অলিম্পিক গেমসের প্রতিনিধি দলে অংশ নেয়ার জন্য উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের বেশ কিছু সদস্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে জাতিসংঘ৷ এতদিন তাঁদের বিদেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল৷
বিজ্ঞাপন
সে সময় গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলির মধ্যে যুদ্ধ লেগেই থাকতো৷ বহু চেষ্টা করেও বৈরিতায় রাশ টানা যেতো না৷ অলিম্পিক গেমস শুরু হয়েছিল সেই যুদ্ধ থামানোর জন্যই৷ এবং কী আশ্চর্য, যুদ্ধের দামামা খানিকটা হলেও কমেছিল সেই কয়েক শতাব্দী আগে৷
একই পথে কি হাঁটছে উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়া? যুদ্ধ এবং দু'দেশের রক্তক্ষয়ী ভাগ দেখেছে ইতিহাস৷ দেখেছে, যে কোনো ঘটনায় দু'দেশের মধ্যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি৷ গত একবছরে উত্তর কোরিয়া অ্যামেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহারেরও হুমকি দিয়েছে৷ এক সময় মনে হয়েছিল, অ্যামেরিকা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তরের যুদ্ধ লাগলো বলে৷ অথচ উইন্টার অলিম্পিক্স বা শীতকালীন অলিম্পিক সেই সমস্ত বৈরিতায় সাময়িক জল ঢেলে দিয়েছে৷ দলে দলে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিরা পৌঁছে গিয়েছেন দক্ষিণে৷ শুধু তাই নয়, উত্তর কোরিয়ার যে সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধির অন্য দেশে যাওয়ার ওপর জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তা-ও সাময়িকভাবে তুলে নেওয়া হচ্ছে৷
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
8 ছবি1 | 8
চো হুই উত্তর কোরিয়ার জাতীয় ক্রীড়া অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান৷ এর আগে দেশের অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও তিনি সামলেছেন৷ এবং সে সময়েই প্রোপাগান্ডা করার অভিযোগে জাতিসংঘ তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ কিন্তু অলিম্পিকে তিনি উত্তর কোরিয়ার অন্যতম অতিথি৷ ফলে দক্ষিণ কোরিয়া জাতিসংঘের কাছে আবেদন করে যে, চো'য়ের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক৷ জাতিসংঘও সেই আবেদনে সাড়া দেয়৷ শুধু তাই নয়, উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিদের অন্য দেশ থেকে বিলাসী সামগ্রী কেনার উপরেও নিষেধাজ্ঞা ছিল৷ সাময়িক সময়ের জন্য সেই নির্দেশও শিথিল করা হয়েছে৷ সবচেয়ে বড় কথা, কিম জং উনের সবচেয়ে ছোট বোন স্বয়ং দক্ষিণ কোরিয়ায় আসছেন অলিম্পিক্স উপলক্ষ্যে৷ সে দেশের ইতিহাসে এ এক বিরল ঘটনা৷
সব মিলিয়ে এক সুন্দর মৈত্রীভাব তৈরি হয়েছে উইন্টার অলিম্পিক্সকে ঘিরে৷ এখন দেখার, অলিম্পিক গেমসের পরেও এই সৌহার্দ্য বজায় থাকে কিনা!
উত্তর কোরিয়ার চিয়ার গার্ল
বহুদিনের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেনি৷ উত্তর কোরিয়া থেকে এত বড় প্রতিনিধি দল আসেনি দক্ষিণ কোরিয়ায়৷ শীতের অলিম্পিক উপলক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসেছেন উত্তরের চিয়ার গার্লরা৷
ছবি: Reuters
আয়নায় মুখ
উত্তর কোরিয়া থেকে ২২৯ জন চিয়ার গার্ল এসে পৌঁছেছেন দক্ষিণ কোরিয়ায়৷ অলিম্পিক ভিলেজে যাওয়ার আগে দক্ষিণ কোরিয়ার গ্যাপিইয়ং এক্সপ্রেসওয়ের একটি রেস্টহাউসে সেজে নেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
সীমান্তে চিয়ার
উত্তর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত পার হচ্ছেন চিয়ার গার্লরা৷ উত্তরের সীমান্তে বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে সীমান্ত পেরোন তাঁরা৷ দক্ষিণের সীমান্তেও তাঁদের জন্য তৈরি ছিল বাস৷
ছবি: Reuters/A. Young-joon
রক্তলাল পোশাক
কালো টুপি আর রক্তলাল কোটে সেজে এসেছেন উত্তর কোরিয়ার চিয়ার গার্লরা৷ শীতকালীন অলিম্পিকে এটাই তাঁদের সরকারি পোশাক৷ লাল কোটের কলার আর কাফলিং অবশ্য কালো ফারের তৈরি৷
ছবি: Reuters
বুকে দেশের পতাকা
প্রত্যেকের বুকেই লাগানো দেশের পতাকার ব্যাজ৷ খেলার সময়েও দেশের পতাকা থাকবে তাঁদের হাতে৷ ব্যাজও লাগানো থাকবে বুকে৷
ছবি: Reuters
ইনজে হোটেলে বাসস্থান
উত্তর কোরিয়া থেকে মোট ২৮০ জনের প্রতিনিধি দল এসেছে দক্ষিণে৷ তার মধ্যে ২২৯ জনই চিয়ার গার্ল৷ এঁরা সকলেই থাকবেন গেম ভিলেজের কাছে ইনজে হোটেলে৷
ছবি: Reuters/A. Young-joon
এবং তিনি
শোনা যাচ্ছে অলিম্পিক উপলক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় আসবেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সবচেয়ে ছোট বোন কিম ইও জং৷ তবে তিনি কবে আসবেন, তা এখনো জানা যায়নি৷