জার্মানিতে যারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন, তারা যাতে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরেন সেজন্য ‘স্টার্ট হেল্প প্লাস' কর্মসূচি চালু করেছে জার্মান সরকার৷ এই কর্মসূচিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দেশে ফেরার জন্য টাকা দেয়া হয়৷
বিজ্ঞাপন
পয়লা ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে চালু হয় এই কর্মসূচিটি৷ অভিবাসন ও উদ্বাস্তুদের জন্য ফেডারাল কার্যালয় (বিএমএএফ) আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংগঠন আইওএম-এর সহযোগিতায় এই কর্মসূচিটির দেখাশোনা করেছে৷ উদ্দেশ্য হলো, যে সব রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী স্বদেশে ফিরতে রাজি, তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া৷ এজন্য চার কোটি ইউরো বরাদ্দ করা হয়েছে৷
‘‘২০১৬ সালে প্রায় ৫৫,০০০ মানুষ স্বেচ্ছায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন৷ সংখ্যাটা আগের বছরের চেয়ে বেশি, কেননা ২০১৫ সালে ফিরেছিল প্রায় ৩৫,০০০ মানুষ৷ অতিরিক্ত বাজেট পাওয়ার ফলে পরিস্থিতি আরো ভালো হয়েছে'', বলে ডয়চে ভেলেকে জানান বুধবারই সরকারিভাবে বিএমএএফ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করা ইউটা কর্ড৷
জার্মানিতে আসার আগে আপনার যা জানা প্রয়োজন
জার্মানিতে শরণার্থী হিসেবে আসার সময় বেশ কিছু বিষয় আপনার মাথায় রাখতে হবে৷ এখানে সবকিছু যত সহজ মনে হয়, আসলে তত নয়৷ এখানে সেরকম দশটি বিষয় উল্লেখ করা হলো৷
ছবি: picture alliance
কাজের অনুমতি ছাড়া কাজ নয়
মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় এটা বৈধ হলেও জার্মানিতে কাজের অনুমতি ছাড়া কাজ করা আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ৷ কেউ যদি অবৈধভাবে কাজ করা অবস্থায় ধরা পড়ে, তাহলে তার জরিমানা, এমনকি জেলও হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কর অবশ্যই প্রদান করতে হবে
জার্মানিতে কর প্রদানের নিয়মকানুন বেশ জটিল৷ তাসত্ত্বেও কর প্রদান না করা এখানে অবৈধ৷ আইন অনুযায়ী, এটা সমাজের বিপরীতে এক ধরনের চুরি৷ কর প্রদান এক ধরনের দায়িত্ব, যেমনটা ট্যাক্স প্রদান৷
ছবি: Fotolia/Joachim B. Albers
শিশুদের প্রতি জোর খাটানো যাবে না
শিশুদের আঘাত করা জার্মানিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ বাড়ি কিংবা স্কুল কোথাও শারীরিক শাস্তি গ্রহণযোগ্য নয়৷
ছবি: DW/R. Azizi
শিশুদের অবশ্যই স্কুলে যেতে হবে
স্কুল বয়সি শিশুরা শুধু বাসায় বসে থাকতে পারবে না, পারবে না কাজে যেতে৷ তাদের যেতে হবে স্কুলে৷ শিশুর বয়স ছয় বছর হলে তাকে অবশ্যই কোনো না কোনো স্কুলে নিবন্ধিত হতে হবে এবং নিয়মিত ক্লাসে যেতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
বেশি শব্দ করা যাবে না!
এমনকি নিজের ঘরের মধ্যেও বেশি শব্দ করা যাবে না, যা আপনার প্রতিবেশীদের বিরক্ত করতে পারে৷ বিশেষ করে রাতের বেলা জার্মানিতে এদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
সুপারমার্কেটে দরকষার সুযোগ নেই
বাজারে দরকষাকষি বিশ্বের অনেক দেশেই গ্রহণযোগ্য এবং মানুষ তা উপভোগও করে৷ তবে জার্মানিতে সুপারমার্কেট কিংবা অধিকাংশ দোকানপাটে দরদামের সুযোগ নেই৷ দরাদরি করতে চাইলে অনলাইনে চেষ্টা করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/G. Sanders
পশুপ্রাণিকে খেতে দেবেন না!
