কিম জং উনের সঙ্গে বাতিল হওয়া সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তিনি জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে জুনের ১২ তারিখ সিঙ্গাপুরে হতে পারে এই সম্মেলন৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার গভীর রাতে একটি টুইটে ট্রাম্প জানান, ‘‘উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে৷'' এর বাইরে ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু না বললেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জিম ম্যাটিস জানিয়েছেন, ‘‘দুই দেশের কূটনীতিকরা সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এখনও কাজ করে চলেছেন৷ এই আলোচনাটি হচ্ছে মূলত উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়ে৷ সুখবর হলো দু'পক্ষই এমনভাবে কাজ করছে যাতে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়৷''
এদিকে, এর প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘‘আমরা এটা জেনে ভীষণ খুশি যে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আলোচনা আবারো সচল হয়েছে৷ আমরা সব বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে নজর রাখছি৷''
শুক্রবার সকালে উত্তর কোরিয়া একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়, সম্মেলনের ব্যাপারে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ভাববার সময় এবং সব ধরনের সুযোগ দিতে রাজি, সেটা যেখানে যেভাবেই হোক না কেন৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও শুক্রবার সকালে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ দু'পক্ষই এ ব্যাপারে একমত হয়েছে যে কিম জং উন এবং ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনা অত্যন্ত জরুরি এবং সেটা সম্ভব করতে তারা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন৷
এক বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি
হোয়াইট হাউসে এক বছর পূর্ণ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তাঁর নানা বিতর্কিত মন্তব্য ও পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও কাঠামোয় ভাঙন ধরাতে পারেনি৷ নিজের অনেক হুমকিও এখনো পর্যন্ত কার্যকর করেননি ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
বিশ্বে ভগ্ন ভাবমূর্তি
গ্যালপ সংস্থার জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, এক বছরে অ্যামেরিকার বাইরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ৪৮ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ তবে ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রবক্তা ট্রাম্প দেশের মধ্যে নিজের সমর্থকদেরই গুরুত্ব দেন৷ বিদেশে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত নন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Hassan
অনির্দিষ্ট পররাষ্ট্র নীতি
মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে এতকালের প্রচলিত ধারা ভেঙে অনেক ক্ষেত্রে ট্রাম্প সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন৷ তাঁর সিদ্ধান্ত প্রায়ই অনিশ্চয়তায় ভরা থাকে৷ ফলে আগে থেকে তাঁর উদ্দেশ্য বোঝা প্রায়ই সম্ভব হয় না৷ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রধান কর্ণধারের এমন খামখেয়ালিপনা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কাঠামোর স্থিতিশীলতার জন্য মোটেই সহায়ক হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Harnik
একলা চলো রে
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অস্বীকার করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে প্যারিস চুক্তি বর্জন করেছেন, তার ফলে বাকি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ও ক্রোধ দেখা গেছে৷ ট্রাম্প অ্যামেরিকাকে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলে এসেছেন৷ কার্যক্ষেত্রে অবশ্য ন্যাটোর মতো জোট ত্যাগ করেননি তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
ইরানের বিরুদ্ধে তোপ
২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসন বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে যে চুক্তি করেছিলো, ট্রাম্প তার ঘোরতর বিরোধী৷ বিশেষ করে সে দেশের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও আঞ্চলিক সংকটে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ৷ তবে চরম সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি এখনো এই চুক্তি থেকে সরে আসেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Marovich
ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার আশায় এ পর্যন্ত সব মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কমবেশি চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ জেরুসালেম শহরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করার মাধ্যমে ট্রাম্প সেই ধারা ভেঙে দিয়েছেন৷ দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরোয়া করেননি তিনি৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
উত্তর কোরিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি
নরম-গরম বার্তা পাঠিয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সম্পর্কে নিজের অবস্থান অস্পষ্ট রেখেছেন ট্রাম্প৷ কখনো ‘লিটল রকেট ম্যান’-কে ধমক দিয়েছেন, কখনো তাঁর সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷ চীনকে কাছে টেনে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে রাশ টানার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Contini
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর
বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তার ব্যয়ও মেক্সিকোকে বহন করতে হবে বলে দাবি করেছিলেন তিনি৷ মেক্সিকো ও ক্যানাডার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করারও হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ এখনো পর্যন্ত দুটি ক্ষেত্রেই কোনো অগ্রগতি ঘটেনি৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
7 ছবি1 | 7
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘'উত্তর কোরিয়ার লিবিয়ার মতো পরিণতি হতে পারে৷'' তারপরেই পিয়ং ইয়ং তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ উত্তর কোরিয়া জানায়, তারা অ্যামেরিকার সঙ্গে সংলাপের জন্য ভিক্ষা করবে না অথবা ওয়াশিংটনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও আলোচনার জন্য তদবির করবে না৷ এরপরই কিমের সঙ্গে বৈঠকে না বসার ঘোষণা আসে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে৷