পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলির জোট রোববার পর্যন্ত নাইজারের সেনা শাসককে সময় দিয়েছিল। সেনা সেই সময়সীমাকে গুরুত্ব দেয়নি।
নাইজারে সেনা শাসকের সঙ্গে পশ্চিম আফ্রিকার বিরোধছবি: Sam Mednick/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলি নিয়ে গঠিত সংস্থা ইকোনমিক কমিউনিটি অফ ওয়াস্টার্ন আফ্রিকান স্টেটস (ইকোয়াস)। নাইজারে সদ্য গঠিত সেনা শাসককে তারা জানিয়েছিল, রোববারের মধ্যে শাসনক্ষমতা দেশের গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ফেরত দিতে হবে। নইলে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলি যৌথভাবে নাইজারের সেনা শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করবে।
কিন্তু বাস্তবে নাইজারের হুন্টা সরকার সেই হুমকিতে কান দেয়নি। তারা দুইটf ঘোষণা দিয়েছে। এক, দেশের আকাশসীমা আপাতত বন্ধ রাখা হবে। বহির্শত্রুর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতেই এই সিদ্ধান্ত বলে তারা জানিয়েছে। দুই, বিদ্রোহী সেনা অফিসারদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদ দেয়া হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট পদে বসেছেন সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের চিফ গার্ড।
কী ঘটছে নাইজারে?
গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরতে না ফিরতেই পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার আবারো সামরিক শাসনের কবলে পড়েছে৷ ছবিঘরে জেনে নিন ঘটনাপ্রবাহ৷
ছবি: AFP
রাজনৈতিক পটভূমি
দেশটির নামকরণ নাইজার নদী থেকে৷ ভূমিবেষ্টিত নাইজার একসময় ফরাসি উপনিবেশের অধীনে ছিল৷ ১৯৬০ সালে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে তারা৷ কিন্তু স্বাধীন নাইজার একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গেছে৷
ছবি: Nicolas Remene/Le Pictorium/MAXPPP/dpa/picture alliance
বাজাউম সরকার
২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন মোহামেদ বাজাউম৷ ২০২১ সালের এপ্রিলে তার ক্ষমতা গ্রহণের কয়েকদিন আগে আরেকটি ক্যু হলেও তা ব্যর্থ হয়৷ প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচিত সরকারের হাত থেকে আরেকটি নির্বাচিত সরকার দেশটির শাসনভার গ্রহণ করে৷
ছবি: Boureima Hama/AFP/AP/dpa/picture allaince
আবার ক্যু
ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরের মাথায় চলতি বছরের ২৬ জুলাই দেশটিতে আবারো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটলো৷ নিজের প্রেসেডেন্সিয়াল গার্ডের সদস্যদের হাতেই বন্দি হন বাজাউম৷ সামরিক নেতারা সরকার ও সংবিধান রোহিত করে৷ সীমান্ত বন্ধ ও দেশজুড়ে কারফিউ জারির ঘোষণা দেয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
দৃশ্যপটে চিয়ানি
২৮ জুলাই বাজাউমের প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের প্রধান জেনারেল আব্দররহমানে চিয়ানিকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে অভ্যুত্থানকারী সামরিক বাহিনী৷ তবে এখনই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না বাজাউম৷ টুইটে জানিয়েছেন, ‘নাইজারের কষ্টার্জিত অর্জন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে’৷ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকামী জনতা তা রক্ষা করবে৷
ছবি: ORTN/Télé Sahel/AFP/Getty Images
ইকোভাসের আল্টিমেটাম
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর জোট ইকোভাস এই অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে৷ বাজাউমের কাছে আবারও ক্ষমতা হস্তান্তর করতে জেনারেল আব্দররহমানে চিয়ানিকে তারা দুই সপ্তাহের সময় বেধে দিয়েছে৷ নয়ত নিষেধাজ্ঞা ও শক্তি প্রয়োগ করে হস্তক্ষেপে হুমকি দিয়েছে জোটটি৷
ছবি: ECOWAS/Handout via Xinhua/picture alliance
সমর্থনে মালি, বুরকিনা ফাসো
নাইজারের নতুন জান্তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে দুই প্রতিবেশী বুরকিনা ফাসো ও মালির সামরিক সরকার৷ যৌথ বিবৃতি দিয়ে তারা বলেছে, দেশটিতে যেকোন সামরিক হস্তক্ষেপকে বুরকিনা ফাসো ও মালির বিপক্ষে যুদ্ধ বলে গণ্য করবে তারা৷ এর ফলে গোটা অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে৷ ইকোভাসের সিদ্ধান্তে দ্বীমত জানিয়েছে জোট সদস্য গিনিও৷
