মধ্য আগস্টের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন গুয়াম দ্বীপে আঘাত হানার পরিকল্পনা শেষ হবে বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের পর এই প্রতিক্রিয়া জানালো দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার বার্তা সংস্থা কেসিএনএ লিখেছে, ‘‘তাঁর (ট্রাম্প) মতো ব্যক্তির সঙ্গে সফল আলোচনা সম্ভব নয়৷ শুধুমাত্র কঠোর বলপ্রয়োগই তাঁর ক্ষেত্রে কাজ করবে৷’’ ট্রাম্পের হুমকিকে ‘সম্পূর্ণ অর্থহীন’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যানও করেছে দেশটি৷
পরমাণু কার্যক্রমের কারণে জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারির পর দেশটি ওয়াশিংটনকে ‘মারাত্মক শিক্ষা’ দেয়ার হুমকি দেয়৷ এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প জানান, উত্তর কোরিয়া নতুন করে অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে আরও হুমকি দিলে সে দেশের উপর এমন মারাত্মক হামলা চালানো হবে, যা বিশ্বে কেউ কখনো দেখেনি৷ ট্রাম্পের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়া গুয়ামের উপর হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে৷
উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে নিস্তার নেই
উত্তর কোরিয়াকে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার৷ সবশেষ খবর বলছে, দেশটির প্রশাসন তাদের জনগণকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের কাছ থেকে সবথেকে বেশি আলাদা করে রাখতে চাচ্ছে, পাশাপাশি এই সত্যটিকেও৷
কোন বন্ধু নেই
যদিও চীন ও উত্তর কোরিয়ার মাঝে বরাবরই খুব ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, সম্প্রতি এই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে৷ এর প্রমাণ হয়, জিলিন প্রদেশের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তর কোরিয়ানদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন৷ শুধু পাসপোর্টই নয়, পর্যটকদের সব ডিভাইস ও লাগেজ জমা রাখতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে৷
ছবি: Daily NK
বিতর্কিত জলাধারে সেতু
এত কড়াকড়ির পরও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়ার জন্য খুব দরকার৷ পরিত্যক্ত সিনো-কোরিয়ান ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের বদলে দুই দেশকে আলাদা করা ইয়ালু নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মিত হচ্ছে৷ উত্তর কোরিয়া অংশে নির্মিতব্য সেতুর কাজ থেমে গেছে অর্থায়নের অভাবে৷
ছবি: Daily NK
সীমানায় বসে
গেল বছর উত্তর হ্যামগিয়ং প্রদেশের সীমান্তের কাটাতারের বেড়া, যেটি উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া ও চীন থেকে আলাদা করত, তা বন্যায় ভেসে গেছে৷ এই বেড়া দেশটিতে চোরাচালান ও দেশত্যাগীদের নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে৷ অবশ্য প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে বেড়া তৈরি করে এবং পাহারা মোতায়েন করে৷
ছবি: Daily NK
হোম, সুইট হোম
তবে দিন দিন উত্তর কোরিয়ার দেশত্যাগীদের সংখ্যা কমছে, যদিও এটি শাসকগোষ্ঠীর কাছে এখনো একটি সংবেদনশীল বিষয়৷ উপরের ছবিতে একজন দক্ষিণ কোরীয় টেলিভিশন সেলিব্রেটিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি উত্তর কোরিয়ায় ফিরে এসেছেন এবং স্থানীয় প্রপাগান্ডা টিভি চ্যানেলে ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘‘উত্তর কোরিয়ার নিকুচি করি৷’’
ছবি: Uriminzokkiri TV
পারলে কর পাকড়াও
পালিয়ে যাওয়া অনেক উত্তর কোরিয়ান ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ কারণ তাদের পরিবারকে জিম্মি করা হয়েছিল৷ এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে, শাসকগোষ্ঠী চীন সীমান্তে এজেন্টদের মোতায়েন করে রেখেছে, যেন কেউ পালিয়ে যেতে নিলে তাকে ধরে আনা যায়৷ পাকড়াওকারীরা কাছাকাছি একটি হোটেলেই থাকেন সবসময়৷
ছবি: Wikipedia Commons
