১৯৬১ সালের উনিশে মে ভারতের শিলচরে বাংলাভাষার জন্য শহীদ হয়েছিলেন ১১জন৷ উনিশ উদযাপন, যা সেই অঞ্চলের বাঙালির হৃদয় জুড়ে, তা এখন কীভাবে পালিত হচ্ছে?
বিজ্ঞাপন
অসমীয়া ও ইংরেজির পাশাপাশি দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে চাই বাংলাও- এই দাবি নিয়ে পথে নেমেছিলেন তাঁরা, যারা আসামের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য৷ কিন্তু প্রশাসনের পক্ষে এই দাবির উতরে মিলেছিল বন্দুকের গুলি৷ ঝরে গিয়েছিল ১১টি প্রাণ৷ শুধু ১৯৬১তেই নয়, ১৯৭২, ১৯৮৬তেও শহীদ হন বাঙালিরা৷ মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন ১৯৯৬ সালে সেই অঞ্চলের বিষ্ণুপ্রিয়া নারী সুদেষ্ণা সিনহাও৷
কিন্তু তারপর থেকে গত দুই দশক ধরে আসামের বরাক উপত্যকা, যা কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা নিয়ে তৈরি, হয়ে উঠেছে মাতৃভাষার চেতনা উদযাপনের প্রাণকেন্দ্র৷ প্রতি বছর উনিশে মে উপলক্ষে গোটা উপত্যকা সেজে ওঠে উৎসবের আমেজে৷ গোটা উপত্যকাজুড়ে নবীন-প্রবীণ সব প্রজন্ম একসাথে মিলিত হয় সেখানে৷
যে শিলচর রেলস্টেশনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন বিশ্বের প্রথম নারী ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্যসহ আর ১০ জন, সেই রেল চত্বরকে ঘিরে উদযাপিত হয় উনিশ৷ শুধু তাই নয়, উনিশের মাতিতে একুশে ফেব্রুয়ারির দেশের বার্তা পৌঁছে দিতে গত কয়েক বছর ধরে সেই উদযাপনে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন ইউসুফ, শিমূল ইউসুফ, বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষে হাসান আরিফ, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, সিলেটের কথাকলি নাট্যগোষ্ঠী, জনপ্রিয় গানের দল ‘জলের গান’সহ বহু শিল্পীরা৷ নিয়ম মেনে উনিশে মে আজকাল পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে বিভিন্ন আকারে, পরিসরে৷ পশ্চিমবঙ্গেও প্রতি বছর স্মরণ করা হয় উনিশের শহীদদের৷
করোনাকালে উনিশ উদযাপন
ঘরবন্দী সময়েও থেমে নেই উনিশ-স্মরণ৷ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের ফেসবুক ও ইউটিউব পেজ থেকে লাইভে এসে গান, নাচ, কবিতার পাশাপাশি রাজনৈতিক পটভূমি নিয়ে আলোচনা চলছে৷ অংশগ্রহণ করছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ৷ কিন্তু উনিশের মঞ্চ, ‘ভাষা শহীদ স্টেশন শহীদ স্মরণ সমিতি’, এই বছর উনিশ উদযাপনের আগে থেকেই নেমেছিলেন অন্য কাজে৷ শুধু ভাষা রক্ষা নয়, পাশাপাশি ঐতিহাসিক রেল স্টেশন চত্বরে থাকা দরিদ্রদের খাবারের ব্যবস্থার জন্য একটি ‘কমিউনিটি কিচেন’ তৈরি করেছেন তাঁরা৷ শিলচরের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ নিজেদের তৈরি মাস্ক বিতরণ করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ এরকম রয়েছেন আর অনেক সংগঠনই৷
এবারের উনিশে মে’তে নেই সকাল সকাল ‘উনিশের পথচলা’, রাস্তায় আলপনা বা দিনভর অনুষ্ঠানের হিড়িক৷ বদলে আছে শারীরিক দূরত্ব, নিজের ভাষাগোষ্ঠীর পাশাপাশি পাশের ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের প্রতিও সাহায্যের হাত বাড়ানোর একাধিক উদ্যোগ, ও কাঁটাতার নির্বিশেষে ইন্টারনেটের মাধ্যমে উনিশের বার্তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া৷ এভাবেই উদযাপিত হচ্ছে এবারের উনিশ৷
২০১৮ সালের মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...
