অবকাঠামোর কারণে দুর্গতদের কাছে সাহায্য পৌঁছানো কঠিন
৩০ এপ্রিল ২০১৫
বিদেশ থেকে ত্রাণের ঢল নামলেও দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোর কারণে সেই সাহায্য দুর্গতদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে উঠছে৷ নেপালের প্রধানমন্ত্রীর আশঙ্কা, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০,০০০ ছাড়িয়ে যাবে৷
বিজ্ঞাপন
নেপালে ভূমিকম্পের এতগুলি দিন পরেও ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়নি৷ দেশের অবকাঠামো বেশ দুর্বল – ভূমিকম্পের পর পথঘাটের অবস্থা আরও বেহাল হয়ে পড়েছে৷ ফলে পায়ে হেঁটে অনেক গ্রামে পৌঁছতে ৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে৷ কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে জমতে থাকা ত্রাণসামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছানো বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ছে৷ দুর্গম এলাকায় ত্রাণ বিতরণের জন্য নেপালের সরকার বিদেশ থেকে আরও হেলিকপ্টার পাঠানোর অনুরোধ করছে৷ তার উপর বৃষ্টি সহ খারাপ আবহাওয়া উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে৷
বৃহস্পতিবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে ১৫ বছরের এক কিশোরকে উদ্ধার করেছে৷ প্রায় ৫ দিন ধরে সে হিল্টন হোটেলের ধ্বংসস্তুপের নীচে আটকে ছিল৷
যে সাতটি এলাকায় ভূমিকম্প অস্বাভাবিক নয়
নেপালে সপ্তাহান্তে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর নিহতের সংখ্যা এখনো বেড়ে চলেছে৷ তবে ভূমিকম্প নতুন নয়, পৃথিবীর আরো কয়েকটি অঞ্চল বড় ভূমিকম্পের কবলে পড়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
পৃথিবী যেখানে কাঁপে
সাতটি টেকটনিক বা গঠনমূলক প্লেট দিয়ে তৈরি হয়েছে আমাদের ভূপৃষ্ঠ৷ যেসব স্থানে এসব প্লেটের মিলন ঘটেছে, সেসব স্থান সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত৷ নেপালে ভূমিকম্পের কারণ হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্লেটের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষ৷ পৃথিবীর সাতটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার একটি নেপাল৷
ভক্তপুর, নেপাল (আগে)
কাঠমান্ডু উপত্যকায় অবস্থিত সাতটি বিশ্ব এতিহ্য অসংখ্য নেপালী এবং বিদেশি পর্যটককে আকর্ষণ করেছে৷ ২০১৪ সালের আগস্টে তোলা হয়েছে ছবিটি৷
ছবি: picture alliance/landov
ভক্তপুর, নেপাল (পরে)
ভূমিকম্পের পরের ছবি এটি৷ উদ্ধারকর্মীরা ভেঙ্গে পড়া বিভিন্ন মন্দিরের নিচে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন৷ নেপালে ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে চার হাজারের বেশি মানুষ৷ উদ্ধার তৎপরতা এখনো চলছে৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
জাপানের উপকূল (এখন)
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত জাপান৷ সেখানকার বহুতল ভবনগুলোও এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে সেগুলো ভূমিকম্পের সময়ও টিকে থাকতে পারে৷ দেশটিতে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রও রয়েছে৷ ছবিটি সেরকম একটি বিদ্যুতকেন্দ্রের৷
ছবি: AFP/Getty Images/JIJI Press
জাপানের উপকূল (আগে)
জাপানের দূরত্ব নেপাল থেকে পাঁচহাজার কিলোমিটার৷ ২০১১ সালের মার্চে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কবলে পড়ে জাপান৷ সেসময় আঠারো হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের রিঅ্যাক্টরগুলোও গলতে শুরু করে এবং রেডিওঅ্যাক্টিভ পদার্থ গিয়ে সমুদ্রে পানিতে মেশে৷ তা সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে জাপান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্দামান সাগর, ভারত মহাসাগর (এখন)
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, যেটা কিনা ভারতের অংশ, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান কন্টিনেন্টাল প্লেটের সংযোগ স্থলের কাছাকাছি অবস্থিত৷ সেখানে ভূমিকম্প যে কোনো সময় হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্দামান সাগর, ভারত মহাসাগর (তখন)
সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প ঘটেছে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর৷ এখন পর্যন্ত হিসেবে রাখা তৃতীয় শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল সেটি৷ ভূমিকম্প এবং পরবর্তীতে সুনামির কারণে সে সময় ২৩০,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Choo Youn Kong
ইয়ুনান, চীন (আগে)
চীনের ইয়ুনান প্রদেশ এরকম অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপের জন্য পরিচিত৷ তবে এই অঞ্চলটিও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
ইয়ুনান, চীন (পরে)
২০১৪ সালের আগস্টে ভূমিকম্পের পর তোলা ছবি এটি৷ ভূমিকম্পে ৪০০-র বেশি মানুষ মারা যায় এবং একলাখের মতো গৃহহীন হয়ে পড়ে৷ চীনে বড় ভূমিকম্প দুর্লভ নয়৷ ২০০৮ সালে অপর এক ভূমিকম্পে সেদেশে প্রাণ হারায় সত্তর হাজার মানুষ৷
ছবি: Reuters
লাকিলা, ইটালি (আগে)
যদিও ইউরোপ ঠিক ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত নয়, তবে ভূমিকম্প এখানে অস্বাভাবিক নয়৷ ইটালিতে আফ্রিকার প্লেট ইউরোপীয় মহাদেশের প্লেটের বিপরীতে চাপ সৃষ্টি করছে৷ ফলে দেশটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Barone
লাকিলা, ইটালি (পরে)
২০০৯ সালে ইটালির লাকিলা শহরে ভূমিকম্পে তিনশো মানুষ প্রাণ হারায়, গৃহহীন হয় দশ হাজারের মতো মানুষ৷ সেসময় ভূমিকম্প সম্পর্কে পূর্বাভাষ দিতে ব্যর্থতার দায়ে সাত বিজ্ঞানীকে অভিযুক্ত করা হয়৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটির সমালোচনা হয়েছে কেননা বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গেলেও এখনো ভূমিকম্পের আগাম সতর্ক বার্তা দিতে সক্ষম নয়৷
ছবি: picture alliance/INFOPHOTO
সান ফ্রান্সিসকো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
১৯০৬ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে ভূমিকম্প থেকে শহরে আগুন ধরে যায়৷ ফলে তিন হাজার থেকে ছয় হাজার মানুষ প্রাণ হারায়৷ মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি এটি৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ভালডিভিয়া, চিলি
ভূকম্পণের মাত্রা মাপা শুরু পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ভূকম্পণের ঘটনা ঘটেছে চিলিতে৷ ১৯৬০ সালে সেদেশে নয় দশমিক পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হয়৷ এতে চিলির দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ স্থাপনা ধ্বংস হয়, প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১,৭০০ মানুষ৷
ছবি: AP
13 ছবি1 | 13
ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫,০০০ পেরিয়ে গেছে৷ প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা আশঙ্কা করছেন, এই সংখ্যা ১০,০০০ ছুঁতে পারে৷ এদিকে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ফেটে পড়ছে৷ বুধবার সংসদের সামনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা গেছে৷ ত্রাণ বণ্টন তরান্বিত করার দাবিতে বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রামবাসীরা সড়ক অবরোধ করছে৷ উদ্ধার তৎপরতার সময়ও কিছু অপ্রিয় ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ যেমন লাংটাং উপত্যকায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা এক হেলিকপ্টার চালককে পণবন্দি করে রেখেছে৷
জাতিসংঘের সূত্র অনুযায়ী, প্রায় ৬ লক্ষ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে৷ ফলে শনিবারের ভূমিকম্পের পর থেকে অসংখ্য মানুষ খোলা আকাশের নীচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে৷ ফলে কমপক্ষে আগামী ৩ মাস ধরে তাদের তাঁবু, পানীয় জল, খাবার ও ওষুধের চাহিদা থাকবে৷ এমনিতেই ভূমিকম্পের পর রোগের প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে৷ বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের অভাবের কারণে আন্ত্রিক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে৷
নেপালের জন্য সাড়ে ৪১ কোটি ডলারের সহায়তার আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যথাসম্ভব সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন৷ নেপালের দুই প্রতিবেশী দেশ – ভারত ও চীনও সহায়তার মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে৷
