অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে। দাবি জার্মান পুলিশের। তাদের বক্তব্য, গোটা প্রক্রিয়ায় সমস্যা থাকায় অনেককেই ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
চাপ বাড়ছে উদ্বাস্তুর। চাপ বাড়ছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রেও। দাবি জার্মান পুলিশের। তাদের বক্তব্য, অনুপ্রবেশকারীদের দেশে ফেরত পাঠানো বা ডিপোর্ট করার ক্ষেত্রে যে ধাপগুলি আছে, সেখানে সমস্যা থাকার দরুণ সকলকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
জার্মান পুলিশের দাবি, এই মুহূর্তে গোটা দেশে ফেরত পাঠানোর মতো অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৪৮ হাজার। অথচ ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলাকালীন তাঁদের রাখার মতো ডিটেনশন সেন্টারের সংখ্যা মাত্র ৫৭৭টি। ফলে সকলকে ডিটেনশন সেন্টারে এনে রাখাই সম্ভব হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, নানাবিধ অসুবিধার জন্য জার্মান প্রশাসন ১ লক্ষ ১৯ হাজার বিদেশি অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছে। জার্মান পুলিশের দাবি, এই অবস্থায় পুরো চাপটাই এসে পড়ছে তাদের উপর। কারণ, ফেরত পাঠানোর কাজটি জার্মান অভিবাসন দফতর এবং সরকার করলেও অনুপ্রবেশকারীদের রাখা এবং তাদের নিজ নিজ দেশে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব থাকে পুলিশের উপর। আর সেটা করতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।
সন্দেহভাজন বিদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাবে জার্মানি
সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যে কোনো বিদেশিকে দেশে ফেরত পাঠাতে কোনো আইনি বাঁধা নেই বলে রায় দিয়েছে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত৷ তবে সমালোচকরা একে সংবিধানবিরোধী বলছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আদালতের রায়
বৃহস্পতিবার কার্লসরুয়াতে সাংবিধানিক আদালত বলেছেন যে, যদি কোনো সন্ত্রাসের ঝুঁকি থাকে, তাহলে কোনো বিদেশিকে ফেরত পাঠাতে আইনি কোনো বাঁধা দেখছেন না৷ বিচারকদের রায় অনুযায়ী, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অভিবাসী আইনেই আছে
দ্রুত সময়ের মধ্যে সন্দেহভাজনদের ফেরত পাঠানোর জন্য জার্মান অভিবাসী আইনের একটি অনুচ্ছেদের রেফারেন্স দিয়ে বিচারকরা বলেছেন যে, ‘জার্মানির নিরাপত্তায় ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হলেই’ তা ঠেকাতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
ওয়ান ইলেভেনের প্রভাব
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর জার্মানির সংবিধানে এই ধারাটি ঢোকানো হয়েছিল৷ এতদিন এটি নিয়ে কোনো কথা হয়নি৷ গত ডিসেম্বর মাসে বার্লিনে ক্রিস্টমাস মার্কেটে হামলার পর বিষয়টি আবারো সামনে আসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
জার্মানিতে জন্ম, কিন্তু বিদেশি
গেল ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যে এক আলজেরিয়ান ও এক নাইজেরিয়ানকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক করে৷ তাদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলে আইনের আশ্রয় নেন তারা৷ তারা লাইপসিগে ফেডারেল প্রশাসনিক কোর্টে আবেদন করলে সাময়িক আইনি সুরক্ষা পান৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Dedert
প্রশাসনের হুঁশিয়ারি
গেল মার্চে লোয়ার স্যাক্সনির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন যে, যারা সন্ত্রাসী হামলার মতো উন্মাদ আচরণ করতে চায়, তাদের এক সেন্টিমিটারও ছাড় দেয়া হবে না৷ তিনি আরো বলেন যে, তারা যে দেশেরই হোন না কেন, আইনের কড়া প্রয়োগ করা হবে তাদের বিরুদ্ধে৷
ছবি: Getty Images/P.Stollarz
ফেরত পাঠানোর পরিসংখ্যান
গত নভেম্বরে প্রকাশ হওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের প্রথম নয় মাসে ১৯,৯১৪ জনকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে জার্মানি৷ পুরো ২০১৫ সালে ২০,৮৮৮ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Roland
6 ছবি1 | 6
এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জার্মানি ২০ হাজার ৯৯৬ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠিয়েছে। গত বছরের তুলনায় যা হাজারখানেক কম। জার্মান পুলিশের বক্তব্য, গত চার বছরে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। বেড়েছে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও। ২০১৮ সালে সংখ্যাটা সর্বোচ্চ হয়। ২০১৯ সালে খানিকটা হলেও অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা কমেছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইউরোপএবং বিশ্বের অন্য দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের কাছে জার্মানি বরাবরই প্রথম পছন্দ। কারণ আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি জার্মানি এখনও পর্যন্ত নরম।