কোন ভাষায় কত অক্ষর
সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভাষা৷ কিন্তু আমরা কি জানি, কোন ভাষায় কতগুলি করে অক্ষর? একনজরে দেখে নেওয়া যাক আজকের গ্যালারিতে৷
ছবি: Getty Images
তামিল ২৪৭
তামিল ভাষায় মূল অক্ষর ৩১টি৷ তবে যুক্তাক্ষর ধরলে সেখানে আরো ২১৬টি অক্ষর যুক্ত হয়৷ অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ২৪৭টি অক্ষর৷ বিশ্বের যে কোনো ভাষার চেয়ে বেশি অক্ষর তাই তামিলে৷
ছবি: Reuters/N. Bhalla
খামের ৭৪
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পুরনো দেশগুলির অন্যতম কম্বোডিয়া৷ খামের সংস্কৃতি বহু শতাব্দীর৷ খামের ভাষাও খুব সমৃদ্ধ৷ খামের ভাষায় ৭৪টি অক্ষর আছে, যার মধ্যে ৩৫টি ব্যাঞ্জনবর্ণ এবং ১৪টি স্বরবর্ণ৷ বাকি অক্ষরগুলি যুক্তবর্ণ৷ তবে ব্যাঞ্জনবর্ণের মধ্যে ৩৩টি এখন ব্যবহৃত হয়, ২টির কোনো ব্যবহার নেই৷
ছবি: Imago/blickwinkel
থাই ৭০
থাইল্যান্ডের ভাষা থাই৷ থাই ভাষায় সব মিলিয়ে ৭০টি অক্ষর, যার মধ্যে ৪৪টি ব্যাঞ্জনবর্ণ এবং ১৫টি স্বরবর্ণ৷ এই দুই অক্ষর মিলিয়ে বেশ কিছু যুক্তাক্ষরও তৈরি হয়৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
মালয়ালম ৫৮
দক্ষিণ ভারতের কেরলে মালয়ালম ভাষার প্রচলন আছে৷ এই ভাষায় মোট ৫৮টি অক্ষর, যার মধ্যে ১৩টি স্বরবর্ণ এবং ৩৬টি ব্যাঞ্জনবর্ণ৷ আর কিছু অন্তচিহ্ন আছে৷ ওই অঞ্চলের ছোট ছোট বেশ কয়েকটি ভাষাও মালয়ালম অক্ষরেই লেখা হয়৷
ছবি: UNI
তেলেগু ৫৬
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে তেলেগু মুখ্যভাষা৷ তেলেঙ্গানা প্রদেশেও৷ কন্নড় ভাষার সঙ্গে তেলেগু লিপির বহু মিল আছে৷ কারণ, দু’টি ভাষারই সৃষ্টি একই জায়গা থেকে৷ সব মিলিয়ে ৫৬টি অক্ষর আছে এই ভাষায়৷
ছবি: UNI
সিংহলী ৫৪
শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রভাষা ভাষা সিংহলী৷ অসামান্য সুন্দর এই ভাষার অক্ষর বিন্যাস৷ সব মিলিয়ে অক্ষরের সংখ্যা ৫৪৷ এই ভাষাতেও সংযুক্ত অক্ষরের প্রচলন আছে৷
ছবি: Reuters/D. Liyanawatte
বাংলা ৫২
বাংলায় সব মিলিয়ে ৩২টি অক্ষর৷তবে যুক্তাক্ষর ধরলে ৫২টি অক্ষর৷ দেবনাগরী লিপি না হলেও তার সঙ্গে বাংলা বর্ণের প্রচুর মিল৷ মূলত এই লিপির জন্ম ব্রাহ্মী থেকে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
কন্নড় ৪৯
দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি ভাষার একটি কন্নড়৷ কর্ণাটকে মূলত এই ভাষা ব্যবহৃত হয়৷ কন্নড় ভাষায় ১৩টি স্বরবর্ণ আছে৷ তবে তার মধ্যে অনুস্বর এবং বিসর্গ নেই৷ কন্নড়ে ব্যাঞ্জনবর্ণের সংখ্যা ৩৬৷
ছবি: Jayalaxmi AgroTech
হিন্দি ৪৪
হিন্দিও স্বরবর্ণ এবং ব্যাঞ্জনবর্ণে বিভক্ত, যার মধ্যে ১১টি স্বরবর্ণ এবং ৩৩টি ব্যাঞ্জনবর্ণ৷ হিন্দি ভাষার উৎপত্তি দেবনাগরী থেকে৷ সংস্কৃতের প্রচুর প্রভাব আছে এই ভাষায়৷
ছবি: AP
হাঙ্গেরিয়ান ৪৪
লাতিন বর্ণমালা থেকেই হাঙ্গেরিয়ান বর্ণমালার উৎপত্তি৷ রোমান বর্ণমালার এ থেকে জেড ছাড়াও এই বর্ণমালায় আরো বেশ কিছু অক্ষর দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kisbenedek
অবখাজ ৪১
জর্জিয়ার কোনো কোনো অংশে এই ভাষায় কথা বলা হয়৷ অবখাজ ভাষায় ৪১টি অক্ষর৷ ১৮৮০ সালে এই ভাষার বর্ণমালা তৈরি করা হয়৷
ছবি: Filip Warwick
আর্মেনিয়ান ৩৯
আর্মেনিয়ার প্রধান ভাষা আর্মেনিয়ান৷ তাদের বর্ণমালায় মোট অক্ষরের সংখ্যা ৩৬৷ তবে কালে কালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
রুশ ৩৩
আধুনিক রুশ বর্ণমালায় ৩৩টি অক্ষর৷ রুশ ভাষায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অক্ষর ঔ, এ, আ এবং ন৷ রুশ ভাষার সাহিত্য সারা পৃথিবীতেই এক সময় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল৷
ছবি: picture alliance/Russian Look
আজারবাইজানি ৩২
আজারবাইজানে বলা হয় আজারবাইজানি ভাষা৷এই ভাষার অক্ষরবিন্যাসও তৈরি হয়েছে লাতিন বর্ণমালার উপর ভিত্তি করে৷ তবে লাতিনের চেয়ে কিছু আলাদা অক্ষরও তাদের বর্ণমালায় ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture alliance/AA /Stringer
ইংরেজি ২৬
ইংরেজিতে মোট ২৬টি অক্ষর আছে, যার মধ্যে ৫টি ভাওয়েল এবং ২১টি কনসোনেন্ট৷ সারা পৃথিবীতেই ইংরেজি ভাষার ব্যাপক ব্যবহার৷ মূলত রোমান স্ক্রিপ্ট থেকেই তৈরি হয়েছে ইংরেজির বর্ণমালা৷
ছবি: AP
গ্রিক ২৪
গ্রিক বর্ণমালায় মোট ২৪টি অক্ষর, যার প্রথম অক্ষর আলফা৷ আর শেষ হয় ওমেগা দিয়ে৷ বিজ্ঞান এবং গণিতের বহু ক্ষেত্রে এখনো গ্রিক অক্ষর ব্যবহার করা হয় সারা পৃথিবীতেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P.Karadjias
হিব্রু ২২
আরবি, ফারসি কিংবা উর্দুর মতো হিব্রু ভাষাও বাঁ দিক থেকে ডানদিকে লেখা হয়৷ এই ভাষার বর্ণমালায় মোট ২২টি অক্ষর আছে৷ইজরায়েলের রাষ্ট্রভাষা হিব্রু৷ এই ভাষার ইতিহাসও কয়েক হাজার বছর প্রাচীন৷