উত্সবের আমেজ নেই৷ নেই বিরোধী দল৷ ৫২ ভাগ ভোটারের ভোট নেই৷ ১৫৩ আসনে নির্বাচন নেই৷ আছে উদ্বেগ আর উত্কণ্ঠা৷ বিদেশি পর্যবেক্ষক আছেন মাত্র চারজন৷ তবুও বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনকে বলছে সংবিধান রক্ষার নির্বাচন৷ তবে বিরোধী দল রবিবারের নির্বাচনকে বলছে একদলীয় শাসন কায়েমের নির্বাচন৷ বাংলাদেশের এই নির্বাচনে ভারত ও ভুটানের চারজন পর্যবেক্ষক ছাড়া আর কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক নেই৷ ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ সমর্থন দেয়নি এই নির্বাচনে৷
বাংলাদেশে সাধারণত নির্বাচন মানেই উত্সব৷ ভোট কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন৷ দুই বড় দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মর্যাদার লড়াই৷ আর থাকে টান টান উত্তেজনা৷ সেই উত্তেজনা সহিংস নয়, বরং কে হারে কে জেতে তা দেখার অপেক্ষায়৷
কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম৷ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৭টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১২টি দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে৷ আর প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ২৫টি দল এই নির্বাচন বর্জনের পর প্রতিহতে একই সঙ্গে হরতাল অবরোধ পালন করছে৷ বিরোধীরা চায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ আর সরকারি দল সে দাবিতে কান না দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করছে৷
নতুন ভোটারদের নির্বাচনি ভাবনা
যারা প্রথমবার ভোটার হয়েছেন সেরকম কয়েকজনের কাছে তাঁদের নির্বাচনি ভাবনা জানতে চাওয়া হয়েছিলো৷ ছবিঘরের মধ্য দিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিভ্রান্ত দিলরুবা
দিলরুবা নোমানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী৷ নির্বাচন না হয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রতিনিধির নির্বাচিত হওয়া একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না তিনি৷ ভোট দিবেন কিনা এখনো ঠিক করেন নি ঢাকার এই প্রথম ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
আগ্রহে ভাটা পড়লেও ভোট দেবেন
আনন্দকুমার শীল৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র৷ বাড়ি যশোরের কেশবপুরে৷ প্রথম ভোটার হিসেবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাঁর উৎসাহ ছিল অনেক বেশি৷ তবে বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচনের কারণে তাঁর সে উৎসাহে ভাটা পড়েছে৷ তারপরেও একজন সুনাগরিক হিসেবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঈশান দ্বিধাগ্রস্ত
ঈশান ভূঁইয়া৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী৷ ঢাকার ভোটার তিনি৷ দেশের অন্য ১৫৪টি আসনের মতো হতভাগ্য ভোটার কিনা সেটাও তিনি জানেন না এখনো৷ ভোটের আমেজও চোখে পড়ছে না তাঁর৷ বিদেশি কোনো পর্যবেক্ষকও আসছেন না ৫ জানুয়ারির ভোট দেখতে৷ এধরণের একটি নির্বাচনে ভোট দেয়ার আপাতত পরিকল্পনা নেই তাঁর৷
ছবি: DW/M. Mamun
নির্বাচনে বিশ্বাস নেই, তবুও ভোট দেবে
ফাহিম হাসান৷ ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র৷ ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার টিকবে না এই বিশ্বাস তাঁর৷ তারপরেও প্রথম ভোটার হিসেবে নিজের মত প্রকাশ করতে চান তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুব্ধ ইশরাত রেজা
ইশরাত রেজা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে পড়েন৷ ঢাকার ভোটার তিনি৷ ইতিমধ্যেই তাঁর এলাকার জনপ্রতিনিধি একক প্রার্থী নিসেবে নির্ধারিত হয়ে গেছে৷ প্রথম ভোটার হিসেবে অংশগ্রহণ করতে না পেরে ক্ষুব্ধ তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
হতাশ, তাই ভোট দেবেন না
মোলাব্বিয়া সুলতানা৷ হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রীর বাড়ি চাঁদপুরে৷ প্রথমবারের মতো ভোটার হওয়া দেশের এই নাগরিক রাজনীতিবিদদের উপর কোনোরকম আস্থা খুঁজে পান না৷ এতো চেষ্টার পরেও রাজনীতিবিদরা কোনো সমঝোতায় আসতে না পারায় হতাশ তিনি৷ রাজনীতিবিদদের এই স্বার্থপর মনোভাব থেকে দেশের মুক্তি চান তিনি৷ ৫ জানুয়ারির মতো একটি একদলীয় নির্বাচনে ভোট দেয়া তাঁর মতে অর্থহীন৷
