিজেট, ৫৭২টি ফিক্স্ড উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফ্ট ও আরো অনেক কিছু৷ ২০১৩ সালের ছবিটিতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কিভাবে রণকৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে বিভিন্ন মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় লক্ষ্যের উপর আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামরিক কুচকাওয়াজ
প্রতিবছর হাজার হাজার সৈন্য ও সাধারণ নাগরিকদের রাজধানী পিয়ংইয়াং-এর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে অংশ নিতে দেখা যায়৷ এ ধরনের কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি চলে বেশ কয়েক মাস ধরে এবং সাধারণত তার উপলক্ষ্য হয় কমিউনিস্ট পার্টি অথবা কিম পরিবারের কোনো সদস্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ
আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও পিয়ংইয়াং তার আণবিক বোমা ও রকেট তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ রকেট পরীক্ষা তো নিয়মিত ব্যাপার, এছাড়া পাঁচবার পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে উত্তর কোরিয়া, তার মধ্যে এক ২০১৬ সালেই দু’বার৷ দৃশ্যত শেষবারের বিস্ফোরণে যে বোমাটি ব্যবহার করা হয়, তা একটি রকেটে লাগানোর উপযোগী – অন্তত পিয়ংইয়াং-এর তাই দাবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
শত্রু চতুর্দিকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও, পিয়ংইয়াং প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে তার মুখ্য বৈরি বলে মনে করে৷ এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক মহড়াকে উত্তর কোরিয়ার উপর অভিযান চালানোর প্রস্তুতি বলে গণ্য করে পিয়ংইয়াং৷
ছবি: Reuters/K. Hong-Ji
মার্কিন ‘রণকৌশলগত ধৈর্য্যের’ অন্ত?
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে ‘কার্ল ভিনসন’ বিমানবাহী পোতটিকে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে পাঠায় ওয়াশিংটন৷ সঙ্গে সঙ্গে পিংয়ংইয়াং ‘যে কোনো ধরনের যুদ্ধের জন্য’ প্রস্তুতি ঘোষণা করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবধি পৌঁছাতে সক্ষম, এমন রকেট বানানোর জন্য উত্তর কোরিয়ার আরো বছর দু’য়েক সময় লাগবে, বলে গুপ্তচরবিভাগগুলির ধারণা৷ তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ততদিন অপেক্ষা করবেন কিনা, সেটা আরেক প্রশ্ন৷