জার্মানিতে উদ্বাস্তু বা অভিবাসীদের দায়িত্ব প্রধানত স্থানীয় পৌর পরিষদগুলির উপর ন্যস্ত৷ উদ্বাস্তুদের কর্মসংস্থানের জন্য তারা ফেডারাল সরকার ছাড়া শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থাগুলির বর্ধিত সহযোগিতা কামনা করে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ হলো এই যে, উদ্বাস্তু-অভিবাসীদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার দায়িত্ব প্রধানত তাদেরই বহণ করতে হয়৷ এবং যেহেতু ‘ইন্টেগ্রেশন' বা সমাজে অন্তর্ভুক্তির প্রথম সোপান হলো চাকরি, সেহেতু স্থানীয় পৌর প্রশাসনগুলির কর্মকর্তারা উদ্বাস্তুদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ফেডারাল সরকারের কাছ থেকে আরো বেশি সাহায্য চান৷
২০১৭ সালের মাঝামাঝি জার্মানিতে প্রায় ছ'লাখ উদ্বাস্তু বেকার ভাতা পাচ্ছিলেন, যদিও ২০১৬ সালের মাঝামাঝি বেকার ভাতার উপর নির্ভর উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ছিল আড়াই লাখ – বলে জানিয়েছেন জার্মান শহর ও পৌর এলাকাগুলির সমিতি ডিএসটিজিবি-র প্রধান গ্যার্ড লান্ডসব্যার্গ৷ বাস্তবে দু'লাখের কম উদ্বাস্তু কাজ পেয়েছেন ও নিজেদের স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম ও অন্যান্য সোশ্যাল সিকিউরিটি অনুদানগুলি দিতে শুরু করেছেন, বলে লান্ডসব্যার্গ জানান৷
জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার বিভিন্ন ধাপ
01:04
‘‘এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে, উদ্বাস্তুদের শ্রম বাজারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমাদের এখনও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে,'' ফুঙ্কে মিডিয়া গ্রুপের একটি সাক্ষাৎকারে লান্ডসব্যার্গ বলেন ও যোগ করেন যে, জার্মানি ‘‘সমাজে অন্তর্ভুক্তির বাঁধাগতে'' আটকা পড়ে রয়েছে৷
জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েলকেও অনুরূপ কথা বলতে শোনা গেছে৷ গত সপ্তাহে গাব্রিয়েল একটি সাক্ষাৎকারে এই মত প্রকাশ করেন যে, উদ্বাস্তুদের ‘ইন্টেগ্রেশন'-এ সাহায্য করার জন্য স্থানীয় সরকারের আরো বেশি অর্থ পাওয়া উচিত৷ ‘‘শহর ও পৌর এলাকাগুলিকে উদ্বাস্তু নেওয়ার জন্য পুরস্কৃত করা উচিত,'' ফুঙ্কে মিডিয়া গ্রুপকে বলেন গাব্রিয়েল৷ ‘‘ফেডারাল সরকারের উচিত উদ্বাস্তুদের সমাজে অন্তর্ভুক্তির খরচ পরিশোধ করা৷ এছাড়া (শহর ও পৌর এলাকাগুলির) নিজের বাসিন্দাদের জন্য সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা উচিত,'' বলে গাব্রিয়েল মন্তব্য করেন৷
উদ্বাস্তু আবাসন খালি পড়ে রয়েছে
২০১৫ সালের শেষের দিকে ও ২০১৬ সালের গোড়ায় উদ্বাস্তুরা বিপুল সংখ্যায় জার্মানিতে আসেন; তখন তাঁদের থাকার জায়গা দিতে জার্মান পৌর এলাকাগুলিকে হিমশিম খেতে হয়েছিল – বিশেষ করে বার্লিনের মতো বড় শহরে, যেখানে পৌর কর্তৃপক্ষের আর্থিক ক্ষমতা সীমিত; কাজেই সে সব শহরে স্পোর্টস হল ইত্যাদি সাময়িকভাবে দখল নিয়ে নবাগত উদ্বাস্তুদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷
যেভাবে জার্মান শিখছেন উদ্বাস্তুরা
একদল রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বন শহরের রাস্তা, বাজারঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জার্মান ভাষাশিক্ষার কাজে৷ সেই সঙ্গে জার্মানির মানুষজন ও সংস্কৃতিও কিছুটা চেনা হয়ে যাচ্ছে৷ একেই বলে বোধ হয় ‘প্রোঅ্যাকটিভ’ পন্থায় ভাষা শেখা!
