বেঁকে বসেছে বাভেরিয়া৷ সেখানকার সরকার একদিকে অস্ট্রিয়া সীমান্ত দিয়ে উদ্বাস্তুদের জার্মানিতে আসা কমাতে চায়, অন্যদিকে উদ্বাস্তু ভরা ট্রেন পাঠাতে চায় দেশের অন্যান্য রাজ্যে৷ অবশ্য এ পরিকল্পনা ম্যার্কেলের ঘোষিত নীতির পরিপন্থি৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ৫ই সেপ্টেম্বর ঘোষণা দেন যে, মানবিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য জার্মানি তার সীমান্ত খুলে দিচ্ছে৷ এ ঘোষণার পরপরই হাজার হাজার উদ্বাস্তু বুদাপেস্টের রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় করেন৷ সে সময় কারো পক্ষেই বলা কিংবা বোঝা সম্ভব ছিল না যে, এই উদ্বাস্তুর স্রোত থামবে বা কমবে না, বরং বাড়তে পারে৷ বিশেষ করে তথাকথিত বলকান রুট ধরে সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুরা তাঁদের অভীপ্সিত দেশ জার্মানির দিকে আসতে থাকেন৷ হাঙ্গেরি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সেই স্রোত আটকানোর প্রচেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়৷ ম্যাসিডোনিয়া আর অস্ট্রিয়াও শেষমেষ উদ্বাস্তুদের বাসে কিংবা ট্রেনে জার্মানি পাঠানো ছাড়া অন্য কোনো পন্থা দেখে না৷
ওদিকে অধিকাংশ উদ্বাস্তু জার্মানির যে রাজ্যটিতে প্রথম পদার্পণ করছেন, সেটা হলো দক্ষিণের বাভেরিয়া রাজ্য, খ্রিষ্টীয় সামাজিক সিএসইউ দল যেখানে ক্ষমতাসীন এবং মুখ্যমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার যাদের নেতা৷ সেহোফার বলছেন, পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে দু'লাখ পঁচিশ হাজার উদ্বাস্তু বাভেরিয়ায় পৌঁছেছেন৷ কাজেই সেহোফার ‘বিল্ড' ট্যাবলয়েডের সাক্ষাৎকারে ‘‘অভিবাসন সীমিত করার নির্দিষ্ট আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ''-এর কথা বলেছেন, যার মধ্যে দৃশ্যত পড়বে: উদ্বাস্তুদের একাংশকে অস্ট্রিয়ায় ফেরৎ পাঠানো এবং জার্মানিতে সদ্য আগত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের অবিলম্বে (অন্যান্য রাজ্যে) স্থানান্তরিত করা৷
এ ঘোষণায় অস্ট্রিয়ার প্রতিক্রিয়া অনুধাবনযোগ্য৷ অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইওহানা মিকল-লাইটনার বলেছেন, ‘‘যে সব উদ্বাস্তুরা জার্মানিতে থাকতে চান, তাঁদের যদি অস্ট্রিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে দাঙ্গা বাঁধবে বলে প্রত্যাশা করা যায়৷''
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ও জার্মান রাজনীতি
জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আগমন শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই বিপদের মুখে ফেলেনি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তার ছাপ ফেলেছে: চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর জনপ্রিয়তা আজ কমতির দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
উদ্বাস্তু শিবিরে দাঙ্গা
হামবুর্গ শহরের ভিলহেল্মসবুর্গ এলাকায় শরণার্থীদের প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্রটি ভরে যাওয়ায় আগন্তুকদের তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়৷ মঙ্গলবার (৬ই অক্টোবর) সেখানে আফগানিস্তান ও আলবেনিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা বাঁধে৷ লোয়ার স্যাক্সনি-র ব্রাউনশোয়াইগ-এও অনুরূপভাবে আলজিরীয় ও সিরীয় উদ্বাস্তুদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধে একটি চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
ইসলাম বিরোধীরা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে
ড্রেসডেনে ইসলাম বিরোধী পেগিডা গোষ্ঠীর বিক্ষোভ সমাবেশে গত সোমবার প্রায় ন’হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন৷ বিক্ষোভকারীরা মূলত চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কেই বর্তমান উদ্বাস্তু সংকটের জন্য দায়ী করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
ম্যার্কেল লাগাম টানলেন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দৃশ্যত তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের-এর গুরুত্ব কিছুটা খর্ব করে চ্যান্সেলরের দপ্তরের প্রধান পেটার আল্টমায়ার-কে শরণার্থী সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
উদ্বাস্তুর লাশ
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সালফেল্ড-এ অবস্থিত একটি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আবাসে সোমবার একটি অগ্নিকাণ্ডের পর ২৯ বছর বয়সি এক ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুর লাশ পাওয়া যায়৷ কিভাবে এই শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তা এখনও অজ্ঞাত৷ তবে আবাসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগের কোনো হদিশ পুলিশ এখনও পায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে কোনো পন্থায়
