দু'জন জার্মান মহিলা একটি সেলাইয়ের ওয়ার্কশপ খুলেছেন, যেখানে উদ্বাস্তু মেয়েরা সেলাই-ফোঁড়াইয়ের কাজ শিখতে পারেন আর এই পন্থায় জার্মানিতে কাজ পেতে পারেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরের বোর্নহাইম এলাকার একটি ছোটখাটো ওয়ার্কশপ৷ তাকের ওপর রঙিন কাপড়ের থান, দেয়ালে ঠেস দেওয়া রঙিন কাপড়ের রোল৷ এজরা নামের এক উদ্বাস্তু তরুণী মাঝের একটা বড় টেবিলের উপর ঝুঁকে পড়ে কাটা কাগজের প্যাটার্ন থেকে একটি ব্লাউজ বানাচ্ছেন৷
আরো দশ লক্ষ উদ্বাস্তুর মতো এজরা জার্মানিতে পৌঁছান ২০১৫ সালে৷ এজরার পরিবার যখন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের চাপে সিরিয়া ছাড়ে, এজরা তখন দামেস্কে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়াশুনা করছিলেন৷ এজরা জার্মানিতে আবার ফ্যাশন ডিজাইন পড়তে চান, তবে তার জন্য তাঁকে জার্মান ভাষাটা ভালোভাবে রপ্ত করে নিতে হবে৷ ভাষাশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেলাইয়ের কল চালানো প্র্যাকটিস করে নিচ্ছেন৷ বলতে কি, এটাই তাঁর জার্মানিতে প্রথম চাকুরি৷
‘‘স্টিচ বাই স্টিচ''
ক্লাউডিয়া ফ্রিক পেশায় সিমস্ট্রেস, অর্থাৎ তিনি দর্জির কাজ জানেন; তাঁর সঙ্গি নিকি ফন আলফেন্সলেবেন হলেন গ্র্যফিক ডিজাইনার৷ দু'জনে মিলে এই ওয়ার্কশপটি সৃষ্টি করেছেন, নাম দিয়েছেন ‘‘স্টিচ বাই স্টিচ'' – অর্থাৎ একটি একটি করে সুচের ফোঁড়৷ ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, (উদ্বাস্তুদের জন্য) আমরা কি করতে পারি'', বললেন ক্লাউডিয়া৷ তাঁর স্বপ্ন হলো, একদিন তাঁর ওয়ার্কশপের মেয়েরা তাদের নিজেদের সেলাই-ফোঁড়াইয়ের দোকান খুলতে পারবে৷
নিকি শোনালেন, এজরাকে যখন নেওয়া হয়, তখন এজরার বাবা কিরকম গর্বিত হয়েছিলেন; মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুলেছিলেন, কিভাবে তাঁর সবচেয়ে ছোট মেয়েটি পরিবারের সক্কলেকে ছাড়িয়ে সবার আগে জার্মানিতে চাকরি পেয়েছে, কাজ করতে শুরু করেছে৷
শরণার্থী শিবিরে জীবন যেমন
শরণার্থী সংকট নিরসনের জন্য নেয়া হচ্ছে নতুন নতুন পদক্ষেপ৷ আসলে কোথায় কেমন আছে শরণার্থীরা? শরণার্থী শিবিরে তাদের জীবন কেমন? চলুন দেখা যাক৷
ছবি: picture-alliance/AP/R, Adayleh
ফ্রান্সে আন্তর্জাতিক মানের শরণার্থী শিবির
এ মাসেই খুলেছে ফ্রান্সের ডুনকিন শহরের কাছের গ্রান্ডে-সিন্থের এই শরণার্থী শিবির৷ ৩৭৫টি ক্যাবিন তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হলেও শিবিরে এ পর্যন্ত ২০০টি ক্যাবিনের কাজ শেষ হয়েছে৷ ২৫০০ শরণার্থীর জন্য তৈরি এ শিবিরটিতে স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধাই আছে৷
আলজেরিয়ার এক শরণার্থী শিবিরেরই স্কুলে শিশুদের পড়াচ্ছেন এক শিক্ষক৷ আলজেরিয়ার পাঁচটি শিবিরে এখন ১ লক্ষ ৬৫ হাজার শরণার্থী রয়েছে৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
ভয় আর আতঙ্ক
গ্রিসের ইডোমেনি গ্রামের শিবিরের এক কিশোরী৷ চোখে-মুখে তার ভয় আর আতঙ্ক৷
ছবি: Reuters/A. Avramidis
আনন্দ
ইডোমেনির শরণার্থী শিবিরে শিশুদের খেলা দেখিয়ে আনন্দ দিচ্ছে এক পারফর্মার৷ চিকিৎসকদের পরামর্শেই শিশুদের মন ভালো রাখার জন্য মাঝে মাঝে এমন আনন্দানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷
ছবি: Getty Images/D. Kitwood
পরিবর্তনের আশা
সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২৭ লাখ শরণার্থী৷ তুরস্কের সুরুক শহরের শিবিরে তাঁবুর সারির মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক মাঝবয়সি শরণার্থী৷ তাকে অনুসরণ করছে এক শিশু৷ দু’জনই চায় পরিস্থিতির পরিবর্তন৷