ছবি: DW/M. Mamun
দুই দলের কবল থেকে মুক্তি
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমঝোতায় বিশ্বাসী রিফাত বিন তারেক৷ পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে৷ ঢাকার ভোটার তিনি৷ তাঁর এলাকার জনপ্রতিনিধিও ইতিমধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গেছে৷ দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কবল থেকে দেশের মুক্তি চান তরুণ এই ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
সহিংসতা না হলে ভোট দেবেন জাবেদ
জাবেদ ইবেনে ওয়াহেদ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র তিনি৷ বাড়ি নোয়াখালীতে৷ প্রতিদিন যে হারে দেশে সহিংসতা হচ্ছে ভোটের দিনও হয়ত এর রেশ থাকতে পারে৷ তারপরেও নিরাপদ মনে করলে ভোট দিতে যাবেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুজন তাঁর মতামত দেবে
সুজন কুমার কুণ্ডু৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র৷ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি অনেকটাই একনায়কতন্ত্রের ছোঁয়া দেখতে পাচ্ছেন৷ দেশের প্রধান দুই দলই ক্ষমতার লোভে পাগল৷ দেশের উন্নতি নিয়ে তাদের চিন্তা আছে বলে মনে হয় না৷ তারপরেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেয়ার ইচ্ছা আছে ঝিনাইদহের তরুণ এই ভোটারের৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোট দিয়ে লাভ নেই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন দাস৷ ৫ জানুয়ারির মতো একটি নির্বাচনে ভোট দেয়ার প্রয়োজন দেখছেন না তিনি৷ প্রধান বিরোধী দল বিহীন নির্বাচন তাঁর কাছে অনেকটা সাজানো নাটকের মতো মনে হয়৷ যাকেই ভোট দিন না কেন জনপ্রতিনিধি নির্ধারিতই আছেন৷ কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগেরই এক দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাঁর কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে৷ এই নির্বাচনে ভোট দিবেন না তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ
সৈয়দ মোহাম্মদ সাদাত৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেয়ার ইচ্ছা আছে তাঁর৷ তবে বাইরে থেকে কোনো পর্যবেক্ষক না আসায় এ ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তাঁর মনে সন্দেহ আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্থায়ী হবে না, তাই ভোট দেবেন না
খুলনার ভোটার মেহজাবিন পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে৷ তাঁর মতে এ ধরনের একটি সরকারের স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত হবে না৷ বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য বারবার ব্যয়বহুল নির্বাচন খুবই ক্ষতিকর৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেবেন না তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
12 ছবি1 | 12
এই রাজনৈতিক সংকট সমাধানে অনেক আলোচনা হয়েছে৷ বিদেশি কূটনীতিকরা চেষ্টা করেছেন, চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনাও হয়েছে৷ কিন্তু সমাধান আসেনি৷ কমেনি সংঘাত, সহিংসতা৷ গত ২৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় ১২২ জন নিহত হয়েছেন৷ আর সহিংসতা থেমে নেই৷ নির্বাচন কেন্দ্রে আগুন দেয়া হচ্ছে৷ পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ব্যালট পেপার৷ কেন্দ্রগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় পুড়ছে নতুন বছরের বই৷
‘প্রহসনের নির্বাচন'
বিএনপির চেয়ানপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে রবিবারের নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন' বলে তা বর্জন এবং প্রতিহতের আহ্বান জানিয়েছেন দেশবাসীর প্রতি৷ তিনি বলেছেন, ‘‘এই নির্বাচন হল বর-বধু সাজিয়ে পুতুলের বিয়ের মতো৷''
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘ভোটারবিহীন এই নির্বাচনের ষড়যন্ত্র সফল করতে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ‘গৃহবন্দি' করা হয়েছে৷ শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ যৌথ বাহিনী অভিযানের নামে আন্দোলন দমাতে নেতা-কর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে৷''
ড. ফারুক দেশবাসীকে নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানিয়ে চলমান হরতাল-অবরোধ সফল করায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান৷