ছবি: DW/M. Hallam
উদ্বাস্তুদের জন্য ভাষাশিক্ষার পাঠক্রম
জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া এক কথা, এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা আরেক কথা৷ কারণ তার জন্য প্রয়োজন জার্মান ভাষা শেখা৷ সেটা তো শুধু ক্লাসরুমের বেঞ্চিতে বসেই নয়, বাস্তব ও ব্যবহারিক জীবনেও জার্মান ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু শেখা যায় – যেমন বন শহরের পথেঘাটে৷
ছবি: DW/M. Hallam
‘ইন্টেগ্রেশন কোর্স’
বিদেশি-বহিরাগতকে সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা, সমাজের অংশ করে তোলাকে জার্মানে বলে ‘ইন্টেগ্রেশন’৷ এসিবি লিঙ্গুয়া ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য একটি বিশেষ ইন্টেগ্রেশন কোর্স চালু করেছে৷ সেই কোর্স অনুযায়ী পড়ুয়াদের মাঝেমধ্যে ক্লাসরুম ছেড়ে পথে বেরিয়ে অচেনা পথচারী বা দোকানিদের জার্মানে প্রশ্ন করতে বলা হয়েছে: ‘আচ্ছা, এটা কী ফল? ঐ সবজিটার নাম কী?’
ছবি: DW/M. Hallam
আনারসের আর্বি যেন কী?
দেখলে চিনতে পারার কথা৷ দামটা না লিখলেও চলে, কিন্তু ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে...৷
ছবি: DW/M. Hallam
পরীক্ষায় নকল নয়, তবে শর্টকাট চলে
ছাত্রদের বলে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ব্যবহার না করতে, বরং রাস্তা বা অন্যান্য খোঁজখবরের জন্য মানুষজনকে জার্মানে প্রশ্ন করতে৷ কিন্তু ধরুন যদি বাসাম-এর মতো কাউকে পাওয়া যায়, যে জার্মান আর আর্বি, দু’টো ভাষাই জানে, তাহলে তো পোয়াবারো!
ছবি: DW/M. Hallam
বেটোফেন যেন কবে জন্মেছেন?
লুডভিশ ফান বেটোফেন সম্ভবত বন শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত সন্তান৷ জন্মেছিলেন ১৭৭০ সালে, শহরের মূল চত্বরের কাছের একটি গলিতে বেটোফেনের জন্মের বাড়ি না দেখলে, বন-এ কিছুই দেখা হলো না৷ রাদওয়ান আয়ুজ ও তাঁর ছেলে আলি অতিকষ্টে বেটোফেনের জন্মের তারিখটা খুঁজে বার করেছেন৷
ছবি: DW/M. Hallam
রাস্তাঘাট চেনা
টিমকে হয়ত বলে দেওয়া হয়েছে, ‘ফ্রিডেন্সপ্লাৎস’, মানে শান্তির চত্বরে যাও৷ অথবা ৬০৮ নম্বর বাস কোথায় যাচ্ছে? পরের বাসটা আসবে কখন? বাসটা আবার থামে একটি উদ্বাস্তু আবাসের কাছে, যেখানে দলের অনেকের বাস৷
ছবি: DW/M. Hallam
বন থেকে চিঠি
কোথাও বসে পোস্টকার্ড লেখা হলো ক্লাসের নতুন কাজ৷ তার জন্যে পোস্ট অফিসে গিয়ে স্ট্যাম্প কিনে, পোস্টকার্ডে সেঁটে পোস্ট করতে হবে৷ স্ট্যাম্পের ‘রিসিট’ রেখে দিতে হবে৷
ছবি: DW/M. Hallam
পয়েন্ট মানেই ‘প্রাইজ’
এরপরেও ডয়চে ভেলের রিপোর্টার যে দলটির সাথে ছিলেন, তাঁরা খুব ভালো ফলাফল করতে পারেনি – সম্ভবত রিপোর্টারের কচকচানি, তার ওপর আবার রিপোর্টারকে কোনো প্রশ্নের উত্তর জিগ্যেস করা চলবে না, এই কারণে৷
ছবি: DW/M. Hallam
8 ছবি1 | 8
বর্তমানে সেই সমস্যা পুরেপুরি পালটে গেছে৷ সার্বিয়া, হাঙ্গেরি ও অস্ট্রিয়ার সীমান্ত বস্তুত অভিবাসীদের জন্য বন্ধ হওয়ায় তথাকথিত বলকান রুট দিয়ে উদ্বাস্তুরা জার্মানি অভিমুখে আসতে পারছেন না৷ কাজেই ২০১৭ সালে নবাগত উদ্বাস্তুদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে – যার একটি ফল হয়েছে এই যে, বহু উদ্বাস্তু আবাস খালি পড়ে রয়েছে৷
সরকারি ডাব্লিউডিআর টেলিভিশন সংস্থা এ মাসের গোড়ায় একটি জরিপ চালিয়ে দেখে যে, নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের যাবতীয় উদ্বাস্তু আবাসগুলির এক-তৃতীয়াংশ খালি পড়ে রয়েছে, অথচ সেগুলির দেখাশোনায় পূর্বাপর লক্ষ লক্ষ ইউরো ব্যয় হচ্ছে৷
সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের সাবেক নেতা গাব্রিয়েল বলেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ উদ্বাস্তুদের আবাসনের ব্যবস্থা করবেন নাকি সর্বসাধারণের জন্য খোলা একটি সুইমিং পুলের সংস্কারের ব্যবস্থা করবেন – তাঁরা যাতে এই দ্বন্দ্বের মধ্যে না পড়েন, সেটা দেখা অতীব জরুরি৷ তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী, পৌর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, তাঁরা কতজন উদ্বাস্তু নেবেন: ‘‘এই পন্থায় আমরা নিশ্চিত করতে পারব যে, মানুষজন ভাববেন না, উদ্বাস্তুদের জন্য সব কিছু করা হচ্ছে, অথচ তাঁদের (শহরের আদত বাসিন্দাদের) জন্য কিছুই করা হচ্ছে না৷''
ইউরোপীয় সমাধান – নাকি ডেনমার্কের পন্থা?
উদ্বাস্তুদের সমাজে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি ইউরোপব্যাপী পরিকল্পনার কথাও কল্পনা করতে পারেন গাব্রিয়েল: ‘‘ইইউ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র সদস্যদেশগুলির পৌর এলাকাসমূহকে অর্থ প্রদানের একটি কর্মসূচি চালু করতে পারে'' – অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ইইউ দেশগুলিকে উদ্বাস্তু নেওয়ার জন্য আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে৷
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
10 ছবি1 | 10
গত সপ্তাহে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী জার্মানির ফেডারাল অভিবাসন ও উদ্বাস্তু কার্যালয় (বিএএমএফ বা বাম্ফ) এ বছর তাদের নিজেদের ‘ইন্টেগ্রেশন টার্গেট' বা উদ্বাস্তুদের সমাজে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না৷ ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অবধি মাত্র ২ লাখ ৮০ হাজার উদ্বাস্তু-অভিবাসী ‘বাম্ফ'-এর আয়োজিত ‘ইন্টেগ্রেশন কোর্স'-এ অংশগ্রহণ করেছেন৷ তার একটা কারণ সম্ভবত এই যে, ‘বাম্ফ'-এর স্বঘোষিত লক্ষ্য ছিল, উদ্বাস্তুরা আবেদনপত্র জমা দেওয়ার ছ'সপ্তাহের মধ্যে ‘ইন্টেগ্রেশন কোর্স'-এ স্থান পাবেন; বস্তুত নভেম্বর মাসের শেষে সেই অপেক্ষার সময় গিয়ে দাঁড়ায় সাড়ে ১২ সপ্তাহে৷ এমনকি ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসেও এই অপেক্ষার সময় ছিল ১১ সপ্তাহ৷ এছাড়া ২০১৭ সালে ৪ লাখ ৩০ হাজার উদ্বাস্তু ‘ইন্টেগ্রেশন কোর্স'-এ অংশগ্রহণ করবেন – এই ছিল ‘বাম্ফ'-এর লক্ষ্য৷ আগেই বলা হয়েছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অবধি সেই সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজার ছাড়ায়নি৷
এই প্রসঙ্গে ডিএসটিজিবি-র লান্ডসব্যার্গ ডেনমার্কের উদাহরণ দেন, যেখানে উদ্বাস্তুরা ডেনিশ ভাষা শেখার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করতেও শুরু করেন৷ এক্ষেত্রে জার্মানিতে বড় বড় কোম্পানিগুলিও উদ্বাস্তুদের চাকরি দেওয়া ব্যাপারে আরো অনেক কিছু করতে পারে, বলে লান্ডসব্যার্গের অভিমত৷ নবাগত উদ্বাস্তুদের প্রশিক্ষণ ও পেশাগত দক্ষতা জার্মান কোম্পানিগুলিরও কাজে লাগবে, বলে তিনি মন্তব্য করেন৷
মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় সহিংসতা বৃদ্ধি থেকে ইউরোপের অসংলগ্ন শরণার্থী নীতি অবধি ইউরোপে শরণার্থী সংকটে কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুদ্ধ এবং দারিদ্র্যতা থেকে পালানো
২০১৪ সালের শেষের দিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চতুর্থ বছরে পা দেয়ার প্রাক্কালে এবং দেশটির উত্তরাঞ্চলে তথাকথিত ‘ইসলামিট স্টেট’-এর বিস্তার ঘটার পর সিরীয়দের দেশত্যাগের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়৷ একইসময়ে সহিংসতা এবং দারিদ্র্যতা থেকে বাঁচতে ইরাক, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, নিগার এবং কসভোর অনেক মানুষ ইউরোপমুখী হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সীমান্তের ওপারে আশ্রয় খোঁজা
