বুধবার উত্তর কোরিয়া যে পরীক্ষামূলক আণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়, তা সত্যিই পিয়ংইয়ং-এর দাবি মতো একটি হাইড্রোজেন বোমা ছিল কিনা, বিশেষজ্ঞদের সে বিষয়ে সন্দেহ আছে৷ তবে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার কোনো কমতি নেই৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট উত্তর কোরিয়ার আণবিক বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা স্বীকার করেছে, কিন্তু হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জশ আর্নেস্ট রিপোর্টারদের বলেছেন, ‘‘(উত্তর কোরিয়ার) প্রশাসন যে সফলভাবে হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার দাবি করেছে, (মার্কিন তরফে) প্রাথমিক বিশ্লেষণ তার সঙ্গে মেলে না৷''
সিসমোগ্রাফে উত্তর কোরিয়ার বিস্ফোরণটা দেখিয়েছে অনেকটা এইরকম, জানিয়েছে ‘ডিসকভারি' ম্যাগাজিন৷
বিস্ফোরণ যেখানে ঘটানো হয়েছে, সেই স্থানটি উত্তর-পূর্ব চীন থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে৷ বিস্ফোরণের ফলে ঐ এলাকায় নাকি একটি ৪ দশমিক ৮ শক্তির ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে, বলে জানিয়েছে চীনের ‘গ্লোবাল টাইমস' ট্যাবলয়েড; ফলে দানদং শহরে স্কুল ও অফিসবাড়ি খালি করতে হয়৷ ‘‘পিয়ংইয়ং-কে এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব'' বিবেচনা করতে হবে, বলেছে গ্লোবাল টাইমস৷ ‘চায়না ডেইলি' পিয়ংইয়ং-এর বিস্ফোরণ ঘটানোকে বলেছে ‘‘দায়িত্বহীন ও বেপরোয়া''৷
বুধবারই চীন সরকারিভাবে বিস্ফোরণের নিন্দা করে৷ জাতিসংঘও নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা ভাবছে৷
বড় কথা হবে, যদি চীন তা-তে যোগ দেয়৷ উত্তর কোরিয়ার বর্তমান প্রশাসনকে বাস্তবিক দুর্বল করতে পারে, এমন কোনো পদক্ষেপ চীন সমর্থন করবে, বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না৷ তবে বেইজিং পিয়ংইয়ং-কে তার উষ্মা অন্যভাবে দেখাতে পারে: দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে যে সব ট্রাক ইয়ালু নদী পারাপার করে থাকে, সেগুলিকে আরো খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হতে পারে; উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলি মুলতুবি রাখা হতে পারে; চীনের ব্যাংক আর কোম্পানিগুলিকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা থেকে বিরত থাকতে বলা হতে পারে৷
অপরদিকে নিরাপত্তা পরিষদে চীন হয়ত নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সমর্থন করবে৷
হাইড্রোজেন বোমা হোক আর নাই হোক, উত্তর কোরিয়ার বিস্ফোরণ ঘটানো বার বার একটি পুরাতন সমস্যার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, মার্কিন ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল' যেমন টুইট করেছে: উত্তর কোরিয়ার পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ এশিয়ায় মার্কিন নীতিকে চ্যালেঞ্জ করছে৷
নিকটতম ভুক্তভোগী দক্ষিণ কোরিয়া তার সাধ্যমতো প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেছে: শুক্রবার থেকে আবার দুই কোরিয়ার সীমান্তে লাউডস্পিকার দিয়ে প্রোপাগান্ডা প্রচারণা শুরু হবে, সৌল ঘোষণা করেছে৷ এছাড়া যুগ্ম কায়সং ইনডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সেও প্রবেশ সীমিত করা হবে৷ আরেকটি প্রতীকী বা সাংকেতিক হুমকি: দক্ষিণ কোরিয়া নাকি উপদ্বীপে আরো বেশি মার্কিন সামরিক ‘অ্যাসেটস' বা সাজসরঞ্জাম কামনা করে৷
এসি/ডিজি (এপি, ডিপিএ, এএফপি)
উত্তর কোরিয়ার কিছু বিরল ছবি
বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন দেশ উত্তর কোরিয়া৷ সে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বার্তা সংস্থা এপি-র একদল সাংবাদিককে শর্ত সাপেক্ষে ঘুরে বেড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল সরকার৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের তোলা কিছু বিরল ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
নির্জন সড়ক
উত্তর কোরিয়ায় প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার সড়কপথ রয়েছে৷ এর মধ্যে সাংবাদিকরা ২,১৫০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক পাড়ি দিয়েছেন৷ ছবির এই রাস্তাটি উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হোয়ানঘায়-এর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
আগুন ধরিয়ে রান্না
রায়ানগাং রাজ্যের এই ব্যক্তিটি আলু ও মুরগি রান্নার জন্য আগুন ধরিয়েছেন৷ এপি-র সাংবাদিকদের ঘোরাঘুরির শর্ত ছিল তাঁরা কোনো ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না৷ আর ছবি প্রকাশের আগে দেখিয়ে নিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
পূজনীয় পাহাড়
ছবিটি ‘মাউন্ট পেকটু’ নামক পাহাড়ি এলাকার৷ উত্তর কোরীয়রা মনে করেন এই এলাকা থেকেই তাঁদের পূর্বপুরুষরা এসেছেন৷ এছাড়া উত্তর কোরীয় বিপ্লবের সঙ্গেও পাহাড়টির নাম জড়িয়ে আছে৷ সবমিলিয়ে সে দেশের নাগরিকদের কাছে মাউন্ট পেকটু নামেই একটি পূজনীয় স্থান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
সাধারণ কৃষক
রায়ানগাং রাজ্যের এই কৃষক পরিবার গরু নিয়ে কোথাও যাচ্ছেন৷ সাংবাদিকরা রাজধানী পিয়ংইয়ং ছেড়ে বাইরে যাওয়ার পথে ছবিটি তুলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
স্কুলের শিশুরা রাস্তা ঠিক করতে যাচ্ছে
হামগং রাজ্যের এই শিশুরা তাদের এলাকার রাস্তা ঠিক করতে বের হয়েছে৷ পিয়ংইয়ং এবং ওনসান শহরের মধ্যে থাকা ২০০ কিলোমিটার রাস্তা সে দেশের সবচেয়ে ভালো সড়ক৷ এর বাইরে রাস্তাগুলোর অবস্থা ভালো নয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
একসময় জমজমাট, এখন ধুলোময়
হামগং রাজ্যের খনিশহর কিলজু ও কিমচাক শহর দুটি একসময় বেশ জমজমাট ছিল৷ কিন্তু আর সে অবস্থা নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
দারিদ্রতা লুকিয়ে রাখা
বার্তা সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের সঙ্গে সবসময় সরকারি কর্মকর্তারা ছিলেন৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের আসল অবস্থা পুরোপুরি দেখতে পারেননি তাঁরা৷ তবে যেটুকু দেখেছেন তাতে তাঁদের মনে হয়েছে, বেশিরভাগ মানুষেরই একটা ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থা করার সামর্থ্য নেই৷ আর এই ছবির মতো রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া তো দূরের কথা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
ফুটবল খেলা
রায়ানগাং রাজ্যের হাইসান শহরের এই ছেলেরা নিজের মনে ফুটবল খেলছে৷ বিদেশি একজন তাদের যে ছবি তুলছে সেদিকে নজর দেয়ার যেন সময় নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
স্থানীয় খাবার, বিয়ার
একদল উত্তর কোরীয় তাদের স্থানীয় খাবার ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিয়ার দিয়ে পিকনিকে মেতে উঠেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
খাদ্য সরবরাহের সংগ্রাম
উত্তর কোরিয়ার চার-পঞ্চমাংশ জমিই চাষের অনুপযোগী৷ তাই দেশের মানুষের জন্য খাদ্যের যোগান দেয়া সরকারের জন্য একটু কষ্টকরই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Wong Maye-E
কোনো কথা নয়
সাংবাদিকরা শুধু এই রেললাইনের ছবিই তুলতে পেরেছেন৷ ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি ছিল না৷ সফরের পুরোটা সময় এভাবেই কেটেছে সাংবাদিকদের৷ তারপরও সফর শেষে এক সরকারি কর্মকর্তা তাঁদের জানান, তাঁদের নাকি নজিরবিহীন প্রবেশাধিকার দেয়া হয়েছে!