বৃহস্পতিবার কোরীয় উপদ্বীপে দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া শেষ হচ্ছে৷ এদিকে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যেই উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে খোলামেলা বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করার ফলে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া সহ আঞ্চলিক দেশগুলিতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন বাহিনীর যৌথ বাহিনীর মহড়ার ফলে ‘প্ররোচনা'-র জবাব দিতেই সামরিক তৎপরতা চলছে বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ এবারের সামরিক মহড়ায় অবশ্য কম্পিউটার সিমুলেশনের উপরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷
উত্তর কোরিয়ার হুমকির জবাব কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে পরস্পরবিরোধী অবস্থান দেখা যাচ্ছে৷ বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় লেখেন, বর্তমান সংকটের সমাধানে সংলাপ কোনো জবাব হতে পারে না৷ তাঁর মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ২৫ বছর ধরেউত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কথা বলে চলেছে, তাদের মুক্তিপণ দিয়ে চলেছে৷
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, কূটনৈতিক সমাধানসূত্রের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি এবং সেটা কখনোই হয় না৷ পেন্টাগনে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আগে তিনি আরও বলেন, তাঁরা দু'জনেই নিজেদের দেশের মানুষ ও স্বার্থরক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন৷ উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন-ও বার বার কূটনৈতিক সমাধানসূত্রের আশা প্রকাশ করেছেন৷
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যেও উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে আবার বিভাজন দেখা দিচ্ছে৷ সে দেশের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কড়া সমালোচনা করলেও চীন ও রাশিয়া নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞা চাপাতে প্রস্তুত নয়৷ উত্তেজনা কমাতে এই দুই দেশ সব পক্ষের উদ্দেশ্যে সংযমের ডাক দিচ্ছে৷
এদিকে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন বাহিনী৷ এই কাজে বিশেষভাবে তৈরি একটি রণতরী হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের কাছে বুধবার এক জটিল পরীক্ষা চালিয়েছে৷ মাঝারি পাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অকেজো করে দেবার সেই মহড়া সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়৷
উত্তর কোরিয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সে দেশ আরও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতে চলেছে৷ বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরে গুয়াম দ্বীপে মার্কিন ঘাঁটির উপর হামলার প্রস্তুতি হিসেবে এমন পরীক্ষার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে পিয়ং ইয়ং৷ ফলে জাপানের উপর দিয়ে আরও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)
উত্তর কোরিয়ার মিসাইলের বিরুদ্ধে বেলুন যুদ্ধ
উত্তর কোরিয়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জবাব দিতে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু কর্মকর্তা অভিনব পন্থা নিয়েছেন৷ বেলুন ওড়ানোর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার মানুষদের বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Il Ryu
বাতাসের চেয়ে হালকা
ভারী বিস্ফোরক এবং দূরে আঘাত হানতে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া উত্তর কোরিয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু কর্মকর্তা হালকা বেলুনের মাধ্যমে একধরনের অভিনব যুদ্ধ শুরু করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Young-joon
বেলুনে কী আছে?
এসব বেলুনে আছে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন-এর কার্টুন আঁকা পোস্টার৷ এছাড়া ভেতরে গণতন্ত্রের আবেদন জানিয়ে লিফলেট, এ ছাড়া ফ্ল্যাশ ড্রাইভে ভরে দক্ষিণ কোরিয়ার সোপ অপেরা, হলিউডের সিনেমা, ডকুমেন্টারি থাকে৷
ছবি: picture-alliance/Yonhap
বেলুনের বার্তা
দক্ষিণ কোরিয়ার এসব কর্মকর্তা উত্তর কোরিয়াকে এই বার্তা পাঠাতে চান যে, গণতন্ত্র কতটা জরুরি এবং ভালো৷ দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের মানুষের জীবন-যাপন কতটা সহজ, এসব বোঝানোর জন্য খাওয়া-দাওয়ার প্যাকেট বেলুনের মধ্যে ভরে দেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Il Ryu
যুদ্ধের সূচনা
যাঁরা এই কার্যক্রম শুরু করেছেন, তাঁরা বলছেন, কিম জং উন-এর যে ভাবমূর্তি সেখানকার মানুষের মনে আছে, বাইরের পৃথিবীর তথ্যের মাধ্যমে তা প্রভাবিত করা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Young-joon
প্রতি বছর লাখো বেলুন
এই কর্মকর্তারা প্রতি বছর লাখো বেলুন এবং হাজারো ফ্ল্যাশ ড্রাইভ উত্তর কোরিয়ায় পাঠান৷ তাঁদের বদ্ধমূল ধারণা, এই বেলুনগুলো পেলে তা থেকে সেখানকার জনগণ যেসব তথ্য পাবে, তাতে তাদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসবে৷ তার ফলে তাঁদের দ্বারা যে কোনো কিছু করা সম্ভব৷ এগুলো পাঠানোর জন্য কখনো কখনো তাঁরা চোরের সাহায্য নিয়ে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Il Ryu
বেলুন ওড়ানোও বিপজ্জনক
বেলুন ওড়ানোটা একটা খেলা মনে হতে পারে, কিন্তু এ ধরনের ড্রাইভ ও অন্যান্য জিনিস সমৃদ্ধ বেলুনকে উত্তর কোরিয়া মোটেও খেলনা হিসেবে দেখবে না৷ উত্তর কোরিয়ার সরকার এ ধরনের কাজের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Young-joon
উত্তর কোরিয়ার বেলুন
উত্তর কোরিয়া যদিও অন্যদের এ ধরনএর বেলুন ওড়ানোয় নাখোশ হতে পারে, কিন্তু নিজেরা এমন লিফলেট বিতরণে ওস্তাদ৷ প্রতি বছর উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় হাজার হাজার লিফলেট ছোড়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Young-joon
বেলুনের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব
আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারও বেলুন এবং লিফলেট নিজের দেশের ভেতরে ছড়াতো৷ কিন্তু বর্তমানে তারা এটা বন্ধ করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/L. Jin-man
বেলুনের ফলে কী প্রভাব পড়ে?
বিশ্লেষকরা মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের ওপর এসবের কোনো প্রভাবই পড়ে না৷ উত্তর কোরিয়ায় গ্রামবাসীরা এই বেলুনগুলো পেলে সেগুলো নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয়৷
ছবি: Picture alliance/dpa/Uncredited/KRT/AP
দক্ষিণ কোরিয়ার আশা
উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে নানা তর্জন-গর্জন সত্ত্বেও দক্ষিণ কোরিয়া আশা ছাড়েনি৷ নতুন রাষ্ট্রপতি মুন জে-ইনকে উদার হিসেবে পরিচিত৷ তাঁর আশা, আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব৷