ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ইউরোপের মধ্যে অ্যামেরিকা হওয়ার ‘দুঃস্বপ্ন' দেখা বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন হাঙ্গেরির জাতীয়তাবাদী নেতা ভিক্টর ওর্বান৷
বিজ্ঞাপন
চতুর্থবারের মতো বিপুল ভোটে জয়ী হাঙ্গেরির জাতীয়তাবাদী নেতা ওর্বান ‘উদারপন্থি গণতন্ত্র'-এর দিন শেষ বলে মন্তব্য করেন৷ বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘আমরা ভঙ্গুর উদারপন্থি গণতন্ত্রের বদলে ২১ শতকের উপযোগী খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্র এনেছি, যা আরও মানুষের বেশি মুক্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে৷''
রাজধানী বুদাপোস্টে শপথ গ্রহণের সময় জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত নেতা ওর্বান বলেন, ‘‘খিষ্ট্রীয় গণতন্ত্র ঐতিহ্যবাহী পারিবারতন্ত্রের কথা বলে, যেখানে একজন নারী ও একজন পুরুষ থাকবে৷ এতে সেমিটিক মূল্যবোধের বাইরের সবকিছু থাকবে দূর সৈকতে এবং এটি প্রবৃদ্ধির জন্য সুযোগ দেবে৷''
কার্টুনে বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্টুনিস্টরা কার্টুনের মাধ্যমে নিজ দেশের গণতন্ত্রের চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছেন৷ এজন্য তাদের অনেক সময় হুমকি সহ্য করতে হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও দমে যান নি তারা৷
ছবি: Gomaa Farahat
জার্মানি
বামদল চায় আর্থিক সুবিধাদি কমাতে আর রক্ষণশীলরা চায় জ্বালানি নীতির পরিবর্তন৷ এই কার্টুনের মাধ্যমে জার্মান কার্টুনিস্ট রজার স্মিড্ট আসলে জানতে চেয়েছেন জনগণ কোনটা নেবে? পেশায় প্রকৌশলী স্মিড্ট ভালো লাগা থেকে ছবি আঁকেন৷
ছবি: Roger Schmidt
বহুমতের দেশ অ্যামেরিকা
মার্কিন কার্টুনিস্ট মাইক লেস্টার বোঝাতে চেয়েছেন অ্যামেরিকা এমন এক গণতন্ত্রের দেশ যেখানে একেকজন একেক বিষয়ের দাবি জানায়৷ কিন্তু মরুভূমিতে কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই৷
ছবি: Mike Lester
রাশিয়া
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী৷ ডেনিস লোপাটিনস-এর এই কার্টুনে সেটা তুলে ধরা হয়েছে৷ তিনি বলছেন, রাশিয়ায় এমন অবস্থা যে যাদের একটু বুদ্ধি আছে তারা পশ্চিমা দেশগুলোতে পাড়ি জমায়৷
ছবি: Denis Lopatin
গ্রিস
গণতন্ত্রের আরেক নাম যেন গ্রিস৷ বর্তমানে যে আর্থিক সংকট চলছে তারপরেও যেন সেখানে গণতন্ত্রের পতাকা ওড়ে সেই আশা গ্রিক কার্টুনিস্ট বাস মিটরোপুলোস-এর৷
ছবি: Basilis Mitropoulos
সিরিয়া
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া নিয়ে কার্টুনটি এঁকেছেন মিশরের গোমা ফারহাত৷ নিজ দেশ ছাড়াও ইউরোপ, অ্যামেরিকা সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্রে তাঁর কার্টুন প্রকাশিত হয়৷ এই কার্টুনের মাধ্যমে তিনি বলতে চেয়েছেন, বর্তমানে মিশরে গণতন্ত্রের অবস্থা যতটা করুণ, সিরিয়ার অবস্থা তার চেয়ে বেশি খারাপ৷
ছবি: Gomaa Farahat
স্পেন
সংকটে স্পেনের অর্থনীতি৷ স্পেনকে বাঁচাতে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের পথ্য কাজে লাগবে কিনা – সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দেশের গণতন্ত্রকে যে হাসপাতালের বিছানায় শুতে হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত স্প্যানিশ কার্টুনিস্ট আন্টোনিও মেসামাদেরো৷
ছবি: Antonio Mesamadero
হাঙ্গেরি