এদিকে আগামী সপ্তাহেই মাউন্ট এভারেস্ট অভিযান শুরু হতে চলেছে৷ পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাউন্টেনিয়ারিং বিভাগের প্রধান তুলসী প্রসাদ গৌতম রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন৷ তার মধ্যেই এই রুটে বাধা-বিপত্তি দূর হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নেপালের বিশ্ব ঐতিহ্য
২৫ এপ্রিল, ২০১৫ শনিবার নেপালে ৭.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ এতে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়৷ আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় নেপালে থাকা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া সাতটি নিদর্শন৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
কাঠমান্ডু ভ্যালি
প্রায় ২২০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই ভ্যালিতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা সাতটি নিদর্শন রয়েছে৷ ভূমিকম্পে সবগুলোই কমবেশি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে৷
ছবি: Imago
শম্ভুনাথ মন্দির কমপ্লেক্স
বৌদ্ধ অনুসারীদের কাছে এই মন্দির সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পবিত্র স্থান৷ সেখানে আছে একটি স্তূপ, কয়েকটি মন্দির ও আশ্রম৷ সেই স্তূপে গৌতম বুদ্ধের চোখ ও ভ্রু আঁকা রয়েছে, ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে৷ ভূমিকম্পে এই মন্দির কমপ্লেক্সটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
আঠার শতকের মাঝামাঝি সময়ে নেপাল একীভূত হওয়ার আগে সেখানে অনেকগুলো রাজ্য ছিল৷ এ সব রাজ্যের রাজবাড়ির আশেপাশের স্থানগুলো দরবার চত্বর নামে পরিচিত৷ এর মধ্যে কাঠমান্ডু ভ্যালিতে অবস্থিত তিনটি দরবার চত্বর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে৷ কাঠমান্ডু দরবার চত্বর এর একটি (বর্তমান ছবি)৷ পরের ছবিতে ভূমিকম্পের পরবর্তী অবস্থা দেখতে পাবেন৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
ভূমিকম্পের পর...
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কাঠমান্ডু দরবার চত্বরের মন্দির আর প্যাগোডাগুলো আর কখনও পুরোপুরি ঠিক করা যাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ড. পিডি বালাজি৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
ভক্তপুর দরবার চত্বর
রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ১৩ কিলোমিটার পূবে অবস্থিত ভক্তপুর দরবার চত্বরের আগের ছবি এটি৷ ভূমিকম্প পরবর্তী অবস্থা দেখা যাবে পরের ছবিতে৷
ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS/P. Gordon
ভূমিকম্পের পর...
এই হলো ভক্তপুর দরবার চত্বরের বর্তমান অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/N. Shrestha
পাটান দরবার চত্বর
ললিতপুর জেলার এই দরবার চত্বরের মেঝে লাল ইট দিয়ে গড়া৷ কাঠমান্ডু ভ্যালির আদিবাসী ‘নেওয়ার’দের ‘নেওয়া’ স্থাপত্যের অনেক নিদর্শন রয়েছে সেখানে৷ ভূমিকম্পের হাত থেকে রক্ষা পায়নি এই চত্বরটিও৷ দেখুন পরের ছবিতে৷
কাঠমান্ডুতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে ৬২টি মিটার উঁচু এই টাওয়ারটি বেশ আকর্ষণীয় ছিল৷ আঁকাবাঁকা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে পুরো কাঠমান্ডুর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যেত৷ কিন্তু ভূমিকম্পে টাওয়ারটি ধসে পড়েছে৷ সেই দৃশ্য দেখা যাবে পরের ছবিতে৷
ছবি: imago
ভূমিকম্পের পর...
কে বলবে এটি একটি টাওয়ার ছিল!
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
চ্যাঙ্গু নারায়ণ মন্দির
এই হিন্দু মন্দিরটি নেপালের সবচেয়ে পুরনো মন্দির বলে পরিচিত৷ রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৮ কিলোমিটার পূবে অবস্থিত একটি পাহাড়ের চূড়ায় এই মন্দিরটির অবস্থান৷ পঞ্চম ও দ্বাদশ শতাব্দীর নেপালি শিল্পকলার বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে এই মন্দিরে, ভূমিকম্পে যেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: imago
পশুপতিনাথ মন্দির
নেপালে হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র স্থান বলে ধরা হয় এই মন্দিরকে৷ ভূমিকম্পে এটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