ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির জন্য উদ্বাস্তু নেয়ার বাধ্যতামূলক কোটা নির্দেশ করার নীতি বৈধ বলে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস (ইসিজে) রায় দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি এই কোটা চ্যালেঞ্জ করেছিল৷ বুধবার ইসিজে সেই চ্যালেঞ্জ প্রত্যাখ্যান করে৷ পূর্ব ইউরোপের ইইউ দেশ আর পশ্চিমের সদস্যদেশগুলির মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক মনোমালিন্য চলেছে৷
ইউরোপীয় আদালতের মতে, জাতীয় সরকারবর্গকে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের একটি ন্যায্য অংশ নিতে বলার অধিকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের আছে৷ আদালতের যুক্তি, ‘‘এই প্রক্রিয়া গ্রিস ও ইটালিকে ২০১৫ সালের অভিবাসন সংকটের ধাক্কা সামলাতে সাহায্য করবে এবং (প্রক্রিয়াটি) অনুপাত সম্মত৷’’
আদালতের রায়ের অর্থ এই যে, কোটা প্রণালী অনুসরণ করে চলতে অস্বীকার করলে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও অপরাপর সদস্যদেশকে জরিমানা দিতে হতে পারে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদেশগুলির একটি বড় অংশ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই বাধ্যতামূলক কোটা অনুমোদন করে৷ কিন্তু পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও হাঙ্গেরি তা প্রত্যাখ্যান করেছিল৷
ইসিজে-তে কোটা পদ্ধতি চ্যালেঞ্জ করার সময় স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরির যুক্তি ছিল যে, ইইউ এই কোটা অনুমোদন করার মাধ্যমে তার নিয়মাবলী ভঙ্গ করেছে ও নিজের এক্তিয়ার ছাড়িয়ে গেছে৷
গ্রিসের লেসবস দ্বীপে কেমন আছেন শরণার্থীরা?
লেসবস দ্বীপে থাকা শরণার্থীদের সেবা দিতে ইউরোপের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেতো বিভিন্ন এনজিও৷ কিন্তু আগস্ট মাসে সেই বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এনজিওগুলো চলে যাচ্ছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
তহবিল শেষ
গ্রিসের লেসবস দ্বীপে যেসব শরণার্থী আছেন তাঁদের চিকিৎসা, আইনগত সেবাসহ অন্যান্য সেবা দিতো বিভিন্ন এনজিও৷ এতদিন তারা ইউরোপীয় বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার কাছ থেকে তহবিল পেতো৷ কিন্তু আগস্ট মাসে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে৷ তাই অনেক এনজিও ইতিমধ্যে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বা দেয়ার পরিকল্পনা করছে৷ ফলে শরণার্থীদের জীবন আরও কঠোর হয়ে উঠছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
কৌশল?
শরণার্থীদের জন্য তৈরি করা একটি গোসলখানায় শ্যাম্পু আর পানির বোতল পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ পরিচ্ছন্ন গোসলখানার অভাবে শরণার্থীদের তাই অন্য ব্যবস্থা করতে হচ্ছে৷ অনেক শরণার্থী মনে করছেন, তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার জন্য ইচ্ছে করেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়
ইরিত্রিয়ার শরণার্থী আমান তাঁর তাঁবুতে এই সাংবাদিককে চা বা পানি দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ তিন মাস আগে তিনি লেসবসে যান৷ তাঁর আশ্রয় আবেদনের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হয় তা জানার অপেক্ষায় আছেন তিনি৷
ছবি: DW/V. Haiges
‘উই আর হিউম্যান’
আফগানিস্তান থেকে আসা এক আশ্রয়প্রার্থী লেসবসে শরণার্থীদের খারাপ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ বেশিরভাগ আফগান শরণার্থী প্রায় এক বছর ধরে লেসবসে বসবাস করছেন৷ এখনও তাদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি৷
ছবি: DW/V. Haiges
লেসবসবাসীদের প্রতিক্রিয়া
২০১৫ সালে শরণার্থী সংকট শুরুর পর লেসবসে পর্যটকদের আগমন কমে গেছে৷ তারপরও লেসবসে বসবাসকারীরা শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছেন৷ কিন্তু গ্রিসের একার পক্ষে শরণার্থীদের জন্য বিশেষ কিছু করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তাঁরা৷
ছবি: DW/V. Haiges
স্বেচ্ছাসেবীদের আনাগোনা
এনজিওদের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক স্বেচ্ছাসেবী লেসবসে শরণার্থীদের সেবা দিচ্ছে৷ ছবিতে জার্মান এক চিকিৎসককে সেবা দিতে দেখা যাচ্ছে৷ তবে অনেক শরণার্থীর অভিযোগ, চিকিৎসকরা যে কোনো সমস্যায় খালি ব্যথানাশক দিয়ে থাকেন৷
