সিডিইউ, সিএসইউ ও এসপিডি দলের তিন নেতা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে আবির্ভূত হয়ে তাঁদের নতুন আপোশের কথা শোনালেন৷ আপোশের ফর্মুলা হল: ‘অভ্যর্থনা কেন্দ্র'৷
বিজ্ঞাপন
বার্লিনের জোট সরকারের ছোট তরফ বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের প্রধান হর্স্ট সেহোফার সীমান্তে ‘ট্র্যানজিট জোন' সৃষ্টি করার দাবি তুলে একদিকে যেমন ‘ভগিনী' দল সিডিইউ-এর প্রধান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কে বিড়ম্বনায় ফেলেছিলেন, অন্যদিকে সেহোফার-এর প্রস্তাব জোট সহযোগী এসপিডি দলকেও ঠিক ততোটাই তাতিয়ে তুলেছিল৷
এসপিডি প্রধান সিগমার গাব্রিয়েল স্পষ্টই বলেছিলেন যে, ‘ট্র্যানজিট জোন' তাঁকে নাৎসি আমলের ‘ডিটেনশন ক্যাম্প'-গুলির কথা মনে করিয়ে দেয়৷ সীমান্তের পরিবর্তে দেশের অভ্যন্তরে ‘অভ্যর্থনা কেন্দ্র' সৃষ্টির প্রস্তাব দিচ্ছিল এসপিডি৷ দেখা গেল, শেষমেষ সেই প্রস্তাবই আপোশের সূত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ও জার্মান রাজনীতি
জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আগমন শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই বিপদের মুখে ফেলেনি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তার ছাপ ফেলেছে: চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর জনপ্রিয়তা আজ কমতির দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
উদ্বাস্তু শিবিরে দাঙ্গা
হামবুর্গ শহরের ভিলহেল্মসবুর্গ এলাকায় শরণার্থীদের প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্রটি ভরে যাওয়ায় আগন্তুকদের তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়৷ মঙ্গলবার (৬ই অক্টোবর) সেখানে আফগানিস্তান ও আলবেনিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা বাঁধে৷ লোয়ার স্যাক্সনি-র ব্রাউনশোয়াইগ-এও অনুরূপভাবে আলজিরীয় ও সিরীয় উদ্বাস্তুদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধে একটি চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
ইসলাম বিরোধীরা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে
ড্রেসডেনে ইসলাম বিরোধী পেগিডা গোষ্ঠীর বিক্ষোভ সমাবেশে গত সোমবার প্রায় ন’হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন৷ বিক্ষোভকারীরা মূলত চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কেই বর্তমান উদ্বাস্তু সংকটের জন্য দায়ী করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
ম্যার্কেল লাগাম টানলেন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দৃশ্যত তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের-এর গুরুত্ব কিছুটা খর্ব করে চ্যান্সেলরের দপ্তরের প্রধান পেটার আল্টমায়ার-কে শরণার্থী সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
উদ্বাস্তুর লাশ
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সালফেল্ড-এ অবস্থিত একটি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আবাসে সোমবার একটি অগ্নিকাণ্ডের পর ২৯ বছর বয়সি এক ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুর লাশ পাওয়া যায়৷ কিভাবে এই শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তা এখনও অজ্ঞাত৷ তবে আবাসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগের কোনো হদিশ পুলিশ এখনও পায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে কোনো পন্থায়
টুরিঙ্গিয়ায় এর আগেও উদ্বাস্তু আবাস হিসেবে চিহ্নিত বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে শরণার্থীদের আসা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ যেমন বিশহাগেন-এর এই বাড়িটির ছাদ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে৷ গত সোমবার এখানে প্রথম উদ্বাস্তুদের আসার কথা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gränzdörfer
ঘরে বাইরে
শরণার্থী সংকট এখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও টান ধরাচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের জোড়োয়া দল বাভারিয়ার সিএসইউ৷ তাদের প্রধান হর্স্ট জেহোফার সেপ্টেম্বর মাসের শেষে একটি দলীয় সম্মেলনে বক্তা হিসেব আমন্ত্রণ জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান-কে, যিনি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে উদ্বাস্তুর স্রোত আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
হাওয়া যদি বদলায়
বাভারিয়ার অর্থমন্ত্রী মার্কুস জ্যোডার ইতিপূর্বেও বলেছেন: ‘‘আমরা (অর্থাৎ জার্মানি) বিশ্বকে বাঁচাতে পারি না৷’’ এমনকি তিনি অস্ট্রিয়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছেন৷ তবে জ্যোডার যখন সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলেন, তখন জেহোফার স্বয়ং সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
7 ছবি1 | 7