টুরিঙ্গিয়ায় এর আগেও উদ্বাস্তু আবাস হিসেবে চিহ্নিত বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে শরণার্থীদের আসা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ যেমন বিশহাগেন-এর এই বাড়িটির ছাদ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে৷ গত সোমবার এখানে প্রথম উদ্বাস্তুদের আসার কথা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gränzdörfer
ঘরে বাইরে
শরণার্থী সংকট এখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও টান ধরাচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের জোড়োয়া দল বাভারিয়ার সিএসইউ৷ তাদের প্রধান হর্স্ট জেহোফার সেপ্টেম্বর মাসের শেষে একটি দলীয় সম্মেলনে বক্তা হিসেব আমন্ত্রণ জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান-কে, যিনি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে উদ্বাস্তুর স্রোত আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
হাওয়া যদি বদলায়
বাভারিয়ার অর্থমন্ত্রী মার্কুস জ্যোডার ইতিপূর্বেও বলেছেন: ‘‘আমরা (অর্থাৎ জার্মানি) বিশ্বকে বাঁচাতে পারি না৷’’ এমনকি তিনি অস্ট্রিয়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছেন৷ তবে জ্যোডার যখন সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলেন, তখন জেহোফার স্বয়ং সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
7 ছবি1 | 7
দৃশ্যত তিনি বিষয়টি নিয়ে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ার-এর সঙ্গে লাক্সেমবুর্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সম্মেলনে কথাবার্তা বলেছেন৷
সর্বশেষ খবর: বাভেরিয়ার মন্ত্রীসভার একটি বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইওয়াখিম হ্যার্মান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, ফেডারাল সরকার রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন সীমিত করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে বাভেরিয়া সরকার সাংবিধানিক আদালতে যাবার কথা ভাবতে পারেন৷
জার্মানিতে এত শরণার্থী চায় না তারা
শরণার্থীরা তাদের গন্তব্য হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিচ্ছে৷ জার্মানিও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ কিন্তু জার্মানিতে এত শরণার্থী চান না অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিশ্বাসঘাতক’ ম্যার্কেল
জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর অভিযোগ আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
শরণার্থীদের নিয়ে কটূক্তি
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন৷ এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
সমাজে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়
সোমবার বিক্ষোভের সময় বাখমান বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না৷ এরপর আসবে তাদের স্ত্রী; আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এতগুলো লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
জার্মান সরকারের অস্বীকার
জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার৷ যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে৷ তবে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এ ধরনের কোনো গোপন ডকুমেন্টের কথা তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thalia Engel
শরণার্থীর মৃত্যু
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এক শরণার্থীদের বাসস্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছরের এক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ এদিকে, জার্মান সরকারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর শরণার্থী ও তাদের বাসস্থানের উপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই এরকম ২০২টি ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৯৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপদে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে নিজ দল সহ অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছেন ম্যার্কেল৷ তাঁরা জার্মানির শরণার্থী নীতি ও শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চ্যান্সেলরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