ছবি: Getty Images/C. Court
বিশ্রাম
উত্তর-পূর্ব সুদানের এক আশ্রয় কেন্দ্রে বিশ্রাম নিচ্ছেন কয়েকজন ইরিত্রীয় অভিবাসনপ্রত্যাশী৷
তবে নিকি আর ক্লাউডিয়ার সামনে এখনও কিছু প্রতিবন্ধক আছে৷ দুই মহিলারই নিজের বিজনেস চালানোর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা; কিন্তু স্টিচ বাই স্টিচ একটা সম্পূর্ণ নতুন চ্যালেঞ্জ – বিশেষ করে অভিবাসন সংক্রান্ত সরকারি আমলাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে গিয়ে৷ একদিকে ফেডারাল কর্মসংস্থান দপ্তর, অন্যদিকে বিদেশি-বহিরাগত রেজিস্ট্রেশন অফিস৷ কোথাও কোনো আমলা বেঁকে বসলেই আর এক পা এগোনোর উপায় নেই৷ তবে সর্বত্রই তারা সহানুভূতি আর সহযোগিতা পেয়েছেন, বলে জানালেন নিকি৷
মানসিক শান্তি
শুধু যুদ্ধের বিভীষিকাই নয়, উদ্বাস্তুদের ইউরোপে আসতে যে কষ্ট পেতে হয়েছে, তাও কিছু কম বিভীষণ নয় – সে অভিজ্ঞতাও তার ছাপ রেখে গেছে৷ কাজেই এই রিফিউজি মেয়েরা স্টিচ বাই স্টিচ ওয়ার্কশপে এসে একটা শান্ত, সুন্দর, মানবিক পরিবেশ পাবে বলে দুই বান্ধবীর আশা৷
অজানা গন্তব্যের দিকে ছুটছেন শরণার্থীরা
অন্তত দু’হাজারের মতো শরণার্থী গ্রিসের ইডোমেনি ক্যাম্প ছেড়ে চার ঘণ্টার মতো হেঁটে ম্যাসিডোনিয়ায় প্রবেশে সক্ষম হয়েছে৷ এ জন্য তাদের একটি নদী পাড়ি দিতে হয়েছে, যেখানে তলিয়ে গেছেন অন্তত তিনজন শরণার্থী৷
ছবি: DW/D.Tosidis
কোনো এক উপায়ের সন্ধানে
শিশু, পরিবারসহ শত শত শরণার্থী ইডোমিনি শরণার্থী শিবির থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন সোমবার সকালে৷ উদ্দেশ্য গ্রিস-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের কোন অরক্ষিত অংশ থেকে ম্যাসিডোনিয়ায় প্রবেশ করা৷
ছবি: DW/D.Tosidis
সাহসিকতার পরিচয়
ম্যাসিডোনিয়ায় প্রবেশের আশায় এক উত্তাল নদী এভাবে পাড়ি দিয়েছেন শরণার্থীরা৷ কাঁটাতারের বেড়া নেই সীমান্তের এমন অংশ খুঁজে পেতে তাদের প্রানান্ত চেষ্টা৷
ছবি: DW/D.Tosidis
ভয়, আতঙ্ক
উত্তাল নদী পাড় হতে গিয়ে ভয় পাওয়া এক অল্প বয়সি শরণার্থীকে সাহায্যে এগিয়ে আসেন অন্য শরণার্থীরা৷
গ্রিক সীমান্তের গ্রাম চামিলোর, যেটি কিনা সীমান্ত থেকে মাত্র এক দশমিক পাঁচ কিলোমিটার দূরে, বাসিন্দারা এভাবেই পানি দিয়ে সহায়তা করেছেন লম্বা পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করা শরণার্থীদের৷
ছবি: DW/D.Tosidis
চরম দুর্দশা
ক্লান্ত এবং দুর্বল শরণার্থীরা নদী পাড় হতে গিয়ে চরম দুর্দশায় পতিত হন৷
ছবি: DW/D.Tosidis
সতর্ক বার্তা
শরণার্থীদের মিছিল দেখার পর সম্ভবত পুলিশকে ফোন করেন ডানের এই স্থানীয় বাসিন্দা৷
ছবি: DW/D.Tosidis
সেনাবাহিনীর হুমকি
ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তে শরণার্থীদের প্রথমাংশ প্রবেশের কিছু পরেই সেখানে হাজির হন সেদেশের সেনাবাহিনী৷
ছবি: DW/D.Tosidis
মার খাওয়া এবং পোড়া
এক আফগান শরণার্থী দাবি করেছেন, ম্যাসিডোনিয়ার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের পর পিটিয়েছে এবং গাল পুড়ে দিয়েছে৷
ছবি: DW/D.Tosidis
9 ছবি1 | 9
আপাতত এই ওয়ার্কশপ থেকে তাদের কোনো আর্থিক লাভ হচ্ছে না, তবে কালে তাঁরা ছোট ছোট জার্মান ফ্যাশন লেবেলদের জন্য জামাকাপড় ডিজাইন করতে পারবেন বলে দু'জনের আশা৷ স্থানীয় কিছু ফ্যাশন কোম্পানি নাকি ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখিয়েছে, বিশেষ করে তাঁরা উদ্বাস্তুদের নিয়ে কাজ করেন বলে৷ ভবিষ্যতের স্বপ্ন? বছরের শেষ অবধি এজরার মতো আরো চারজন সিমস্ট্রেস৷ তারপর জার্মানির অন্যান্য শহরে শাখা খোলা...