যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ তাদের প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে৷ কিছু শর্তসাপেক্ষে উত্তর কোরিয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে চীন৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির ইংরেজি ভাষার সরকারি গণমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া যদি উত্তর কোরিয়ায় সরকার উৎখাতের চেষ্টা করে এবং কোরীয় উপত্যকায় বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থায় পরিবর্তন আনতে হামলা করে তাহলে চীন তা করতে দিতে বাধা দেবে৷’’
তবে যে কোনো পরিস্থিতিতেই পিয়ংইয়ংকে সমর্থন দেয়া চীনের উচিত হবে না বলেও সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়েছে৷ ‘‘চীনের এটাও স্পষ্ট করে দেয়া উচিত যে, উত্তর কোরিয়া যদি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুমকিমূলক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং তার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নেয় তাহলে চীন নিরপেক্ষ থাকবে৷’’
উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে নিস্তার নেই
উত্তর কোরিয়াকে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার৷ সবশেষ খবর বলছে, দেশটির প্রশাসন তাদের জনগণকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের কাছ থেকে সবথেকে বেশি আলাদা করে রাখতে চাচ্ছে, পাশাপাশি এই সত্যটিকেও৷
কোন বন্ধু নেই
যদিও চীন ও উত্তর কোরিয়ার মাঝে বরাবরই খুব ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, সম্প্রতি এই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে৷ এর প্রমাণ হয়, জিলিন প্রদেশের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তর কোরিয়ানদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন৷ শুধু পাসপোর্টই নয়, পর্যটকদের সব ডিভাইস ও লাগেজ জমা রাখতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে৷
ছবি: Daily NK
বিতর্কিত জলাধারে সেতু
এত কড়াকড়ির পরও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়ার জন্য খুব দরকার৷ পরিত্যক্ত সিনো-কোরিয়ান ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের বদলে দুই দেশকে আলাদা করা ইয়ালু নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মিত হচ্ছে৷ উত্তর কোরিয়া অংশে নির্মিতব্য সেতুর কাজ থেমে গেছে অর্থায়নের অভাবে৷
ছবি: Daily NK
সীমানায় বসে
গেল বছর উত্তর হ্যামগিয়ং প্রদেশের সীমান্তের কাটাতারের বেড়া, যেটি উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া ও চীন থেকে আলাদা করত, তা বন্যায় ভেসে গেছে৷ এই বেড়া দেশটিতে চোরাচালান ও দেশত্যাগীদের নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে৷ অবশ্য প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে বেড়া তৈরি করে এবং পাহারা মোতায়েন করে৷
ছবি: Daily NK
হোম, সুইট হোম
তবে দিন দিন উত্তর কোরিয়ার দেশত্যাগীদের সংখ্যা কমছে, যদিও এটি শাসকগোষ্ঠীর কাছে এখনো একটি সংবেদনশীল বিষয়৷ উপরের ছবিতে একজন দক্ষিণ কোরীয় টেলিভিশন সেলিব্রেটিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি উত্তর কোরিয়ায় ফিরে এসেছেন এবং স্থানীয় প্রপাগান্ডা টিভি চ্যানেলে ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘‘উত্তর কোরিয়ার নিকুচি করি৷’’
ছবি: Uriminzokkiri TV
পারলে কর পাকড়াও
পালিয়ে যাওয়া অনেক উত্তর কোরিয়ান ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ কারণ তাদের পরিবারকে জিম্মি করা হয়েছিল৷ এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে, শাসকগোষ্ঠী চীন সীমান্তে এজেন্টদের মোতায়েন করে রেখেছে, যেন কেউ পালিয়ে যেতে নিলে তাকে ধরে আনা যায়৷ পাকড়াওকারীরা কাছাকাছি একটি হোটেলেই থাকেন সবসময়৷
ছবি: Wikipedia Commons
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
যদিও উত্তর কোরীয়দের জন্য বিষয়টি ভাবাই যায় না, তারপরও বিদেশিদের পর্যটকদের জন্য কিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এমনকি সরকারি পর্যটন ট্রাভেল এজেন্সি গেল আগস্টে তাদের আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট খুলেছে এবং আকর্ষণীয় সব ভ্রমণ প্যাকেজ ছেড়েছে৷
ছবি: Tourism DPRK
6 ছবি1 | 6
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল শুক্রবার মেলবোর্নের এক রেডিওকে বলেন, ওয়াশিংটনের ‘অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে শক্তিশালী সমর্থক আর নেই৷’ তিনি বলেন, ‘‘পরিষ্কার করে বলি, উত্তর কোরিয়া যদি যুক্তরাষ্ট্রের উপর হামলা চালায় তাহলে এএনজেডইউএস চুক্তি কার্যকরা করা শুরু হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় এগিয়ে আসবে অস্ট্রেলিয়া৷’’
দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্টস চিফস অফ স্টাফ এর মুখপাত্র রো জ্য-চেওন বলেন, পিয়ংইয়ংয়ের উসকানির ‘তাৎক্ষণিক ও কঠোর জবাব’ দিতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন ও সৌল৷
জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানায়, উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে এমন উসকানি ‘কখনই সহ্য করা হবে না'৷ পিয়ংইয়ংকে তারা মনে করিয়ে দিয়েছে যে, জাপানের উপর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নিক্ষেপ করা কোনো ক্ষেপণাস্ত্রকে যদি নিজেদের (জাপানের) অস্তিত্বের প্রতি হুমকি মনে করে তাহলে তাতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা জাপানের আছে৷
জার্মানি ও ন্যাটোর অবস্থান
জার্মান কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের মিত্রদেশ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ‘খুবই মারাত্মক পরিস্থিতি’-র উদ্ভব হয়েছে৷ জার্মানি এখনও কোনো রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেনি৷ তবে ওয়াশিংটন যদি ন্যাটোর আর্টিকেল ৫ কার্যকর করে তাহলে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে জার্মানি কী করবে? আর্টিকেল ৫ অনুযায়ী, কোনো সদস্যরাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়লে বাকি সদস্যদের ঐ রাষ্ট্রের সহায়তায় এগিয়ে আসার কথা৷ অবশ্য আর্টিকেল ৬-তে যে প্রতিরক্ষা সীমানার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে পড়ে না যুক্তরাষ্ট্রের গুয়াম দ্বীপ৷ উত্তর কোরিয়া এই দ্বীপেই আঘাত হানার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে৷
লুইস স্যান্ডার্স ফোর/জেডএইচ
উত্তর কোরিয়ার গুপ্তহত্যার সংস্কৃতি
মালয়েশিয়ায় কিম জং-উন-এর সৎ ভাইকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে৷ আর উত্তর কোরিয়ায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বা অভিযোগ কিন্তু এবারই প্রথম নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দলত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
উত্তর কোরিয়ার শাসকগোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে আসা হুয়াং ইয়ুং-ইয়পকে গোপনে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হলেও তিনি শেষমেশ ৮৭ বছর বয়সে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন৷ ১৯৯৭ সালে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় চলে যান তিনি৷
ছবি: AP
চাচাকে ‘কুকুরের খাবার করা হয়নি’
কিম জং-উনের চাচা জং সং থেককে একসময় দেশটির দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো৷ তাঁকে হত্যার খবর গোটা দেশেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷ অনেক সংবাদমাধ্যম দাবি করে যে, ক্ষমতাসীন পরিবারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করায় তাঁকে ক্ষুধার্ত কুকুরের খাবার করা হয়েছিল৷ কিন্তু আসলে তেমনটা ঘটেনি বলে জানিয়েছে পিয়ংইয়ংয়ের কর্মকর্তারা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা৷ তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বর্বরতার গুজব
সৌলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ২০১৫ সালে জানায় যে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুয়ন ইয়ং-চোলের মৃত্যুদণ্ড বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করে কার্যকর করা হয়েছে৷ তবে পরবর্তীতে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানায় ভিন্ন তথ্য৷ তাদের মতে, হোয়ান সম্ভবত জীবিত আছেন৷ উত্তর কোরিয়ায় বর্বরোচিত উপায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এরকম আরো গুজব শোনা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিষাক্ত ইনজেকশন
উত্তর কোরিয়ার শাসক গোষ্ঠীর দলত্যাগকারী এবং বিরুদ্ধবাদী হিসেবে পরিচিত পার্ক সং-হককে হত্যা করতে এক ঘাতককে প্রস্তুত করেছিল পিয়ংইয়ং৷ ২০১১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ উত্তর কোরিয়ার সাবেক এক কমান্ডোকে হত্যার পরিকল্পনা করার অভিযোগে সং-হককে গ্রেপ্তার করে৷
ছবি: AFP/Getty Images
প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দেয়া?
উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উনের সৎ ভাইকে দুই নারী কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি৷ তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার শাসকগোষ্ঠী হত্যাকারীদের পাঠিয়েছিল৷ ২০১১ সাল থেকে বিদেশে অবস্থান করছিলেন কিম জং-নাম৷