দর্শনের ছাত্র কার্টুনিস্ট আর্মিন ল্যাঙ্গার হাঙ্গেরির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভিক্টোর অর্বানের সরকারের কট্টর সমালোচক৷ কেননা অর্বান ইউরোপের সাথ ছেড়ে মস্কো ও বেইজিং-এর সঙ্গে বন্ধুত্বের চেষ্টা করছেন৷ এর ফলে হাঙ্গেরিতে গণতন্ত্র বিপথগামী হচ্ছে বলে মনে করেন ল্যাঙ্গার৷
ছবি: Armin Langer
7 ছবি1 | 7
ডানপন্থি নেতা অর্বান ২০১০ সাল থেকে হাঙ্গেরিতে টানা ক্ষমতায় আছেন৷ এর আগেও তিনি ১৯৯৮ সালে ২০০২ সাল পর্যন্ত দেশটির সরকার প্রধান ছিলেন৷
যখন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে তার বিস্তার ঘটানো শুরু করেছে, তখন থেকে ইইউ-র কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছেন ওর্বান৷ ইইউ-র মানদণ্ড অনুযায়ী, ওর্বান একদলীয় শাসনব্যবস্থার পথপ্রদর্শক৷ আর বৈশ্বিক বিবেচনায় তাঁকে পুটিন, ট্রাম্প আর এর্দোয়ানের মতো ‘স্বৈরশাসক' বলেন কেউ কেউ৷
গতমাসে ওর্বানের নেতৃত্বাধীন ডানপন্থি জোট হাঙ্গেরিরসংসদের ১৯৯টির মধ্যে ১৩৩টি আসন পায়৷ দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হওয়ায় তার ফিদেস পার্টি এখন দেশটির সংবিধান বিনা চ্যালেঞ্জেই পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে৷
যদিও বক্তৃতায় দেশের সবার জন্যই কাজ করার কথা জানিয়ে ওর্বান বলেন, ‘‘আমাদের ইইউকে প্রয়োজন এবং ইইউ-এর আমাদের৷''
শরণার্থীদের নিয়ে সংকটে ইউরোপ
ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে দেখা দেয়া সংকট দিনে দিনে বড় হচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ ফ্রন্টেক্স-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী এ বছরের প্রথম সাত মাসে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ঢুকেছে ইউরোপে৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
জার্মানির ওপর বহুমুখী চাপ
শরণার্থীদের নিয়ে জার্মানিতে উদ্বেগ বাড়ছে৷ বেশ কিছুদিন ধরেই আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলছেন, শরণার্থী সংকট ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংকট হতে চলেছে৷ আশঙ্কা সত্যি হওয়ার কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ এ বছর আট লাখেরও বেশি শরণার্থী জার্মানিতে আসবে বলে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশঙ্কা৷ শরণার্থীবিরোধী বিক্ষোভ দানা বাঁধছে৷ তার ওপর নতুন দুশ্চিন্তা হয়ে উঠেছে হাঙ্গেরি থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জার্মানির দিকে ঠেলে দেয়ার হিড়িক৷
ছবি: Reuters/L. Foeger
জার্মানি ও অস্ট্রিয়ায় ট্রেনবোঝাই শরণার্থী
সোমবার শরণার্থীতে ভরা ট্রেন ঢুকেছে জার্মানির হামবুর্গ ও অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে৷ ট্রেনগুলো এসেছে হাঙ্গেরি থেকে৷ যাত্রীদের বেশিরভাগই সিরিয়ার নাগরিক৷ তবে তাদের কাছে কোনো পাসপোর্ট, ভিসা বা বৈধ কাগজপত্র নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kisbenedek
শরণার্থীদের চাপে বুদাপেস্ট রেল স্টেশন বন্ধ
হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ মঙ্গলবার কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ভিয়েনা এবং মিউনিখ যাওয়ার জন্য স্টেশনে হাজির হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ৷ ভিয়েনার পুলিশ জানায়, বুদাপেস্টের কেলেটি স্টেশনে ৩ হাজার ৬৫০ অভিবাসনপ্রত্যাশী প্লাটফর্মে অপেক্ষারত ভিয়েনা-মিউনিখগামী ট্রেনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে৷ পরে সবাইকে স্টেশন থেকে বের করে দেয়া হয়৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