সিরীয় শরণার্থীদের অধিকাংশই ২০১১ সাল থেকে সে দেশের সীমান্ত সংলগ্ন তুরস্ক, লেবানন এবং জর্ডানে আশ্রয় নিতে শুরু করেন৷ কিন্তু ২০১৫ সাল নাগাদ সেসব দেশের শরণার্থী শিবিরগুলো পূর্ণ হয়ে যায় এবং সেখানকার বাসিন্দারা সন্তানদের শিক্ষা দিতে না পারায় এবং কাজ না পাওয়ায় এক পর্যায়ে আরো দূরে কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পায়ে হেঁটে লম্বা পথ পাড়ি
২০১৫ সালে ১৫ লাখের মতো শরণার্থী ‘বলকান রুট’ ধরে পায়ে হেঁটে গ্রিস থেকে পশ্চিম ইউরোপে চলে আসেন৷ সেসময় ইউরোপের শেঙেন চুক্তি, যার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অধিকাংশ দেশের মধ্যে ভিসা ছাড়াই চলাচাল সম্ভব, নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ কেননা শরণার্থীরা গ্রিস থেকে ধীরে ধীরে ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ধনী রাষ্ট্রগুলোর দিকে আগাতে থাকেন৷
ছবি: Getty Images/M. Cardy
সমুদ্র পাড়ির উন্মত্ত চেষ্টা
সেসময় হাজার হাজার শরণার্থী ‘ওভারক্রাউডেড’ নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে শুরু করেন৷ লিবিয়া থেকে ইটালি অভিমুখী বিপজ্জনক সেই যাত্রায় অংশ নিতে গিয়ে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সাগরে ডুবে যায় অন্তত আটশ’ মানুষ৷ আর বছর শেষে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার হাজার৷
ছবি: Reuters/D. Zammit Lupi
সীমান্তে চাপ
ইউরোপের বহির্সীমান্তে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কয়েকটি রাষ্ট্র চাপে পড়ে যায়৷ হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, ম্যাসিডোনিয়া এবং অস্ট্রিয়া এক পর্যায়ে সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, সেসময় শরণার্থী আইন কঠোর করা হয় এবং শেঙেনভুক্ত কয়েকটি দেশ সাময়িকভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/epa/B. Mohai
বন্ধ দরজা খুলে দেয়া
জার্মান চ্যান্সেল আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সমালোচকরা মনে করেন, তাঁর ‘ওপেন-ডোর’ শরণার্থী নীতির কারণে বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে অনেক শরণার্থীই ইউরোপে আসতে উৎসাহ পেয়েছেন৷ এক পর্যায়ে অবশ্য অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত পথ নিয়ন্ত্রণ শুরু করে জার্মানিও৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি
২০১৬ সালের শুরুতে ইইউ এবং তুরস্কের মধ্যে একটি চুক্তি হয়৷ এই চুক্তির আওতায় গ্রিসে আসা শরণার্থীদের আবারো তুরস্কে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়৷ তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই চুক্তির বিরোধিতা করে৷ নভেম্বর মাসে অবশ্য তুরস্কের ইইউ-তে প্রবেশের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা স্থগিত ঘোষণার পর, সেই চুক্তি আবারো নড়বড়ে হয়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
পরিস্থিতি বদলের কোনো লক্ষণ নেই
ইউরোপজুড়ে অভিবাসীবিরোধী মানসিকতা বাড়তে থাকলেও সরকারগুলো সম্মিলিতভাবে শরণার্থী সংকট মোকাবিলার কোনো সঠিক পন্থা এখনো খুঁজে পাননি৷ কোটা করে শরণার্থীদের ইইউ-ভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চলমান সহিংসতার ইতি ঘটার কোনো লক্ষণও নেই৷ ওদিকে, সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে শরণার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে৷