মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংলাপের প্রয়াসের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে আবার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ তাঁর মতে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের চেষ্টা করে অযথা সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংলাপ চালাতে চায় কিনা, তা নিয়ে চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন চীন সফরে গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে, অ্যামেরিকা সরাসরি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের পথে চলেছে৷ তারপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য খণ্ডন করে টুইট বার্তায় লিখলেন, সে দেশের সঙ্গে এই মুহূর্তে কোনো সংলাপ হচ্ছে না৷ এবার শোনা যাচ্ছে, সংলাপ হবে – তবে তার একমাত্র বিষয় হবে উত্তর কোরিয়ায় আটক মার্কিন নাগরিকদের মুক্তি৷
ট্রাম্প প্রশাসনে এমন অরাজকতা নতুন ঘটনা নয়৷ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই প্রকাশ্যে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বক্তব্য খণ্ডন করে থাকেন৷ তবে উত্তর কোরিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েওমার্কিন প্রশাসন এক সুরে কথা বলছে না, এমনটা আশা করা যায়নি৷ বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে চীনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দেশ অত্যন্ত বিরক্ত৷ শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনের বার্তায় বেইজিং সন্তুষ্ট হয়ে উত্তর কোরিয়ার উপর সংলাপের জন্য চাপ সৃষ্টি করার পথে এগোনোর কথা ভাবছিল৷ ঠিক তখনই খোদ ট্রাম্প সেই প্রয়াসে জল ঢেলে দিলেন৷ তাঁর মতে, তাঁর ‘অসাধারণ' শীর্ষ কূটনীতিক উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপের চেষ্টা করে অযথা সময় নষ্ট করছেন৷
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জানিয়েছে যে, এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র বর্জনের বিষয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী বা প্রস্তুত, এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷
সোমবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারা স্যান্ডার্স বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের জন্য এটা ঠিক সময় নয়৷ শুধুমাত্র সে দেশের আটক মার্কিন নাগরিকদের দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে৷ তিনি বলেন, সংলাপের বদলে উত্তর কোরিয়ার উপর আরও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে চায় মার্কিন প্রশাসন৷
উত্তর কোরিয়া সক্রান্ত মার্কিন নীতির ক্ষেত্রে এমন বিভ্রান্তির ফলে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অস্বস্তি বাড়ছে৷ ট্রাম্প যেভাবে বর্তমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগকে তাচ্ছিল্য করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার এক সংবাদপত্র তার কড়া সমালোচনা করেছে৷ সোমবার ছুটির দিন ছিল বলে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া শোনা যায়নি৷
যেসব দেশের কারণে টিকে আছে উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও এমন কয়েকটি দেশ আছে যারা উত্তর কোরিয়া থেকে পণ্য বা অস্ত্র আমদানি করে৷ চলুন দেখে নিই কোন দেশগুলো আছে এই তালিকায়৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
অ্যাঙ্গোলা
আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল নিরাপত্তারক্ষীদের মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দেয় উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
চীন
চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশ৷ চীনের শিল্পকারখানায় উত্তর কোরিয়ার অনেক নাগরিক কাজ করে৷ চীনে উত্তর কোরিয়ান অনেক রেস্তোরাঁও রয়েছে, যেখান থেকে উত্তর কোরিয়া বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
কঙ্গো
কঙ্গোর সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পিস্তল এবং অন্য ছোট অস্ত্র আমদানি করে, যা মধ্য আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল দেহরক্ষী এবং পুলিশ ব্যবহার করে৷
ছবি: Reuters/R. Carrubba
মিশর
অভিযোগ রয়েছে, উত্তর কোরিয়া মিশরকে ক্ষেপণাস্ত্রের উপকরণ পাঠিয়েছে৷ এ অভিযোগ সত্য কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Reuters/Amr Abdallah Dalsh
ইরিত্রিয়া
ইরিত্রিয়া আফ্রিকার ছোট একটি দেশ৷ এই দেশটিরও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ জানা গেছে, তারা উত্তর কোরিয়া থেকে সামরিক উপকরণ কিনে থাকে৷
ছবি: DW
কুয়েত
উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কুয়েতে নির্মাণ কাজে যুক্ত আছে৷ কুয়েতে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসও আছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোজাম্বিক
উত্তর কোরিয়া মোজাম্বিককে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করছে৷ এছাড়া ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণেও সহায়তা দিচ্ছে দেশটিকে৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFP/Getty Images
নামিবিয়া
দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে সমরাস্ত্র উপকরণ তৈরি করার একটি কারখানা স্থাপনের জন্য উপকরণ এবং কর্মী পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: DW/B. Osterath
নাইজেরিয়া
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক চিকিৎসক যান৷ ২০১৩ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় উত্তর কোরিয়ার তিন চিকিৎসক নিহত হয়েছিলেন সেখানে৷
ছবি: picture alliance /AP Photo/L. Oyekanmi
ওমান
ওমানে নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে কাজ করার জন্য উত্তর কোরিয়া তাদের শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে৷
ছবি: SR
কাতার
কাতারেও নির্মাণ প্রকল্পে উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কাজ করে৷ ২০২২ সালে দেশটিতে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে৷ এজন্য সেখানে স্টেডিয়ামসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zumapress
সুদান
উত্তর কোরিয়া সুদানে যেসব সামরিক উপকরণ পাঠায়, তার মধ্যে রকেট কন্ট্রোল সেকশন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Shazly
সিরিয়া
দীর্ঘ সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলা দেশটিও উত্তর কোরিয়ার উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম৷ জানা গেছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক সমরাস্ত্র এবং উপকরণ কিনে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Service of the President
উগান্ডা
আফ্রিকার দেশ উগান্ডারও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ উত্তর কোরিয়ার সেনারা উগান্ডায় বিমানবাহিনীর পাইলট এবং টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন৷
ছবি: AP
সংযুক্ত আরব আমিরাত
ইউএই-তে উত্তর কোরিয়ার অনেক রেস্তোরাঁ এবং নির্মাণ কোম্পানি রয়েছে, যেখানে কাজ করার জন্য সবসময়ই উত্তর কোরিয়া থেকে কর্মী পাঠানো হয়৷ এছাড়া উত্তর কোরিয়া থেকে স্কুড মিসাইল কিনে থাকে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