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
যদিও উত্তর কোরীয়দের জন্য বিষয়টি ভাবাই যায় না, তারপরও বিদেশিদের পর্যটকদের জন্য কিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এমনকি সরকারি পর্যটন ট্রাভেল এজেন্সি গেল আগস্টে তাদের আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট খুলেছে এবং আকর্ষণীয় সব ভ্রমণ প্যাকেজ ছেড়েছে৷
ছবি: Tourism DPRK
6 ছবি1 | 6
যোগাযোগের উপায়
উত্তর কোরিয়ার হুমকির পর বিশ্লেষকরা উত্তেজনা প্রশমনের উপায় নিয়ে ভাবছেন৷ কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় কোনো এক পক্ষের নেয়া পদক্ষেপ যদি অন্যপক্ষ সঠিকভাবে বুঝতে না পেরে পালটা প্রতিক্রিয়া জানায় তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশংকা করছেন তাঁরা৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কাছে অনেক পরমাণু অস্ত্র থাকলেও পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সেজন্য ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে হটলাইন, স্যাটেলাইট সহ নানান ব্যবস্থা চালু আছে৷ এমনকি ভারত ও পাকিস্তানও প্রতিবছর জানুয়ারিতে যার যার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা এবং সেগুলো কোথায় আছে তা একে অন্যকে জানিয়ে থাকে৷ এর মাধ্যমে কোনো পক্ষ যেন ভুল করে কোনো পরমাণু স্থাপনায় হামলা না চালায় সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে৷
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চিন্তিত বিশ্লেষকরা৷ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একজন উপদেষ্টা জন ওল্ফসথাল রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘আমাদের মধ্যে (দুই দেশের মধ্যে) কিছু অ্যাডহক ও অ্যানালগ উপায়ে যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে৷ কিন্তু সংকট সমাধানে কার্যকর হতে পারে এমন পরীক্ষিত কোনো মাধ্যম নেই৷’’
জাতিসংঘে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মিশনের মাধ্যমে অনেক সময় দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ হয়ে থাকে৷ এছাড়া বেইজিংয়ে দুই দেশের দূতাবাসের মাধ্যমেও যোগাযোগ হয়৷ আর দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয় পানমুনজমে৷ কোরীয় উপত্যকায় অবস্থিত এই স্থানেই ১৯৫০-৫৩ কোরীয় যুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়েছিল৷
এছাড়া চীন কিংবা সুইডেনের মাধ্যমেও কখনও কখনও যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার কাছে বার্তা পাঠিয়ে থাকে৷
গুয়াম সম্পর্কে কিছু তথ্য
১৮৯৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ গুয়াম৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ড থেকে এটি অনেক দূরে অবস্থিত৷ তবে জাপান, কোরিয়া, ফিলিপাইন্স থেকে এটি কাছে৷ পিয়ংইয়ং থেকে গুয়ামের দূরত্ব প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার৷ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটকরা গুয়ামে বেড়াতে যান৷
গুয়ামে জন্ম নেয়া শিশুরা মার্কিন নাগরিক হলেও তাদের ভোটাধিকার নেই৷
গুয়ামে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও বিমানঘাঁটি রয়েছে৷ প্রায় ছয় হাজার মেরিন সেনা সেখানে মোতায়েন রয়েছে৷ পঞ্চাশের দশকে কোরীয় যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র গুয়াম ঘাঁটি ব্যবহার করেছে৷ এছাড়া ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ও গুয়ামের বিমানঘাঁটি বহুল ব্যবহৃত হয়েছে৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স, এপি)
কিম জং-উন স্টাইল
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন৷ বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন এই দেশের ছবি খুব বেশি দেখা যায় না৷ তবে দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি, কেসিএনএ প্রায়ই উন-এর ছবি প্রকাশ করে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
ছোট্ট উন?
