বোমারু বিমান নিয়ে এই দুই অঞ্চলে কুর্দিদের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। আহত বহু।
বিজ্ঞাপন
তুরস্ক সব মিলিয়ে ২৫টি বিমান হামলা চালিয়েছে বলে দেশের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। উত্তর সিরিয়া এবং ইরাকের একাধিক জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। উত্তর সিরিয়ায় সরকারি সামরিক পোস্ট এবং ইরাকে কুর্দিদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে বলে তুরস্ক দাবি করেছে। গত সপ্তাহেই তুরস্কে বিস্ফোরণ হয়েছিল। তারই জেরে এই হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।
আফরিনে তুর্কি অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
দিয়ারবাকির হলো তুরস্কের বৃহত্তম কুর্দি অধ্যুষিত শহর৷ সেখানে এ বছরের নওরোজ উৎসবে আফরিনে আংকারার সামরিক অভিযানে রোষ ও যুগপৎ আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশা ব্যক্ত হয়েছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের নওরোজ
কুর্দি তথা ইরানিদের নববর্ষ নওরোজ সাধারণত আনন্দোচ্ছ্বল একটি উৎসব৷ কিন্তু এ বছর সীমান্তের অপর পারে সিরিয়ার আফরিনে তুর্কি সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে নওরোজে তুরস্কের কুর্দি অধিবাসীদের রোষ আর হতাশাই প্রতিফলিত হয়েছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
একদিকে গর্ব, অন্যদিকে হতাশা
২০শে জানুয়ারির পর থেকে আংকারার সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীরা আফরিনে ওয়াইপিজি ও ওয়াইপিজে প্রমুখ কুর্দি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে৷ নওরোজের মাত্র ক’দিন আগে খবর আসে যে, তারা শহরটি দখল করেছে, অর্থাৎ কুর্দি জঙ্গিরা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া থেকে মোটামুটি বিতাড়িত হয়েছে৷ ঘটনাবলীতে তুরস্কের কুর্দিরা বিমর্ষ হলেও, নওরোজে দিয়ারবাকিরে ধ্বনি তোলেন, ‘‘আফরিনের প্রতিরোধ চলছে-চলবে’’৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘শুধু উৎসব নয়, বরং প্রতিরোধ’
তুরস্কের কুর্দি নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক দল বা এইচডিপি-র পরিষদের সদস্য আইনুর হাসান বলেন, এই নওরোজ অনুষ্ঠানে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা একটি বার্তা পাঠাতে চাইছেন৷ তাদের উপস্থিতি ‘‘মুক্ত কুর্দি এলাকাগুলির প্রতি অভিবাদনও বটে, আবার যারা কুর্দিদের জন্য আশা পরিত্যাগ করেছেন, তাদের প্রতি একটি বার্তাও বটে৷ এটা শুধু উৎসব নয়, এ প্রতিরোধ৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
‘বর্বরতা ও লুটতরাজ’
এইচডিপি দলের নতুন যুগ্ম সভাপতি পরভিন বুলদান দিয়ারবাকিরে জনতার প্রতি তাঁর ভাষণে আফরিনে তুর্কি অভিযানের সমালোচনা করেন৷ ‘‘ওরা আফরিনে বর্বরতা আর লুটতরাজ ছাড়া আর কিছু আনেনি,’’ বলেন তিনি৷ ‘‘কুর্দিদের রাজ্যাঞ্চল জয় বরদাস্ত করতে না পেরে, ওরা আফরিন আক্রমণ করেছে৷’’ বুলদান আরো বলেন যে, আংকারা তুরস্ক ও সিরিয়ার কুর্দিদের মধ্যে বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না৷
ছবি: DW/D. Cupolo
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা
যেসব মহিলা চলতি সংঘাতে সন্তান হারিয়েছেন, তাঁরা ‘শান্তির মা’ নামের একটি গোষ্ঠী গঠন করেছেন৷ নওরোজের স্বল্প আগে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মিলিত হন ও প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমরা যখন পশ্চিমে যাই, তখন আমরা স্কুল-কলেজ আর কলকারখানা দেখি৷ আর আপনারা এখানে এলে কারাগার, পুলিশ আর সাঁজোয়া গাড়ি ছাড়া আর কিছু দেখেন কি? আপনারা এর্দোয়ানকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
জরুরি অবস্থা চলেছে...
