বাংলাদেশের রাজনীতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে৷ বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ পাল্টা-পাল্টি সমাবেশ ডাকছে একই দিনে, একই স্থানে৷ আর তা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জারি করা হচ্ছে ১৪৪ ধারা৷ ৫ই জানুয়ারি ‘শো-ডাউন’ হবে দুই দলেরই৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার গাজীপুরে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে এখন চলছে চরম উত্তেজনা৷ ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠের সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার কথা৷ তবে একই সময় সেখানে সমাবেশ ডেকেছে শাসক দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ৷ এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার দুপুর দুটো থেকেই গাজীপুর জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷ গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘দুই পক্ষকে সমঝোতা করতে বলেছিলাম৷ তারা সমঝোতায় আসতে না পারায় শনিবার দুপুর দুটো থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে৷''
‘‘যে কোনো মূল্যে শনিবার গাজীপুরে সমাবেশ করা হবে'' – বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিনের শুরুতে এ কথা বললেও, পরে ১৪৪ ধারা ঘোষণার সিদ্ধান্তকে ‘পূর্বপরিকল্পিত' বলে অভিযোগ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘শনিবার বেলা ২টায় গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণ দেওয়া কথা৷ এই জনসভা বানচাল করতেই সরকার পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৪৪ ধারা জারি করেছে৷''
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার চলছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল৷ জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে বগুড়া এবং শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি- জামায়াতের কয়েকশ' নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করা হয় শুক্রবার সকালে তাঁর ঢাকার বাসা থেকে৷ তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা মেডিকেলের সামনে সাংসদ ছবি বিশ্বাসের গাড়িতে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এছাড়া খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে বকশীবাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷
ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুরের ছবি
দশম জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে৷ পাঁচ জানুয়ারি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর এবং জনপ্রতিক্রিয়ার কিছু ছবি পেয়েছে ডয়চে ভেলে৷ পাঠকের জন্য গ্যালারি আকারে সেসব ছবি প্রকাশ করা হলো৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মারধর
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন রাজশাহীর বাগমারায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পেটায় বিএনপি সমর্থকরা৷ পাঁচ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের সময় বিরোধী দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংঘর্ষে আহতকে সহায়তা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নির্বাচন চলাকালে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে সহায়তা করছেন অন্যরা৷ নির্বাচন চলাকালে একশো’র বেশি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ সহিংসতা এবং ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়ার কারণে ১৩৯টি ভোটকেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আগুনে পোড়া ভোট কেন্দ্র
নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
গাইবান্ধায় ভোট গ্রহণ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় স্লোগান দিচ্ছে নির্বাচন বর্জন করা বিরোধী দলের সমর্থকরা৷ বিরোধী দলবিহীন রবিবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল৷ তাছাড়া এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি মহলে প্রশ্ন উঠেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থেকেছে৷
ছবি: Reuters
আহতকে সেবা
গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ রবিবারের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিরোধী দল বিএনপি ‘‘নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও ভোটের দিন সারা দেশে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে’’ সোমবার সকাল ছ’টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছে৷
ছবি: Reuters
ভোটকেন্দ্রে হামলা
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় তারা ভোটকেন্দ্রে রাখা ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
ভোটকেন্দ্রের সামনে আগুন
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যে আগুন ধরিয়ে দেয় নির্বাচন বিরোধীরা৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন বিরোধীরা হামলা চালানোর পর লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ ঐতিহাসিকভাবে বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
সন্দেহভাজনকে আটক
বগুড়ায় একটি ভোটকেন্দ্রে হামলায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করছে পুলিশ৷ নির্বাচন চলাকালে অনেক ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
বাদ যায়নি বাড়িও
বগুড়ার এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ হামলার পর আগুনে পোড়া অবশিষ্টের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাওয়া যায় কিনা, তা খুঁজে দেখছেন সেই নেতার এক আত্মীয়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জে সড়কে টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা৷
ছবি: DW
আহত ভোটার
ঢাকায় বিরোধী দলের সমর্থকদের ছোড়া হাতে তৈরি বোমার আঘাতে আহত এক ভোটার৷ ভোট গ্রহণ চলাকালে নির্বাচন বিরোধীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে বোমা ফাটিয়েছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
12 ছবি1 | 12
বিএনপি চাইছে ৫ই জানুয়ারির আগেই মাঠে নামতে৷ তারা চাইছে, ৫ই জানুয়ারি মাঠ দখলে রাখতে৷ কর্মসূচি চূড়ান্ত না হলেও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানা গেছে৷ বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ক্ষমতাসীনদের আচরণের ওপর নির্ভর করে আন্দোলনের ছক অনুসারে শিগগিরই মাঠে নামবে বিএনপি৷ এ মাসে কিংবা জানুয়ারি মাসের যে কোনো সময় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে সরকার পতনের জন্য রাজপথে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে তোলা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷''