ছবি: DW/V. Haiges
আয়ের চেষ্টা
ইরানি এই নারী সাগরে ভেসে আসা লাইফ ভেস্ট দিয়ে থলে ও ওয়ালেট তৈরি করছেন৷ এভাবে সামান্য আয় যেমন হয়, তেমনি শরণার্থী জীবনের একঘেঁয়েমি থেকেও কিছুটা মুক্তি মেলে৷
ছবি: DW/V. Haiges
প্রতিদিন শরণার্থী আসছে
জাতিসংঘের হিসেবে, গ্রিসে এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার শরণার্থী এসেছে৷ গত বছর এসেছিল এক লক্ষ ৭৩ হাজার৷ এর মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার জনের আবেদন গৃহীত হয়েছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
8 ছবি1 | 8
পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরির ইসিজে-তে যাওয়া সমর্থন করে – হাঙ্গেরির মতো পোল্যান্ডও কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী নেয়নি৷ স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র অল্প কিছু রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী নিয়েছে৷
গ্রিস ও ইটালি থেকে যে ১ লক্ষ ৬০ হাজার উদ্বাস্তু নেওয়ার কথা ছিল৷ এ পর্যন্ত তাদের মধ্যে মাত্র ২৪,০০০ উদ্বাস্তুকে ইইউ-এর ভার বণ্টন নীতি অনুযায়ী অপরাপর দেশে পাঠানো হয়েছে৷ ঐ নীতি অনুযায়ী, হাঙ্গেরির ১,২৯৪ জন উদ্বাস্তু ও স্লোভাকিয়ার ৯০২ জন উদ্বাস্তু নেওয়ার কথা৷
অভিবাসন কোটা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে অস্বীকার করার কারণে চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে ইউরোপীয় কমিশন৷
ইসিজে-র রায় জার্মানি, ফ্রান্স ও ইটালির মতো পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির জন্য জয়ের সমতুল, কেননা তারা অভিবাসন প্রসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ‘সংহতি’ দাবি করে আসছে৷
২০১৪ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে প্রায় ১৭ লাখ অভিবাসী ইইউ-তে এসে পৌঁছেছেন৷ ২০১৬ সাল থেকে অভিবাসী আগমনের হার কমে এসেছে, বিশেষ করে তথাকথিত বলকান রুটটি মোটামুটি বন্ধ হয়ে যাবার পরে৷ তুরস্কের সঙ্গে ইইউ-র একটি অভিবাসন চুক্তির ফলে তুরস্ক থেকে উদ্বাস্তুদের নৌকাযোগে গ্রিসে আগমনও প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে৷ ইত্যবসরে ইইউ লিবিয়া থেকে উদ্বাস্তুদের নৌকাযোগে ইউরোপে আসা কমানোর চেষ্টা করছে৷
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
10 ছবি1 | 10
প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় কমিশন ইসিজে-র রায়কে স্বাগত জানিয়েছে৷ ইইউ-এর অভিবাসন কমিশনার দিমিত্রিস আভ্রামোপুলোস বলেছেন, ‘‘পুনর্বাসন পরিকল্পনা যে বৈধ, ইসিজে তা নিশ্চিত করেছে৷ (এখন) একত্রে কাজ করার ও সংহতি পুরোপুরি কার্যকরি করার সময়৷’’
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘আমি চিরকালই আমাদের পূর্ব ইউরোপীয় সহযোগীদের বলেছি যে, দ্বিধা থাকলে বৈধতার প্রশ্নটা পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত৷ কিন্তু এখন আমরা আশা করতে পারি যে, সব ইউরোপীয় সহযোগী এই রায় মেনে চলবে ও অনতিবিলম্বে সমঝোতাগুলি বাস্তবায়িত করবে৷’’
স্লোভাকিয়া বলছে, তারা সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেবে, কিন্তু তবুও তারা উদ্বাস্তু পরিকল্পনার বিরোধী৷ প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো বলেছেন, ‘‘কোটার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান বদলায়নি৷ অন্যান্য দেশের অভিবাসীরা, যারা এখানে থাকতে চান না, তাদের জোর করে এখানে পাঠানোর চেয়ে আমরা অন্য পন্থায় (ইউরোপীয়) সংহতি প্রকাশের কাজ চালিয়ে যাব৷’’
বুদাপেস্টে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেটার শিয়ার্তো ইসিজে-র রায়কে ‘নির্লজ্জ ও দায়িত্বহীন’ বলে অভিহিত করেছেন৷ ‘‘এই সিদ্ধান্ত গোটা ইউরোপের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ বিপন্ন করছে,’’ বলে শিয়ার্তো মন্তব্য করেন এবং যোগ করেন যে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত মূলত রাজনৈতিক৷ ‘‘রাজনীতি ইউরোপীয় আইন ও মূল্যবোধকে ধর্ষণ করেছে,’’ শিয়ার্তো বলেন৷
এসি/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
ইউরোপে শরণার্থী সংকট কীভাবে শুরু হয়েছিল?
মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় সহিংসতা বৃদ্ধি থেকে ইউরোপের অসংলগ্ন শরণার্থী নীতি অবধি ইউরোপে শরণার্থী সংকটে কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুদ্ধ এবং দারিদ্র্যতা থেকে পালানো
২০১৪ সালের শেষের দিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চতুর্থ বছরে পা দেয়ার প্রাক্কালে এবং দেশটির উত্তরাঞ্চলে তথাকথিত ‘ইসলামিট স্টেট’-এর বিস্তার ঘটার পর সিরীয়দের দেশত্যাগের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়৷ একইসময়ে সহিংসতা এবং দারিদ্র্যতা থেকে বাঁচতে ইরাক, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, নিগার এবং কসভোর অনেক মানুষ ইউরোপমুখী হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সীমান্তের ওপারে আশ্রয় খোঁজা
সিরীয় শরণার্থীদের অধিকাংশই ২০১১ সাল থেকে সে দেশের সীমান্ত সংলগ্ন তুরস্ক, লেবানন এবং জর্ডানে আশ্রয় নিতে শুরু করেন৷ কিন্তু ২০১৫ সাল নাগাদ সেসব দেশের শরণার্থী শিবিরগুলো পূর্ণ হয়ে যায় এবং সেখানকার বাসিন্দারা সন্তানদের শিক্ষা দিতে না পারায় এবং কাজ না পাওয়ায় এক পর্যায়ে আরো দূরে কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পায়ে হেঁটে লম্বা পথ পাড়ি
২০১৫ সালে ১৫ লাখের মতো শরণার্থী ‘বলকান রুট’ ধরে পায়ে হেঁটে গ্রিস থেকে পশ্চিম ইউরোপে চলে আসেন৷ সেসময় ইউরোপের শেঙেন চুক্তি, যার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অধিকাংশ দেশের মধ্যে ভিসা ছাড়াই চলাচাল সম্ভব, নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ কেননা শরণার্থীরা গ্রিস থেকে ধীরে ধীরে ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ধনী রাষ্ট্রগুলোর দিকে আগাতে থাকেন৷
ছবি: Getty Images/M. Cardy
সমুদ্র পাড়ির উন্মত্ত চেষ্টা
সেসময় হাজার হাজার শরণার্থী ‘ওভারক্রাউডেড’ নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে শুরু করেন৷ লিবিয়া থেকে ইটালি অভিমুখী বিপজ্জনক সেই যাত্রায় অংশ নিতে গিয়ে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সাগরে ডুবে যায় অন্তত আটশ’ মানুষ৷ আর বছর শেষে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার হাজার৷
ছবি: Reuters/D. Zammit Lupi
সীমান্তে চাপ
ইউরোপের বহির্সীমান্তে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কয়েকটি রাষ্ট্র চাপে পড়ে যায়৷ হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, ম্যাসিডোনিয়া এবং অস্ট্রিয়া এক পর্যায়ে সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, সেসময় শরণার্থী আইন কঠোর করা হয় এবং শেঙেনভুক্ত কয়েকটি দেশ সাময়িকভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/epa/B. Mohai
বন্ধ দরজা খুলে দেয়া
জার্মান চ্যান্সেল আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সমালোচকরা মনে করেন, তাঁর ‘ওপেন-ডোর’ শরণার্থী নীতির কারণে বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে অনেক শরণার্থীই ইউরোপে আসতে উৎসাহ পেয়েছেন৷ এক পর্যায়ে অবশ্য অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত পথ নিয়ন্ত্রণ শুরু করে জার্মানিও৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি
২০১৬ সালের শুরুতে ইইউ এবং তুরস্কের মধ্যে একটি চুক্তি হয়৷ এই চুক্তির আওতায় গ্রিসে আসা শরণার্থীদের আবারো তুরস্কে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়৷ তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই চুক্তির বিরোধিতা করে৷ নভেম্বর মাসে অবশ্য তুরস্কের ইইউ-তে প্রবেশের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা স্থগিত ঘোষণার পর, সেই চুক্তি আবারো নড়বড়ে হয়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
পরিস্থিতি বদলের কোনো লক্ষণ নেই
ইউরোপজুড়ে অভিবাসীবিরোধী মানসিকতা বাড়তে থাকলেও সরকারগুলো সম্মিলিতভাবে শরণার্থী সংকট মোকাবিলার কোনো সঠিক পন্থা এখনো খুঁজে পাননি৷ কোটা করে শরণার্থীদের ইইউ-ভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চলমান সহিংসতার ইতি ঘটার কোনো লক্ষণও নেই৷ ওদিকে, সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে শরণার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে৷