যুগপৎ যে সব রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সরকারি স্বীকৃতি পাবার বিশেষ সম্ভাবনা নেই, তাদের আবেদনের যথাশীঘ্র সম্ভব নিষ্পত্তি করে তাদের ফেরৎ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তিন সপ্তাহের মধ্যেই তাদের ফেরৎ পাঠানো হবে, এই হল পরিকল্পনা৷ বলতে কি, এক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের আবেদনের জবাব দেওয়া হবে; তার বিরুদ্ধে আপিল করলে, আরো দু'সপ্তাহের মধ্যে সেই আপিলের নিষ্পত্তি হবে৷
সারা জার্মানিতে মোট তিন থেকে পাঁচটি এ ধরনের ‘অভ্যর্থনা কেন্দ্র' সৃষ্টি করা হবে, যেখানে স্বীকৃতির আশাবিহীন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা হবে৷ স্বয়ং সেহোফার ‘ট্র্যানজিট জোনের' দাবি ছেড়ে এবার খোদ বাভেরিয়ায় দু'টি ‘অভ্যর্থনা কেন্দ্র' স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন৷ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের নিষ্পত্তি করার এই ‘ফাস্ট ট্র্যাক সিস্টেম' প্রধানত আলবেনিয়া ও কসোভোর মতো বলকান দেশগুলি থেকে আগত উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে৷
অবশ্যই রাজনৈতিক নিপীড়নের হাত থেকে যারা পলাতক, আর যারা অর্থনৈতিক উন্নতির আশায় ইউরোপে আসছেন, এই দুই ধরনের উদ্বাস্তুদের মধ্যে বৈষম্য কার্টুনিস্টদের নজর এড়ানি৷ এ যেন মধ্যযুগের ‘চাল পড়া', এই হল মেমেত কিলিচ-এর ব্যঙ্গচিত্রের উপজীব্য৷ ‘যদি ডোবে তাহলে উদ্বাস্তু; যদি ভেসে থাকে তাহলে অর্থনৈতিক অভিবাসী৷'
আরো অনেককে ঐ পর্যায়ে ফেলা হবে, যেমন যারা অতীতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার চেষ্টা করেছে, অথবা যাদের জার্মানিতে প্রত্যাবর্তনের ওপর নিষেধ আছে, অথবা যাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই৷ এদের সকলকেই ‘অভ্যর্থনা কেন্দ্রে' নিয়ে যাওয়া হবে ও রেজিস্ট্রেশন করা হবে৷ এছাড়া সব উদ্বাস্তুকে আইডি কার্ড দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, যে আইডি কার্ড ছাড়া উদ্বাস্তুরা বিভিন্ন সামাজিক ভাতা ও সুযোগসুবিধা পাবে না৷
জোট সরকারের তিন নেতার এই আপোশের ফলে জার্মানিতে উদ্বাস্তুদের আগমন কমবে কিনা, তা বলা শক্ত৷ বার্লিনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত মোট সাত লাখ আটান্ন হাজার উদ্বাস্তু জার্মানিতে এসেছেন৷ এবং এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার উদ্বাস্তু সীমান্ত পার হয়ে জার্মানিতে আসছেন, ফলে এ বছর মোট উদ্বাস্তুর সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে৷
জার্মানিতে শুধু অক্টোবর মাসে এক লাখ একাশি হাজার উদ্বাস্তু এসে পৌঁছন; তাদের মধ্যে প্রায় সাতাশি হাজার এসেছেন সিরিয়া থেকে; সংখ্যার হিসেবে তার পরেই আসছে আলবেনিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক ও কসোভো৷ ২০১৭ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে মোট ত্রিশ লাখ উদ্বাস্তু এসে পৌঁছবে, বলে ব্রাসেলস-এর ভবিষ্যদ্বাণী৷
জার্মানিতে এত শরণার্থী চায় না তারা
শরণার্থীরা তাদের গন্তব্য হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিচ্ছে৷ জার্মানিও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ কিন্তু জার্মানিতে এত শরণার্থী চান না অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিশ্বাসঘাতক’ ম্যার্কেল
জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর অভিযোগ আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
শরণার্থীদের নিয়ে কটূক্তি
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন৷ এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
সমাজে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়
সোমবার বিক্ষোভের সময় বাখমান বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না৷ এরপর আসবে তাদের স্ত্রী; আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এতগুলো লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
জার্মান সরকারের অস্বীকার
জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার৷ যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে৷ তবে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এ ধরনের কোনো গোপন ডকুমেন্টের কথা তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thalia Engel
শরণার্থীর মৃত্যু
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এক শরণার্থীদের বাসস্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছরের এক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ এদিকে, জার্মান সরকারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর শরণার্থী ও তাদের বাসস্থানের উপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই এরকম ২০২টি ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৯৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপদে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে নিজ দল সহ অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছেন ম্যার্কেল৷ তাঁরা জার্মানির শরণার্থী নীতি ও শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চ্যান্সেলরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