ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাস বলেন, ‘‘এই দুটিই বড় দেশ এবং আমি এমন কোন সংঘাতের কথা কল্পনাতেও আনছি না যা সত্যিকারের সামরিক উত্তেজনায় রূপ নিতে পারে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘এজন্য আমরা উত্তেজনা নিরসনে দুই পক্ষের সব পর্যায়ে চেষ্টা চালাচ্ছি৷’’
ভারত-চীন যাতে সামরিক সংঘাতে না জড়ায় এজন্য নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে জার্মানি তাদেরকে বোঝানোর কৌশল নিয়েছে৷ এক্ষেত্রে কোন আলোচনা প্রক্রিয়ায় বার্লিন সরাসরি অংশ নিবে না বলেও জানান মাস৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি না জার্মানির সবক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনের প্রয়োজন আছে৷ তবে আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আছি এবং জুলাই থেকে সভাপতির দায়িত্বও নিচ্ছি৷’’ মাস মনে করেন ভারত ও চীন সংঘাতে জড়ালে তা শুধু এই দুই দেশ নয় গোটা অঞ্চলকেই আক্রান্ত করবে৷ আর সে কারণেই যে-কোনো সামরিক সংঘর্ষ এড়াতে দুই দেশকেই বার্তা দিয়ে যাচ্ছে জার্মানি৷
সোমবার রাতে লাদাখ সীমান্তে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশের সৈন্যরা৷ নিহত হয়েছেন ভারতের অন্তত ২০ জন সেনা৷ বেশ কয়েকজন চীনা সৈন্যও নিহত হয়েছেন বলে ভারতীয় বিভিন্ন সূত্র দাবি করে আসছে৷ তবে চীন সরকার এখনও এই বিষয়ে কিছু জানায়নি৷
ইয়ান পি জনসন/এফএস
ভারত ও চীনের মধ্যে একবারই যুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৬২ সালে। কিন্তু তার আগে ও পরে অনেকবারই সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে এই দুই দেশ। সেই সংঘাতের কাহিনি দীর্ঘ এবং রক্তাক্ত।
ছবি: Getty Images/Three Lions/Radloffচীন তিব্বতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলো ১৯৫১ সালে। তার আট বছর পরে চতুর্দশ দলই লামা পালিয়ে ভারতে আসেন। ভারত তাঁকে আশ্রয় দেয়। চীন তার বিরোধিতা করে। তারপর শুরু হয় সীমান্তে দুই সেনার সংঘর্ষ।
ছবি: APসীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে প্রচুর। কিন্তু যুদ্ধ একবারই। ১৯৬২ সালে এক মাস এক দিনের লড়াইয়ে ভারতীয় ভূখন্ডে ঢুকে পড়ে চীন। অরুণাচল প্রদেশে ও লাদাখের ভিতরে। ভারত ছিলো অপ্রস্তুত। চীন সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলো।
ছবি: Getty Imagesভারত ও চীনের মধ্যে চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে। সহজভাবে বললে, যুদ্ধের পর দুই দেশের সেনা যেখানে অবস্থান করছে, সেটাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা।
ছবি: Getty Imagesপাঁচ বছরের মধ্যে অবস্থা বদলে গেলো। ১৯৬৭-র ১১ সেপ্টেম্বর চীনা সেনা নাথু লা-য় ভারতীয় পোস্ট আক্রমণ করে। পাঁচ দিন ধরে সংঘর্ষ চলে। এ বার ভারত ছিলো সুবিধাজনক অবস্থায়। তারা চীনা সেনাকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করে। সংঘর্ষ হয় চো লা-তেও।
ছবি: Diptendu Dutta/AFP/Getty Imagesআবার উত্তেজনা ২০ বছর পরে, সামডরং উপত্যকায়। ভারত তখন অপারেশন চেকারবোর্ড চালাচ্ছিলো। কত তাড়াতাড়ি আসাম থেকে সীমান্তে সেনা পৌঁছনো যায় তা নিয়ে। সেখান থেকেই উত্তেজনা। দুই দেশের সেনা সামনাসামনি। তবে সংঘর্ষ হয়নি।
ছবি: picture-alliance/AP Photoএ বার বিরোধ ২০১৭-তে, ডোকলামে। ভারত, ভূটান ও চীনের সীমান্তে। চীনের সেনা একটা রাস্তা বানাতে থাকে। ভারতীয় সেনাও বুলডোজার নিয়ে চলে যায় তা থামাবার জন্য। সেই সংঘাত ৭৩ দিন চলে। অবশেষে কূটনৈতিক আলোচনার পর বিরোধ মেটে।
ছবি: APএ বার ২০২০-তে। আবার লাদাখ। প্রথমে দুই সেনার হাতাহাতি লড়াই। সিকিমেও একই ঘটনা ঘটলো। চীনের প্রেসিডেন্ট বললেন, তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তারপর ভারত ও চীন দুই পক্ষই সীমান্তে প্রচুর সেনা মোতায়েন করেছে। দুই দেশই প্রচুর কামান ও গোলাবারুদ নিয়ে গিয়েছে।
ছবি: Eesha Khenyচীন দাবি করে অরুণাচল প্রদেশ তাঁদের এলাকা। বিশেষ করে তাওয়াং শহর। অরুণাচলের লোকের চীনে যেতে ভিসা লাগবে না। ভারত জানায়, অরুণাচল তাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
ছবি: picture-alliance/dpa/dinodiaভারতের দাবি, আকসাই চীন তাদের এলাকা। চীন জবরদখল করে রেখেছে। ১৯৬২ থেকেই এ নিয়ে বিরোধ চলছে। এখানে কোনও মানুষের বসতি নেই। কিন্তু সামরিক দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
ভারত ও চীনের সম্পর্ককে বলা হয় ব্লো হট, ব্লো কোল্ড রিলেশন বা নরমে-গরমের সম্পর্ক। মাঝে মাঝেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা হয়। আবার শান্তি আসে। দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর। দুই দেশের সেনা শক্তিশালী। তাই তা আর যুদ্ধের দিকে যায় না।
ছবি: Reuters/Handout