ছবি: Kola Sulaimon/AFP
ফ্রান্স নিয়ে জান্তার ভয়
ফ্রান্স সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মোহামেদ বাজাউমকে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা করছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতা দখলকারীরা৷ প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্স জানিয়েছে, তারা বাজাউমকেই দেশটির একমাত্র আইনসঙ্গত কর্তৃপক্ষ বলে মনে করে৷ দেশটিতে ফরাসি নাগরিক ও স্থাপনার নিরাপত্তাকে তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় বলে উল্লেখ করে৷
ছবি: Michel Euler/AP/picture alliance
জঙ্গিবাদের উত্থানের শঙ্কা
নাইজারে বিভিন্ন সময়ে সক্রিয় ছিল বিভিন্ন ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী৷ এরমধ্যে সবচেয়ে বড় হুমকি বোকো হারামা৷ ২০১৫ সালে নাইজারের দক্ষিণাঞ্চলে তারা হামলা চালায়৷ পরে আফ্রিকার অন্য দেশগুলোর সাথে মিলে তাদের দমন করে নাইজার৷
ছবি: AFP
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ কাউন্সিলের ১৫ সদস্য এক বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে বাজাউমের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে৷ নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও৷
ছবি: Stefano Rellandini/AFP/Getty Images
পশ্চিমা সাহায্য
নাইজারের সামরিক বাহিনী অনেকটাই আন্তর্জাতিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল৷ ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে ৫০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা করেছে৷ চলতি বছর ইইউ তিন কোটি ডলারের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেছে৷ বাস্তবতার দোহাই দিয়ে সামরিক জান্তা তাদের প্রতি সমর্থন জানাতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
ছবি: Issouf Sanogo/AFP/Getty Images
ভাবিষ্যৎ ভাগনার?
মালি ও বুরকিনা ফাসোতে সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফ্রান্সের সেনাদের সরিয়ে দেয়৷ নিরাপত্তার জন্য রুশ ভাড়াটে বাহিনী ভাগনারকে দায়িত্ব দেয় মালি৷ খুব দ্রুতই বুরকিনা ফাসোও একই পদক্ষেপ নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ বিশ্লেষকদের ধারণা নতুন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে নাইজারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে৷
ছবি: Leger Kokpakpa/REUTERS
11 ছবি1 | 11
দেশের সংবিধান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত সরকারি দপ্তর থেকে সাবেক কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়েছে।
দেশের সাবেক প্রধান এখনো সেনার জিম্মায়। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলি তার হাতেই পুনরায় ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলির প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা একত্রে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তাতে বলা হয়েছিল, রোববারের মধ্যে সেনা ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে তারা আক্রমণ করতে বাধ্য হবেন। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি আরো একটা যুদ্ধ শুরু হবে নাইজারে?
বিশ্বের গরিবতম দেশগুলির অন্যতম নাইজার। ইসলামিক সন্ত্রাসীরা এই অঞ্চলে অত্যন্ত সক্রিয়। মনে করা হচ্ছে, সেনার যে অংশ ক্ষমতা দখল করেছে তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ আছে।
এদিকে সেনার এই অভ্যুত্থানে রাশিয়ার প্রাইভেট সেনা ভাগনারের হাত আছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষমতা দখলের পর নাইজারের রাস্তায় রাশিয়ার পতাকা উড়তে দেখা গেছে। দেশের যুবসমাজের একটি বড় অংশ রাস্তায় নেমে পড়েছে। সেনার সমর্থনে তারা পিপলস মিলিশিয়া গ্রুপ তৈরি করে ফেলেছে। রাস্তায় রাস্তায় তারা অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছে।