পুলিশ ইটালির নাগরিক তাবেলা সিজারের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি করলেও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না৷ শুধু তাই নয়, দেশীয়দের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে, সরকার কূটনৈতিক এলাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশেষ করে ঢাকাতে পুলিশের দৃশ্যমান তৎপরতা বেড়েছে ব্যাপকহারে৷ তারপরও মহররম উপলক্ষ্যে শিয়া সম্প্রদায়ের জমায়েতে গ্রেনেড হামলা হয়েছে৷ এতে একজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন৷ খোদ রাজধানীতেই চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনের সময় খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা৷ এছাড়া হঠাৎ করেই প্রধান বিমানবন্দরসহ তিনটি বিমানবন্দরে নাশকতার আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ বিমানবন্দর ঘিরে ২৮টি সংস্থা কাজ করে৷ এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় কাজ করে ৯টি সংস্থার প্রায় আড়াই হাজার সদস্য৷ তবুও অতিথিদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ এর অর্থ হচ্ছে গোয়েন্দাদের কাছে নাশকতার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে৷
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মঙ্গলবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘বিব্রতকর পরিস্থিতির আশঙ্কা থেকেই এ নিরাপত্তা জোরদার করেছি৷ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে৷ আমরা ‘ইয়েলো' বা ‘রেড অ্যালার্ট' জারি করিনি৷ শুধু নিরাপত্তা বাড়িয়েছি৷''
গত সোমবার সকালে হঠাৎ করেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়৷ বিমানবন্দরে দর্শনার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রেও দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা৷ কড়া তল্লাশির মাধ্যমে যাত্রীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়৷ বিমানবন্দরের পরিচালক জাকির হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রবিবার শেষ রাত থেকে বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে৷ রেড অ্যালার্ট জারির খবর সত্য নয়৷ শুধু নিরাপত্তা বাড়িয়েছি আমরা৷''
হত্যার হুমকি পাওয়া এক ব্লগার
তাঁর বাবা হুমায়ুন আজাদের ওপরও হামলা হয়েছিল৷ বাবা তাঁর ছেলে অনন্যকে বলেছিলেন, ‘এরপর তুমি...’৷ হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই ব্লগার অনন্য আজাদকে হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা৷ তাঁকে নিয়েই আজকের ছবিঘর...
ছবি: DW/Gönna Ketels
লিখে যেতে চান অনন্য
ঢাকায় জন্ম৷ ঢাকা শহরকে তাই খুব ভালোবাসেন অনন্য আজাদ৷ এই শহর ছেড়ে কোথাও যেতে চাননি, তবে হত্যার হুমকি দেয়ার পর থেকে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল৷ তারপরও লেখলেখি থামাননি৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
চিন্তা মুক্ত, মতামত নয়
২৪ বছর বয়সি ব্লগার অনন্য নিজেকে ‘মুক্তচিন্তক’ মনে করেন৷ তিনি মনে করেন, ধর্ম বা যে কোনো কিছুকে বিশ্বাস করা বা না করার অধিকার সবারই থাকা উচিত৷ এই ভাবনা নিয়েই লেখালেখি করেন৷ এ কারণে ইসলামি জঙ্গিরা তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছে৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
আত্মরক্ষার চেষ্টা
২০১৩ সালে ৮৪ জন ব্লগারের নামের তালিকা প্রকাশ করে তাঁদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷ পরের ৩ বছরে মোট ৯ জন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে৷ হালে দিনের আলোয়, জনাকীর্ণ স্থানে ব্লগার হত্যার ঘটনার পর তাঁকেও হত্যার হুমকি দেয়ায় অনন্য সাবধানে চলাফেরা শুরু করেন৷ ঢাকায় তো হেলমেট না পরে বেরই হতেন না তিনি৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
চিন্তার জগতে এক
ইসলামি জঙ্গি এবং তাদের ভাবধারায় বিশ্বাসীরা ব্লগারদের ঢালাওভাবে ‘নাস্তিক’ বলছে৷ কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের খুব কম ব্লগারই ধর্মের সমালোচনা করে লেখালেখি করেন৷ সরকার শুধু ব্লগারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থই নয়, উল্টো ব্লগারদের ওপরই বিধিনিষেধ আরোপ করতে সচেষ্ট৷ অনেক ক্ষেত্রে ব্লগারদেই বরং বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
ঐতিহাসিক বিরোধ
একাত্তরে নয় মাসের যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ৷ যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামিসহ কয়েকটি দল পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে, তাদের অনেক কর্মী হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে অংশ নিয়েছে৷ ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ব্লগাররা আন্দোলন শুরু করে৷ শাহবাগে সমবেত হয় লাখো মানুষ৷ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
এরপর তুমি...