জার্মানিতে অধিকাংশ প্রাণির মালিক রয়েছে কিংবা তারা বিশেষ আইনের আওতায় পরিচালিত৷ তাই প্রতিবেশির বেড়ালকে তাঁর অনুমিত ছাড়া খাওয়ানো খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না৷ আর বেড়ালটা যদি মালিকের চেয়ে আপনার প্রতি বেশি অনুগত হয়ে যায় তাহলে মালিক আপনার বিরুদ্ধে মামলাও ঠুকতে পারে!
ছবি: imago/blickwinkel
সময়নিষ্ঠা – জার্মানিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
কোনো অ্যাপয়েনমেন্ট থাকলে সেখানে সময়মত যাওয়া এবং সর্বোপরি সময়ের প্রতি সচেতনতা জার্মানিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ দেরি করে কোথাও যাওয়া ঠিক নয়৷ আর যদি একান্ত দেরি হয় তাহলে যার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা তাঁকে তা জানানোই নিয়ম৷
ছবি: picture alliance
নিজের দূরত্ব বজায় রাখুন
অনেক সংস্কৃতিতে অন্যের বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরা, চুমু দেয়া কিংবা উপহার দেয়া স্বাভাবিক ব্যাপার৷ তবে জার্মানিতে বিষয়টি তেমন নয়৷ বাচ্চার অভিভাবকের উপর এটা নির্ভর করে৷ তাই শিশুটা যদি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণও করে তবুও নিজের দূরত্ব বজায় রেখে তার সঙ্গে কথা বলুন৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online
রাস্তায় গাড়ি পরিষ্কার নয়
অবশ্যই বাড়ির কাছে গাড়ি পরিষ্কার করাটা সাশ্রয়ী৷ তবে জার্মানিতে এটা নিষিদ্ধ৷ কারণ এতে পরিবেশের ক্ষতি হয়৷ তাই গাড়ি পরিষ্কার করতে চাইলে সেটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যান৷ কিছু জায়গায় নিজ হাতে পরিষ্কারের সুযোগ আছে, কোথাও আছে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা৷ তাই পছন্দ আপনার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Wolfraum
10 ছবি1 | 10
শীঘ্রই জার্মানি ছাড়ার পুরস্কার
‘স্টার্ট হেল্প প্লাস' কর্মসূচির লক্ষ্য হলো যাদের জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার বিশেষ সম্ভাবনা নেই, তাদের দেশ ছাড়ার জন্য পুরস্কৃত করা৷ বিশেষ করে কেউ যদি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন দাখিলের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই জার্মানি পরিত্যাগ করেন তাহলেই এ ‘পুরস্কার' দেয়া হবে৷
১২ বছরের বেশি বয়সের উদ্বাস্তুরা যদি তাদের আবেদন সম্পর্কে সিদ্ধান্তে নেওয়ার আগেই সেই আবেদন প্রত্যাহার করে, তাহলে তারা ১,২০০ ইউরো পাবেন৷ যাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তারা যদি আপিল না করতে ও একটি নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জার্মানি পরিত্যাগ করতে রাজি থাকে, তবে তারা পাবে ৮০০ ইউরো৷ পরিবার ও ১২ বছরের কম বয়সের শিশুসন্তানদের জন্য বাড়তি অর্থ দেওয়া হবে৷ এমনকি যারা জার্মানিতে সাময়িকভাবে থাকার অনুমতি পেয়েছে, তারাও স্বদেশে ফেরার জন্য আর্থিক সহায়তা লাভ করতে পারে৷
এ সুযোগের অপব্যবহার রোধের জন্য পশ্চিম বলকান অঞ্চলের দেশগুলি ও সিরিয়া থেকে আসা উদ্বাস্তুদের এই কর্মসূচি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ বাকিদের বলা হচ্ছে যে, স্বেচ্ছায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সরকারিভাবে জার্মানি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার চেয়ে ভালো৷ অপরদিকে, সরকারের পক্ষেও এই কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্বাস্তুদের ফেরত পাঠানোর খরচ বিধিবদ্ধভাবে বহিষ্কারের খরচের চেয়ে অনেক কম৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি, ইপিডি)
উদ্বাস্তুদের টাকা দিয়ে দেশে ফেরানোর এই কর্মসূচি সম্পর্কে াপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷
জার্মানিতে কয়েকজন শরণার্থীর জীবন
যুদ্ধবিক্ষুব্ধ কোনো দেশ থেকে কীভাবে ইউরোপে আসছে লক্ষ লক্ষ মানুষ? সবাই কি স্থায়ীভাবে ইউরোপে থাকতে চান? থাকতে হলে কী করতে হবে? কী করছেন তাঁরা? কয়েকজন শরণার্থীর জীবন দেখে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
চিকিৎসক থেকে শরণার্থী
সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্কে চিকিৎসক হিসেবে ভালোই ছিলেন হামবার আল-ইসা৷ কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর জন্মভূমির সব সুখ ছেড়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে হয় তাঁকে৷
অনেক পথ পেরিয়ে...