আন্দোলন সফল করতে বিএনপি তৃনমূল এবং ছাত্রদলকে চাঙ্গা করার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে এর মধ্যে৷ ছাত্রদলের একজন নেতা জানান, ‘‘গত সপ্তাহে খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার দিন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা মাঠে থেকে এর প্রমাণ দিয়েছেন৷ ছাত্রলীগ পুলিশের সহায়তায় হামলা করলেও, তারা পেরে ওঠেনি ছাত্রদলের সঙ্গে৷'' তাঁর দাবি, পুলিশি সহায়তা না পেলে ছাত্রলীগ একদিনও মাঠে টিকতে পারবে না৷
ঢাকার কলাবাগান এলাকার ছাত্রদল নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহে পরিস্থতি বদলেছে৷ তুণমূলের কমিটি হওয়ায় এখন সাবাই আন্দোলনে মাঠে নামতে প্রস্তুত৷ মাঠে নামছেও৷ ৫ই জানুয়ারির জন্য প্রস্তুত আছি আমরা৷''
অন্যরকম নির্বাচন
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় রবিবার অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণ হয়নি৷ নির্বাচনের দিনের কিছু ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করে৷ এজন্য ৫৯ জেলায় বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে চার লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ বাকি পাঁচটি জেলায় নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অলস সময়
ভোটার না থাকায় ঢাকার মিরপুরের হাজী আশ্রাফ আলী হাইস্কুলে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অলসভাবে সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোটারের জন্য অপেক্ষা
ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি ভোটকেন্দ্রের ছবি এটি৷ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে ভোটারদের জন্য বাঁশ ও দড়ি দিয়ে নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কিন্তু ভোটার নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
এখানেও একই অবস্থা
ছবিটি হারম্যান মাইনার কলেজ কেন্দ্রের৷ পাশাপাশি স্থাপিত কয়েকটি বুথ যেন খাঁ-খাঁ করছে৷ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ, জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে জানান, ভোটার উপস্থিতি কম হবে এটাই স্বাভাবিক৷ কারণ এটি একটি ভিন্ন ধরনের নির্বাচন৷ একতরফার সঙ্গে আছে ব্যাপক সহিংসতা এবং বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিড়ম্বনার শিকার
নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম খুঁজে না পেয়ে অনেক ভোটার ফিরে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ তবে কেউ কেউ অবশ্য কষ্টটা শিকার করেই ভোট দিয়েছেন৷ ছবিতে মিরপুরের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের সিরিয়াল নম্বর খুঁজতে দেখা যাচ্ছে৷ তাঁদের সহায়তা করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
ভোটাধিকার প্রয়োগ
ভোট দিচ্ছেন একজন ভোটার৷ অবশ্য তাঁর মতো ভাগ্যবান হতে পারেননি দেশের মোট ভোটারের শতকার ৫২ জন৷ অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এসব ভোটারের ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল না৷ এই কারণে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও ভোট দিতে পারেননি৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারী ভোটার
ঢাকার একটি কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগের অপেক্ষায় কয়েকজন নারী ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
উৎসাহে কমতি নেই
আব্দুল হাকিম নামে ৮৯ বছরের এই ভোটার দুই ব্যক্তির সহায়তায় ঢাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সেনা সদস্যদের পাহারা
দুজন ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন৷ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সেখানে ছিলেন সেনা সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
9 ছবি1 | 9
ওদিকে শাসক দল আওয়ামী লীগও বসে নেই৷ তারা রাজপথে বিএনপিকে প্রতিহত করার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছে৷ মিরপুর এলাকার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে৷ ঢাকায় ৫ই জানুয়ারির মহাসমাবেশ সফল করতে ব্যাপক গণসংযোগ চালানো হচ্ছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিএনপির প্রস্তুতিও নজরে রাখছি৷ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব৷''
ছাত্রলীগ এরইমধ্যে খালেদা জিয়াকে প্রহিতের ঘোষণা দিয়েছে৷ তারা দাবি করেছে, তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লন্ডনে যে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, তা প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের কোথাও সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না৷ তারই অংশ হিসেবে ছাত্রলীগ গাজীপুরে বিএনপির সমাবেশ স্থলে পাল্টা সমাবেশ ডেকেছে৷ এই সমাবেশে খালেদা জিয়ার থাকার কথা৷
ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল আলম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এরই মধ্যে বিএনপি নেতাদের ‘নেড়ি কুত্তার মতো পেটানোর' হুমকি দিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমের খবর৷ আওয়ামী লীগ নেতা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘‘বিএনপিকে মাঠেই নামতে দেয়া হবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘আগামী ৫ই জানুয়ারি দেশের কোথাও বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের রাজপথে নামতে দেয়া হবে না৷ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাজপথ দখলে রেখে খুনি বাহিনীকে প্রতিহত করবে৷''
পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে মানবতা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য বিরোধীদলের কর্মসূচিতে পুড়ছে যানবাহন, ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, মরছে মানুষ৷ হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো অনেকে এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সারি সারি পোড়া মানুষ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট এখন হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো জীবিকার তাগিদ কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষে ভরে গেছে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
শিশুর কষ্ট বোঝেনা তারা!
