উত্তর কোরিয়ার উপর থেকে একাধিক নিষেধাজ্ঞা তুলতে জাতিসংঘে প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন-রাশিয়া। রয়টার্সের হাতে খসড়া প্রস্তাব এসেছে।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি রয়টার্সের হাতে জাতিসংঘের একটি গোপন নথি এসে পৌঁছেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, উত্তর কোরিয়ার উপর থেকে একাধিক বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা তোলার জন্য একটি নতুন খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে রাশিয়া এবং চীন। অদূর ভবিষ্যতে ওই প্রস্তাবটি তারা নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে পেশ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বস্তুত এর আগেও ২০১৯ সালে রাশিয়া এবং চীন এই বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছিল। কিন্তু তা বৈঠকে পেশ করা হয়নি।
কী আছে ওই প্রস্তাবে?
রয়টার্সের দাবি, ওই প্রস্তাবে রাশিয়া এবং চীন বলেছে, মানবিক কারণে উত্তর কোরিয়ার উপর থেকে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া প্রয়োজন। সে দেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সমস্যায় পড়ছেন। সকলের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। রাশিয়া এবং চীনের প্রস্তাব, স্ট্যাচু বা মূর্তি, সামুদ্রিক খাবার, কাপড় এবং পরিশোধিত তেল এবং পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক। এর ফলে উত্তর কোরিয়া তা বিদেশে রপ্তানি করে ভালো রোজগার করতে পারবে।
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
8 ছবি1 | 8
কেন নিষেধাজ্ঞা
২০০৬ সাল থেকে জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের একাধিক দেশ উত্তর কোরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বস্তুত, ব্যালেস্টিক মিসাইল এবং পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর জন্যই তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। যত দিন গেছে, তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরো কড়া হয়েছে। কারণ, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া একের পর এক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে গেছে। প্রকাশ্যে অ্যামেরিকা এবং জাতিসংঘকে হুমকি দিয়েছে।
২০১৯ সালে রাশিয়া এবং চীন প্রথম চেষ্টা করে উত্তর কোরিয়ার উপর থেকে কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা তুলতে। এ বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবও তারা তৈরি করেছিল। প্রাইভেট মেম্বারদের কাছে সেই খসড়া পৌঁছালেও বৈঠকে তা পেশ করা হয়নি। প্রায় দুই বছর পর ফের সেই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে বলে জাতিসংঘের একাধিক কর্মীর বক্তব্য। নামপ্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে তারা রয়টার্সকে জানিয়েছে, নতুন খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে ফেলেছে রাশিয়া এবং চীন। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তা পেশ করার কথা ভাবা হচ্ছে।
কী হতে পারে
এই প্রস্তাব পাশ করাতে হলে নিরাপত্তা পরিষদে নয়টি ভোট প্রয়োজন। পাশাপাশি অ্যামেরিকা, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স ভেটো দিতে পারবে না। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এখনই এই প্রস্তাব পাশ হওয়া মুশকিল। অ্যামেরিকা নিষেধাজ্ঞা তুলতে চাইবে না। তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার রাস্তা খোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বস্তুত, কিছুদিন আগে অ্যামেরিকাও জানিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। হোয়াইট হাউসের বক্তব্য, কোভিডের পরে উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি বেশ খারাপ। সেখানে মানুষ খাদ্যাভাবে ভুগছে। ফলে কিছু মানবিক সাহায্যের কথা ভেবেছে অ্যামেরিকা। তবে চীন ও রাশিয়া যে প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবছে, অ্যামেরিকা তার সঙ্গে সহমত হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।