আবারও ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অথনৈতিক অঞ্চলের জলসীমায় পড়েছে৷ এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জাপান৷ চলতি মাসে তৃতীয়বারে মতো এই পরীক্ষা চালালো উত্তর কোরিয়া৷
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৫টা ৪০ মিনিটে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়৷ স্বল্প পাল্লার ওই স্কাড ক্ষেপণাস্ত্রটি ৪৫০ কিলোমিটার উড়ে গিয়ে জাপানের জলসীমায় পড়েছে৷ জাপানের মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশটির বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের দুটি দ্বীপের মাঝামাঝি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্রটি অবতরণ করেছে৷ এতে কোনো নৌযানের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বিষয়টিকে ‘চরম ধৃষ্টতা’ বলে মন্তব্য করেছে দেশটির মন্ত্রিসভা৷
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা জাতিসংঘের নিরাপত্তা চুক্তির চরম লঙ্ঘন এবং এ ধরণের কাজ থেকে দেশটিকে বিরত রাখতে তাদের মোকাবিলা করতে হবে৷’’
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ড জানিয়েছে, ‘‘উত্তর কোরিয়ার ওনসান থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয় এবং অবতরণের আগে প্রায় ছয় মিনিট এটি আকাশে ছিল৷’’ দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘‘ক্ষেপণাস্ত্রটি ১২০ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠেছিল৷’’ দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার পর তৃতীয়বারের মতো ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালো দেশটি৷
হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উত্তর কোরিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ব্যাপারটি জানানো হয়েছে৷ তবে মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ড জানিয়েছে, এটি উত্তর অ্যামেরিকার জন্য কোনো হুমকি নয়৷ গত মাসে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার ওপর অবরোধ আরোপের সময় দেশটিকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘‘এই রাষ্ট্রটির সঙ্গে চরম সংঘাত হতে পারে’’৷
এদিকে, রাশিয়াও উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নিন্দা জানিয়ে পুরো বিশ্বকে তা প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছে৷ রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে জানান, ‘‘আমাদের মিত্র শক্তিরা যাতে পূর্ণ শক্তি দিয়ে এদের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকে৷’’
বিশ্লেষকরা বলছেন, একের পর এক চালানো এসব পরীক্ষা থেকে বোঝা যাচ্ছে, ওয়ারহেড বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে উত্তর কোরিয়া ক্রমাগত অগ্রগতি অর্জন করছে৷
এর আগে উত্তর কোরিয়ার যে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ‘সফল’ পরীক্ষা চালানোর দাবি করেছে সেগুলো মাঝারি ও দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছিল৷ ২১ মে মাঝারি পাল্লার একটি এবং ১৪ মে দীর্ঘ পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দুটির পরীক্ষা চালিয়েছিল দেশটি৷ এ বছরে এটি তাদের ১২তম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা৷
এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)
উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি কতটা?
উত্তর কোরিয়া যে কোনো ধরনের সামরিক প্ররোচনার আঁচ পেলেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছে৷ ওদিকে একটি মার্কিন নৌ-বহর কোরীয় উপদ্বীপের কাছে৷ কিন্তু কী ধরনের আঘাত হানতে পারে উত্তর কোরিয়া?
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি
সাত লাখ সক্রিয় সেনা ও আরো ৪৫ লাখ রিজার্ভ সৈন্য থাকার অর্থ, উত্তর কোরিয়া যে কোনো সময়ে তার মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশকে সামরিক সেবার ডাক দিতে পারে৷ দেশের প্রত্যেকটি পুরুষকে কোনো না কোনো ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং তাদের যে কোনো সময় সামরিক সেবায় নিযুক্ত করা চলে৷ সৈন্যসংখ্যায় উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিগুণ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
বিপুল অস্ত্রসম্ভার
২০১৬ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইন্ডেক্স অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার সমরসজ্জা চমকে দেওয়ার মতো: ৭০টি ডুবোজাহাজ, ৪,২০০ ট্যাংক, ৪৫৮টি জঙ্গিজেট, ৫৭২টি ফিক্স্ড উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফ্ট ও আরো অনেক কিছু৷ ২০১৩ সালের ছবিটিতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কিভাবে রণকৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে বিভিন্ন মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় লক্ষ্যের উপর আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামরিক কুচকাওয়াজ
প্রতিবছর হাজার হাজার সৈন্য ও সাধারণ নাগরিকদের রাজধানী পিয়ংইয়াং-এর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে অংশ নিতে দেখা যায়৷ এ ধরনের কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি চলে বেশ কয়েক মাস ধরে এবং সাধারণত তার উপলক্ষ্য হয় কমিউনিস্ট পার্টি অথবা কিম পরিবারের কোনো সদস্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ
আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও পিয়ংইয়াং তার আণবিক বোমা ও রকেট তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ রকেট পরীক্ষা তো নিয়মিত ব্যাপার, এছাড়া পাঁচবার পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে উত্তর কোরিয়া, তার মধ্যে এক ২০১৬ সালেই দু’বার৷ দৃশ্যত শেষবারের বিস্ফোরণে যে বোমাটি ব্যবহার করা হয়, তা একটি রকেটে লাগানোর উপযোগী – অন্তত পিয়ংইয়াং-এর তাই দাবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
শত্রু চতুর্দিকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও, পিয়ংইয়াং প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে তার মুখ্য বৈরি বলে মনে করে৷ এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক মহড়াকে উত্তর কোরিয়ার উপর অভিযান চালানোর প্রস্তুতি বলে গণ্য করে পিয়ংইয়াং৷
ছবি: Reuters/K. Hong-Ji
মার্কিন ‘রণকৌশলগত ধৈর্য্যের’ অন্ত?
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে ‘কার্ল ভিনসন’ বিমানবাহী পোতটিকে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে পাঠায় ওয়াশিংটন৷ সঙ্গে সঙ্গে পিংয়ংইয়াং ‘যে কোনো ধরনের যুদ্ধের জন্য’ প্রস্তুতি ঘোষণা করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবধি পৌঁছাতে সক্ষম, এমন রকেট বানানোর জন্য উত্তর কোরিয়ার আরো বছর দু’য়েক সময় লাগবে, বলে গুপ্তচরবিভাগগুলির ধারণা৷ তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ততদিন অপেক্ষা করবেন কিনা, সেটা আরেক প্রশ্ন৷