টানা নয়দিন ধরে চলছে আন্দোলন, দাবি যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি৷ রাজাকারের বিচার৷ পাঁচই ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ে হতাশ হয়ে রাজপথে নেমেছিলেন তারা৷ এখনও সেখানেই আছেন৷
বিজ্ঞাপন
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই৷ নেই লাঠি-বৈঠা নিয়ে হিংস্র আন্দোলনের আহ্বান৷ নেই জোরপূর্বক ডেকে নিয়ে সমাবেশে হাজির করার নজির৷ মোটকথা, বাংলাদেশের প্রচলিত সহিংস রাজনৈতিক আন্দোলন, হরতালের সঙ্গে কোন মিলই নেই এই চত্বরের৷
জেগে আছে প্রজন্ম চত্বর
মূল দাবি একটাই, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’৷ এই দাবি নিয়ে পাঁচই ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান করছে তরুণ প্রজন্ম৷ তাদের সমর্থন জানাচ্ছে সবশ্রেণির মানুষ৷ ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন৷ কিন্তু এক চুল নড়েনি তারা৷
ছবি: Reuters
লাগাতার আন্দোলন
শাহবাগে অবস্থান নেওয়া তরুণ প্রজন্ম গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি ধরে লাগাতার তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় তারা৷ ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে নিয়মিত সেখানকার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাতীয় দলের আগমন
রবিবার প্রজন্ম চত্বরে এক টুকরো আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা৷ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, শাহবাগে অবস্থান নেওয়া ব্লগার, তরুণ সমাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসছেন তাঁরা৷ রবিবার সেই খবরের সত্যতা প্রকাশ পেলো৷
ছবি: REUTERS
টুইটার লড়াই
হ্যাশট্যাগ #shahbag, কেউ কেউ ব্যবহার করছেন #shahbagh - আসলে শাহবাগের ইংরেজি বানান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ উইকিপিডিয়া শেষের এইচটি বাদ দিলেও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সেটি ধরে রেখেছে৷ এই বিভ্রান্তি অবশ্য টুইটার লড়াইকে পেছনে ফেলেনি৷ বরং সমানতালে দু’টি হ্যাশটাগ দিয়েই জানানো হচ্ছে আন্দোলনের অগ্রগতি৷
ছবি: REUTERS
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ‘শোধরানোর’ চেষ্টা
শাহবাগের প্রতিবাদ কি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে না ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে? বিবিসি ইংরেজি বিভাগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনামে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল৷ টুইটারে আন্দোলনকারীদের অব্যাহত দাবির পর সেই শিরোনামে বদল এসেছে৷ ইসলামপন্থী বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধ শব্দটি জোড়া হয়েছে সেখানে৷ এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আমারব্লগ৷
ছবি: amarblog.com
‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’
প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান করছেন ‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’ দলের অনেক সদস্য৷ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির দাবিকে আরো সোচ্চার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা৷ পাশাপাশি প্রজন্ম চত্বরের সর্বশেষ পরিস্থিতিও ইন্টারনেটে তুলে ধরা হচ্ছে এদের মাধ্যমে৷
ছবি: REUTERS
‘আপনার সহায়তা প্রয়োজন’
ডয়চে ভেলের টুইটার পাতাতে আন্দোলনকারীদের কিছু বার্তা আমরা পেয়েছি৷ জিন্নাত গোনিম নামক ঢাকার এক বাসিন্দা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা কোন রাজনৈতিক দল, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নই৷ আমরা বাংলাদেশি৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাচ্ছি, আমার মায়ের হত্যাকারীর, বোনের ধর্ষকের বিচার চাচ্ছি৷ আমাদের আপনার সহায়তা প্রয়োজন৷’’
ছবি: twitter.com
এই প্রজন্মের নারী মুক্তিসেনাদের লড়াই
গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছেন লাকি আক্তার৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরুর দিন থেকে রয়েছেন শাহবাগে৷ তাঁর মতো আরো কয়েকজন নারী মুহুর্মুহু শ্লোগানে কাপিয়ে তুলছেন প্রজন্ম চত্বর৷ বিভিন্ন স্কুলকলেজের ছাত্রীরা মাঝেমাঝে হাজির হচ্ছেন আন্দোলনে৷
ছবি: REUTERS
‘ফাঁসির মঞ্চ’ প্রস্তুত
‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’ - এই হচ্ছে প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরতদের মূল দাবি৷ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করলে তা প্রত্যাখ্যান করে তরুণ প্রজন্ম৷ তারা চায় ফাঁসির আদেশ৷ শাহবাগে প্রতীকী ‘ফাঁসির মঞ্চ’ তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির অপেক্ষায় আছে ব্লগাররা৷
ছবি: Reuters
সপরিবারের শাহবাগে
শাহবাগে অনেকেই হাজির হচ্ছেন সপরিবারে৷ ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাহিত্যিক, অধ্যাপক অনেকেই এসেছেন সপরিবারে৷ এই ছবিতে এক শিশুকে দেখা যাচ্ছে শাহবাগ চত্বরে, প্রতিবাদী ব্যানার মাথায় জড়িয়ে৷
ছবি: REUTERS
ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক
‘ট্র্যাইবুনালে কাদের মোল্লার প্রহসনের রায়ের বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ’ - এই শিরোনামে পাঁচ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক৷ ব্লগারদের আহ্বানে সেদিন শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ৷ এখন এই আন্দোলন আমজনতার৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
বরং সেখানে জড়ো হওয়া লাখো মানুষ ছুটে এসেছেন নিজের তাগিদে৷ একাত্তরে লাখো মায়ের কোল খালি করা ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান তারা, চান বোনকে ধর্ষণ করা রাজাকারের বিচার৷ বিচার চান ত্রিশ লাখ শহীদের হত্যাকারীদের৷ আর সেই দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে নির্ঘুম সময় কাটাচ্ছে প্রজন্ম চত্বর৷
সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক, টুইটারের পাশাপাশি কমিউনিটি বাংলা ব্লগগুলো এগিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের অহিংস এই আন্দোলনকে৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে বুধবার প্রকাশিত এ রকম এক নিবন্ধের শিরোনাম, ‘শাহবাগ থেকে উদ্দীপ্ত হয়ে ঘরে ফেরা'৷ ছবিসহ এই নিবন্ধটি লিখেছেন ব্লগার লতিফা লতা৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘যতোবার শাহবাগ যাই ততোবার আমি উদ্দীপ্ত হই এবং আবার যাওয়ার তাড়না বোধ করি৷ এ যেন এক ঘোর, এ যেন এক নেশা৷ দেশপ্রেমের এই নেশায় আমি বুঁদ হয়ে থাকতে চাই৷ আমার এই ঘোর যেন কোনোদিন না কাটে৷''
একই ব্লগ সাইটে এম. মিজানুর রহমান সোহেল প্রকাশ করেছেন শাহবাগ বিষয়ক ২০টি ফেসবুক পাতার তথ্য৷ এ রকমভাবে অন্যান্য ব্লগসাইটেও শাহবাগ চত্বর নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে অসংখ্য নিবন্ধ৷ পাশাপাশি ফেসবুক টুইটারে চলছে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের অক্লান্ত পরিশ্রম৷ কখনো প্রজন্ম চত্বরের সর্বশেষ খবর জানাচ্ছেন তারা৷ কখনো নিজেদের আন্দোলনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন এই অ্যাক্টিভিস্টরা৷ ‘শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ' শীর্ষক একটি ফেসবুক পাতায় গত কয়েকদিনে জড়ো হয়েছেন প্রায় ৩৪ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী৷ আন্দোলনকারীদের টুইটার হ্যাশট্যাগ হচ্ছে #shahbag৷
এখানে উল্লেখ্য করা যেতে পারে, ডয়চে ভেলের সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড ‘দ্য বব্স' এর মনোনয়ন গ্রহণও চলছে এখন৷ thebobs.com/bengali ঠিকানায় মনোনয়ন জমা দিতে পারেন যেকেউ৷ বিভিন্ন দেশের ১৪টি ভাষার এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলা ভাষাও রয়েছে৷ ফলে বাংলা ভাষায় সক্রিয় যেকোন অনলাইন আন্দোলনও এই প্রতিযোগিতায় জায়গা পাবে৷