উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে মতপ্রকাশ করেন৷ বুধবার উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে তাঁরা জোরদার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সমর্থন করেন বলে জানা যায়৷
বিজ্ঞাপন
ম্যার্কেল ও শি বলেন, ‘‘উত্তেজনা বৃদ্ধির শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে৷''
পিয়ংইয়ংয়ের সর্বাধুনিক পরীক্ষামূলক আণবিক বিস্ফোরণ ‘‘গোটা এলাকাটির নিরাপত্তার পক্ষে একটি লক্ষণীয় বিপদ ও গুরুতরভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের'' সমতুল, বলে মন্তব্য করেন জার্মানির সরকারি মুখপাত্র স্টেফেন সাইব্যার্ট৷
এ সপ্তাহের সূচনায় উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বার্লিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠিয়ে বলা হয় যে, রবিবারের পারমাণবিক পরীক্ষা প্ররোচনার ‘‘একটি নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে৷''
‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে'
উভয়ের টেলিফোনালাপে শি ম্যার্কেলকে বলেন যে, বেইজিং পূর্বাপর কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্র বর্জিত রাখার লক্ষ্যে অটল, কিন্তু একমাত্র শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার প্রশ্নে প্রগতি অর্জন করা সম্ভব৷
‘‘বাস্তব তথ্য বারংবার প্রমাণ করেছে যে, কোরীয় উপদ্বীপের প্রসঙ্গটি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা সম্ভব, আলাপ-আলোচনা ও শলাপরামর্শ যার মধ্যে পড়ে৷ এর জন্য আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজের একত্রে কাজ করা আবশ্যক'', বলেন শি৷
‘শান্তির' জন্য সমরাস্ত্র
উত্তর কোরিয়ার সর্বাধুনিক পারমাণবিক পরীক্ষা আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজকে সচকিত করেছে৷ বৃহস্পতিবার ইউরোপের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তারা পিয়ংইয়াং-এর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিজস্ব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ সম্পর্কে আলোচনা করেন ও এই মত প্রকাশ করেন যে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সমরাস্ত্র কর্মসূচি ‘‘বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি ঝুঁকি''৷
অপরদিকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন বৃহস্পতিবার বলেছেন যে, তাঁর দেশের পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভার সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে৷ রুশ টাস সংবাদ সংস্থার বিবরণে কিম-এর এই মন্তব্য প্রকাশিত হয়৷
‘‘আমাদের এমন একটি শক্তিশালী পারমাণবিক নিরোধক আছে, যা আমাদের বিশ্বের যে কোনো স্থানে বৈরিসুলভ আক্রমণের জবাব দেওয়ার, এবং কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার সুযোগ এনে দেয়'', বলেছেন কিম জং-উন৷ ‘‘আমাদের দেশের পারমাণবিক মর্যাদার কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে স্মরণ রাখা উচিত'', বলে কিম মন্তব্য করেন৷
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের কর্মভার গ্রহণ করার পর থেকে পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ হোয়াইট হাউসের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সংকল্পকে উপেক্ষা করার ব্যাপারে উত্তর কোরিয়াকে সাবধান করে দিয়েছেন৷
এসি/ডিজি (এএফপি, এপি, ডিপিএ)
উত্তর কোরিয়ায় কিম বংশের ‘রাজত্ব’
কিম পরিবার গত ৭০ বছর ধরে উত্তর কোরিয়া শাসন করছে৷ রাষ্ট্রীয় প্রচারণায় কিম ইল-সুং, কিং জং-ইল ও কিম জং-উন প্রায় দেবতার সমান৷ কিন্তু কিংবদন্তির পিছনে মানুষগুলি কারা?
ছবি: picture alliance / dpa
তরুণ নেতা
উত্তর কোরিয়ার প্রথম ও ‘চিরন্তন’ প্রেসিডেন্ট কিম ইল-সুং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্যে ক্ষমতায় আসেন ১৯৪৮ সালে৷ উত্তর কোরিয়ার সরকারি বর্ষপঞ্জির শুরু কিম ইল-সুং-এর জন্মবর্ষ ১৯১২ সাল থেকে৷ ছবিতে কিম ১৯৫৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন, যে চু্ক্তির মাধ্যমে কোরিয়া যুদ্ধের বাস্তব সমাপ্তি ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বীরগাথা
কোরিয়া যুদ্ধের পর দশকের পর দশক ধরে পিয়ংইয়ং-এর প্রচারণা যন্ত্র কিম ইল-সুং-কে ঘিরে এক কিংবদন্তির মায়াজাল সৃষ্টি করেছে৷ কিমের ছোটবেলা আর ত্রিশের দশকে জাপানিদের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামের ভিত্তিতে তাঁকে এক অদ্বিতীয় সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিভা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে৷ ১৯৮০ সালের পার্টি কংগ্রেসে কিম ঘোষণা করেন যে, তাঁর পুত্র কিম জং-ইল তাঁর উত্তরাধিকারী হবেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আমৃত্যু শাসক