‘যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে নির্বাচন বর্জন'
এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘‘বিরোধী দল যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এই নির্বাচন বর্জন করেছে৷ তাদের নির্বাচনে আনতে অনেক চেষ্টা এবং ছাড় দেয়া হয়েছে৷ তারা নির্বাচনে আসলে নির্বাচন ১০ দিন পিছিয়ে দেয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছিল৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই নির্বাচন গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষার নির্বাচন৷'' খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্ত না করারও আহ্বান জানিয়েছেন তোফায়েল৷ ‘খালেদা জিয়া গৃহবন্দি' এই অভিযোগ অস্বীকার করে তোফায়েল বলেন, ‘‘তিনি গৃহবন্দি হলে বিদেশি দূত ড্যান মোজেনা, রবার্ট গিবসন তাঁর সঙ্গে দেখা করেন কিভাবে৷ তিনি বিবৃতি দেন কিভাবে৷''
পোশাক শ্রমিকদের নির্বাচনি ভাবনা
আগামী পাঁচ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ নির্বাচন নিয়ে কি ভাবছেন? এই ছবিঘরে পোশাক শ্রমিকদের নির্বাচনি ভাবনা প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিরোধী দলের উপর ‘ক্ষিপ্ত’ আকলিমা
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার পোশাক শ্রমিক আকলিমা বেগম৷ কাজ করেন ঢাকার রামপুরার একটি পোশাক কারখানায়৷ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে অবরোধ দেয়ায় বিরোধী জোটের ওপর ক্ষিপ্ত এই পোশাক শ্রমিক৷ এমনিতেই সামান্য কিছু টাকা বেতন পান৷ তার উপর টানা অবরোধের কারণে নিত্যপণ্যের দাম গেছে বেড়ে৷ ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন আকলিমা৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোট দিতে পারবেন না লাকী আক্তার
ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন লাকী আক্তার৷ বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে হলেও ভোটার হয়েছেন ঢাকায়৷ তাঁর এলাকার সাংসদ ইতোমধ্যেই একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন৷ তাই ভোট নিয়ে তাঁর কোনো পরিকল্পনা নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
রুবেলের ভাষায় ‘প্রতিযোগিতাহীন নির্বাচন’
পোশাক শ্রমিক রুবেলের বয়স মাত্র ২৩ বছর৷ কুমিল্লা জেলার তিতাস থানায় তাঁর বাড়ি৷ কাজ করেন ঢাকায়৷ রুবেলের প্রশ্ন, ‘‘প্রতিযোগিতাহীন এই নির্বাচনে ভোট দেয়ার কী আছে?’’ জীবনের প্রথম ভোটটি নষ্ট করতে রাজি নন তিনি৷ একইসঙ্গে আসন্ন নির্বাচনে ভোট দেয়াটাও অর্থহীন মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
এখনো সিদ্ধান্ত নেননি শেফালি
শেফালির বাড়ি ঢাকার পাশে আশুলিয়ায়৷ কাজ করেন, ঢাকার রামপুরার একটি তৈরি পোশাক কারখানায়৷ দশম জাতীয় সংসদ নিয়ে তাঁর অভিমত হচ্ছে, দুই পক্ষই যদি ভোটে আসত তাহলে ভালো হতো৷ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন কিনা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
হোসনে আরার স্বপ্ন ছেলেকে মানুষ করা
গুলশানের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন ফরিদপুরের হোসনে আরা৷ দুপুরের খাবারের বিরতির সময় ছেলেকে নিয়ে বসেছেন পাশের একটি চায়ের দোকানে৷ ভোট নিয়ে তাঁর কোনো চিন্তাভাবনা নেই৷ খেটেখুটে একমাত্র ছেলেকে মানুষ করাই তাঁর স্বপ্ন৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোট দেবেন না সাদ্দাম হোসেন
সাদ্দাম হোসেনের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে৷ কাজ করেন ঢাকার রামপুরার একটি তৈরি পোশাক কারখানায়৷ রাজনীতিবিদদের উপর তাঁর অনেক রাগ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ভোট দিয়া হইবটা কী? যারা দল করেন তারা কোনো না কোনো ভাবেই লাভবান হন, মরি আমরা শ্রমিকরা৷ ভোট দিব না ভাই৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
ভোট দিতে গ্রামে যাবেন মিতু
জামালপুরের বকশীগঞ্জের মিতু কাজ করেন ঢাকার গুলশানের একটি তৈরি পোশাক কারাখানায়৷ কাজের ফাঁকে স্বামীর মোবাইল ফ্লেক্সি লোডের দোকানেও বসেন৷ জীবনের প্রথম ভোট দিতে গ্রামে যাবেন মিতু৷ তবে নিরুত্তাপ নির্বাচন তাঁর ভালো লাগছে না৷
ছবি: DW/M. Mamun