কোলের শিশুও বাঁচতে পারছেন না জ্বালাও-পোড়াওয়ে হাত থেকে৷ প্রতিপক্ষের আদর্শকে ভুল প্রমাণ করে শ্রেয়তর আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নয়, প্রতিপক্ষকে আঘাত করে, হত্যা করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা অনেক দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ স্বাধীন দেশে নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে পোড়ানোও দেখতে হচ্ছে৷ ৩ নভেম্বর আট বছরের সুমি দাদীর সঙ্গে নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসছিল৷ জয়দেবপুর চৌরাস্তায় তাদের বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বোবা কান্না...
নির্মমতার আরেকটি ছবি হয়ে আছে মজিবরের পোড়া শরীর৷ মজিবর বাকপ্রতিবন্ধী৷ কুমিল্লার দেবিদ্বারের এক ট্রাকের হেলপার৷ পিকেটারদের বোমা হামলায় বাসের সঙ্গে তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ সবাই শুনে বুঝবে এমনভাবে কথা তিনি বলতে পারেন না, বোবা কান্নায় শুধু পারেন অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে, আর্তনাদ করতে আর এ অন্যায়ের প্রতিকার আশা করতে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মেয়েকে দেখতে গিয়ে মা হাসপাতালে
জাহানারা বেগম৷ বয়স ৫২৷ পেশা – ফেরি করে কাপড় বিক্রি করা৷ হরতাল-অবরোধ থাকলে বিক্রি কমে যায় বলেই হয়তো সেদিন কাপড় নিয়ে বাড়ি বাড়ি না ঘুরে জাহানারা গিয়েছিলেন শ্যামপুরে৷ সেখানে তাঁর মেয়ের বাড়ি৷ মেয়েকে দেখে অটো রিক্সায় ফেরার সময়েই বিপদ৷ বিরোধী দলের কিছু সমর্থক সেই অটোরিক্সাতেও ছুড়ে মারে পেট্রোল বোমা৷ সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহের মূল্য আগুনে পুড়ে চুকাচ্ছেন জাহানারা বেগম!
ছবি: Mustafiz Mamun
তালহার অসহায়ত্ব
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা৷ শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় আবু তালহা সেই থেকে ১ নম্বর বার্ন ইউনিটে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
রাজমিস্ত্রী
রাজমিস্ত্রী ও ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদের শরীর পুড়েছে গত ১২ নভেম্বর৷ সেদিন ঢাকার রায়েরবাগেও একটি চলন্ত বাসে ছোড়া হয় পেট্রোল বোমা৷ সেই থেকে তাঁরও ঠিকানা ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বাসচালক
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাহবাগে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো সেই বাসটি চালাচ্ছিলেন মাহবুব৷ যাত্রীদের মতো তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যু্দ্ধের সময়, অর্থাৎ ১৯৭১ সালেই জন্ম মাহবুবের৷ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশ পুড়ছে, তিনিও পুড়েছেন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ঘুমের মাঝেই আগুন...
৭ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া ফেরিঘাটে বাসে ঘুমাচ্ছিলেন হেলপার আলমগীর৷ থামানো বাসেই দেয়া হয় আগুন৷ পোড়া দেহ নিয়ে এখন তিনি হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
লেগুনার যাত্রী
১০ নভেম্বর ঢাকার লক্ষীবাজারে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো হয় একটি লেগুনা৷ লেগুনা পুড়ে শেষ, লেগুনার যাত্রী কামাল হোসেন ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন৷ তবে শরীরের ৩৫ ভাগেরও বেশি অংশ পুড়ে গেছে৷ ৩৬ বছরের এ তরুণ লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে৷ চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং সুস্থ মানসিকতার প্রতিটি মানুষের শুভকামনায় তিনি শিগগিরই হয়তো ফিরবেন স্বাভাবিক জীবনে৷ কিন্তু এই দুর্ভোগ, এই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো কি কোনোদিন ভুলতে পারবেন?
ছবি: Mustafiz Mamun
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুভও ছিলেন রায়েরবাগের সেই বাসে৷ তাই ১২ নভেম্বর থেকে তিনিও পোড়া শরীর নিয়ে পড়ে আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘৫ই জানুয়ারি নির্বাচন না হলে দেশে গণতন্ত্র থাকত না, এ দেশে ‘মার্শাল ল' কায়েম হতো৷ গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতেই শেখ হাসিনা জীবন বাজি রেখে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন করেছিলেন৷ ২০১৯ সালের জানুয়ারির এক দিন আগে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না৷''
চলতি বছরের ৫ই জানুযারি একরফা নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ৷ বিএনপি নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহতের চেষ্টা করে৷ গত এক বছর ধরে তারা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়৷ এবার ৫ই জানুয়ারিকে টার্গেট করে আন্দোলন গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বিএনপি৷ অন্যদিকে সরকার তথা আওয়ামী লীগও বিএনপি জোটের আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত৷ এখন চূড়ান্ত অবস্থা দেখার জন্য তাই কমপক্ষে ৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