মেসিডোনিয়ায় পৌঁছানোর পর সার্বিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে হামবারকে৷ হেঁটে কোনো শহরে পৌঁছালেই শুরু হতো ইন্টারনেট ক্যাফে খুঁজে বের করার চেষ্টা৷ পেলে প্রথম কাজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন সে সম্পর্কে পরিবারকে বিস্তারিত জানানো৷ একা এসেছেন, তাই স্বজনদের তাঁর জন্য খুব চিন্তা৷ তাঁদের চিন্তা দূর করা ও তাঁদের সম্পর্কে জেনে নিজেকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পছন্দ করেন হামবার৷
অবশেষে জার্মানিতে...
অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন হামবার৷ সিরিয়াতে সার্জন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নতুন দেশে চাইলেই তো আর চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করা যায় না৷ জার্মান ভাষা শিখে নিজেকে তৈরি করতে হবে সবার আগে৷ সেই চেষ্টা চলছে৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুবাদকের কাজও করছেন৷ তাঁর স্বপ্ন অবশ্য জার্মানিতে বসবাস করা নয়৷ সুসময় ফিরে এলে নিজের দেশেই ফিরতে চান হামবার৷
দেশান্তরী এক আফগান কিশোরী
তোবার বয়স এখন ১৬ বছর৷ আফগানিস্তানের হেরাত থেকে জার্মানিতে এসেছে সে৷ হেরাতে নিয়মিত স্কুলে যেত সে৷ লেখাপড়া করেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নও দেখতো৷ কিন্তু তালেবান বেছে বেছে মেয়েদের স্কুলে হামলা শুরু করায় তোবার পক্ষেও আর দেশে থাকা সম্ভব হয়নি৷
সপরিবারে জার্মানিতে
আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে অবশ্য একা আসেনি তোবা৷ দুই বোন এবং তাঁদের স্বামীও এসেছেন সঙ্গে৷ কাছের এই মানুষগুলো সঙ্গে থাকার কারণেই ইরান, তুরস্ক, গ্রিস এবং বলকান অঞ্চল হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাতে পেরেছে তোবা৷
দুঃস্বপ্নে পোড়া স্কুল, স্বপ্নে সুন্দর আগামী
তালেবান হামলা থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছেড়ে এলেও স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন কিন্তু ছাড়েনি তোবা৷ নিজেকে নতুন করে তৈরি করছে সে৷ জার্মান ভাষা শিখছে৷ স্বাবলম্বী হতে হলে জার্মানিতে ভাষা শেখাটা তো সবার জন্যই জরুরি৷
এক সাংবাদিকের পরিবার
ওপরের ছবির তিনজন জার্মানিতে এসেছেন সিরিয়ার ইদলিব থেকে৷ আহমেদ (মাঝখানে)-এর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী হেবা এবং বন্ধু সালেহ৷ সিরিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন আহমেদ৷
শৈশবেই প্রবাসী
আহমেদ-হেবা দম্পতির এই মেয়েটিও এসেছে জার্মানিতে৷ মাত্র এক বছর বয়সেই শুরু হয়েছে তার প্রবাসজীবন৷ ওর বাবা অবশ্য যুদ্ধ থামলেই ফিরে যেতে চায় সিরিয়ায়৷