...কাজেই তুরস্কে রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ৷ এছাড়া আফরিনে সামরিক অভিযান চলাকালীন দিয়ারবাকিরে ২৪ ঘণ্টার কারফিউ জারি রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও বুধবারের নওরোজ উৎসব প্রতিবাদের রূপ ধারণ করে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
মানুষজন ভীত, শঙ্কিত
২০১৫-১৬ সালে দিয়ারবাকিরে প্রায় যুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজ করছিল৷ সেই থেকে বাসিন্দারা নওরোজের মতো গণউৎসবে যোগ দিতে দ্বিধা করেন৷ তাই এবার শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রে স্থানীয় কুর্দ গোষ্ঠীগুলির সদস্যরা রীতিমতো নওরোজের আমন্ত্রণপত্র বিলি করেছেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘চাপ যতই বাড়ুক না কেন’
স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা কর্মীদের শ্রমিক সংগঠনের সদস্য সেলমা আটাবাই জানিয়েছেন যে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর যে দমন অভিযান শুরু হয়, তাতে তাঁর সংগঠনের ৪,৩০০ সদস্য চাকুরি হারিয়েছেন৷ তা সত্ত্বেও তাদের অনেকে নওরোজে এসেছেন বলে সেলমা জানান৷ ‘‘নওরোজে এখানকার কুর্দিরা তাদের অস্তিত্ব জানান দিতে পারেন৷ চাপ যতই বাড়ুক না কেন তারা নওরোজ উদযাপন করবেন৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
অকালে উৎসবের সমাপ্তি
দিয়ারবাকিরের নওরোজ অকালে শেষ হয়, কেননা, কিছু তরুণ অতিথি নিরাপত্তার বেড়া টপকে মঞ্চে গিয়ে ওঠেন৷ অতঃপর পুলিশ উৎসব বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও, আরো কিছু সময় ধরে গানবাজনা ও নাচ চলে৷ ‘‘ওরা সবসময়ই আগে বন্ধ করে দেয়, কিন্তু আমরা যতটা পারি উপভোগ করে নিই,’’ বললেন নুরেত্তিন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
9 ছবি1 | 9
সিরিয়ার কোবান এবং অ্যালেপ্পো অঞ্চলে শাসন ক্ষমতা দখল করেছে কুর্দিদের নেতৃত্বে সিরিয়ার গণতন্ত্রপন্থি বাহিনী। তাদের নাম সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ)। তুরস্ক এই সরকারকে মানে না। কুর্দিদের বিরুদ্ধেও তুরস্কের লড়াই দীর্ঘদিনের। নিরপেক্ষ মানবাধিকার সংস্থাগুলির দাবি, এদিনের হামলায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। বহু মানুষ নিখোঁজ। আহতদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত মৃত্যুর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
কিন্তু এসডিএফ-এর বক্তব্য, ঘটনায় বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বস্তুত, তারা সকলেই এসডিএফ-এর সেনা বলে দাবি করা হয়েছে। সিরিয়ার জাতীয় মিডিয়া আগে জানিয়েছিল, তিনজন সেনার মৃত্যু হয়েছে।
কুর্দ যোদ্ধাদের তরফে আবার জানানো হয়েছে, ৩২ জন পিকেকে যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। বহু যোদ্ধা আহত বলেও দাবি কার হয়েছে।
এদিকে তুরস্ক জানিয়েছে, কুর্দিরা যে সমস্ত এলাকা থেকে হামলা চালাতো, সেই কাঠামোগুলি ধ্বংস করা হয়েছে। বস্তুত, গত সপ্তাহেই ইস্তামবুলে বিস্ফোরণ হয়েছিল। তুরস্কের দাবি, ওই বিস্ফোরণের পিছনে কুর্দি যোদ্ধাদের হাত ছিল। তারপরেই এই বিমান হামলার ঘটনা ঘটে।
এসডিএএফ-এর দাবি, অন্তত দুইটি গ্রামে তুরস্ক হামলা চালিয়েছে। সেখানে উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। হামলার পর সেখানে বহু মানুষ আহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।