অভিবাসনপ্রত্যাশীদের স্রোত এখন স্লোভেনিয়া সীমান্তে৷ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করার উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটি৷ জার্মানিও পুলিশ পাঠাচ্ছে৷ অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখাতদের ফেরত পাঠানোও শুরু করেছে জার্মানি৷ আফগানদের কী হবে?
বিজ্ঞাপন
হাঙ্গেরির সীমান্ত বন্ধ হওয়ার পর থেকে স্লোভেনিয়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভীষণ চাপ৷ স্লোভেনিয়ার গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ই অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৮৩ হাজার ৬০৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী সে দেশে প্রবেশ করেছে৷ এখনো হাজারো মানুষের ঢল নামছে প্রতিদিন৷
পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য নিরাপত্তা জোরদার করার উদ্যোগ নিচ্ছে স্লোভেনিয়া সরকার৷
জার্মানির ‘মিটেলডয়চে সাইটুং'-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী জার্মানিও পুলিশ সদস্য পাঠাবে স্লোভেনিয়া সীমান্তে৷
চেক প্রজাতন্ত্রসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশও সামর্থ্য অনুযায়ী স্লোভেনিয়ার পাশে দাঁড়াচ্ছে৷
রোববার ব্রাসেলসে বলকান দেশগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত ইইউ নেতাদের বৈঠকে চলমান শরণার্থী সংকট নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সীদ্ধান্ত হয়৷ শরণার্থী গ্রহণ কেন্দ্র বাড়ানো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত রক্ষা এজেন্সি ফ্রন্টেক্স-কে আরো সক্রিয় করা, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তার আদান-প্রদান বাড়ানোর উদ্যোগের সিদ্ধান্তও ছিল তার মধ্যে৷ স্লোভেনিয়ায় আরো ৪০০ পুলিশ মোতায়েন করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছিল সেই বৈঠকে৷
এদিকে জার্মানি যাঁদের অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তাঁদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ তবে আফগানদেরও ফেরত পাঠানোর উদ্যোগকে অনেক বিশ্লেষক ভালো চোখে দেখছেন না৷ কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, আফগানিস্তানে এখনো যেহেতু নিয়মিত বিরতিতেই সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, সেহেতু সে দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিষয়টি ভিন্ন দৃষ্টিতে বিবেচনা করা উচিত৷
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ও জার্মান রাজনীতি
জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আগমন শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই বিপদের মুখে ফেলেনি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তার ছাপ ফেলেছে: চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর জনপ্রিয়তা আজ কমতির দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
উদ্বাস্তু শিবিরে দাঙ্গা
হামবুর্গ শহরের ভিলহেল্মসবুর্গ এলাকায় শরণার্থীদের প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্রটি ভরে যাওয়ায় আগন্তুকদের তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়৷ মঙ্গলবার (৬ই অক্টোবর) সেখানে আফগানিস্তান ও আলবেনিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা বাঁধে৷ লোয়ার স্যাক্সনি-র ব্রাউনশোয়াইগ-এও অনুরূপভাবে আলজিরীয় ও সিরীয় উদ্বাস্তুদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধে একটি চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
ইসলাম বিরোধীরা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে
ড্রেসডেনে ইসলাম বিরোধী পেগিডা গোষ্ঠীর বিক্ষোভ সমাবেশে গত সোমবার প্রায় ন’হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন৷ বিক্ষোভকারীরা মূলত চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কেই বর্তমান উদ্বাস্তু সংকটের জন্য দায়ী করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
ম্যার্কেল লাগাম টানলেন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দৃশ্যত তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের-এর গুরুত্ব কিছুটা খর্ব করে চ্যান্সেলরের দপ্তরের প্রধান পেটার আল্টমায়ার-কে শরণার্থী সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
উদ্বাস্তুর লাশ
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সালফেল্ড-এ অবস্থিত একটি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আবাসে সোমবার একটি অগ্নিকাণ্ডের পর ২৯ বছর বয়সি এক ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুর লাশ পাওয়া যায়৷ কিভাবে এই শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তা এখনও অজ্ঞাত৷ তবে আবাসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগের কোনো হদিশ পুলিশ এখনও পায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে কোনো পন্থায়
টুরিঙ্গিয়ায় এর আগেও উদ্বাস্তু আবাস হিসেবে চিহ্নিত বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে শরণার্থীদের আসা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ যেমন বিশহাগেন-এর এই বাড়িটির ছাদ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে৷ গত সোমবার এখানে প্রথম উদ্বাস্তুদের আসার কথা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gränzdörfer
ঘরে বাইরে
শরণার্থী সংকট এখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও টান ধরাচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের জোড়োয়া দল বাভারিয়ার সিএসইউ৷ তাদের প্রধান হর্স্ট জেহোফার সেপ্টেম্বর মাসের শেষে একটি দলীয় সম্মেলনে বক্তা হিসেব আমন্ত্রণ জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান-কে, যিনি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে উদ্বাস্তুর স্রোত আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
হাওয়া যদি বদলায়
বাভারিয়ার অর্থমন্ত্রী মার্কুস জ্যোডার ইতিপূর্বেও বলেছেন: ‘‘আমরা (অর্থাৎ জার্মানি) বিশ্বকে বাঁচাতে পারি না৷’’ এমনকি তিনি অস্ট্রিয়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছেন৷ তবে জ্যোডার যখন সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলেন, তখন জেহোফার স্বয়ং সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
7 ছবি1 | 7
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
আফগানিস্তান থেকে জার্মানি আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিষয়টি কি সত্যিউ ভিন্ন দৃষ্টিতে বিবেচনা করা উচিত? মতামত জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