উত্তর কোরিয়ার সরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত একটি ভিডিও থেকে নেয়া এই ছবিতে ছোট্ট কিম জং-উনকে দেখা যাচ্ছে৷ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পাওয়া এই ছবিটি রয়টার্সের৷ তবে ছবিতে আসলেই উনকে দেখা যাচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি সংবাদ সংস্থাটি৷ যেমনটা নিশ্চিত নয় উনের জন্মসালও৷ তবে ১৯৮৩ বা ১৯৮৪ সালে যে তাঁর জন্ম সেটি অবশ্য নিশ্চিত!
ছবি: Reuters
২০১১ সাল থেকে ক্ষমতায়
সে বছরের ১৭ ডিসেম্বর বাবা কিম জং-ইল মারা যাওয়ার কয়েকদিন পরই উত্তর কোরিয়ার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন উন৷ ছবিতে সামরিক বাহিনীর এক মহড়ায় তাঁকে দেখা যাচ্ছে৷ সম্প্রতি ছবিটি প্রকাশ করে কেসিএনএ৷
ছবি: Reuters/KCNA
পুরুষালি নন!
এই ‘অভিযোগ’-এর কারণেই উনের তিন বছরের বড় ভাই কিম জং-চল উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় যেতে পারেননি বলে মনে করা হয়৷ তো ছবি দেখে আপনিই বলুন উনকে কেমন লাগছে৷ নতুন নির্মিত একটি নার্সারি ও এতিমখানা দেখতে গিয়ে ক্যামেরায় এভাবেই ধরা পড়েন তিনি৷ শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সংবাদপত্র ‘রোডোং সিনমুন’ ২০১৫ সালের ২ জুন ছবিটি প্রকাশ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
স্কুলের পড়াশোনা সুইজারল্যান্ডে
বড় ভাই কিম জং-চলের মতো কিম জং-উনও স্কুল পর্যায়ের পড়াশোনা করেছেন সুইজারল্যান্ডে৷ এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকান দেশে গিয়ে৷ সেখানকার একটি সামরিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়েছেন বলে জানা যায়৷ ছবিতে উনকে একটি মেডিক্যাল অক্সিজেন ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/KCNA
উনের স্ত্রী
শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টি প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি ‘অল-ফিমেল’ ব্যান্ডের পারফর্মেন্স উপভোগ করছেন উন৷ তাঁর ডানপাশে বসে আছেন স্ত্রী রি সল-জু৷ তিনি একজন সংগীত শিল্পী ছিলেন বলে ধারণা করা হয়, এবং একটি অনুষ্ঠানে তাঁর পারফর্মেন্স দেখেই উন মুগ্ধ হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: picture alliance/Yonhap
কেমন লাগছে?
কোরীয় উপত্যাকার সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট পেকদুতে ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন উন৷ ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল ছবিটি প্রকাশ করে কেসিএনএ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
‘ফিল্ড গাইডেন্স’
কেসিএনএ-র প্রকাশ করা ছবিগুলোর ক্যাপশনে প্রায়ই এই শব্দ দু’টি থাকে৷ বিশ্লেষকরা বলেন, উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে উনের প্রতি আনুগত্য দেখানোর এটি একটি উপায়৷ ফলে তিনি যেখানেই যান না কেন – হোক সেটি আপেল খেত পরিদর্শন (ছবিতে যেমনটা দেখছেন) কিংবা অন্যকিছু (পরের ছবিটি দেখুন), উন পরামর্শ দিতেই সেখানে গিয়েছেন বলে প্রচার করা হয়৷
ছবি: Reuters/KCNA
আমদানি কমাতে পরামর্শ
শিশুদের জন্য খাবার তৈরি করে এমন একটি কারখানায় গিয়ে উন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানি কমাতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন৷ ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর ছবিটি প্রকাশ করে কেসিএনএ৷