ছুটি পেলে ভোট দিতে যাবেন মিজান
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর মিজানুর রহমান কাজ করেন গুলশানের একটি তৈরি পোশাক কারাখানায়৷ ছোট সময় তিনি নির্বাচন দেখেছেন অনেক উৎসবমুখর৷ কিন্তু এবার নিজে ভোটার হয়ে ভোটের উৎসব দেখতে পাচ্ছেন না৷ তারপরেও ছুটি পেলে পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে গ্রামে যাবেন মিজান৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোট নিয়ে ভাবার সময় নেই সাথীর
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার পোশাক শ্রমিক সাথী৷ কাজ করেন রামপুরার একটি পোশাক কারখানায়৷ নির্বাচন কিংবা ভোট নিয়ে ভাবার সময় নেই তাঁর৷ সাথীর একমাত্র চিন্তা কাজ নিয়ে৷ তিনি মনে করেন, ভালোভাবে কাজ করতে পারলেই সন্তানদের মুখে দুই বেলা খাবার তুলে দিতে পারবেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোট দেওয়া অনর্থক মনে করেন আব্দুল আলীম
পটুয়াখালী জেলার খেপুপাড়ায় বাড়ি আব্দুল আলীমের৷ কাজ করেন রামপুরার একটি তৈরি পোশাক কারখানায়৷ ছুটি নিয়ে এই ধরনের নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়া তার কাছে অনর্থক মনে হয়৷ তাছাড়া তার ধারণা সে ভোট না দিলেও যে প্রার্থী জয়লাভ করার তার জয় হবেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
হাসনা হেনার কাছে ‘নিরুত্তাপ নির্বাচন’
ঢাকার মালিবাগের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন হাসনা হেনা বেগম৷ বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে৷ দেশে যে সবচেয়ে বড় ভোট উৎসব চলছে সেটা তাঁর মনেই হচ্ছে না৷ নিরুত্তাপ নির্বাচনে ভোট দিতে চান না হাসনা হেনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোট দেয়ার ইচ্ছা ছিল লাইলীর
লাইলী বেগমের বাড়ি পিরোজপুরের জিয়ানগরে৷ ভোটার হয়েছেন ঢাকার তেজগাঁও এলাকায়৷ ভোট দেয়ার ইচ্ছাও ছিল তাঁর৷ কিন্তু শুনতে পাচ্ছেন তাঁর এলাকায় নাকি ভোট হবে না৷ একক প্রার্থী হিসেবে একজন ইতিমধ্যেই জিতে গেছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
পদত্যাগে ভয় কিসের? প্রশ্ন সোহাগের
সোহাগ মিয়া কাজ করেন ঢাকার মালিবাগের একটি তৈরি পোশাক কারখানায়৷ বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে৷ তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করে বিরোধী দলকে নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া উচিত ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘ভালো কাজ করলে পদত্যাগে প্রধানমন্ত্রীর এতো ভয় কিসের? ভোটতো আমরাই দিব৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
13 ছবি1 | 13
রবিবারের নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনের প্রার্থীরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ তাই নির্বাচন হচ্ছে বাকি ১৪৭ আসনে৷ এতে মোট ভোটার ৪,৩৯,৩৭,৯৩৭ জন৷ প্রার্থী ৩৯০ জন৷ মোট ভোটারের ৫২ ভাগের ভোট দেয়ার সুযোগ নেই৷ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন বিরোধীদের সহিংসতার আশঙ্কায় ১৯ জেলার ৮০টি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে৷
বিদেশি পর্যবেক্ষক ৪ জন
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৫৮৫ জন৷ এবার ভারত ও ভুটান থেকে দু’জন করে মোট চারজন পর্যবেক্ষক এসেছেন৷
নির্বাচনের আগেই এবার সারা দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷ আরো আছে পুলিশ, ব়্যাব এবং বিজিবি৷ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ আশা করেন, ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন৷
বাংলাদেশের নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন, রবিবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিই হবে নির্বাচন কমিশনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ আর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, সহিংসতায় শঙ্কিত না হয়ে জনগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে৷ তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়৷
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, রবিবারের নির্বাচন হাস্য-কৌতুকে পরিণত হয়েছে৷ তিনি দাবি করেন, সরকার রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