বাবা হুমায়ুন আজাদ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং লেখক৷ তাঁর ওপরও হামলা হয়েছিল৷ হুমায়ুন আজাদ তার কিছুদিন পরই মারা যান৷ একদিন হুমায়ুন অনন্যকে বলেছিলেন, ‘‘এরপর তুমি...৷’’ হুমায়ুন তাঁর লেখায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদরদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতেন৷ তাই হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়৷ অনন্যকেও হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
‘গৃহবন্দিত্ব’ থেকে মুক্তি
হত্যার হুমকির পরও লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন অনন্য৷ লিখছেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান ধরে রেখে৷ কয়েকদিন হলো বৃত্তি নিয়ে জার্মানিতে এসেছেন অনন্য আজাদ৷ প্রিয় শহর ঢাকায় নিজের বাড়িতেই প্রায় বন্দি থাকার যন্ত্রণা থেকে আপাতত মুক্তি!
ছবি: DW/Gönna Ketels
7 ছবি1 | 7
তবে শুধুমাত্র হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নয়, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে৷ মঙ্গলবার থেকেই ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেও আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন) মোতায়েন করা হয়েছে৷ বিমানবন্দরের বাইরের নিরাপত্তায় এপিবিএন কাজ শুরু করেছে৷ এতদিন এপিবিএন শুধুমাত্র হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে মোতায়েন ছিল৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেটেও এপিবিএন মোতায়েনের চিন্তা রয়েছে৷
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশে পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটে গেছে৷ তাই আর যাতে কোনো ঘটনা না ঘটতে পারে সেজন্য নানা ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ এর অংশ হিসেবে বিমানবন্দরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ যদিও বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে ‘সিভিল এভিয়েশন'৷ সারাদেশে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এ সব নিয়ে কাজ করছেন৷''
এই মুহূর্তে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন? জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘যখন পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটে, তখন আমরা তো আর নতুন কোনো ঘটনা ঘটাতে দিতে পারি না৷ সে কারণে যে ধরনের ব্যবস্থা থাকা দরকার, তার সবই করা হয়েছে৷ আমার দৃষ্টিতে এই মুহূর্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি রাখা হয়নি৷''
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিরাপত্তার শুধু জোরদার করলেই হবে না, গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়াতে হবে৷ পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে৷''
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
9 ছবি1 | 9
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাচলে সতর্কতা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে৷ ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার সোমবার এক ব্রিফিংয়ে ইটালির নাগরির তাবেলা সিজারের খুনিদের গ্রেপ্তারের কথা জানান৷ ওই দিনই ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা হালনাগাদ করেছে৷ দূতাবাসের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিদেশিদের উপর হুমকির বিষয়ে মার্কিনিদের জন্য জারি করা সতর্ক বার্তা এখনো বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য৷ দূতাবাস মার্কিন নাগরিকদের পূর্বসতকর্তা অবলম্বন এবং চলাচলে সব সময় সজাগ থাকার জোরালো পরামর্শ দিচ্ছে৷ একইসঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ দূতাবাসের কর্মীদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সতর্কতা অবলম্বন করতেও নির্দেশনায় বলা হয়েছে৷ এর আগের দিন ঢাকাস্থ যুক্তরাজ্য ও অষ্ট্রেলিয়া দূতাবাস নিজেদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে৷
এদিকে টাইম ম্যাগাজিনের সর্বশেষ প্রিন্ট সংস্করণের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কথিত ‘নাস্তিক' ব্লগারদের তালিকা প্রকাশ করে নৃশংস কায়দায় হত্যা, বিদেশি খুন এবং জঙ্গিদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের তৎপরতায় আতঙ্কে সময় পার করছে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ, বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল ধারার মানুষেরা৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে সরকার হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই৷'' ভবিষ্যতের ভয়াবহতার ইঙ্গিত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ধারাবাহিকভাবে ব্লগার খুনের পর বিদেশিদের গুলি করে হত্যার ঘটনা অশুভ ইঙ্গিত৷ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠিগুলোর সাথে যোগাযোগ না থাকলেও স্থানীয় জঙ্গিরা এ সুযোগে তাদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ ছাড়বে না বলে আশঙ্কা তাঁর৷