হাঙ্গেরিকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস
এই মুহূর্তে হাঙ্গেরি খবরে এলেও, অভিবাসনপ্রত্যাশীরা এতদিন মূলত গ্রিস এবং ইটালি হয়েই ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করতো৷ এ বছর অন্তত ৩ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী ঢুকেছে ইটালি ও গ্রিসে৷ এ কারণে দুটি দেশই ইইউর আর্থিক সহায়তা পেয়ে আসছে৷ ইইউর অভিবাসন বিষয়ক দূত জানিয়েছেন, হাঙ্গেরিকেও এ সহায়তা দেয়া হবে৷
ছবি: Reuters/B. Szabo
শরণার্থীদের বিক্ষোভ
গত সপ্তাহেই ৭১ জন শরণার্থীর গলিত লাশ পাওয়া গিয়েছিল হাঙ্গেরি সীমান্তবর্তী ভিয়েনার এক রাস্তায়৷ মর্মন্তুদ সেই ঘটনার পর শরণার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়৷ সোমবার ২০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে ভিয়েনায়৷ বিক্ষুব্ধ শরণার্থীদের দাবি, ইউরোপে প্রবেশের বৈধ রুট খুলে দিতে হবে, কেননা, ‘মানবতাই সবচেয়ে বড়’৷ ওপরের ছবিতে ভিয়েনা রেল স্টেশনে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/L. Foeger
শরণার্থী নিতে রাজি তবে মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকায় আপত্তি পোল্যান্ডের
মধ্যপ্রাচ্যের কোনো শরণার্থী নিতে রাজি নয় পোলিশ সরকার৷ সরকারের যুক্তি- ইউক্রেন সংকটের কারণে সেখান থেকে যাঁরা আসছে তাদের গ্রহণ করছে পোল্যান্ড, তাই আর শরণার্থী নেয়া সম্ভব নয়৷ পোল্যান্ড এতদিন সব মিলিয়ে মাত্র ২ হাজার ২০০ শরণার্থী নিতে রাজি ছিল৷ তবে ইইউ অঞ্চলে শরণার্থী সংকট বেড়ে যাওয়ায় পোল্যান্ড আরো বেশি শরণার্থী গ্রহণ করার চিন্তা করছে৷ ছবিতে পোল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া এক চেচেন পরিবার৷
ছবি: WOJTEK RADWANSKI/AFP/Getty Images
সাইকেল চালিয়ে....!
সিরিয়া থেকে অনেকে নাকি সাইকেলেই পাড়ি দিচ্ছেন দীর্ঘ পথ৷ রাশিয়ায় প্রবেশ করেছেন অনেকে৷ কেউ কেউ ঢুকে পড়েছেন নরওয়েতে৷ নরওয়ের কিরকেনস শহরের পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, এ পর্যন্ত দেড়শ-র মতো সিরীয় সে দেশে ঢুকেছে৷ ইউরোপের দেশ হলেও নরওয়ে বা রাশিয়া ইইউ-র সদস্য নয়৷ তবে নরওয়ে সেঙেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত৷ তাই সেখান থেকে ইইউভুক্ত যে কোনো দেশে অনায়াসে ঢুকে পড়া যায়৷
ছবি: Reuters/J. Prakash
7 ছবি1 | 7
পাশাপাশি তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিজ অঞ্চলের মধ্যে অ্যামেরিকা হওয়ার ‘দুঃস্বপ্ন' দেখা বন্ধ করা উচিত৷
অভিবাসনের মতো ইস্যুগুলো হাঙ্গেরি আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মতপাথর্ক্য তৈরি করেছে৷ বিশেষ করে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট কোটায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের নেওয়ার ব্যাপারে বাধ্যতামূলক করেছে ইইউ৷ ওর্বান সেটা মানতে নারাজ৷
তবে ওর্বানকে ভোটের আগে এবং ভোটের দিন নিজ অবস্থানের কারণে বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ বিক্ষোভকারীরা ওর্বান এবং তাঁর দল ফিদেসকে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কবজা করে নির্বাচনের তহবিল সংগ্রহ এবং নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে৷
এইচআই/ডিজি
পাঠক, এই প্রতিবেদন আপনাদের কেমন লাগল? জানান নীচের ঘরে৷