১৯৯২ সালে কিম ইল-সুং তাঁর স্মৃতিকথা লিখতে ও প্রকাশ করতে শুরু করেন৷ নাম দিয়েছিলেন ‘এক শতাব্দীর স্মৃতি’৷ স্মৃতিকথায় কিম দাবি করেছেন যে, তিনি ছয় বছর বয়সে একটি জাপানি বিরোধী প্রতিবাদসভায় যোগদান করেন ও আট বছর বয়স থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামে সংশ্লিষ্ট হন৷ ১৯৯৪ সালে কিমের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিকথা অসমাপ্তই থেকে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/JIJI Press
‘দ্য কিম ইজ ডেড, লং লিভ দ্য কিম’
পিতার মৃত্যুর পর কিম জং-ইল ক্ষমতা গ্রহণ করেন৷ ইতিপূর্বে তিনি বহু বছর ধরে ক্ষমতাশীল ওপরমহলের সদস্য ছিলেন৷ তাঁর ১৬ বছরের শাসনে দরিদ্র দেশটি দুর্ভিক্ষ ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আরো দরিদ্র হয়ে পড়ে৷ কিন্তু কিম ও তাঁর পরলোকগত পিতাকে নিয়ে ব্যক্তিপূজার ঐতিহ্য অব্যাহত থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA via Korean News Service
উঠতি তারকা
রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে একটি সামরিক শিবিরে কিম জং-ইল-এর জন্ম হয়েছিল বলে উত্তর কোরিয়ার বাইরে ইতিহাসবিদদের ধারণা৷ কিন্তু কিমের সরকারি জীবনী অনুযায়ী, তাঁর জন্ম কোরিয়ার পবিত্র পাইচু পর্বতে, ১৯৪২ সালের ১৫ই এপ্রিল তারিখে, অর্থাৎ তাঁর বাবার জন্মদিনের ঠিক ৩০ বছর পরে৷ কিমের জন্মের সময় নাকি আকাশে একটি নতুন তারা ও একটি যমজ রামধনু দেখা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
পারিবারিক জটিলতা
কিম জং-ইল তিনজন পৃথক মহিলার সঙ্গে মোট তিন পুত্র ও দুই কন্যার জনক হন৷ ১৯৮১ সালের এই ছবিটিতে কিমকে তাঁর পুত্র কিম জং-নাম-এর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, যিনি ২০১৭ সালে আততায়ীর হাতে নিহত হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উত্তরাধিকারী
২০০৯ সালে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম খবর দেয় যে, কিম জং-ইল তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র কিম জং-উনকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেছেন৷ ২০১০ সালে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে দু’জনকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল৷ পরের বছর কিম জং-ইল পরলোকগমন করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Yu
পিতাপুত্র
পিয়ংইয়ং-এর কাহিনী অনুযায়ী, ২০১১ সালে কিম জং-ইল-এর মৃত্যুর সময় একাধিক রহস্যজনক ঘটনা ঘটে৷ পবিত্র পাইচু পর্বতের উপর একটি হ্রদে জমা বরফ বরফঝড় চলাকালীন হঠাৎ বিকট আওয়াজ করে ফেটে যায়৷ অপরদিকে পাহাড়ের গায়ে এক অগ্নিময়ী বার্তা ফুটে ওঠে৷ কিম জং-ইল-এর মৃত্যুর পর পিয়ংইয়ং-এ তাঁর বাবার মূর্তির পাশে কিম-এর একটি ২২ মিটার উঁচু মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রহস্যময় অতীত
ক্ষমতা গ্রহণের আগে কিম জং-উন পাদপ্রদীপের আলো থেকে দূরেই ছিলেন৷ তাঁর সঠিক বয়স নিয়েও বিতর্ক আছে৷ তবে তিনি ১৯৮২ ও ১৯৮৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে ধরে নেওয়া হয়৷ তাঁর শিক্ষা সুইজারল্যান্ডে বলে কথিত আছে৷ ২০১৩ সালে তিনি সাবেক মার্কিন বাস্কেটবল তারকা ডেনিস রডম্যান-এর সঙ্গে পিয়ংইয়ং-এ মিলিত হয়ে দুনিয়াকে চমকে দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কিমাশ্চর্য
আগের কিমদের মতো কিম জং-উনকে নিয়েও নানা ‘কিম’-বদন্তি, অর্থাৎ কিংদন্তি রয়েছে৷ ২০১৫ সালে উত্তর কোরিয়ার শিক্ষকদের জন্য একটি নতুন ম্যানুয়ালে নাকি দাবি করা হয় যে, কিম তিন বছর বয়সেই গাড়ি চালাতে পারতেন৷ ২০১৭ সালে রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার খবর: পাইচু পর্বতের উপর কিম-এর জন্য একটি স্মৃতিসৌধ সৃষ্টি করা হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Kctv
পারমাণবিক উচ্চাশা
পিতা ও পিতামহের চাইতে অনেক কম বয়সে ক্ষমতায় আসা সত্ত্বেও কিম শক্ত হাতে ক্ষমতা আঁকড়ে রয়েছেন৷ ২০১৭ সালে বিদেশে আততায়ীর হাতে তাঁর সৎভাই কিম জং-নাম-এর মৃত্যুর পর নির্মম একনায়ক হিসেবে পশ্চিমে কিম জং-উন-এর ভাবমূর্তি আরো দৃঢ় হয়েছে৷ এছাড়া কিম তাঁর দেশের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার অভূতপূর্ব ভাবে বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন৷